BN/Prabhupada 0668 - প্রতি মাসে কমপক্ষে দুইটি করে উপবাস

Revision as of 10:54, 5 June 2021 by Soham (talk | contribs) (Created page with "<!-- BEGIN CATEGORY LIST --> Category:1080 Bengali Pages with Videos Category:Prabhupada 0668 - in all Languages Category:BN-Quotes - 1969 Category:BN-Quotes - L...")
(diff) ← Older revision | Latest revision (diff) | Newer revision → (diff)


Lecture on BG 6.16-24 -- Los Angeles, February 17, 1969

সুতরাং এখানে বলা হচ্ছে যে এই দেহটি হচ্ছে নিরর্থক, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা এর যত্ন নেব না। ঠিক যেমন, তুমি তোমার গাড়িতে করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাচ্ছ। তুমি এই গাড়িটি নও। কিন্তু যেহেতু কাজের জন্য তোমাকে এই গাড়িটি ব্যবহার করতে হচ্ছে তাই তোমাকে এই গাড়িটিরও যত্ন নিতে হবে। কিন্তু এতো অতিরিক্ত যত্ন নয় যে তুমি এই গাড়ি নিয়ে এতোটাই মশগুল হয়ে গেলে যে আর কোনও কাজই করলে না। ঠিক যেমন কোনও ব্যক্তি তার গাড়ির যত্নে এতোই আসক্ত যে সারাদিন ধরে কেবল গাড়িটিই মোছামুছি করে যাচ্ছে। সুতরাং আমরা এই দেহটির প্রতি অতিরিক্ত আসক্ত হব না। কিন্তু যেহেতু এই দেহের দ্বারা আমাদের কৃষ্ণ ভাবনামৃত সংশ্লিষ্ট কর্তব্যকর্ম পালন করতে হবে, তাই আমাদের এই দেহটিকে সুস্থ রাখতে হবে। একে বলা হয় যুক্ত বৈরাগ্য। আমরা অবহেলা করব না। আমাদের নিত্যদিন স্নান করা উচিৎ, স্বাস্থ্যকর খাদ্য অর্থাৎ কৃষ্ণপ্রসাদ গ্রহণ করা উচিৎ, আমাদের মন ও দেহকে সুস্থ্য রাখতে হবে।

সেইটির প্রয়োজন রয়েছে। সুতরাং এই কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন এই কথা বলে না যে আপনি কৃত্রিমভাবে কিছু পরিত্যাগ করুন, এই সব বাজে কথা। আর তার পরিবর্তে আমরা কোন মাদক দ্রব্যের দ্বারা সেই অভাব পূরণ করি। না। আপনি ভালো ভালো খাবার গ্রহণ করুন। শ্রীকৃষ্ণ উপাদেয় খাদ্যসমূহ দিয়েছেন। ফল, খাদ্যশস্য, দুধ - এইসব দিয়ে আপনি হাজারো রকমের উপাদেয় খাবার বানাতে পারেন। আমরা এই সমস্ত শস্য দিয়ে তাই-ই করছি। আপনাদেরকে এই প্রীতিভোজে আমন্ত্রণ জানানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, আপনাদের যত রকমের আজেবাজে খাবার এইসব উপাদেয় কৃষ্ণপ্রসাদের দ্বারা পরিবর্তন করুন। ওগুলো স্বাস্থ্যকর নয়। এইগুলো হচ্ছে স্বাস্থ্যকর খাবার। স্বাস্থ্যপ্রদ খাবার। উপাদেয় এবং স্বাস্থ্যকর। সুতরাং কৃষ্ণ প্রসাদ খান, সুস্বাদু প্রসাদ। যদি আপনার জিহ্বা ভাল ভাল খেতে চায়, আমরা আপনাদের হাজারো রকমের সুস্বাদু প্রসাদ দিতে পারি যা শ্রীকৃষ্ণকে অর্পণ করা হয়েছে। সিঙ্গারা আর রসগোল্লা। এরকম বহু বহু জিনিস আমরা দিতে পারি। এতে কোন বাধা নেই। কিন্তু অতিরিক্ত খেও না। "আহা, এটি খুব সুস্বাদু। তাহলে এক ডজন রসগোল্লা খাওয়া যাক।" না, তেমন ভাবে খেও না। (হাসি)। সেইটি ভাল নয়। সেইটি হচ্ছে লোভ। তোমাকে কেবল শরীর ঠিক রাখার জন্য যতটুকু দরকার ততটুকুই খেতে হবে। শুধু ততটুকুই ঘুমোবে, যতটুকু তোমার শরীর ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজন। এর চেয়ে বেশি নয়। যুক্তাহার বিহারস্য যোগ ভবতি সিদ্ধি। একে বলা হয় যুক্ত। আমাদের কেবল সুস্থ্য থাকার জন্যই খাওয়া উচিৎ। আমাদের কেবল সুস্থ্য থাকার জন্যই ঘুমোনো উচিৎ। কিন্তু যদি তুমি তা কমাতে পারো, সেইটি ভালো। কিন্তু এতোটাই নয় যাতে করে অসুস্থ হয়ে গেলে।

কারণ শুরুর দিকে, যেহেতু আমরা পেটুকের মতো খেতে অভ্যস্ত, তাই কৃত্রিমভাবে কম খাওয়ার চেষ্টা কোর না। তুমি খাও, কিন্তু কমাতে চেষ্টা কর। যত বেশি খাবে... সেই জন্য উপবাসের কথা বলা হয়েছে। প্রতি মাসে কমপক্ষে দুইটি বাধ্যতামূলক উপবাস করতে হবে। এ ছাড়াও অন্যান্য উপবাসের দিনও রয়েছে। তোমরা যতই তোমাদের আহার এবং নিদ্রা সংযত করতে পারবে, ততই তোমাদের শরীর ভালো থাকবে। বিশেষ করে পারমার্থিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য। কিন্তু কৃত্রিমভাবে নয়। কৃত্রিমভাবে নয়। কিন্তু যখন তুমি উন্নত হবে, স্বাভাবিকভাবেই তুমি (খিদে) অনুভব করবে না... ঠিক যেমন রঘুনাথ দাস গোস্বামীর ন্যায়। উদাহরণ আছে। রঘুনাথ দাস গোস্বামী এক বিশাল জমিদারপুত্র ছিলেন। তিনি গৃহ ত্যাগ করেছিলেন এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর পিতা - রঘুনাথ ছিলেন একমাত্র ছেলে, অত্যন্ত প্রিয় পুত্র। তিনি সুন্দরী স্ত্রী ইত্যাদি সবকিছুই পরিত্যাগ করেছিলেন। পালিয়ে গিয়েছিলেন। কাউকে কিছু না বলে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তাঁর পিতা বুঝতে পেরেছিলেন যে তিনি পুরীতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কাছে গিয়েছেন। তাই তিনি চারজন সেবক পাঠালেন। কারণ তিনি অত্যন্ত ধনী ছিলেন। চার'শ রূপী পাঠালেন। পাঁচ হাজার বছর আগে চারশ টাকা মানে এখনকার মূল্যের চেয়ে কুড়িগুণ বেশি। প্রথমে তিনি তা গ্রহণ করলেন, "ওহ্‌ বাবা পাঠিয়েছেন, ঠিক আছে।" তিনি কি ভাবে সেই টাকা খরচ করছিলেন? তিনি সমস্ত সন্ন্যাসীদের নিমন্ত্রণ করছিলেন। জগন্নাথ পুরীতে তখন অনেক ত্যাগের আশ্রম অবলম্বনকারী সন্ন্যাসী ছিলেন। আর তিনি (রঘুনাথ) প্রতি মাসে মহাভোজ আয়োজন করতেন। কিছু দিন পর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর সচিব স্বরূপ দামোদরকে জিজ্ঞাসা করলেন, "ইদানীং আমি রঘুনাথের কাছ থেকে কোনও নিমন্ত্রণ পাচ্ছি না। কি হয়েছে?" "প্রভু, সে তাঁর পিতার কাছ থেকে অর্থ নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।" "আচ্ছা, তা তো খুবই ভাল।" সে ভেবেছে, "আমি আমার সবকিছুই পরিত্যাগ করেছি আর এদিকে আমার বাবার দেয়া টাকা উপভোগ করছি। এইসব বাজে হচ্ছে।" সে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন। যে লোকটি টাকা নিয়ে আসতো তাকে সে বলে দিয়েছেন, "তুমি বাড়ি চলে যাও। আমি টাকা চাই না।" "তাহলে ও এখন কিভাবে চলছে?" "সে এখন জগন্নাথ মন্দিরের সিংহদ্বারে দাঁড়িয়ে থাকে এবং যখন পুজারীরা মহাপ্রসাদ নিয়ে বাড়ি যায়, তখন তাঁরা কিছু দেন আর সে ঐটুকু প্রসাদ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকে।" শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বললেন, "এটি ঠিক আছে। খুবই ভাল হয়েছে।" পরে একদিন মহাপ্রভু খোঁজ করছিলেন সে কিভাবে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে। সুতরাং তিনি তাকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন। কিছুদিন পর রঘুনাথ দাস গোস্বামী সেখানে দাঁড়ানোও বন্ধ করে দিলেন। তখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর সচিবকে জিজ্ঞাসা করলেন, "আমি আর রঘুনাথকে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছি না। সে তাহলে এখন কি করছে?" "না প্রভু। সে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ সে ভেবেছে যে, "আমি এখানে একটি বারবনিতার মতো দাঁড়িয়ে থাকি আর ভাবি যে কেউ হয়তো আসবে আর আমাকে কিছু দেবে... না, না। আমার এটিও ঠিক নয়।" "ওহ্‌ সে তো উত্তম কথা। তাহলে সে কি খেয়ে রয়েছে?" "সে কিছু পরিত্যক্ত অন্ন মহাপ্রসাদ সংগ্রহ করে সেইটিই খাচ্ছে।" রঘুনাথ দাস গোস্বামীকে উৎসাহ দেয়ার জন্য একদিন ভগবান চৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর ঘরে গেলেন। "রঘুনাথ? আমি শুনলাম তুমি খুব ভালো ভালো খাচ্ছ কিন্তু আমাকে নিমন্ত্রণ করছ না।" তিনি কোন উত্তর দিচ্ছিলেন না। তাই মহাপ্রভু খুঁজছিলেন যে রঘুনাথ কোথায় সেই মহাপ্রসাদ অন্ন রেখেছে। তিনি সেখান থেকে এক গ্রাস নিয়ে তৎক্ষণাৎ খেতে লাগলেন। "প্রভু দয়া করে এই সব খাবেন না, এইগুলো আপনার উপযুক্ত খাবার নয়।" "আহ্‌, এইটি জগন্নাথের মহাপ্রসাদ। তুমি কি করে এই কথা বল যে এইটি যোগ্য নয়?" তাকে কেবলমাত্র উৎসাহিত করার জন্য। তিনি হয়তো এভাবে নাও ভাবতে পারেন যে "আমি পরিত্যক্ত বস্তু খাচ্ছি।" এইভাবে রঘুনাথ দাস গোস্বামী তাঁর আহার এমন ভাবে কমিয়ে ছিলেন যে শেষ পর্যন্ত প্রতি একদিন অন্তর তিনি কেবল একটু খানি মাঠা খেয়ে থাকতেন। এবং তিনি এমন কি রোজ হাজার বার দণ্ডবৎ প্রণাম করতেন এবং বহু সংখ্যক হরিনাম জপ করতেন। সংখ্যা-পূর্বক-নাম ... ষড় গোস্বামী অষ্টক গাইবার সময়ে তোমরা এটি শুনেছ। সংখ্যা-পূর্বক-নাম-গান-নতিভিঃ কালাবসানীকৃতৌ। তাই এইভাবে চাহিদা কমানোর অনেক সুন্দর সুন্দর উদাহরণ রয়েছে। সমস্ত জাগতিক চাহিদা হ্রাস করা। একদম শুন্যের কোঠা পর্যন্ত। কিন্তু সেইটি সকলের জন্য সম্ভব না। রঘুনাথ দাস গোস্বামীকে অনুকরণ করার চেষ্টা কোর না। যেহেতু তাঁরা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অনুগামী পার্ষদ ছিলেন, তাঁদের প্রত্যেকেই কিছু না কিছু দৃষ্টান্ত দিয়ে গিয়েছেন। কৃষ্ণভাবনামৃতে কিভাবে অগ্রসর হওয়া যায়, তার অনন্য উদাহরণ। কিন্তু আমাদের কাজ তাঁদের অনুকরণ করা নয়, কিন্তু তাঁদের অনুসরণ করা। যতটা সম্ভব, তাঁদের অনুসরণ করতে চেষ্টা কর। কৃত্রিমভাবে নয়। তাই এখানে বলা হয়েছে যে "যোগী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, যদি তুমি রাতারাতি রঘুনাথ দাস গোস্বামী হওয়ার চেষ্টা কর। অনুকরণ করলে তুমি বিফল হবে। যতটাই অগ্রগতি করেছ, সেটুকুও শেষ হয়ে যাবে। না। তা নয়। তুমি খাও। কিন্তু অতিরিক্ত খেও না। তাহলেই হবে। বেশি খাওয়া ভাল নয়। তুমি খাও। যদি তুমি হাতি হও তাহলে শত শত পাউন্ড খাও, কিন্তু যদি তুমি পিঁপড়ে হও তাহলে কেবল এক দানাই খাও। হাতিকে অনুকরণ করে শত শত পাউন্ড খেতে যাবে না। বুঝলে? ভগবান হাতিকে তার খাওয়া দিয়েছেন আর পিঁপড়েকেও তার খাওয়া দিয়েছেন। কিন্তু যদি তুমি সত্যিই হাতি হও তবেই কেবল হাতির মতো খাও। কিন্তু যদি তুমি পিঁপড়ে হও তাহলে হাতির মতো খেও না, তাহলে সমস্যায় পড়বে। তাই এখানে বলা হয়েছে, "হে অর্জুন, সেই ব্যক্তির যোগী হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, যদি সে অতিরিক্ত আহার করে অথবা অতি অল্প আহার করে।" খুব সুন্দর ব্যবস্থা। অতি অল্প খেও না। যতটুকু তোমার দরকার তুমি খাও। কিন্তু বেশি খেও না। তেমনই বেশি ঘুমিও না। '

'যদি তুমি পার... শরীর ঠিক রাখো, কিন্তু ঘুম কমানোর চেষ্টা কর। ধর, তুমি দশ ঘণ্টা ঘুমাও, কিন্তু যদি এমন হয় যে আমি পাঁচ ঘণ্টা ঘুমিয়েই আমাকে সুস্থ রাখতে পারি, তাহলে আমি কেন দশ ঘণ্টা ঘুমোবো? এই হচ্ছে পন্থা। কোন কিছুই কৃত্রিমভাবে কোর না। এই দেহের কথা বিচার করলে, আমাদের চারটি চাহিদা রয়েছে। আহার, নিদ্রা, মৈথুন এবং আত্মরক্ষা। আধুনিক সভ্যতার গলদটি হচ্ছে যে ওরা ভাবছে যদি আমরা এই আহার ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করতে পারি, ঘুমের বন্দোবস্ত উন্নতি করতে পারি তাহলে সেইটি খুবই ভালো হবে। যদি আমরা সারা শনিবার আর রবিবার ধরে দিন-রাত ঘুমোতে পারি, ওহ্‌ তাহলে সেইটি খুবই ভালো হবে, দারুন মজা হবে। দেখলে? এই হচ্ছে সভ্যতা। ওরা ভাবে যে এই হচ্ছে জীবনকে উপভোগ করার সুযোগ, দিনে ৩০ ঘণ্টা ঘুমিয়ে থেকে। না। সেইটি কোর না। হ্রাস কর। সেইটি হ্রাস করার চেষ্টা কর। কিন্তু কৃত্রিম ভাবে নয়। (পরবর্তীতে পড়তে থাকো)