BN/Prabhupada 0682 - ভগবান আমার আজ্ঞাবাহী নন

Revision as of 13:36, 5 June 2021 by Soham (talk | contribs) (Created page with "<!-- BEGIN CATEGORY LIST --> Category:1080 Bengali Pages with Videos Category:Prabhupada 0682 - in all Languages Category:BN-Quotes - 1969 Category:BN-Quotes - L...")
(diff) ← Older revision | Latest revision (diff) | Newer revision → (diff)


Lecture on BG 6.30-34 -- Los Angeles, February 19, 1969

বিষ্ণুজনঃ এই স্তরে ভক্ত ভগবানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান অর্থাৎ তাঁর কাছে তখন শ্রীকৃষ্ণই সবকিছু হয়ে যান এবং তিনিও পূর্ণরূপে কৃষ্ণপ্রেমে আবিষ্ট হয়ে যান। ভক্ত ও ভগবানের মধ্যে এক নিবিড় প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এই অবস্থায় জীব কখনই বিনাশপ্রাপ্ত হয় না। তখন শ্রীকৃষ্ণ আর কখনও তাঁর ভক্তের দৃষ্টির অগোচর হন না।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ তিনি কীভাবে অগোচর হবেন? তিনি সবকিছু শ্রীকৃষ্ণতেই দর্শন করেন এবং সবকিছুতেই শ্রীকৃষ্ণ দেখেন। শ্রীকৃষ্ণতেই সবকিছু এবং সবকিছুতেই শ্রীকৃষ্ণ। তাহলে তিনি কৃষ্ণ কীভাবে তাঁর অগোচর হতে পারেন। হ্যাঁ।

বিষ্ণুজনঃ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে লীন হলে আত্মার স্বাতন্ত্রের বিনাশ হয়। ভক্ত কখনও এই ভুল করেন না। ব্রহ্মসংহিতায় (৫/৩৮) বলা হয়েছে প্রেমাঞ্জন দ্বারা রঞ্জিত ভক্তিচক্ষু বিশিষ্ট সাধুরা তাঁর নিত্য শ্যামসুন্দর রূপে তাঁকে সর্বদা হৃদয়ে দর্শন করেন'

প্রভুপাদঃ শ্যামসুন্দর, এই হচ্ছে শ্যামসুন্দর, সেই কর্তামশাই শ্যামসুন্দর।

প্রেমাঞ্জনচ্ছুরিত ভক্তি বিলোচনেন
সন্তঃ সদৈব হৃদয়েষু বিলোকয়ন্তি
যং শ্যামসুন্দরম্‌ অচিন্ত্যগুণস্বরূপং
গোবিন্দং আদি পুরুষম্‌ তমহম্‌ ভজামি
(ব্রহ্মসংহিতা ৫/৩৮)

যার শ্রীকৃষ্ণের প্রতি শুদ্ধ প্রেম রয়েছে, তিনিই শ্যামসুন্দর রূপ, কর্তামশাই, দর্শন করতে পারেন নিরন্তর তাঁর হৃদয়ে তাঁকে দেখেন। সেটিই হচ্ছে যোগসিদ্ধি কর্তামশায়, আমি তাঁকে এই নাম দিয়েছি । অবশ্য তাঁর নাম শ্যামসুন্দর, হ্যাঁ। ঠিক আছে, তারপর। পরের অনুচ্ছেদ।

বিষ্ণুজনঃ "এই প্রেমাবস্থায়, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কখনই তাঁর ভক্তের দৃষ্টির অগোচর হন না, এবং ভক্তও ভগবানের দৃষ্টির অগোচর হন না। যে সিদ্ধ যোগী তাঁর হৃদয়ে পরমাত্মারূপে ভগবানকে দর্শন করেন, তিনিও এভাবেই নিরন্তর ভগবানকে দর্শন করেন। এই ধরণের সিদ্ধ যোগী শুদ্ধ ভগবদ্ভক্তে পরিণত হন এবং তিনি এক মুহূর্তের জন্যও ভগবানকে না দেখে থাকতে পারেন না।"

প্রভুপাদঃ ব্যাস্‌। এই হচ্ছে ভগবদ্‌ দর্শনের পন্থা (হাসি) অন্যথায় ভগবান আমার আজ্ঞাবাহী নন, 'দয়া করে এসো, আমরা দেখব"। ভগবানকে দেখতে গেলে তোমার নিজের যোগ্যতা চাই, সর্বত্র, সব জায়গায়। আর এই যোগ্যতা খুবই সরল। তা খুব একটা কঠিন নয়।

বিষ্ণুজনঃ "যে যোগী জানেন যে যোগী সর্বভূতে স্থিত পরমাত্মা রূপে আমাকে জেনে আমার ভজনা করেন, তিনি সর্ব অবস্থাতেই আমাতে অবস্থান করেন।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ হমম্‌। তাৎপর্য পড়।

বিষ্ণুজনঃ যে যোগী পরমাত্মার ধ্যান করেন, তিনি তাঁর হৃদয়ে চতুর্ভুজ বিষ্ণুকে দর্শন করেন- শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী রূপে।

শ্রীল প্রভুপাদঃ যে ছবিটি, বিষ্ণুর ছবিটি। সেটিই হচ্ছে যোগীর মনোসংযোগের উদ্দেশ্য। সেটিই হচ্ছে প্রকৃত যোগ। আর বিষ্ণু হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণের অংশ। ব্রহ্মসংহিতায় বলা হয়েছে,

যঃ কারণার্নব জলে ভজতি স্ম যোগ
নিদ্রাম্‌ অনন্ত জগদণ্ড সরোমকূপঃ
বিষ্ণুঃমহান স ইহ কলাবিশেষো
গোবিন্দম্‌ আদি পুরুষম্‌ তমহম্‌ ভজামি
(ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৭)

"আমি সেই আদি পুরুষ গোবিন্দের ভজনা করি" গোবিন্দম্‌ আদি পুরুষম্‌। পুরুষম্‌ মানে ভগবান যিনি ভোক্তা, আদি , মূল গোবিন্দম্‌ আদি পুরুষম্‌ তমহম্‌ ভজামি। সেই গোবিন্দ কে? যার কেবল একটি অংশ হলেন মহাবিষ্ণু আর সেই মহাবিষ্ণুর কাজ কি? যস্যৈক নিশ্বসিতকালমথাবলম্ব্য জীবন্তি লোমবিলোজা জগদণ্ডনাথাঃ (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৮) প্রতিটি ব্রহ্মাণ্ডেই একজন প্রধান জীব থাকেন যার নাম ব্রহ্মা। ব্রহ্মা হচ্ছেন সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডে আদি ব্যক্তি তাই ব্রহ্মার বা ব্রহ্মাণ্ডের আয়ু মহাবিষ্ণুর কেবল একটি নিঃশ্বাস কাল মাত্র। মহাবিষ্ণু কারণ সমুদ্রে শায়িত আছেন, এবং তিনি যখন শ্বাস ছাড়েন কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড বুদ্বুদের ন্যায় উৎপন্ন হয় আর বাড়তে থাকে এবং যখন তিনি শ্বাস গ্রহণ করেন, কোটি কোটি ব্রহ্মাণ্ড তখন আবার তাঁর অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এই হচ্ছে জড় জগতের অবস্থা। এটি প্রকাশ পাচ্ছে আর আবার ভেতরে প্রবেশ করছে। ভূত্বা ভূত্বা প্রলীয়তে (গীতা ৮/১৯) ভগবদগীতাতেই বলা হয়েছে যে জড় ব্রহ্মাণ্ডসমূহ উৎপন্ন হয়েছে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর তা আবার লয় প্রাপ্ত হয়। এখন এই সৃষ্টি এবং বিনাশ ভগবান মহাবিষ্ণুর শ্বাস ত্যাগ ও গ্রহণের ওপর নির্ভর করে। তাহলে ভেবে দেখ, মহাবিষ্ণুর ক্ষমতা কেমন?

কিন্তু এখানে বলা হচ্ছে সেই মহাবিষ্ণু, যস্যৈক নিশ্বসিতকালমথাবলম্ব্য জীবন্তি লোমবিলোজা জগদণ্ডনাথাঃ বিষ্ণুঃমহান স ইহ কলাবিশেষো (ব্রহ্মসংহিতা ৫/৪৭) এই মহাবিষ্ণু হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অংশের অংশ। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন আদি। গোবিন্দম্‌ আদি পুরুষম্‌ তমহম্‌ ভজামি। এই মহাবিষ্ণু আবার গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণুরূপে প্রতিটি ব্রহ্মাণ্ডে প্রবেশ করেন । আর গর্ভোদকশায়ী বিষ্ণু থেকে ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু আসেন। সেই ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণুই সকল জীবের হৃদয়ে প্রবেশ করেন। এইভাবে সমগ্র সৃষ্টিজুড়ে বিষ্ণুর প্রকাশ রয়েছে। শ্রীবিষ্ণুর রূপে যোগীর মনোসংযোগের কথা এখানে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে সেই সর্বব্যাপী বিষ্ণু ঈশ্বর সর্বভূতানাম্‌ হৃদ্দেশেহর্জুন তিষ্ঠতি (গীতা ১৮/৬১) ভগবদগীতায় বলা হয়েছে যে সেই মহাবিষ্ণু, ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণুরূপে সকলের হৃদয়ে বিরাজমান। যোগীকে খুঁজে দেখতে হবে তিনি কোথায় রয়েছেন এবং সেখানে তাঁর মনোযোগ দিতে হবে। সেইটিই হচ্ছে যোগ পন্থা। তারপর পড়। "যোগীর জানা উচিত।" পড়।

বিষ্ণুজনঃ যোগী জানেন শ্রীবিষ্ণু শ্রীকৃষ্ণ থেকে অভিন্ন।

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ।