BN/Prabhupada 0063 - আমায় এক মহান মৃদংঙ্গ বাদক হতে হবে



Arrival Lecture -- Dallas, March 3, 1975

পরিবেশ দেখে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। শিক্ষা মানে কৃষ্ণভাবনামৃত। সেইটিই হচ্ছে শিক্ষা। যদি আমরা কেবল এইটি বুঝতে যে "শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমপুরুষ। তিনি মহান এবং আমরা তাঁর অধীন। তাই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে তাঁর সেবা করা।" শুধু এই দুইটি কথা উপলব্ধি করতে পারলেই আমাদের জীবন সার্থক। আমরা যদি কেবল এইটুকু জানি যে কিভাবে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করতে হয়, কিভাবে তাঁকে সন্তুষ্ট করতে হয়, কিভাবে তাঁকে পোশাক পরাতে হয়, তাঁকে কি কি উপাদেয় খাদ্যদ্রব্য অর্পণ করতে হয়, কিভাবে তাঁকে অলঙ্কার এবং ফুলের দ্বারা সজ্জিত করতে হয়, কিভাবে তাঁকে আমাদের শ্রদ্ধাপূর্ণ প্রণাম জানাতে হয়, কিভাবে তাঁর নাম জপ করতে হয়, এইভাবে যদি আমরা যদি কেবল তাহলে কোনরকম তথাকথিত শিক্ষার্জন ছাড়াই আমরা সমস্ত ব্রহ্মাণ্ডের সবচাইতে আদর্শ মানুষ হয়ে যেতে পারি। এইটিই হচ্ছে কৃষ্ণ ভাবনামৃত। এর জন্য জাগতিক ক-খ-গ-ঘ জ্ঞানের দরকার পড়ে না। এতে কেবল চেতনার পরিবর্তনের প্রয়োজন। সুতরাং যদি এই সমস্ত ছেলে-মেয়েরা জীবনের একবারে শুরু থেকেই এই শিক্ষাগুলি পায়... আমাদের সৌভাগ্য হয়েছিল আমাদের পিতা-মাতার কাছ থেকে এইভাবে বড় হবার প্রশিক্ষণ পেতে।

অনেক সাধু লোকেরা আমার পিতার গৃহে আসতেন। আমার পিতা ছিলেন একজন বৈষ্ণব। তিনি বৈষ্ণব ছিলেন এবং তিনি চেয়েছিলেন আমিও যেন বৈষ্ণব হয়ে উঠতে পারি। যখনই কোন সাধু ব্যক্তিরা আসতেন তিনি তাদের কাছে প্রার্থনা করতেন, "দয়া করে আমার পুত্রকে আশীর্বাদ করুন সে যেন শ্রীমতী রাধারাণীর ভক্ত হতে পারে।" সেইটি ছিল তাঁর প্রার্থনা। তিনি কখনও অন্য কিছু চান নি। আর তিনি আমাকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে মৃদঙ্গ বাজাতে হয়। আমার মা এর বিরোধী ছিলেন। আমার দু'জন শিক্ষক ছিল, একজন আমাকে ক-খ-গ-ঘ জ্ঞান শিক্ষা দিতে আসতেন, আরেক জন আমাকে মৃদঙ্গ বাজানো শেখাতেন। যখন একজন শিক্ষক অপেক্ষা করতেন তখন আরেকজন আমাকে কিভাবে মৃদঙ্গ বাজাতে হয়, তা শেখাতেন। আমার মা রেগে গিয়ে বলতেন, "এইসব আজেবাজে কি হচ্ছে? আপনি মৃদঙ্গ শেখাচ্ছেন? মৃদঙ্গ শিখে ও কি করবে?" কিন্তু হয়তো আমার পিতা চাইতেন যে আমি যেন ভবিষ্যতে এক বড় মৃদঙ্গবাদক হই। (হাস্য) অতএব আমি আমার পিতার কাছে অত্যন্ত ঋণী, এবং আমি আমার 'কৃষ্ণ' বইটি তাঁকে উৎসর্গ করেছি। তিনি এইটি চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন আমি যেন শ্রীমদ্ভাগবতের প্রচারক হই, মৃদঙ্গবাদক হই এবং শ্রীমতি রাধারানীর দাস হই।

সুতরাং প্রত্যেকটি পিতামাতার এই ভাবে ভাবা উচিৎ। অন্যথায় কারোর পিতা-মাতা হওয়া উচিৎ নয়। সেইটি হচ্ছে শাস্ত্রের নির্দেশ। সেই কথা শ্রীমদ্ভাগবতে পঞ্চম স্কন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। পিতা ন স স্যাৎ জননী ন স স্যাৎ গুরুঃ ন স স্যাৎ স্বজনো ন স স্যাৎ। এইভাবে সিদ্ধান্ত হচ্ছে যে, ন মোচয়েদ্ যঃ সমুপেত-মৃত্যুম্। যদি কেউ তাঁর শিষ্যকে এই জন্মমৃত্যুর চক্র থেকে উদ্ধার করতে না পারে, তাহলে তাঁর গুরু হওয়া উচিৎ নয়। কারও পিতা বা মাতা হওয়া উচিৎ নয় কেউ যদি তা না করতে পারে। এইভাবে, বন্ধু হওয়া উচিৎ নয়, আত্মীয় হওয়া উচিৎ নয়, পিতা হওয়া উচিৎ নয়... না, যদি সে তাঁর অধিনস্থ ব্যক্তিকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে না পারে... অতএব সারা পৃথিবী জুড়ে সেই শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আর সরল ব্যাপারটি হচ্ছে যে এই জন্ম-মৃত্যু-জড়া-ব্যাধির চক্র থেকে যে কেউই মুক্ত হতে পারে কেবল মাত্র কৃষ্ণভক্তি অনুশীলনের মাধ্যমে।