BN/Prabhupada 0681 - যদি তুমি শ্রীকৃষ্ণকে ভালবাস, তবে তোমার বিশ্বপ্রেমকে গণনার মধ্যে নেয়া হবে

Revision as of 13:20, 5 June 2021 by Soham (talk | contribs) (Created page with "<!-- BEGIN CATEGORY LIST --> Category:1080 Bengali Pages with Videos Category:Prabhupada 0681 - in all Languages Category:BN-Quotes - 1969 Category:BN-Quotes - L...")
(diff) ← Older revision | Latest revision (diff) | Newer revision → (diff)


Lecture on BG 6.30-34 -- Los Angeles, February 19, 1969

ভক্তববৃন্দঃ গুরু গৌরাঙ্গের জয়।

শ্রীল প্রভুপাদঃ তারপর?

বিষ্ণুজনঃ শ্লোক ৩০ঃ যিনি সর্বত্র আমাকে দর্শন করেন এবং আমাতেই সর্ববস্তু দর্শন করেন, আমি কখনও তাঁর দৃষ্টির অগোচর হই না, এবং তিনিও আমার দৃষ্টির অগোচর হন না। (গীতা 6.30)

প্রভুপাদঃ ব্যাস্‌ তুমি কীভাবে শ্রীকৃষ্ণকে হারাতে পার? (হাসি) সেটি সদা তদ্ভাব ভাবিত (গীতা ৮/৫) যদি তুমি এইভাবে তোমার অভ্যাস গড়ে তুলতে পার, যে কখনই শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে যাবে না তাহলে মৃত্যুকালে এটি নিশ্চিত যে তুমি শ্রীকৃষ্ণের কাছেই ফিরে যাবে। তুমি কোথায় যাচ্ছ? তুমি কৃষ্ণ থেকে হারাবে না। কৌন্তেয় প্রতিজানিহি ন মএ ভক্ত্যা প্রনশ্যতি (গীতা ৯/৩১) এবং শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন "হে প্রিয় অর্জুন, আমার প্রিয় ভক্তেরা কখনই আমার থেকে হারিয়ে যান না"। তাই কৃষ্ণ থেকে হারিয়ে যেও না। সেটিই হচ্ছে জীবনের সার্থকতা । সেটিই জীবনের পরম সিদ্ধি । কেবল কৃষ্ণ থেকে হারিয়ে যেও না। তুমি সবকিছু ভুলে যেতে পার, কেবল শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে যেও না। তাহলেই তুমি সবচাইতে ধনী। লোকেরা তোমাকে খুব গরীব বলে দেখতে পারে, যেমন গোস্বামীদের মতো। তাঁরা অত্যন্ত দারিদ্র্যপূর্ণ জীবন বেছে নিয়েছিলেন, ভিক্ষুকের মতো। তাঁরা মন্ত্রী ছিলেন। খুব ঐশ্বর্যশালী। অত্যন্ত সম্মানিত ভদ্রলোক ছিলেন, রূপ গোস্বামী, সনাতন গোস্বামী, বিদ্বান পণ্ডিত, ধনী ব্যক্তি, মন্ত্রী, যে কোনও বিচারে তাঁরা ছিলেন উচ্চ সামাজিক অবস্থানে স্থিত। কিন্তু তাঁরা ভিক্ষুকের মতো জীবন বেছে নিয়েছিলেনঃ ত্যক্ত্বা তূর্ণমশেষমণ্ডলপতি শ্রেণীম্‌ গোস্বামীদের প্রার্থনায় এটি পাবে। ত্যক্ত্বা তূর্ণমশেষমণ্ডলপতি শ্রেণীম্ সদা তুচ্ছবৎ সবচাইতে তুচ্ছ বস্তুর মতো তাঁরা সবকিছু পরিত্যাগ করেছিলেন ভূত্বা দীনগণেশকৌ করুণয়া কৌপীন কন্থাশ্রিতৌ কৌপীন কন্থাশ্রিতৌ - কেবল একটি ভেতরে পরিধানের কৌপীন ,ব্যাস্‌ তাঁরা জীবনের সবচেয়ে দারিদ্র্য অবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা কীভাবে জীবন ধারণ করেছিলনে? যদি একজন অত্যন্ত ধনী ব্যক্তি একভাবে জীবন ধারণ করে, সে বাঁচতে পারবে না। আমি সেটি দেখেছি। যদি কেউ উচ্চমানের জীবনধারায় অভ্যস্ত থাকে, যদি তুমি তাঁর জীবনমান তৎক্ষণাৎ নামিয়ে দাও, সে বাঁচতে পারবে না। কিন্তু তাঁরা অত্যন্ত আনন্দে ছিলেন। কীভাবে? সেই কথা বলা হয়েছে। গোপীভাবরসামৃতাব্ধি লহরী- কল্লোলমগ্নৌ মুহুঃ বন্দে রূপ সনাতন রঘুযগৌ শ্রীজীব গোপালকৌ। গোপীগণের প্রেমরসসাগরে নিমজ্জিত হয়ে তাঁরা ছিলেন সবচেয়ে ধনী। সুতরাং তুমি যদি কেবল শ্রীকৃষ্ণের জন্য গোপীদের প্রেমের কথা চিন্তা কর তাহলেই তুমি কখনও হারিয়ে যাবে না। এই ভাবে অনেক উপায় রয়েছে কৃষ্ণ থেকে হারিয়ে যেও না। তাহলেই তুমি সার্থক। তাহলে কৃষ্ণও তোমার থেকে হারাবে না এবং তুমিও হারাবে না। এরপর পড়।

বিষ্ণুজনঃ তাৎপর্যঃ কৃষ্ণভাবনাময় ভক্ত নিঃসন্দেহে সর্বত্র ভগবানকে দর্শন করতে পারেন এবং তিনি সবকিছুই ভগবানের মধ্যে দেখতে পান। যদিও মনে হতে পারে এই ধরণের মানুষ মায়ার ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশকে সাধারণ মানুষের মতো ভিন্ন ভিন্ন রূপে দেখছেন। কিন্তু সবকিছুই শ্রীকৃষ্ণেরই শক্তির প্রকাশ জেনে তিনি সবকিছুতেই তিনি কৃষ্ণচেতনাময় থাকেন।

শ্রীল প্রভুপাদঃ "শক্তি" কেউ ধর একটি গাছ দেখল সে একজন দার্শনিক, কৃষ্ণভাবনাময়, কৃষ্ণ ভাবনাময় ব্যক্তিই দার্শনিক যদি তিনি তিনি চিন্তা করেন, "এই গাছটি আসলে কি?" তিনি দেখেন যে এই গাছটির একটি জড় দেহ রয়েছে ঠিক যেমন আমি এই জড় দেহটি পেয়েছি, কিন্তু সে স্বয়ং চিন্ময় আত্মা তাঁর পূর্বকৃত কর্মের ফল অনুযায়ী সে এতোটাই ঘৃণ্য জীবন পেয়েছে যে সে নড়তে পর্যন্ত পারছে না। কিন্তু তাঁর দেহটি জড়, জড় মানে জড়া শক্তি এবং এই জড়া শক্তিটি কার শক্তি? শ্রীকৃষ্ণের শক্তি। তাই এই গাছটিই কৃষ্ণ সম্পর্কে যুক্ত। আর এই গাছটি জীব হিসেবে শ্রীকৃষ্ণের অবিচ্ছেদ্য অংশ সুতরাং এই ভাবে যদি তুমি কৃষ্ণ ভাবনামৃতের দর্শন আলোচনা কর তুমি গাছ দেখবে না, সেখানে তুমি দেখবে শ্রীকৃষ্ণ। সেটিই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত। তুমি গাছ দেখবে না, তুমি দেখবে কৃষ্ণ এটিই হচ্ছে কৃষ্ণ ভাবনামৃত তাই তোমাকে এইভাবে অভ্যাস করতে হবে। সেটিই হচ্ছে যোগ অভ্যাস। সেটিই হচ্ছে সমাধি। পড়।

বিষ্ণুজনঃ শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া কোনকিছুরই অস্তিত্ব থাকতে পারে না এবং শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন সবকিছুর ঈশ্বর। এটিই কৃষ্ণভাবনার মূলতত্ত্ব। কৃষ্ণভাবনার উদ্দেশ্য হচ্ছে কৃষ্ণপ্রেমের বিকাশ করা - এই স্তর জড় বন্ধন মুক্তিরও অতীত।

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। এই ভাবনা যে গাছটি শ্রীকৃষ্ণের শক্তি, তাঁর অবিচ্ছেদ্য অংশ তুমি কেন এই গাছটির এতো সুন্দর যত্ন নিচ্ছ? কারণ তোমার শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভালবাসা রয়েছে ঠিক যেমন তুমি তোমার সন্তানকে ভালবাস আর সে তোমার থেকে হয়তো দূরে রয়েছে। তার জুতো দেখেই তোমার তার মনে পরে, "ওহ্‌ এটি আমার সন্তানের জুতো"। তুমি কি সেই জুতোজোড়া ভালবাস? না। তুমি তোমার সন্তানকে ভালবাস। ঠিক তেমনই, তুমি শ্রীকৃষ্ণের শক্তির প্রকাশ সবকিছুতে বিভিন্নরূপে দেখবে। তার মানে তুমি এইসব ভালবাস কারণ তুমি শ্রীকৃষ্ণকে ভালবাস। সুতরাং, যদি তুমি শ্রীকৃষ্ণকে ভালবাস তাহলে তোমার বিশ্বপ্রেম গণনার মধ্যে পড়ে। অন্যথায় সেটি বাজে কথা। তুমি ভালবাসতে পার না। তা সম্ভব নয়। যদি তুমি শ্রীকৃষ্ণকে ভালবাস, তাহলে ভালবাসা শব্দটি, বিশ্বপ্রেম শব্দটি, কত কিছু রয়েছে, কত কিছুর বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে আর যদি তুমি শ্রীকৃষ্ণকে ভাল না বাস, তাহলে তুমি দেখবে "এই হচ্ছে আমার আমেরিকান ভাই, আর এই গাভীটি আমার খাদ্য"। কারণ তুমি গাভীটিকে ভালবাস না। গাভীটিও আমেরিকান, আর আমার ভাইও আমেরিকান। "আমার ভাই ভাল, আর গাভীটি আমার কেটে খাওয়ার বস্তু। এই হচ্ছে আমার (সস্তা) বিশ্বপ্রেম"। কেন? কিন্তু একজন কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তি, তিনি দেখেন, "ওহ্‌ এই গাভী, এই কুকুর, এরা সবাই ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোনও না কোনভাবে সে আমার থেকে ভিন্ন প্রকারের দেহ পেয়েছে। তার মানে এই নয় যে সে আমার ভাই নয়। তাহলে আমি কীভাবে আমার ভাইকে হত্যা করতে পারি?" সেটিই হচ্ছে কৃষ্ণ প্রেম, কৃষ্ণপ্রেমের জন্যই।

তাই কৃষ্ণকে ভালবাসা এতই চমৎকার। সর্বসিদ্ধি। যদি কোন কৃষ্ণকে ভালবাসা না থাকে, তাহলে ভালবাসার প্রশ্নই আসে না। সবকিছুই তখন অর্থহীন ফালতু ব্যাপার। কৃষ্ণভাবনামৃত ছাড়া কোনই ভালবাসা থাকতে পারে না।