BN/Prabhupada 0667 - এই দেহের কারণেই এই মিথ্যা ধারণার উদ্ভব হয়েছে: Difference between revisions

(Created page with "<!-- BEGIN CATEGORY LIST --> Category:1080 Bengali Pages with Videos Category:Prabhupada 0667 - in all Languages Category:BN-Quotes - 1969 Category:BN-Quotes - L...")
 
(Vanibot #0023: VideoLocalizer - changed YouTube player to show hard-coded subtitles version)
 
Line 9: Line 9:
<!-- END CATEGORY LIST -->
<!-- END CATEGORY LIST -->
<!-- BEGIN NAVIGATION BAR -- DO NOT EDIT OR REMOVE -->
<!-- BEGIN NAVIGATION BAR -- DO NOT EDIT OR REMOVE -->
<!-- BEGIN NAVIGATION BAR -- DO NOT EDIT OR REMOVE -->
{{1080 videos navigation - All Languages|Bengali|BN/Prabhupada 0666 - সূর্যের আলো যদি কক্ষ ভেদ করে প্রবেশ করতে পারে, তবে কৃষ্ণ কি হৃদয়ে প্রবেশ করতে পারেন না|0666|BN/Prabhupada 0668 - প্রতি মাসে কমপক্ষে দুইটি করে উপবাস|0668}}
<!-- BEGIN NAVIGATION BAR -- DO NOT EDIT OR REMOVE -->
{{1080 videos navigation - All Languages|Hindi|HI/Prabhupada 0666 अगर सूर्य तुम्हारे कमरे में प्रवेश कर सकता है, क्या कृष्ण तुम्हारे में प्रवेश नहीं कर सकते|0666|HI/Prabhupada 0668 - एक महीने में कम से कम दो अनिवार्य उपवास|0668}}
<!-- END NAVIGATION BAR -->
<!-- END NAVIGATION BAR -->
<!-- END NAVIGATION BAR -->
<!-- END NAVIGATION BAR -->
<!-- BEGIN ORIGINAL VANIQUOTES PAGE LINK-->
<!-- BEGIN ORIGINAL VANIQUOTES PAGE LINK-->
Line 23: Line 19:


<!-- BEGIN VIDEO LINK -->
<!-- BEGIN VIDEO LINK -->
{{youtube_right|UP6bjg3JZK8|এই দেহের কারণেই এই মিথ্যা ধারণার উদ্ভব হয়েছে। - Prabhupāda 0667}}
{{youtube_right|AT9m9HaKyTY|এই দেহের কারণেই এই মিথ্যা ধারণার উদ্ভব হয়েছে<br/> - Prabhupāda 0667}}
<!-- END VIDEO LINK -->
<!-- END VIDEO LINK -->


Line 35: Line 31:


<!-- BEGIN TRANSLATED TEXT -->
<!-- BEGIN TRANSLATED TEXT -->
ভক্তবৃন্দঃ শ্রী শ্রী গুরুগৌরাঙ্গের জয়। ভক্তঃ শ্লোক ১৬ হে অর্জুন যে রকম ব্যক্তির কখনও যোগী হওয়া সম্ভব নয়, যে ব্যক্তি অধিক ভোজনকারী, নিতান্ত অনাহারী, অধিক নিদ্রাপ্রিয় ও নিদ্রাশুন্য। ([[Vanisource:BG 6.16 (1972)|গীতা ৬.১৬]])
ভক্তবৃন্দঃ শ্রী শ্রী গুরুগৌরাঙ্গের জয়।  
 
শ্রীল প্রভুপাদঃ এটি অত্যন্ত ভাল কথা। কোনও কিছুই একদম নিষেধ করা নেই, কারণ তোমাকে এই দেহের সাহায্যেই যোগ অনুশীলন করতে হবে। খারাপ কিছুর মধ্য থেকে যতটা সম্ভব সবচেয়ে ভাল কিছু করে নিতে হবে। বুঝলে? এই জড় দেহটি হচ্ছে সমস্ত দুখ-যন্ত্রণার উৎস। আসলে চিন্ময় আত্মার কোন দুঃখ নেই। ঠিক যেমন স্বাভাবিক অবস্থায় জীবের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। কোন কলুষতা বা সংক্রমণের দ্বারা রোগ সৃষ্টি হয়। রোগাক্রান্ত অবস্থাটি আমাদের আসল জীবন নয়।
 
ঠিক তেমনই বর্তমানের জড় জাগতিক অবস্থাটি হচ্ছে বদ্ধ জীবের রোগাক্রান্ত অবস্থা। আর সেই রোগটি কি? রোগটি হচ্ছে এই দেহ। কারণ এই দেহটি আমার জন্য নয়, এটি আমার দেহ নয়। ঠিক যেমন তোমার পোশাক। তুমি পোশাকটি নও। এখানে তোমরা বিভিন্ন ধরণের পোশাক পড়ে আছ। কেউ লাল, কেউ সাদা, কেউ বা হলুদ রঙের পোশাক। কিন্তু সেটি রঙটি পোশাকের, আমি সেটি নই। ঠিক তেমনই এই দেহটিও। আমি শ্বেতাঙ্গ, আমি কৃষ্ণাঙ্গ, আমি আমেরিকান, আমি ভারতীয়, আমি হিন্দু , আমি মুসলমান ইত্যাদি। এটি আমার আসল স্বরূপ নয়। এ সবই হচ্ছে রোগাক্রান্ত অবস্থা। রোগাক্রান্ত অবস্থা। আর সেই রোগাক্রান্ত অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তোমার যে প্রচেষ্টা সেটি হচ্ছে যোগ অনুশীলন।
 
পরমেশ্বরের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হওয়া। কারণ আমি তাঁর অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই একই উদাহরণ। যে কোন ভাবেই হোক, আমার হাতের একটি আঙ্গুল হয়তো হাত থেকে কেটে পড়ে গিয়েছে, তাহলে তার আর কোন মূল্য নেই। যদি আমার হাতের আঙ্গুলটি কেটে মাটিতে পড়ে থাকে, এর কোনই মূল্য নেই। কিন্তু যেই মুহূর্তে সেটি শরীরের সাথে যুক্ত হয়, তার মূল্য কোটি কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। অমূল্য। ঠিক তেমনই, আমরা জড়া প্রকৃতির দ্বারা ভগবানের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছি, ভুলে আছি, বিচ্ছিন্ন নয়। সংযোগ রয়েছে। ভগবান আমাদের সমস্ত প্রয়োজনগুলো সরবরাহ করছেন, ঠিক যেমন রাষ্ট্রের কয়েদী সরকার থেকে একভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে, সে অপরাধ বিভাগের অধীনে আছে। কিন্তু সেটি আসলে বিচ্ছিন্ন হওয়া নয়। কারণ সরকার তখনও তার দেখভাল করছে। কিন্তু আইনত বিচ্ছিন্ন। ঠিক তেমনই আমরা বিচ্ছিন্ন নই।
 
আমরা ভগবানের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারি না। কারণ শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই। তাই আমি কিভাবে তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারি? বিচ্ছিন্ন হওয়া মানে শ্রীকৃষ্ণের সেবায় যুক্ত না হয়ে বরং তাঁকে ভুলে থাকা। আমি অনেক ধরণের আজেবাজে কিছুতে নিযুক্ত হয়ে আছি। সেটিই হচ্ছে আমার বিচ্ছিন্নতা। আমি ভগবানের বা শ্রীকৃষ্ণের নিত্য দাস, সেই কথা ভাবার পরিবর্তে আমি ভাবছি, আমি এই সমাজের সেবক, আমি আমার দেশের সেবক, আমি আমার স্বামীর সেবক, আমি আমার স্ত্রীর সেবক, আমি আমার কুকুরের সেবক ইত্যাদি বহু কিছুর সেবক। এটি হচ্ছে ভগবৎ বিস্মৃতি। এটি কিভাবে ঘটলো? এই দেহটির কারণেই। সবকিছু।
 
সমস্ত ভুল ধারণাগুলোই এই দেহের কারণে ঘটছে। যেহেতু আমার আমেরিকায় জন্ম হয়েছে তাই আমি ভাবছি আমি হচ্ছি আমেরিকান। আর যেহেতু আমি মনে করছি যে আমি আমেরিকান, আমেরিকা সরকার তাই দাবী করছে, "হ্যাঁ, তোমাকে আমাদের জন্য যুদ্ধ করতে হবে, তোমার জীবন দিতে হবে"। কেন? এই দেহটির জন্য। তাই বুদ্ধিমান মানুষের এটি জানা উচিৎ যে আমার এই দেহটির জন্যই আমাকে জীবনের সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা পোহাতে হচ্ছে। তাই আমাদের এমনভাবে কাজ করা উচিৎ নয় যাতে জন্ম জন্ম ধরে আমাকে এই দেহের মধ্যে বদ্ধ হয়ে থাকার শাস্তি পেতে হয়। হয় আমেরিকান দেহ, নয় ভারতীয়; নয় কুকুর বা শুকরের দেহ, ইত্যাদি ৮৪ লক্ষ প্রকার বহ্য বহু দেহ আর এই দেহগত কলুষতা থেকে বেরিয়ে আসার পন্থার নামই হচ্ছে যোগ।
 
কিন্তু সর্বপ্রথম আমাকে যেটি বুঝতে হবে তা হচ্ছে আমি এই দেহটি নই, ভগবদগীতার শিক্ষার এটিই হচ্ছে মৌলিক মূলনীতি। অশোচ্যান্অন্বশোচস্ত্বং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে ([[Vanisource:BG 2.11 (1972)|গীতা ২.১১]]) "হে প্রিয় অর্জুন, তুমি খুব ভাল ভাল কথা বলছ, ঠিক যেন অত্যন্ত শিক্ষিত লোকের মতো। কিন্তু তুমি কেবল দৈহিক স্তরের ধারণা থেকেই এসব মূর্খের মতো সব বলে যাচ্ছ।" "আমি এর পিতা, এঁরা আমার আত্মীয়, ওরা আমার এই, ওরা আমার ঐ, আমি কিভাবে এঁদের মারবো, আমি কিভাবে এসব করব, না না আমি পারবো না... " সমস্ত কথাগুলিই দেহের স্তর থেকে বলা।


সেই জন্য শ্রীকৃষ্ণকে গুরুরূপে গ্রহণ করার পর, তিনি অর্জুনকে তাঁর শিষ্যরূপে সঙ্গে সঙ্গে ভৎর্সনা করছেন "তুমি একটা মূর্খ, তুমি খুব জ্ঞানীর মতো কথা বলছ যেন তুমি কত কিছুই না জান, কিন্তু এই সব কিছুই তুমি কেবল দেহগত ধারণার স্তর থেকেই বলছ।" সুতরাং সারা বিশ্বে মানুষেরা তাদের নিজেদেরকে শিক্ষা-দীক্ষায় খুব উন্নত জ্ঞানী বলে জাহির করছে, বিজ্ঞান, দর্শন, রাজনীতি, এটা-সেটা কত কিছু... কিন্তু তাদের সবাই দেহগত ধারণার মধ্যেই রয়েছে।
ভক্তঃ শ্লোক ১৬ হে অর্জুন যে রকম ব্যক্তির কখনও যোগী হওয়া সম্ভব নয়, যে ব্যক্তি অধিক ভোজনকারী, নিতান্ত অনাহারী, অধিক নিদ্রাপ্রিয় ও নিদ্রাশুন্য। ([[Vanisource:BG 6.16 (1972)|গীতা ৬/১৬]])


ঠিক যেমন একটি উদাহরণ , শকুন। শকুন অনেক উঁচুতে উড়তে পারে, প্রায় সাত-আট মাইল উঁচুতে উড়তে পারে। দারুন ব্যাপার, তুমি এটা করতে পারবে না। আর ওর খুব তীক্ষ্ণ চোখও আছে। শকুনদের চোখগুলো ছোট ছোট, কিন্তু ওগুলো এতোই শক্তিশালী যে ওরা সাত মাইল দূর থেকেও দেখতে পায় যে কোথায় মৃতদেহ পড়ে আছে। সুতরাং খুব ভাল যোগ্যতা আছে ওর। ও খুব উঁচুতে উড়তে পারে, খুব দূর থেকে দেখতে পায়। ওহ, কিন্তু ওর দেখার বিষয়টি কি? মৃত দেহ। ব্যাস। মরা লাশ পাওয়া আর সেটি খাওয়ার মধ্যেই ওর যত যোগ্যতা।
শ্রীল প্রভুপাদঃ এটি অত্যন্ত ভাল কথা। কোনও কিছুই একদম নিষেধ করা নেই, কারণ তোমাকে এই দেহের সাহায্যেই যোগ অনুশীলন করতে হবে। খারাপ কিছুর মধ্য থেকে যতটা সম্ভব সবচেয়ে ভাল কিছু করে নিতে হবে। বুঝলে? এই জড় দেহটি হচ্ছে সমস্ত দুখ-যন্ত্রণার উৎস। আসলে চিন্ময় আত্মার কোন দুঃখ নেই। ঠিক যেমন স্বাভাবিক অবস্থায় জীবের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। কোন কলুষতা বা সংক্রমণের দ্বারা রোগ সৃষ্টি হয়। রোগাক্রান্ত অবস্থাটি আমাদের আসল জীবন নয়। ঠিক তেমনই বর্তমানের জড় জাগতিক অবস্থাটি হচ্ছে বদ্ধ জীবের রোগাক্রান্ত অবস্থা। আর সেই রোগটি কি? রোগটি হচ্ছে এই দেহ। কারণ এই দেহটি আমার জন্য নয়, এটি আমার দেহ নয়। ঠিক যেমন তোমার পোশাক। তুমি পোশাকটি নও। এখানে তোমরা বিভিন্ন ধরণের পোশাক পড়ে আছ। কেউ লাল, কেউ সাদা, কেউ বা হলুদ রঙের পোশাক। কিন্তু সেটি রঙটি পোশাকের, আমি সেটি নই। ঠিক তেমনই এই দেহটিও। আমি শ্বেতাঙ্গ, আমি কৃষ্ণাঙ্গ, আমি আমেরিকান, আমি ভারতীয়, আমি হিন্দু , আমি মুসলমান ইত্যাদি। এটি আমার আসল স্বরূপ নয়। এ সবই হচ্ছে রোগাক্রান্ত অবস্থা। রোগাক্রান্ত অবস্থা। আর সেই রোগাক্রান্ত অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তোমার যে প্রচেষ্টা সেটি হচ্ছে যোগ অনুশীলন।


ঠিক তেমনই, আমরা হয়তো অনেক উচ্চশিক্ষিত হতে পারি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্যটি কি? আমাদের দেখার বিষয়টি কি? কিভাবে এই ইন্দ্রিয়, এই দেহটিকে ভোগ করতে পারব। ব্যাস। আর বিজ্ঞাপন? "ওহ, ঐ লোকগুলো স্পুটনিক নিয়ে সাতশ মাইল উঁচুতে উঠে গেছে।" কিন্তু তুমি করছটা কি? তোমার কাজ কি? ইন্দ্রিয় ভোগ। ব্যাস। এটা তো পশুবৃত্তি মাত্র। তাই লোকেরা বুঝতে পারছে না যে কিভাবে তারা এই দেহটির দ্বারা যন্ত্রণা পাচ্ছে। তাই আমাদেরকে সবার প্রথমে এটি বুঝতে হবে যে আমাদের এই দুর্দশাপূর্ণ জড় জাগতিক জীবনের মূল কারণ হচ্ছে আমাদের এই জড় দেহটি। আর একই সাথে এই দেহটি স্থায়ীও নয়। ধরা যাক, আমি আমার সবকিছুকে আমার পরিচয়ে পরিচিত করাচ্ছি, আমার পরিবার, সমাজ, দেশ, এটা-সেটা ইত্যাদি অনেক কিছু। কিন্তু কত দিন? এসব স্থায়ী নয়। 'অসন্'। অসন্ মানে এসব কিছুই থাকবে না। অসন্নপি ক্লেশদ আস দেহ ([[Vanisource:SB 5.5.4|ভাগবত ৫.৫.৪]]) , কেবলই ঝঞ্ঝাটপূর্ণ। স্থায়ীও নয় আর কেবল দুঃখই দেয়। এর নাম বুদ্ধি যে কিভাবে এসব থেকে বেরিয়ে আসা যায়।
পরমেশ্বরের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হওয়া। কারণ আমি তাঁর অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই একই উদাহরণ। যে কোন ভাবেই হোক, আমার হাতের একটি আঙ্গুল হয়তো হাত থেকে কেটে পড়ে গিয়েছে, তাহলে তার আর কোন মূল্য নেই। যদি আমার হাতের আঙ্গুলটি কেটে মাটিতে পড়ে থাকে, এর কোনই মূল্য নেই। কিন্তু যেই মুহূর্তে সেটি শরীরের সাথে যুক্ত হয়, তার মূল্য কোটি কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। অমূল্য। ঠিক তেমনই, আমরা জড়া প্রকৃতির দ্বারা ভগবানের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছি, ভুলে আছি, বিচ্ছিন্ন নয়। সংযোগ রয়েছে। ভগবান আমাদের সমস্ত প্রয়োজনগুলো সরবরাহ করছেন, ঠিক যেমন রাষ্ট্রের কয়েদী সরকার থেকে একভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে, সে অপরাধ বিভাগের অধীনে আছে। কিন্তু সেটি আসলে বিচ্ছিন্ন হওয়া নয়। কারণ সরকার তখনও তার দেখভাল করছে। কিন্তু আইনত বিচ্ছিন্ন। ঠিক তেমনই আমরা বিচ্ছিন্ন নই। আমরা ভগবানের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারি না। কারণ শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই। তাই আমি কিভাবে তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারি? বিচ্ছিন্ন হওয়া মানে শ্রীকৃষ্ণের সেবায় যুক্ত না হয়ে বরং তাঁকে ভুলে থাকা। আমি অনেক ধরণের আজেবাজে কিছুতে নিযুক্ত হয়ে আছি। সেটিই হচ্ছে আমার বিচ্ছিন্নতা। আমি ভগবানের বা শ্রীকৃষ্ণের নিত্য দাস, সেই কথা ভাবার পরিবর্তে আমি ভাবছি, আমি এই সমাজের সেবক, আমি আমার দেশের সেবক, আমি আমার স্বামীর সেবক, আমি আমার স্ত্রীর সেবক, আমি আমার কুকুরের সেবক ইত্যাদি বহু কিছুর সেবক। এটি হচ্ছে ভগবৎ বিস্মৃতি। এটি কিভাবে ঘটলো? এই দেহটির কারণেই। সবকিছু। সমস্ত ভুল ধারণাগুলোই এই দেহের কারণে ঘটছে। যেহেতু আমার আমেরিকায় জন্ম হয়েছে তাই আমি ভাবছি আমি হচ্ছি আমেরিকান। আর যেহেতু আমি মনে করছি যে আমি আমেরিকান, আমেরিকা সরকার তাই দাবী করছে, "হ্যাঁ, তোমাকে আমাদের জন্য যুদ্ধ করতে হবে, তোমার জীবন দিতে হবে"। কেন? এই দেহটির জন্য। তাই বুদ্ধিমান মানুষের এটি জানা উচিৎ যে আমার এই দেহটির জন্যই আমাকে জীবনের সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা পোহাতে হচ্ছে। তাই আমাদের এমনভাবে কাজ করা উচিৎ নয় যাতে জন্ম জন্ম ধরে আমাকে এই দেহের মধ্যে বদ্ধ হয়ে থাকার শাস্তি পেতে হয়। হয় আমেরিকান দেহ, নয় ভারতীয়; নয় কুকুর বা শুকরের দেহ, ইত্যাদি ৮৪ লক্ষ প্রকার বহ্য বহু দেহ আর এই  দেহগত কলুষতা থেকে বেরিয়ে আসার পন্থার নামই হচ্ছে যোগ। কিন্তু সর্বপ্রথম আমাকে যেটি বুঝতে হবে তা হচ্ছে আমি এই দেহটি নই, ভগবদগীতার শিক্ষার এটিই হচ্ছে মৌলিক মূলনীতি। অশোচ্যান্অন্বশোচস্ত্বং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে ([[Vanisource:BG 2.11 (1972)|গীতা ২.১১]]) "হে প্রিয় অর্জুন, তুমি খুব ভাল ভাল কথা বলছ, ঠিক যেন অত্যন্ত শিক্ষিত লোকের মতো। কিন্তু তুমি কেবল দৈহিক স্তরের ধারণা থেকেই এসব মূর্খের মতো সব বলে যাচ্ছ।" "আমি এর পিতা, এঁরা আমার আত্মীয়, ওরা আমার এই, ওরা আমার ঐ, আমি কিভাবে এঁদের মারবো, আমি কিভাবে এসব করব, না না আমি পারবো না... " সমস্ত কথাগুলিই দেহের স্তর থেকে বলা। সেই জন্য শ্রীকৃষ্ণকে গুরুরূপে গ্রহণ করার পর, তিনি অর্জুনকে তাঁর শিষ্যরূপে সঙ্গে সঙ্গে ভৎর্সনা করছেন "তুমি একটা মূর্খ, তুমি খুব জ্ঞানীর মতো কথা বলছ যেন তুমি কত কিছুই না জান, কিন্তু এই সব কিছুই তুমি কেবল দেহগত ধারণার স্তর থেকেই বলছ।" সুতরাং সারা বিশ্বে মানুষেরা তাদের নিজেদেরকে শিক্ষা-দীক্ষায় খুব উন্নত জ্ঞানী বলে জাহির করছে, বিজ্ঞান, দর্শন, রাজনীতি, এটা-সেটা কত কিছু... কিন্তু তাদের সবাই দেহগত ধারণার মধ্যেই রয়েছে। ঠিক যেমন একটি উদাহরণ , শকুন। শকুন অনেক উঁচুতে উড়তে পারে, প্রায় সাত-আট মাইল উঁচুতে উড়তে পারে। দারুন ব্যাপার, তুমি এটা করতে পারবে না। আর ওর খুব তীক্ষ্ণ চোখও আছে। শকুনদের চোখগুলো ছোট ছোট, কিন্তু ওগুলো এতোই শক্তিশালী যে ওরা সাত মাইল দূর থেকেও দেখতে পায় যে কোথায় মৃতদেহ পড়ে আছে। সুতরাং খুব ভাল যোগ্যতা আছে ওর। ও খুব উঁচুতে উড়তে পারে, খুব দূর থেকে দেখতে পায়। ওহ, কিন্তু ওর দেখার বিষয়টি কি? মৃত দেহ। ব্যাস। মরা লাশ পাওয়া আর সেটি খাওয়ার মধ্যেই ওর যত যোগ্যতা। ঠিক তেমনই, আমরা হয়তো অনেক উচ্চশিক্ষিত হতে পারি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্যটি কি? আমাদের দেখার বিষয়টি কি? কিভাবে এই ইন্দ্রিয়, এই দেহটিকে ভোগ করতে পারব। ব্যাস। আর বিজ্ঞাপন? "ওহ, ঐ লোকগুলো স্পুটনিক নিয়ে সাতশ মাইল উঁচুতে উঠে গেছে।" কিন্তু তুমি করছটা কি? তোমার কাজ কি? ইন্দ্রিয় ভোগ। ব্যাস। এটা তো পশুবৃত্তি মাত্র। তাই লোকেরা বুঝতে পারছে না যে কিভাবে তারা এই দেহটির দ্বারা যন্ত্রণা পাচ্ছে।  


মানুষেরা এসে বলে, "আমি শান্তিতে নেই। সমস্যায় আছি। আমার মনটা শান্তি পাচ্ছে না"। কিন্তু যখন এসব থেকে মুক্তির ঔষধ দেয়া হয়, তখন তারা সেটি গ্রহণ করতে চায় না। দেখলে? সে নিজে যা বুঝেছে, তার মনমতো উপাদেয় সেরকম কিছু চায়। ব্যাস। অনেক লোক আমাদের কাছে আসে আর বলে, "স্বামীজী, দেখুন আমার এই অবস্থা" আর যেই না আমরা ঔষধটি দিচ্ছি তখন আর সেটি সে গ্রহণ করছে না। কারণ সে এমন কিছু ঔষধ চায় যেটি তার নিজের মনমতো হবে। তাহলে আমরা কিভাবে সেরকম কিছু দিই? এমনটাই যদি হয় তাহলে তোমরা ডাক্তারের কাছে যাও কেন? নিজের চিকিৎসা নিজেই বানাতে চাইছ।  
তাই আমাদেরকে সবার প্রথমে এটি বুঝতে হবে যে আমাদের এই দুর্দশাপূর্ণ জড় জাগতিক জীবনের মূল কারণ হচ্ছে আমাদের এই জড় দেহটি। আর একই সাথে এই দেহটি স্থায়ীও নয়। ধরা যাক, আমি আমার সবকিছুকে আমার পরিচয়ে পরিচিত করাচ্ছি, আমার পরিবার, সমাজ, দেশ, এটা-সেটা ইত্যাদি অনেক কিছু। কিন্তু কত দিন? এসব স্থায়ী নয়। 'অসন্'। অসন্ মানে এসব কিছুই থাকবে না। অসন্নপি ক্লেশদ আস দেহ ([[Vanisource:SB 5.5.4|ভাগবত ৫.৫.৪]]) , কেবলই ঝঞ্ঝাটপূর্ণ। স্থায়ীও নয় আর কেবল দুঃখই দেয়। এর নাম বুদ্ধি যে কিভাবে এসব থেকে বেরিয়ে আসা যায়। মানুষেরা এসে বলে, "আমি শান্তিতে নেই। সমস্যায় আছি। আমার মনটা শান্তি পাচ্ছে না"। কিন্তু যখন এসব থেকে মুক্তির ঔষধ দেয়া হয়, তখন তারা সেটি গ্রহণ করতে চায় না। দেখলে? সে নিজে যা বুঝেছে, তার মনমতো উপাদেয় সেরকম কিছু চায়। ব্যাস। অনেক লোক আমাদের কাছে আসে আর বলে, "স্বামীজী, দেখুন আমার এই অবস্থা" আর যেই না আমরা ঔষধটি দিচ্ছি তখন আর সেটি সে গ্রহণ করছে না। কারণ সে এমন কিছু ঔষধ চায় যেটি তার নিজের মনমতো হবে। তাহলে আমরা কিভাবে সেরকম কিছু দিই? এমনটাই যদি হয় তাহলে তোমরা ডাক্তারের কাছে যাও কেন? নিজের চিকিৎসা নিজেই বানাতে চাইছ।  
<!-- END TRANSLATED TEXT -->
<!-- END TRANSLATED TEXT -->

Latest revision as of 17:25, 29 June 2021



Lecture on BG 6.16-24 -- Los Angeles, February 17, 1969

ভক্তবৃন্দঃ শ্রী শ্রী গুরুগৌরাঙ্গের জয়।

ভক্তঃ শ্লোক ১৬ হে অর্জুন যে রকম ব্যক্তির কখনও যোগী হওয়া সম্ভব নয়, যে ব্যক্তি অধিক ভোজনকারী, নিতান্ত অনাহারী, অধিক নিদ্রাপ্রিয় ও নিদ্রাশুন্য। (গীতা ৬/১৬)

শ্রীল প্রভুপাদঃ এটি অত্যন্ত ভাল কথা। কোনও কিছুই একদম নিষেধ করা নেই, কারণ তোমাকে এই দেহের সাহায্যেই যোগ অনুশীলন করতে হবে। খারাপ কিছুর মধ্য থেকে যতটা সম্ভব সবচেয়ে ভাল কিছু করে নিতে হবে। বুঝলে? এই জড় দেহটি হচ্ছে সমস্ত দুখ-যন্ত্রণার উৎস। আসলে চিন্ময় আত্মার কোন দুঃখ নেই। ঠিক যেমন স্বাভাবিক অবস্থায় জীবের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। কোন কলুষতা বা সংক্রমণের দ্বারা রোগ সৃষ্টি হয়। রোগাক্রান্ত অবস্থাটি আমাদের আসল জীবন নয়। ঠিক তেমনই বর্তমানের জড় জাগতিক অবস্থাটি হচ্ছে বদ্ধ জীবের রোগাক্রান্ত অবস্থা। আর সেই রোগটি কি? রোগটি হচ্ছে এই দেহ। কারণ এই দেহটি আমার জন্য নয়, এটি আমার দেহ নয়। ঠিক যেমন তোমার পোশাক। তুমি পোশাকটি নও। এখানে তোমরা বিভিন্ন ধরণের পোশাক পড়ে আছ। কেউ লাল, কেউ সাদা, কেউ বা হলুদ রঙের পোশাক। কিন্তু সেটি রঙটি পোশাকের, আমি সেটি নই। ঠিক তেমনই এই দেহটিও। আমি শ্বেতাঙ্গ, আমি কৃষ্ণাঙ্গ, আমি আমেরিকান, আমি ভারতীয়, আমি হিন্দু , আমি মুসলমান ইত্যাদি। এটি আমার আসল স্বরূপ নয়। এ সবই হচ্ছে রোগাক্রান্ত অবস্থা। রোগাক্রান্ত অবস্থা। আর সেই রোগাক্রান্ত অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তোমার যে প্রচেষ্টা সেটি হচ্ছে যোগ অনুশীলন।

পরমেশ্বরের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হওয়া। কারণ আমি তাঁর অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেই একই উদাহরণ। যে কোন ভাবেই হোক, আমার হাতের একটি আঙ্গুল হয়তো হাত থেকে কেটে পড়ে গিয়েছে, তাহলে তার আর কোন মূল্য নেই। যদি আমার হাতের আঙ্গুলটি কেটে মাটিতে পড়ে থাকে, এর কোনই মূল্য নেই। কিন্তু যেই মুহূর্তে সেটি শরীরের সাথে যুক্ত হয়, তার মূল্য কোটি কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে যায়। অমূল্য। ঠিক তেমনই, আমরা জড়া প্রকৃতির দ্বারা ভগবানের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছি, ভুলে আছি, বিচ্ছিন্ন নয়। সংযোগ রয়েছে। ভগবান আমাদের সমস্ত প্রয়োজনগুলো সরবরাহ করছেন, ঠিক যেমন রাষ্ট্রের কয়েদী সরকার থেকে একভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে, সে অপরাধ বিভাগের অধীনে আছে। কিন্তু সেটি আসলে বিচ্ছিন্ন হওয়া নয়। কারণ সরকার তখনও তার দেখভাল করছে। কিন্তু আইনত বিচ্ছিন্ন। ঠিক তেমনই আমরা বিচ্ছিন্ন নই। আমরা ভগবানের থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারি না। কারণ শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই। তাই আমি কিভাবে তাঁর থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারি? বিচ্ছিন্ন হওয়া মানে শ্রীকৃষ্ণের সেবায় যুক্ত না হয়ে বরং তাঁকে ভুলে থাকা। আমি অনেক ধরণের আজেবাজে কিছুতে নিযুক্ত হয়ে আছি। সেটিই হচ্ছে আমার বিচ্ছিন্নতা। আমি ভগবানের বা শ্রীকৃষ্ণের নিত্য দাস, সেই কথা ভাবার পরিবর্তে আমি ভাবছি, আমি এই সমাজের সেবক, আমি আমার দেশের সেবক, আমি আমার স্বামীর সেবক, আমি আমার স্ত্রীর সেবক, আমি আমার কুকুরের সেবক ইত্যাদি বহু কিছুর সেবক। এটি হচ্ছে ভগবৎ বিস্মৃতি। এটি কিভাবে ঘটলো? এই দেহটির কারণেই। সবকিছু। সমস্ত ভুল ধারণাগুলোই এই দেহের কারণে ঘটছে। যেহেতু আমার আমেরিকায় জন্ম হয়েছে তাই আমি ভাবছি আমি হচ্ছি আমেরিকান। আর যেহেতু আমি মনে করছি যে আমি আমেরিকান, আমেরিকা সরকার তাই দাবী করছে, "হ্যাঁ, তোমাকে আমাদের জন্য যুদ্ধ করতে হবে, তোমার জীবন দিতে হবে"। কেন? এই দেহটির জন্য। তাই বুদ্ধিমান মানুষের এটি জানা উচিৎ যে আমার এই দেহটির জন্যই আমাকে জীবনের সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা পোহাতে হচ্ছে। তাই আমাদের এমনভাবে কাজ করা উচিৎ নয় যাতে জন্ম জন্ম ধরে আমাকে এই দেহের মধ্যে বদ্ধ হয়ে থাকার শাস্তি পেতে হয়। হয় আমেরিকান দেহ, নয় ভারতীয়; নয় কুকুর বা শুকরের দেহ, ইত্যাদি ৮৪ লক্ষ প্রকার বহ্য বহু দেহ আর এই দেহগত কলুষতা থেকে বেরিয়ে আসার পন্থার নামই হচ্ছে যোগ। কিন্তু সর্বপ্রথম আমাকে যেটি বুঝতে হবে তা হচ্ছে আমি এই দেহটি নই, ভগবদগীতার শিক্ষার এটিই হচ্ছে মৌলিক মূলনীতি। অশোচ্যান্অন্বশোচস্ত্বং প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে (গীতা ২.১১) "হে প্রিয় অর্জুন, তুমি খুব ভাল ভাল কথা বলছ, ঠিক যেন অত্যন্ত শিক্ষিত লোকের মতো। কিন্তু তুমি কেবল দৈহিক স্তরের ধারণা থেকেই এসব মূর্খের মতো সব বলে যাচ্ছ।" "আমি এর পিতা, এঁরা আমার আত্মীয়, ওরা আমার এই, ওরা আমার ঐ, আমি কিভাবে এঁদের মারবো, আমি কিভাবে এসব করব, না না আমি পারবো না... " সমস্ত কথাগুলিই দেহের স্তর থেকে বলা। সেই জন্য শ্রীকৃষ্ণকে গুরুরূপে গ্রহণ করার পর, তিনি অর্জুনকে তাঁর শিষ্যরূপে সঙ্গে সঙ্গে ভৎর্সনা করছেন "তুমি একটা মূর্খ, তুমি খুব জ্ঞানীর মতো কথা বলছ যেন তুমি কত কিছুই না জান, কিন্তু এই সব কিছুই তুমি কেবল দেহগত ধারণার স্তর থেকেই বলছ।" সুতরাং সারা বিশ্বে মানুষেরা তাদের নিজেদেরকে শিক্ষা-দীক্ষায় খুব উন্নত জ্ঞানী বলে জাহির করছে, বিজ্ঞান, দর্শন, রাজনীতি, এটা-সেটা কত কিছু... কিন্তু তাদের সবাই দেহগত ধারণার মধ্যেই রয়েছে। ঠিক যেমন একটি উদাহরণ , শকুন। শকুন অনেক উঁচুতে উড়তে পারে, প্রায় সাত-আট মাইল উঁচুতে উড়তে পারে। দারুন ব্যাপার, তুমি এটা করতে পারবে না। আর ওর খুব তীক্ষ্ণ চোখও আছে। শকুনদের চোখগুলো ছোট ছোট, কিন্তু ওগুলো এতোই শক্তিশালী যে ওরা সাত মাইল দূর থেকেও দেখতে পায় যে কোথায় মৃতদেহ পড়ে আছে। সুতরাং খুব ভাল যোগ্যতা আছে ওর। ও খুব উঁচুতে উড়তে পারে, খুব দূর থেকে দেখতে পায়। ওহ, কিন্তু ওর দেখার বিষয়টি কি? মৃত দেহ। ব্যাস। মরা লাশ পাওয়া আর সেটি খাওয়ার মধ্যেই ওর যত যোগ্যতা। ঠিক তেমনই, আমরা হয়তো অনেক উচ্চশিক্ষিত হতে পারি। কিন্তু আমাদের লক্ষ্যটি কি? আমাদের দেখার বিষয়টি কি? কিভাবে এই ইন্দ্রিয়, এই দেহটিকে ভোগ করতে পারব। ব্যাস। আর বিজ্ঞাপন? "ওহ, ঐ লোকগুলো স্পুটনিক নিয়ে সাতশ মাইল উঁচুতে উঠে গেছে।" কিন্তু তুমি করছটা কি? তোমার কাজ কি? ইন্দ্রিয় ভোগ। ব্যাস। এটা তো পশুবৃত্তি মাত্র। তাই লোকেরা বুঝতে পারছে না যে কিভাবে তারা এই দেহটির দ্বারা যন্ত্রণা পাচ্ছে।

তাই আমাদেরকে সবার প্রথমে এটি বুঝতে হবে যে আমাদের এই দুর্দশাপূর্ণ জড় জাগতিক জীবনের মূল কারণ হচ্ছে আমাদের এই জড় দেহটি। আর একই সাথে এই দেহটি স্থায়ীও নয়। ধরা যাক, আমি আমার সবকিছুকে আমার পরিচয়ে পরিচিত করাচ্ছি, আমার পরিবার, সমাজ, দেশ, এটা-সেটা ইত্যাদি অনেক কিছু। কিন্তু কত দিন? এসব স্থায়ী নয়। 'অসন্'। অসন্ মানে এসব কিছুই থাকবে না। অসন্নপি ক্লেশদ আস দেহ (ভাগবত ৫.৫.৪) , কেবলই ঝঞ্ঝাটপূর্ণ। স্থায়ীও নয় আর কেবল দুঃখই দেয়। এর নাম বুদ্ধি যে কিভাবে এসব থেকে বেরিয়ে আসা যায়। মানুষেরা এসে বলে, "আমি শান্তিতে নেই। সমস্যায় আছি। আমার মনটা শান্তি পাচ্ছে না"। কিন্তু যখন এসব থেকে মুক্তির ঔষধ দেয়া হয়, তখন তারা সেটি গ্রহণ করতে চায় না। দেখলে? সে নিজে যা বুঝেছে, তার মনমতো উপাদেয় সেরকম কিছু চায়। ব্যাস। অনেক লোক আমাদের কাছে আসে আর বলে, "স্বামীজী, দেখুন আমার এই অবস্থা" আর যেই না আমরা ঔষধটি দিচ্ছি তখন আর সেটি সে গ্রহণ করছে না। কারণ সে এমন কিছু ঔষধ চায় যেটি তার নিজের মনমতো হবে। তাহলে আমরা কিভাবে সেরকম কিছু দিই? এমনটাই যদি হয় তাহলে তোমরা ডাক্তারের কাছে যাও কেন? নিজের চিকিৎসা নিজেই বানাতে চাইছ।