BN/Prabhupada 0377 - "ভজহুরে মন" - তাৎপর্য

Revision as of 08:04, 22 December 2021 by Vanibot (talk | contribs) (Vanibot #0005: NavigationArranger - update old navigation bars (prev/next) to reflect new neighboring items)
(diff) ← Older revision | Latest revision (diff) | Newer revision → (diff)


Purport to Bhajahu Re Mana -- Los Angeles, May 27, 1972

এই গান গোবিন্দ দাস গেয়েছেন। গোবিন্দ-দাস-অভিলাশ রে। কি তার অভিলাশ? অভিলাশ মানে ইচ্ছা। ভজ হু রে মন শ্রী-নন্দ-নন্দন। "হে আমার প্রিয় মন..." কারন মন হচ্ছে আমাদের বন্ধু এবং শ্ত্রূ। যদি আপনি মনকে শিক্ষা দেন তবে মন আপনার ভাল বন্ধু। এবং যদি আপনি মনকে শিক্ষা দিতে না পারেন তাহলে আপনার ভাল শ্ত্রূ। স বৈ মনঃ কৃষ্ণ-পদারবৃন্দয়ৌ (শ্রী.ভা.৯.৪.১৮)। তাইজন্য মনকে সবসময় কৃষ্ণের চরন পদ্মে নিযুক্ত রাখতে হবে। তাহলে মন এমনিতেই নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে এবং বন্ধু হয়ে যাবে। তাই গোবিন্দ দাস তার ইচ্ছা ব্যাক্ত করছেন। "হে আমার প্রিয় মন, তুমি নন্দ-নন্দনের সেবায় নিযুক্ত হও। তিনি শুধু বলছেন না কৃষ্ণ। তিনি বলছেন নন্দ-নন্দন। ভজ হু রে মন শ্রী-নন্দ-নন্দন। যদি আমরা কৃষ্ণকে সরাসরি সম্বোধন করি তবে এটি খুব বেশি প্রশংসা করা হয় না, কিন্তু যদি আমরা বলি কৃষ্ণ। নন্দ-নন্দন, যশোদা-নন্দন, দেবকী নন্দন, পার্থ-সারথী - উনার ভক্তের সন্মন্ধে-তাহলে উনি বেশী প্রসন্ন হবেন। তাই ভজ হু রে মন শ্রী-নন্দ-নন্দন। কে শ্রী-নন-নন্দন? এখন, অভয়-চরনারবৃন্দ রে। যদি তুমি কৃষ্ণের চরন পদ্মের শরণ নেও, নন্দ-নন্দনের, তাহলে তোমার আর কোন ভয়, দুশ্চিন্তা থাকবে না।

সমাশ্রিতা যে পাদ-পল্লব-
পল্লবম মহৎ-পাদম পূন্য-যশো মুরারে।
ভবামবুধির বতস-পাদম পরম পদম
পদম পদম যৎ বিপদম ন তেষাম
(শ্রী.ভা.১০.১৪.৫৮)।

এই হচ্ছে ভগবৎ দর্শন। পদম পদম যৎ বিপদম। এই হচ্ছে জড়জগৎ, পদম পদম মানে পদে পদে বিপদ। যিনি কৃষ্ণের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন, মহৎ পদম পূন্য-যশো মুরারে সমাশ্রিতা, তার জন্য সেখানে কোন ভয় নেই। অভয়- চরনারবৃন্দ রে। কিভাবে কৃষ্ণের পুরো শরণ নেওয়া সম্ভব, যেটা ভয়হীন, উদ্বেগহীন, বৈকুন্ঠ? দুর্লভ মানব-জন্ম সৎ-সঙ্গ। এটা সম্ভব যদি তুমি ভক্ত সঙ্গ কর। যদি তুমি মনে করো যে "এখন আমি অনেক উন্নত হয় গেছি। আমি এখন একা থাকব, এবং হরে কৃষ্ণ জপ করো, হরিদাস ঠাকুরকে অনুকরন করে, "সেটা অর্থহীন। তুমি হরিদাস ঠাকুরকে অনুকরন করতে পারো না। তোমাকে ভক্ত সঙ্গ করতে হবে। দুর্লভ মানব-জন্ম সৎ সঙ্গ। সৎ-সঙ্গ। সতাম প্রসঙ্গান মম বীর্য-সংবিদ (শ্রী.ভা.৩.২৫.২৫)। যদি তুমি ভক্ত সঙ্গ থাকো। তাহলে তাদের সঙ্গ প্রভাবে, তাদের সাথে কথা বলে, তুমি ভগবৎ ভাবনার প্রকৃতি বুঝতে পারবে।এটা বোঝা খুবই ব্যবহারিক। যেমন জড় জগতে অনেক সঙ্গ আছে, সমাজ আছে। ব্যাবসায়ী, তারা তাদের ষ্টক মার্কেটের সঙ্গ করে, যারা ষ্টক মার্কেটে কাজ করছে। তাদের সঙ্গ আছে। তারা সেখানে যান, এবং তাদের ব্যবসা্র সুবিধা খুব ভাল। একইভাবে, অনেক ক্লাব আছে। আপনি যদি পান করতে চান এবং ইন্দ্রিয় উপভোগ করতে চান, তাই আপনি অনেক ক্লাবে যান এবং তাদের সাথে সঙ্গ করুন এবং আপনি শিখবেন, কিভাবে পান করতে হয়, কিভাবে যৌন জীবন খুব ভাল উপভোগ করতে। তাই সঙ্গ খুব গুরুত্বপূর্ন। তাইজন্য আমাদের কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলনে, আমরা একটা সুযোগ দিচ্ছি মানুষদের যাতে তারা আমাদের সঙ্গ পায়। যাতে তারা বুঝতে পারে কৃষ্ণ কি, কৃষ্ণ ভাবনামৃত কি। তাই গোবিন্দ দাস অনুমোদন করেছেন, দুর্লভ মানব-জন্ম-সৎ-সঙ্গ। মানব। এই মানুষ্য জন্ম হচ্ছে দুর্লভ, খুব কদাচিৎ লাভ করা যায়। কুকুর সঙ্গ নয়, কাকের সঙ্গ নয়, কিন্তু হ্যাঁ হাঁসের সঙ্গ। সঙ্গ প্রকৃতির মধ্যেও রয়েছে। "একই রকমের পাখি একসাথে বসবাস করে।" কাকেরা, তারা কাকের সঙ্গ করে, এবং হাঁস হাঁসের সঙ্গ করে। সাদা হাঁস, খুব সুন্দর জল, সুন্দর বাগান, তারা সেটা পছন্দ করে। কাকেরা সেটা পছন্দ করে না। কাক পছন্দ করে নোংড়া তারা সেখানে আনন্দ পায়। তাই একই ভাবে, প্রকৃতির গুন অনুসারে, মানুষ্য সমাজে বিভিন্ন সঙ্গ আছে। কিন্তু এটা অনুমোদিত যে দুর্লভ মানব সৎ-সঙ্গ। কাকেদের সঙ্গে নয় কিন্তু হাঁসেদের সঙ্গে। আপনি হাঁসকে দুধ এবং জল দেন, এটি দুধের অংশ গ্রহণ করবে এবং জলের অংশ ছেড়ে দেবে। একইভাবে হাঁস, হংস, পরমহংস, মানে এই মানব জীবনে, কে আধ্যাত্মিক অংশ গ্রহণ করে এবং জীবনের জড় অংশ বাদ দেয়, তাদের হংস বলা হয়, পরমহংস। আমরা মিশ্রিত। আমাদের দেহ জড়,কিন্তু আমরা চিন্ময় আত্মা। সুতরাং আমাদের এই জড় বন্ধন থেকে মুক্তি পাবার কৌশল জানতে হবে। এটা এই জড় শরীর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, কিন্তু যখন এটি বেরিয়ে আসে, তখন এই জড় শরীর ধ্বংস হবে। খুব ভাল, ভাল উদাহরণ। আগুন আছে, কাঠে আগুন আছে, সবাই জানেন। তাই আপনি আগুন জ্বালান, এবং আপনি তা শুষ্ক করেন, তাহলে অগ্নি খুব দ্রুত ধরবে। এবং যখন একটি আগুন ধরবে, সেখানে কোন কাঠ থাকবে না। কাঠের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। একইভাবে, যদি আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক চেতনা, কৃষ্ণ চেতনা আবাহন করি। যখন এটি খুব ভালভাবে চলবে, তারপর আপনার জড় অস্তিত্ব শেষ হবে। এই প্রক্রিয়া। দুর্লভ মানব-জন্ম সৎ-সঙ্গ তরহ এ ভব-সিন্ধু রে। এইভাবে, অজ্ঞনের এই মহাসমুদ্র থেকে ওপর দিকে যান।

তারপর, কেউ বলতে পারে, "যদি আমি কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হই, তাহলে কিভাবে আমার পরিবার সন্মন্ধ চলবে? কে আমার স্ত্রী এবং শিশু, সমাজ, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা দেখবে? আমার অনেক ব্যবসা আছে।" তিনি সেইজন্য বলছেন, সিত আতপ বাত বরিষন এ দিন জামিনি জাগি রে। "হে আমার প্রিয় মন, তুমি খুব শক্তকাজ করছ।" সিত আতপ। "খুব ঠান্ডাতেও তুমি কাজ করছ। উষ্ণ তাপে আপনি কাজ করতে যাচ্ছেন। আপনি ভীষন বৃষ্টিতে আপনার কাজ বন্ধ করতে পারবেন না।" সিত আতপ বাত বরিষন। "রাতের কাজ, পুরো রাত্রে কাজ।" মানুষ এইসব করছে। সিত আতপ বাত বরিষন এ দিন জামিনি জাগি রে। পুরো দিন কাজ করে, তাহলে আমি আরও কিছু টাকা পাব, আমি আপনাকে রাতেও কাজ করার অনুমতি দেব, অতিরিক্ত।

এইভাবে আমরা কাজ করি। কেন কাজ করি? কেন কাজ করি?

সিত আতপ বাত বরিষন
এ দিন জামিনি জগি রে,
বিফলে সেবিনু কৃপন দুরাজন
চপল সুখ লব লাগি রে

"এই ভাবে আমি আমার সময় নষ্ট করছি, "বিফলে সেবিনু, কৃপন দুরাজনদের সেবা করা, কিছু তথাকথিত সমাজ, বন্ধুত্ব এবং প্রেম। কৃপন, তারা কখনো, কখনো, কৃষ্ণ ভাবনায় যুক্ত হবে না, কিন্তু আমি তাদের সেবায় যুক্ত আছি।" সুতরাং এটি সাধারন, প্রতেকে নয়, প্রতিটি পরিবার নয়। প্রায় ৯৯.৯ শতাংশ। তাই বিফলে সেবিনু," এইভাবে আমি সময় নষ্ট করছি। এবং আনন্দ কি? চপল সুখ-লব লাগি রে। "কিছু সময় যৌনতা, ব্যাস।" যৌনতার পেছনে, অনেক শ্রম। তাইজন্য গোবিন্দ দাস বলেছেন যে, "তুমি অর্থের আনন্দ নেবার চেষ্টা করছ," এ ধন, যৌবন, পুত্র পরিজন। জড় সুখ মানে টাকা, অর্থ একত্র করা, এবং তারপর মানুষ, অনেক অনুসারী বা নির্ভরশীল - স্ত্রী, সন্তান, বন্ধু, সমাজ, অনেক কিছু, দেশ। তাই পুত্র, পরিজন, ইথে কি আছে পরতিথী রে। "আপনি এতে কোন দিব্য আনন্দ পাবেন না।" কমল-দল-জল, জীবন টলমল। জীবন দদুল্যমান। এই জীবন কখন শেষ হবে আপনি বলতে পারবেন না। একটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, কমল-জল-দল। কমল পাতার মত। যদি আপনি পাতার উপর জল ঢালেন, তবে সেখানে থাকবে না, এটি পতিত হবে। এটা যেকোন মুহূর্তে পরে যাবে, একইভাবে আমাদের জীবন এইরকম, দদুল্যমান। যে কোন সময় - শেষ, কমল-জল-দল,জিবন...ভজ হু হরি-পদ নিতী রে। অতএব, যতটা সম্ভব আপনি কৃষ্ণভাবনামৃতে ব্যস্ত থাকুন। মৃত্যুর আসার আগে শেষ করো। এটা আপনার লক্ষ্য। এবং কৃষ্ণ ভাবনামৃত কি? শ্রবন, কীর্তন,স্মরন, বন্দন, পাদ-সেবন...পুজন, সখী-জন,আত্ম-নিবেদন, নয় ধরনের আধ্যাত্মিক কার্যকলাপ রয়েছে, গোবিন্দ-দাস-অভিলাশ রে।

তাই প্রত্যেকের উচিত গোবিন্দ দাসের মতো ইচ্ছা করা। শ্রবন কীর্তন, এই হচ্ছে ভক্তির প্রক্রিয়া। শোনা, কীর্তন করা, স্মরণ করা, অর্চন, বিগ্রহের পুজা করা, বন্দন, প্রার্থনা করা, নয় প্রকারের আছে। তাই মানুষের জীবন এই উদ্দেশ্যে, এবং ... এই প্রক্রিয়ার দ্বারা, আমরা ধীরে ধীরে কৃষ্ণ ভাবনামৃত অথবা আধ্যাত্মিক চেতনার আগুন জ্বালাই। তারপর সেই অগ্নির দ্বারা, কাঠ নিজেই একটি ছাই হয়ে ওঠে, তাই আমাদের, আমাদের আবরন ... আত্মা বস্তু দ্বারা আচ্ছাদিত, অজ্ঞতা দ্বারা। তারপর এই আবরণ এবং অজ্ঞতা ছাই হবে, এবং আপনি মুক্ত হন এবং বাড়িতে ফিরে যান, ভগবৎ ধাম। এটি এই গানের অর্থ।