BN/Prabhupada 0333 - শিক্ষা প্রত্যেককে দিব্য বানায়
Lecture on BG 16.6 -- Hawaii, February 2, 1975
এবম্ পরম্পরা প্রাপ্তম ইমম রাজর্ষয়ো বিদুঃ (ভ.গী ৪.২)। একদম ওই রকমই। এখানে সূর্য একটি তুচ্ছ অংশ, সৃষ্টি ভগবানের। সূর্যের এতো কিরণ এবং এতো রশ্মি যে এটি সারা ব্রহ্মান্ডকে তাপ এবং কিরন দিচ্ছে। আপনি এটি প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না। এটি সূর্যের স্থিতি। এবং সেখানে লক্ষ লক্ষ এবং কোটি কোটি সূর্য, প্রত্যেকটি এই সূর্যের তুলনায় কখনও কখনও বড়। এটি ছোট সূর্য। সেখানে বৃহৎ বৃহৎ সূর্য আছে। আমরা বুঝতে পারি যে শারীরিক রশ্মি কী। এটা কঠিন নয়। কৃষ্ণের শারীরিক রশ্মি কে বলা হয় ব্রহ্ম। যস্য প্রভা প্রভাবত জগদন্ড-কোটি-কোটিশু বাসুধাদি বিভুতি ভিন্নম, তদ ব্রহ্মঃ (ব্র.স.৫.৪০) "যা ব্রহ্ম, তাই প্রভা।"
সুতরাং কৃষ্ণ প্রত্যেকের হৃদয়ে অবস্থান করছেন। এটি নিরপেক্ষ বিস্তার। যেমন সূর্যের আলো সূর্য রশ্মির নিরপেক্ষ বিস্তার, তেমনি। তেমনি ব্রহ্মের প্রকাশ কৃষ্ণের শারীরিক রশ্মির নিরপেক্ষ বিস্তার। এবং তার প্রবাহ যার দ্বারা তিনি সর্বত্র বিরাজমান, অন্ডানতরস্থ-পরমানু-চয়ানতরস্থম...(ব্র.স.৫.৩৫)। তিনি এই ব্রহ্মান্ডের ভিতরে আছেন। তিনি তোমার হৃদয়ে আছেন, আমার হৃদয়ে আছেন। তিনি সর্বত্র আছেন।"সর্বত্র" মানে একটি পরমানুর ভিতরেও। এটাই তাঁর পরমাত্মা রূপ। এবং তাঁর অবশেষ এবং শেষ রূপ হলো কৃষ্ণের নিজস্ব শরীর। সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ। ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দ বিগ্রহ।(ব্র.স ৫.১)।
বিগ্রহ মানে রূপ। এই রূপ আমাদের মতো নয়। সেটা সৎ, চিৎ, আনন্দ। শরীরের তিনটি রূপ আছে। সৎ মানে নিত্য। এই জন্য তাঁর শরীর আমাদের শরীরের থেকে আলাদা। ঐতিহাসিক ভাবে আমাদের শরীরটি নিত্য নয়। পিতা, মাতার দ্বারা এই শরীর টি গঠিত হয়ে ছিলো একটি দিনে, তিথিতে। এবং যখন এই শরীর টি সমাপ্ত হয়ে যাবে, শেষ হয়ে যাবে তখনোও একটা তিথি থাকবে। সুতরাং যা কিছু তিথিতে ঘটে, তাই ইতিহাস হয়। কিন্তু কৃষ্ণের সেটা হয় না। অনাদি। আপনি অনুমান করতে পারবেন না যে কবে কৃষ্ণের শরীর সৃষ্টি হয়েছিল। অনাদি। আদির আদি। তিনি সমস্ত কিছুর প্রারম্ভে। অনাদি। তিনি স্বয়ং অনাদি। কেউ খুঁজে পাবেন না যে তিনি কবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি ইতিহাসের বাইরে। তাই, কিন্তু তিনি সকলের সৃষ্টি কর্তা। যেমন আমার পিতা আমার এই শরীর টি সৃষ্টি করেছেন। পিতা হলেন আমার, আপনার প্রত্যেকের শরীরের সৃষ্টি কর্তা। সুতরাং তাঁর কোনো সৃষ্টি কর্তা নেই, তাঁর কোনো পিতা নেই, কিন্তু তিনি পরম পিতা। এটাই ধারনা, খ্রীষ্টান ধারনাঃ ভগবান হলেন পরম পিতা। এটিই ঘটনা, কারন তিনি প্রত্যেকের সৃষ্টি কর্তা। জন্মাদি অস্য যতোঃ (শ্রী.ভা. ১.১.১) "যা কিছু এসেছে সবই কৃষ্ণের থেকে।" ভগবদ গীতায় বলা হয়েছে। অহম আদির হি দেবানাম (ভ.গী ১০.২) দেবতা। এই ব্রহ্মান্ড ব্রহ্মার সৃষ্ট। তাঁকে দেবতাদের একজন বলা হয়। তাই কৃষ্ণ বলেছেন অহম আদির হি দেবানাম, "আমি দেবতা এবং উপদেবতার সৃষ্টি কর্তা। সুতরাং যদি তুমি এই ভাবে কৃষ্ণকে অধ্যায়ন করো তাহলে তুমি দৈব, ভক্ত হয়ে উঠবে। দিব্য।
আমাদের কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন প্রত্যেককে দিব্য হয়ে ওঠার শিক্ষা দেয়। এটাই কার্যক্রম। সুতরাং দিব্য হয়ে কী লাভ? এটি আগের শ্লোকে বর্ণনা করা আছে। দৈবি সম্পদ বিমক্ষয়ো (ভ গী ১৬.৫)। যদি তুমি দিব্য হয়ে ওঠো এবং দিব্য গুন প্রাপ্ত হও, অভ্যম সত্য সমশুদ্ধি জ্ঞান-যোগ-ব্যবস্থিত। যেটি আমরা আগে আলোচনা করেছি। সুতরাং যদি তুমি দিব্য হয়ে ওঠো দিব্য হতে কোনো বাধা নেই কেবলমাত্র তোমাকে এই পদের জন্য অভ্যাস করতে হবে। যেমন প্রত্যেকে একজন উচ্চ আদালতের বিচারপতি হতে পারেন। কেউ একজন সংযুক্ত রাষ্ট্র আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হতে পারেন। কোনো বাধা থাকে না। কিন্তু আপনাকে নির্বাচিত হতে হবে। যদি আপনি নির্বাচিত হন, আপনি যে কোনো কিছু হতে পারবেন, কোনো পদ পাবেন। তাইজন্য এখানে বলা হয়েছে যে দিব্য এবং দৈবী হওয়ার জন্য আপনাকে যোগ্য হতে হবে, দিব্য এবং দৈবী হওয়ার জন্য। কীভাবে আপনি দৈবি হবেন? তা পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। আমরা করেছি...
সুতরাং দৈব গুণের দ্বারা আপনি যদি নির্বাচিত হন তাহলে কী লাভ হবে? দৈবী সম্পদ বিমোক্ষয়ো। মোক্ষ। মোক্ষ মানে মুক্তি। সুতরাং যদি আপনি এই দিব্য গুণাবলি গ্রহণ করেন, তখন আপনি মুক্তি পাওয়ার যোগ্য হবেন। মুক্তি কী? জন্ম মৃত্যু চক্রের থেকে মুক্তি। এটাই আমাদের আসল দুঃখ। আধুনিক, বদমাশ সভ্যতা তারা জানে না কীভাবে এই দুঃখের শেষ হবে। তারা জানে না। কোনো শিক্ষা নেই। কোনো বিজ্ঞান নেই। তারা মনে করে যে "এখানে এই জীবনের অল্প সময়ের মধ্যে, পঞ্চাশ বছর, ষাট বছর, শত বছর, আরো অনেক, যদি আমরা একটি সুন্দর স্ত্রী, সুন্দর বাড়ি, সুন্দর গাড়ী পাই, ৭০ মাইল গতি তে দৌড়ায় , এবং সুন্দর একটি মাদকের বোতল..." ওইটাই তার পূর্ণতা। কিন্তু সেটা বিমোক্ষয় নয়। আসল বিমোক্ষ, মুক্তি মানে আবার জন্ম না, মৃত্যু না, জড়া না, ব্যাধি না। এটাই বিমোক্ষ। কিন্তু তারা এটা জানে না।