BN/Prabhupada 0631 - আমি চিরন্তন, কিন্তু এই দেহ চিরন্তন নয়, এটিই হচ্ছে বাস্তব সত্য

Revision as of 17:14, 29 June 2021 by Vanibot (talk | contribs) (Vanibot #0023: VideoLocalizer - changed YouTube player to show hard-coded subtitles version)
(diff) ← Older revision | Latest revision (diff) | Newer revision → (diff)


Lecture on BG 2.28 -- London, August 30, 1973

এই প্রসঙ্গে একটি বিষয় হচ্ছে যে, রাতে ঘুমের মাঝে যখন আমি স্বপ্ন দেখি তখন আমি আমার এই দেহটি ভুলে যাই। স্বপ্নে আমি দেখি যে আমি এই দেহে অন্য কোথাও গিয়েছি, এবং ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে আমি অন্য কোন লোকেদের সাথে কথা বলছি কিন্তু সেই সময় কিন্তু আমার এই কথা মনে থাকে না যে আসলে আমার দেহটি সেই একই এপার্টমেন্ট-এ শুয়ে আছে। আমরা এই দেহের কথা ভুলে যাই। সবারই এমন অভিজ্ঞতা হয়। ঠিক তেমনি, যখন সকালে ঘুম ভেঙ্গে আমরা বিছানা থেকে জেগে উঠি, তখন আমি স্বপ্নে দেখা সব ধরণের শরীরের কথা ভুলে যাই। তাহলে কোনটি ঠিক? এটি ঠিক? এই শরীরটি ঠিক? না কি ঐ শরীরটি ঠিক? কারণ রাতে ঘুমের মাঝে আমি এই শরীরটি ভুলে যাই এবং দিনের বেলা সেই স্বপ্ন দেখা শরীরটির কথা ভুলে যাই। সুতরাং এই উভয়েই সঠিক নয়। এটি শুধু অলীক ঘোর মাত্র। কিন্তু আমি ঠিক-ই রয়েছি, কারণ আমি রাতেও দেখতে পাচ্ছি আবার দিনেও। সুতরাং আমি নিত্য কিন্তু আমার শরীরটি নিত্য নয়। সেটি হচ্ছে বাস্তব সত্য। অন্তবন্ত ইমে দেহা নিত্যাস্যোক্তা শরীরিণঃ (ভগবদ্গীতা ২.১৮) শরীরিণঃ, এই দেহের মালিক নিত্য, কিন্তু এই দেহটি নিত্য নয়। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বিভিন্ন উপায়ে এই জড় দেহটির অবস্থা ব্যাখ্যা করছেন। কিন্তু যারা অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন তাদের দ্বারা এই তত্ত্বটি বোঝা অত্যন্ত কঠিন। অন্যথায়, বিষয়টি খুবই স্পষ্ট। এই বিষয়টি অত্যন্ত স্পষ্ট। রাতে আমরা এই শরীরটি ভুলে যাই এবং দিনের বেলা রাতের শরীরটি ভুলে যাই। এটিই সত্যি। ঠিক একইভাবে, আমি হয়তো আমার পূর্ব জন্মের কথা ভুলে যেতে পারি, আমার গত জন্মের কথা; অথবা আমি আমার পরবর্তী জন্মের কথা নাও জানতে পারি। কিন্তু আমি থাকব, আমার শরীরটি হয়তো পরিবর্তন হতে পারে, কিন্তু আমাকে আরেকটি শরীর ধারণ করতে হবে যা কি না অনিত্য। কিন্তু আমি যেহেতু বর্তমান তাই আমি এই শরীরটি পেয়েছি। সেটি হচ্ছে চিন্ময় দেহ।

পারমার্থিক দেহটি নিত্য অবস্থান করছে এবং পারমার্থিক উন্নতির অর্থ হচ্ছে সর্বপ্রথমে আমার চিন্ময় স্বরূপটি জানতে হবে। ঠিক যেমন সনাতন গোস্বামী যখন তার মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কাছে গিয়েছিলেন তিনি প্রথমেই জিজ্ঞেস করেছিলেন, "কে আমি, কেনে আমায় জারে তাপত্রয়" "আসলে আমি জানি না যে আমি কে এবং আমি কেন এই জীবনে দুঃখযন্ত্রণা ভোগ করছি।" তাই এই দেহটি হচ্ছে জীবনের এক দুঃখময় অবস্থা। কারণ আমি ...স্বপ্নেও। যখন স্বপ্নে আমি আরেকটি দেহ পাই, কখনও কখনও আমরা দেখি যে আমি হয়তো অনেক লম্বা কোন বাঁশ অথবা বিশাল পাহাড়ের ওপর, আমি হয়তো এখুনি পড়ে যাচ্ছি, এবং আমি ভয় পাচ্ছি, কখনও আবার আমি এই বলে কাঁদছি যে "আমি এই বুঝি পড়ে গেলাম"। সুতরাং এই দেহ, এই জড় দেহ, আমার এই দেহটি... প্রকৃতপক্ষে এগুলোর কোনটাই আমার দেহ নয়। আমার একটি ভিন্ন চিন্ময় শরীর রয়েছে।

অতএব, এই মানব দেহটি হচ্ছে সেই কথাটি উপলব্ধি করার জন্য যে, "আমি এই জড় দেহটি নই, আমার একটি চিন্ময় দেহ রয়েছে"। পরবর্তী প্রশ্নটি হবে, "তাহলে আমার কর্তব্য কি?" এই বর্তমান দেহে কিছু জড় অবস্থার প্রেক্ষিতে আমি মনে করছি, "আমি হলাম এই দেহটি" আর "এই শরীরটি এই দেশ বা এই পরিবারের কিছু নির্দিষ্ট অবস্থার মধ্যে তৈরি হয়েছে"। অতএব "এরা হচ্ছে আমার পরিবার, এই হচ্ছে আমার দেশ, এই হচ্ছে আমার জাতি"। এভাবে সবকিছুই দেহাত্মবুদ্ধি-জাত। আর যদি আমি এই দেহটি নই, তাহলে আমার এই দেহের সাথে সম্পর্কিত আমার পরিবার, আমার দেশ কিংবা আমার সমাজ, অথবা আমার অন্যান্য সম্পর্কগুলি তার সবকিছুই মিথ্যা কারণ এই দেহটিই মিথ্যা।