BN/Prabhupada 0643 - যারা কৃৃষ্ণভাবনামৃতে উন্নত স্তরে রয়েছেন, তাঁদের শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে কর্ম করতে হবে

Revision as of 17:17, 29 June 2021 by Vanibot (talk | contribs) (Vanibot #0023: VideoLocalizer - changed YouTube player to show hard-coded subtitles version)
(diff) ← Older revision | Latest revision (diff) | Newer revision → (diff)


Lecture on BG 6.1 -- Los Angeles, February 13, 1969

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ?

ভক্তঃ প্রভুপাদ, ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে যে, বিশ্বাসের বিষয়ে আমরা মাত্রই পড়লাম যে শ্রীকৃষ্ণ আমাদের সবকিছু সরবরাহ করবেন। আবার গীতাতে এ কথাও বলা হয়েছে যে ভগবান তাদেরই সাহায্য করেন যারা নিজেদের সাহায্য করে।

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ।

ভক্তঃ তাহলে আমরা এটি কিভাবে বুঝবো যে আমাদের কি করা উচিৎ?

শ্রীল প্রভুপাদঃ 'তাদের সাহায্য করেন' মানে তুমি তোমাকে শ্রীকৃষ্ণের অধীনে রাখো; সেটিই হচ্ছে তোমার নিজেকে সাহায্য করা। এবং যদি তুমি ভাবো, "ওহ, আমি নিজেই আমাকে রক্ষা করতে পারব" তাহলে তুমি তোমাকে সাহায্য করছো না। ঠিক যেমন এই আঙ্গুলটির মতো, এটি যতক্ষণ পর্যন্ত ভালো আছে বা কার্যকরী আছে, তখন যদি কোন সমস্যা হয়, আমি এই আঙ্গুলের জন্য হাজার ডলারও খরচ করতে পারি। কিন্তু যদি এই আঙ্গুলটি আমার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তখন যখন যদি তুমি এই আঙ্গুলটিকে তোমার পা দিয়ে মাড়িয়েও যাও, আমার তাতে কিছুই যায়-আসে না। তেমনই, কারো নিজেকে সাহায্য করার মানে হচ্ছে নিজেকে... ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অংশরূপে সঠিক জায়গায় অবস্থিত করা। সেটিই হচ্ছে প্রকৃত সাহায্য। অন্যথায় তুমি কি করে সাহায্য করবে? হাতের সঠিক জায়গায় রেখে এবং সারা দেহের জন্য কাজ করেই কেবল আঙ্গুলটি নিজেকে সাহায্য করতে পারে। সেটিই হচ্ছে যথার্থ অবস্থান। আঙ্গুলটি যদি ভাবে, "আমি এই দেহটি থেকে আলাদা থাকবো আর নিজেকে সাহায্য করবো" - তাহলে এটির মৃত্যু হবে। ঠিক যেই মুহূর্তে আমি ভাববো যে, "আমি স্বাধীনভাবে বাঁচবো, আমি শ্রীকৃষ্ণের কোনও পরোয়া করি না", সেটিই আমার মৃত্যু। আর যেই মুহূর্তে আমি আমাকে শ্রীকৃষ্ণের অবিচ্ছেদ্য অংশরূপে তাঁর সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করব, সেটিই হবে আমার জীবন।

তাই নিজেকে সাহায্য করা মানে আগে নিজের অবস্থান বোঝা, আর সেই ভাবে কাজ করা। সেটি হল সাহায্য করা। নিজের প্রকৃত অবস্থান না জেনে, কিভাবে কেউ নিজেকে সাহায্য করতে পারে? তা সম্ভব নয়। হ্যাঁ?

ভক্তঃ তাহলে আমাদের বুঝেশুনে সবসময় কাজ করার চেষ্টা করতে হবে আর শ্রীকৃষ্ণের সেবা করার চেষ্টা করতে হবে এবং শ্রীকৃষ্ণ যেন আমাদের সেবা না করেন। সবসময় এমনটা ভাবা উচিৎ যে আমাদের শ্রীকৃষ্ণের সেবা করার চেষ্টা করা উচিৎ এবং শ্রীকৃষ্ণ আমাদের সরবরাহ করবেন, তিনিই আমাদের সাহায্য করবেন।

শ্রীল প্রভুপাদঃ তুমি শ্রীকৃষ্ণের সেবা করছো তার মানে হচ্ছে তুমি করছো। সেবা মানে কিছু করা। সেবা বলতে তুমি কি বোঝাও? যখন তুমি কারো সেবা করছ, তুমি কি কিছু একটা কাজ করছ না? তুমি শ্রীকৃষ্ণ সেবায় নিযুক্ত আছো, কিভাবে? তুমি কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার করতে যাচ্ছো, তুমি রান্না করছো, তুমি পরিষ্কার করছো, তুমি অনেক ধরণের কাজ করছো? সুতরাং শ্রীকৃষ্ণকে সাহায্য করা মানে তাঁর কাজ করা। শ্রীকৃষ্ণকে সাহায্য করা মানে এই নয় যে তুমি এক জায়গায় শক্ত করে বসে থাকবে। সাহায্য করা মানে কৃষ্ণভাবনাময় কার্যকলাপ। কাজ করার জন্য যা কিছুই তুমি পেয়েছ না কেন, তার সবই শ্রীকৃষ্ণের সেবায় লাগাও। সেটিই হচ্ছে ভক্তি। এখন আমাদের কি কি সম্পদ রয়েছে? আমাদের মন রয়েছে। ঠিক আছে, তাহলে কৃষ্ণচিন্তা কর। আমাদের হাত রয়েছে - মন্দির মার্জন কর বা শ্রীকৃষ্ণের জন্য রান্না কর। আমাদের পা রয়েছে - শ্রীকৃষ্ণের মন্দিরে যাও। আমাদের নাক রয়েছে - ওহ, শ্রীকৃষ্ণের চরণে নিবেদিত পুষ্পের ঘ্রাণ নাও। এইভাবে নিযুক্ত করতে পারো। সুতরাং কৃষ্ণভাবনাময় নিযুক্তি মানে হল কর্ম করা, সক্রিয়। অর্জুন কর্ম করতে অসম্মতি জানাচ্ছিলেন। আর শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে কর্ম করতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। এটিই হচ্ছে সম্পূর্ণ ভগবদগীতা। কৃষ্ণভাবনামৃত মানে নিষ্কর্মা হয়ে বসে থাকা নয়। কৃষ্ণভাবনায় নিজেকে যুক্ত করার মানেই হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের জন্য কর্ম করা। শ্রীকৃষ্ণ বলেন নি যে... অবশ্য এই অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ কিছু বিষয় সম্পর্কে বলবেন ... তিনি কখনই অর্জুনকে বলেন নি, "প্রিয় অর্জুন, তুমি এই দুনিয়ার কোন পরোয়াই কোর না। শুধু বসে থাকো আর আমার ধ্যান কর।" তোমরা কি ভগবদগীতায় এরকম কিছু পেয়েছ? এখানে যে ধ্যানের কথা বলা হয়েছে, তার মানে হল সব ধরণের আজেবাজে কাজ বন্ধ বসে থাকা। কিন্তু যারা কৃষ্ণভাবনামৃতে উন্নত, তাঁদের শ্রীকৃষ্ণের জন্য কর্ম করতে হবে। ঠিক যেমন একটি শিশু। সারা বাড়িকে শুধু বিরক্ত করাই তার কাজ। তখন মা বলেন, "লক্ষ্মী ছেলে আমার, এখানে চুপ করে বসে থাকো।" কিন্তু যদি সে ভালো কাজ জানে, তাহলে মা তাকে বলবেন, "আমার লক্ষ্মী ছেলে, তোমাকে এই কাজটি করতে হবে, ঐ কাজটি করতে হবে..." তাই চুপ করে বসে থাকা হচ্ছে মূর্খ লোকেদের জন্য। জ্ঞানী লোকেদের জন্য নয়। মূর্খ যতই বসে থাকবে, ততই সে অন্তত কোন আজেবাজে কিছু করবে না, ব্যাস। আজেবাজে কিছু না করার মানা। কিন্তু সেটি ইতিবাচক নয়। আর এই হচ্ছে ইতিবাচক কার্যকলাপ।

তাই নেতিবাচকতা বা কেবল নিষেধাজ্ঞা কোন জীবন নয়, বরং ইতিবাচক কিছুতে যুক্ত থাকাই হচ্ছে জীবন। "এটি কোর না" এই কথাটি প্রকৃত জীবন নয়। বরং "এটি কর", এই হচ্ছে জীবন। কিন্তু সঠিকভাবে কাজটি করতে গেলে কিছু জিনিস থাকে যা করা উচিৎ নয়। "কোর না" এটি জীবন নয়, "কর" এটিই জীবন। সম্পূর্ণ ভগবদগীতায় কেবল বলা হচ্ছে, "কর", আমার জন্য যুদ্ধ কর"। 'কোর না' এমন কিছু নেই। অর্জুন চেয়েছিলেন, "আমাকে প্ররোচিত কোর না।" এবং শ্রীকৃষ্ণের তা পছন্দ হয় নি। "তুমি অনার্যের মতো কথা বলছো" কুতস্ত কশ্মলং ইদং অনার্যজুষ্টং (গীতা ২.২) "অনার্যেরা কেবল এই ধরণের কথা বলে থাকে" তাকে অনার্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অনার্য। তাই কৃষ্ণ ভাবনামৃত মানে অলস বসে থাকা নয়। না। শ্রীকৃষ্ণের সমস্ত লীলাসমূহ বিভিন্ন কার্যকলাপে পূর্ণ। যখন তুমি ভগবদ্ধামে যাবে, সেখানে শ্রীকৃষ্ণ সর্বদা নৃত্য করছেন। তোমাকে সেখানে ২৪ ঘণ্টা নৃত্য করতে হবে এবং প্রসাদ পেতে হবে। বসে থাকার সময় কোথায়? বসে থাকার কোনও প্রশ্নই আসে না। গোপীরা বসে বসে ধ্যান করছে, এমন কথা তোমরা শুনেছ কখনও? বসে আছে। (হাসি) শুনেছো তোমরা? এই পৃথিবীতে শ্রীকৃষ্ণ... বা চৈতন্য মহাপ্রভু? তিনি করেছেন, কি করেছেন...হরে কৃষ্ণ বলে নৃত্য করছেন। বুঝলে? তুমি হচ্ছ চিন্ময় আত্মা। তুমি কিভাবে কিছু করা থেকে নিজেকে বিরত করে নীরব রাখবে? তা সম্ভব নয়। অর্জুন প্রত্যাখ্যান করেছিলেন... যখন... এই অধ্যায়ে তোমরা পাবে যে যখন অর্জুনকে বলা হয়েছিল... "প্রিয় অর্জুন, তুমি ধ্যান কর"। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তাতে অপারগতা জানিয়েছেন। "প্রিয় কৃষ্ণ, এত আমার দ্বারা সম্ভব নয়, আমার দ্বারা তা সম্ভব নয়।" সেটিই হচ্ছে বাস্তব কথা। সেটি কিভাবে তারা দ্বারা সম্ভব? তিনি একজন গৃহস্থ ছিলেন। তিনি রাজ্য চেয়েছিলেন, তিনি সারা দেশ শাসন করতে চেয়েছিলেন। কিভাবে... তাঁর ধ্যান করার সময় কোথায়? তিনি সোজা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন, "হে কৃষ্ণ, এটি আমার দ্বারা সম্ভব নয়"। তিনি বলেছিলেন মনকে সংযত করা, "বায়োরিব সুদুষ্করং", "মনকে সংযত করা বায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করার মতোই সুকঠিন।" সেটিই বাস্তব সত্য। তোমার মনকে শ্রীকৃষ্ণে নিবদ্ধ করতে হবে। তাহলেই তা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। অন্যথায়, কৃত্রিমভাবে তুমি তা করতে পারবে না। সেটি অসম্ভব। অর্জুন তা বলেছিলেন, অন্যদের আর কি কথা? অর্জুন কে ছিলেন? তিনি সরাসরি শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে কথা বলছিলেন। তোমাদের কি মনে হয় তিনি কোন সাধারণ মানুষ ছিলেন? তিনি বলেছেন যে তা অসম্ভব। বায়োরিব সুদুষ্করং (গীতা ৬.৩৪)।

ঠিক এই উদাহরণটিই তিনি দিয়েছেন। চঞ্চলং হি মনঃ প্রমাথি বলবদ্-দৃঢ়ং (গীতা ৬.৩৪) "হে কৃষ্ণ, তুমি আমাকে মন নিয়ন্ত্রণ করতে উপদেশ করছো। কিন্তু এটি এতোই শক্তিশালী আর চঞ্চল, - "আমার কাছে মন নিয়ন্ত্রণ করা বায়ু নিয়ন্ত্রণ করার মতোই।" যদি প্রচণ্ডবেগে বায়ুপ্রবাহিত হয়, তুমি কি তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে? সুতরাং তিনি এভাবে উদাহরণ দিচ্ছেন। তুমি তোমার মনকে কেবল তখনই সংযত করতে পারবে যখন তুমি তা শ্রীকৃষ্ণের চরণে নিবদ্ধ করবে। ব্যাস। আর কোন আজেবাজে কিছুই তোমার মনে আসতে পারবে না। শুধুই শ্রীকৃষ্ণ। সেটিই হচ্ছে ধ্যানের পরিপূর্ণতা।