BN/Prabhupada 0049 - প্রকৃতির আইন দ্বারা আমরা আবদ্ধ
Arrival Talk -- Aligarh, October 9, 1976
তাই এই সংকীর্তন সর্ব মহিমাময়। এটিই হচ্ছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আশির্বাদ। পরম্ বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণ সংকীর্তনং। এই যুগের জন্য সংকীর্তন হল তাঁর বিশেষ কৃপাশীর্বাদ। বৈদিক শাস্ত্র তথা বেদান্ত সূত্রে তা সুনিশ্চিত করা হয়েছে। শব্দাৎ অনাবৃত্তিঃ। অনাবৃত্তিঃ অর্থ মুক্তি। আমাদের বর্তমান অবস্থা হল বদ্ধ অবস্থা। আমরা প্রকৃতির নিয়মের অধীনে আবদ্ধ রয়েছি। আমরা মূর্খের মত নিজেকে স্বাধীন হিসেবে ঘোষণা করতে পারি- কিন্তু সেটি হল আমাদের নির্বুদ্ধিতা। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমরা প্রকৃতির নিয়মের অধীনে আবদ্ধ।
- প্রকৃতেঃ ক্রিয়মাণানি
- গুণৈঃ কর্মাণি সর্বশঃ।
- অহঙ্কার বিমূঢ়াত্মা
- কর্তাহমিতি মন্যতে।।
আমরা প্রকৃতির নিয়মের অধিনে আবদ্ধ রয়েছি। কিন্তু যারা মূর্খ, বিমূঢ়াত্মা, অহঙ্কারের দ্বারা মোহাচ্ছন্ন, এমন ব্যক্তিরা নিজেদের স্বাধীন বলে ভাবে। না, সেটি তা নয়। তাই এটি একটি ভ্রান্তি। তাই এই ভ্রান্তির নিরসন করতে হবে। সেটিই জীবনের লক্ষ্য। তাই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, যদি তুমি হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ-কীর্তন কর, তবে প্রথম যে সুফলটি লাভ করবে তা হল চেতোদর্পণমার্জনং (চৈ.চ অন্ত্য ২০.১২) কেননা সমস্ত ভ্রান্তি হৃদয়ের অভ্যন্তরে রয়েছে। যদি হৃদয় পরিশুদ্ধ থাকে, তবে চেতনার পরিশুদ্ধি ঘটে, তখন কোন ভ্রান্তি থাকে না। তাই এই চেতনা পরিশুদ্ধ করতে হবে। এই হল হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপের প্রাথমিক সুফল। কীর্তনাদেব কৃষ্ণস্য মুক্তসঙ্গঃ পরং ব্রজেৎ। (শ্রীমদ্ভাগবত ১২.৩.৫১) শুধুমাত্র কৃষ্ণস্য, শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নাম জপ করার মাধ্যমে। হরে কৃষ্ণ, হরে রাম একই। রাম ও কৃষ্ণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। রামাদি-মূর্তিষু কলা-নিয়মেন তিষ্ঠন্ (ব্রহ্মসংহিতা ৫.৩৯) তাই এটিই তোমাদের প্রয়োজন। আমাদের বর্তমান অবস্থা এতই ভ্রান্তিময় যে, “আমি এই জড় প্রকৃতির অংশ ” “আমি এই দেহ” “আমি ভারতীয়”, “আমি আমেরিকান”, “আমি ব্রাহ্মণ”,“আমি ক্ষত্রিয়” ইত্যাদি ইত্যাদি . . . বহু প্রকারের পদবী রয়েছে। কিন্তু আমরা এগুলোর কিছুই না। এটি হল পরিশুদ্ধি। চেতো-দর্পন। যখন তুমি সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পারবে যে, “আমি ভারতীয় নই, আমি আমেরিকান নই”, আমি ব্রাহ্মণ নই, আমি ক্ষত্রিয় নই”- সার্বিকভাবে “আমি এই জড় দেহ নই”- তখন চেতনা হবে অহং ব্রহ্মাস্মি। ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি। (ভ.গী ১৮.৫৪) এটিই চাই। এটিই জীবনের সাফল্য।