BN/Prabhupada 0020 - শ্রীকৃষ্ণকে হৃদয়ঙ্গম করা খুব সহজ নয়
Arrival Lecture -- Miami, February 25, 1975
শ্রীকৃষ্ণকে হৃদয়ঙ্গম করা খুব সহজ ব্যাপার নয়।
- মনুষ্যাণাং সহস্রেষু
- কশ্চিদ যততি সিদ্ধয়ে
- যততামপি সিদ্ধানাং
- কশ্চিন্মাং বেত্তি তত্ত্বতঃ
- (ভা.গী.৭.৩)
লক্ষ লক্ষ লোকের মধ্যে মাত্র একজন কেবল নিজের জীবনকে সফল করতে আগ্রহী হয়। কেউই আগ্রহী নয়। বাস্তবে তারা জানেই না জীবনে সফলতার মানে কি। আধুনিক সভ্যতায় সবাই চিন্তা করছে, যদি আমার কাছে সুন্দর স্ত্রী, গাড়ি আর বাড়ী থাকে তাহলে আমি সফল। " সেটি সফলতা নয়। সেটি অনিত্য। আসল সফলতা হচ্ছে মায়ার কবল থেকে মুক্তি পাওয়া। জাগতিক জীবন জন্ম,মৃত্যু, জরা, ব্যাধিকে বোঝায়। আমরা অনেক প্রজাতির জীবনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। আর এই মনুষ্য জীবন হচ্ছে এখান থেকে বেরিয়ে যাবার একটা ভালো সুযোগ। এক দেহ থেকে আরেক দেহলাভের এই চক্র থেকে বেরিয়ে যাবার সুযোগ। এই আত্মা শাশ্বত এবং আনন্দময় কারণ সে ভগবানের অংশ। সৎ-চিৎ-আনন্দ, শাশ্বত, আনন্দময়, জ্ঞানময়। দুর্ভাগ্যক্রমে, এই জাগতিক জীবনে আমরা বার বার শরীর বদলাচ্ছি। কিন্তু আমরা সেই চিন্ময় স্তরে আমাদেরকে স্থিত করছি না যেখানে কোন জন্ম মৃত্যু নেই। এখানে কোনো বিজ্ঞান নেই। অন্য এক দিন এক মনোরোগ চিকিৎসক আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। (জিজ্ঞাসা করলাম) আত্মাকে জানার শিক্ষা, আমার আসল স্বরূপ জানার শিক্ষা কোথায় দেওয়া হচ্ছে? সুতরাং বাস্তবিকভাবে পুরো পৃথিবীটা অন্ধকারে রয়েছে। তারা শুধু পঞ্চাশ, ষাট অথবা একশ বছরের এই জীবন সম্পর্কে আগ্রহী, কিন্তু তারা জানে না যে আমরা শাশ্বত, আনন্দময়, জ্ঞানময়। এবং এই জড় শরীরের জন্যেই আমাদেরকে জন্ম, মৃত্যু, জরা আর ব্যাধি ভোগ করতে হয়। এবং এটা নিরন্তর চলছে। সুতরাং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, বড় করুণা করে, এই পতিত আত্মাদের কৃপা প্রদান করার জন্যে এসেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণও আসেন কিন্তু উনি এতো উদার নন। শ্রীকৃষ্ণ শর্ত রাখেন যে "যদি তোমরা আত্মসমর্পণ কর তাহলে আমি তোমার ভার নেব। " এইজন্যে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কৃষ্ণের থেকে বেশি দয়ালু, যদিও দুই জন এক। সুতরাং মহাপ্রভুর কৃপাতে আমরা শ্রীকৃষ্ণকে বুঝতে পারি। চৈতন্য মহাপ্রভু এইখানে উপস্থিত আছেন। তুমি ওনার ভজনা কর, এটা খুব কঠিন নয়। যজ্ঞৈ সংকীর্তনৈ প্রায়ৈ যজন্তি হি সুমেধসঃ কৃষ্ণবর্ণ ত্বিষাকৃষ্ণ সাঙ্গপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদম যজ্ঞৈ সংকীর্তনং (শ্রী. ভা.১১.৫.৩২) তুমি শুধু হরে-কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ কর এবং যা কিছু পার মহাপ্রভু কে অর্পণ কর। উনি অনেক দয়ালু, উনি অপরাধ গ্রহণ করেন না। রাধাকৃষ্ণ ভজনা একটু কঠিন। আমাদের ওনাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান সহকার পূজো করতে হয়। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু স্বেচ্ছায় এসেছেন পতিতদের উদ্ধার করার জন্যে। একটু সেবাতে উনি সন্তুষ্ট হয়ে যান। উনি সন্তুষ্ট হয়ে যান। কিন্তু এটার অবহেলা কর না। উনি অনেক দয়ালু ও করুণাময়, তার মানে এই নয় যে আমরা ওনাকে ভুলে যাব। উনি পরমেশ্বর ভগবান। এইজন্যে আমাদের ওনাকে সম্মান জানানো উচিত, যতোটা সম্ভব। কিন্তু সুবিধা হচ্ছে যে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কোনো অপরাধ গ্রহণ করেন না। এবং ওনার পূজো করা, ওনাকে সন্তুষ্ট করা অনেক সহজ। যজ্ঞৈ সংকীর্তনৈ প্রায়ৈঃ যজন্তি হি সুমেধসঃ শুধু হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ কর, নৃত্য কর তাহলে মহাপ্রভু সন্তুষ্ট হবেন। তিনি এই নৃত্য এবং গান প্রচার শুরু করেন এবং এটি ভগবৎ উপলব্ধির জন্য সবচেয়ে সহজ প্রক্রিয়া। যত দূর সম্ভব কর...যদি সম্ভব হয়, পারলে ২৪ ঘন্টা কর। তা যদি না হয় তাহলে ৪ মালা কর, ৬ মালা কর। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সামনে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন কর এবং তুমি জীবনে সফল হবে। এটিই বাস্তব সত্য।