BN/Prabhupada 0074 - কেন আপনারা প্রানীদের খাচ্ছেন



Lecture on BG 4.21 -- Bombay, April 10, 1974

ভগবদ্গীতায় সব কিছু ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ভগবদ্গীতা বলছে না যে "তুমি শ্বাস গ্রহণ করে বেঁচে থাক।" না। ভগবদ্গীতা বলছে, অন্নাদ ভবন্তি ভূতানি (ভগবদ্গীতা ৩.১৪)। অন্ন। অন্ন মানে শস্যদানা। শস্যদানার প্রয়োজন রয়েছে। অন্নাদ ভবন্তি ভূতানি। ভগবদ্গীতা কখনোই বলছে না যে "তোমাদের আহার করার প্রয়োজন নেই। তোমরা শুধু শ্বাস গ্রহণ কর আর যোগ অনুশীলন কর।" না। কিন্তু আমাদের অবশ্যই খুব কম বা খুব বেশী খাওয়া উচিত নয়। এটিই বলা হয়েছে। যুক্তাহার বিহারস্য। আমাদের খুব বেশী অথবা খুব কম খাওয়া উচিত নয়। আর নিরাশীঃ। নিরাশীঃ মানে অত্যধিক অপচয় করার বাসনা-হীন। এখন আমরা আরও আরও বেশী করে ইন্দ্রিয় তৃপ্তির বাসনা করছি। এটি প্রত্যাশিত নয়। যদি তোমরা জীবনে সিদ্ধি লাভ করতে চাও, এটিকে বলে তপস্যা।

আমাদের বাসনা রয়েছে, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় বাসনা করা উচিত নয়। প্রত্যেকের খাওয়ার অধিকার রয়েছে, এমনকি প্রাণীদেরও। প্রত্যেকের এই অধিকার রয়েছে। কিন্তু যেহেতু আমরা আরও বেশি করে ভোগ করার বাসনা করছি, তাই আমরা প্রাণীদের যথাযথভাবে বেঁচে থাকার সুযোগও দিচ্ছি না। বরং আমরা প্রাণীদেরও খেয়ে ফেলার চেষ্টা করছি। এর প্রয়োজন নেই। এটিকে বলে নিরাশীঃ। তোমার প্রাণীদের খাওয়ার কি দরকার? এটি অসভ্য জীবন। যদি কোন খাদ্য না থাকে, যখন তারা আদিবাসী, তারা প্রাণী খেতে পারে। কারণ তারা জানে না কিভাবে খাদ্যশস্য ফলাতে হয়। কিন্তু মানব সমাজ যখন সভ্য হয়, সে অনেক সুন্দর সুন্দর খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে পারে, সে গাভীদের হত্যা করার পরিবর্তে গাভী পালন করতে পারে, সে যথেষ্ট দুধ পেতে পারে। আমরা দুধ আর শস্য দিয়ে অনেক রকমের পদ তৈরি করতে পারি। কাজেই আমাদের অনর্থক আরও বেশী করে ভোগ করার বাসনা করা উচিত নয়।

এখানে বলা হয়েছে, কুর্বন্‌ নাপ্নোতি কিল্বিষম্‌ (ভগবদ্গীতা 4.21)। কিল্বিষম্‌ মানে পাপকর্মের ফল। কিল্বিষম্‌। তাই আমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাসনা করা উচিত নয়, তাহলে আর আমরা প্রলিপ্ত হবো না, পাপকর্মে জড়িয়ে পড়বো না, কুর্বন অপি, যদিও সে কর্মে নিযুক্ত থাকবে। যখন তুমি কর্ম করছ, জানতে বা অজান্তে, তোমাকে এমন কিছু করতে হবে যেটা পুণ্য কর্ম নয়, এমন কি পাপকর্মও হতে পারে, কিন্তু তুমি যদি শুধু সহজ সরলভাবে বেঁচে থাকার বাসনা কর, তাহলে কুর্বন নাপন্তি কিল্বিষম। আমাদের জীবন কোন রকম পাপকর্মের প্রতিক্রিয়া বিহীন হওয়া উচিত। অন্যথায় আমাদেরকে কষ্ট ভোগ করতে হবে। কিন্তু তারা বিশ্বাস করে না, যদিও তারা অনেক নিম্নতর জীবনযাপন দেখতে পাচ্ছে। ৮৪ লক্ষ প্রজাতির কোন জীবন থেকে তারা আসছে? অনেক জীব রয়েছে যারা জঘন্যতম অবস্থায় জীবনযাপন করছে। অবশ্য অন্যান্য প্রাণী বা জীবেরা তা বোঝে না, কিন্তু আমরা মানুষ, আমাদের বোঝা উচিত কেন এই জঘন্যতম জীবন। এটি মায়ার মোহ।

প্রত্যেকেই, ঠিক যেমন... একটি শুকর খুব নোংরা জায়গায় থাকে, বিষ্ঠা আহার করে, তবুও সে নিজেকে খুব সুখী মনে করে, যার জন্য সে খুব মোটা হয়। যখন কেউ সুখ অনুভব করে, "আমি খুব সুখী," তখন সে খুব মোটা হয়। তোমরা দেখবে এই শুকরগুলো খুব মোটা হয়, কিন্তু তারা কি খায়? তারা মল খায় আর খুব নোংরা জায়গায় বাস করে। কিন্তু তারা মনে করে যে "আমরা খুব সুখী।" সুতরাং এটি হচ্ছে মায়ার বিভ্রম। যে খুব জঘন্যতম জীবনযাপন করছে, মায়ার প্রভাবে সে ভাবছে যে সে ঠিক আছে, সে খুব সুন্দরভাবেই বেঁচে আছে। কিন্তু উন্নত স্তরের একজন ব্যক্তি, তিনি দেখতে পান যে সে একটি জঘন্যতম অবস্থায় রয়েছে।

সুতরাং মায়া এভাবে কাজ করে, কিন্তু জ্ঞানের দ্বারা, ভালো সঙ্গের মাধ্যমে, সাধু, গুরু আর শাস্ত্র থেকে নির্দেশনা গ্রহনের মাধ্যমে, কেউ একজন বুঝতে পারে যে জীবনের মূল্য কি আর কিভাবে সেই অনুসারে জীবনযাপন করা যায়। শ্রীকৃষ্ণ সেই নির্দেশনাই দিয়েছেন যে, নিরাশীঃ, কারো অনর্থক বাসনা করা উচিত নয়, তার জীবনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত। এটিকে বলে নিরাশীঃ। নিরাশীঃ। আরেকটি অর্থ হচ্ছে যে জাগতিক ভোগের প্রতি আসক্ত না হওয়া। আর এটি তখনই সম্ভব হবে যখন সে পূর্ণ জ্ঞানে অধিষ্ঠিত হবে যে "আমি এই দেহ নই। আমি চিন্ময় আত্মা। আমার প্রয়োজন হচ্ছে কিভাবে পারমার্থিক জ্ঞানে উন্নতি লাভ করা যায়।" তখন সে নিরাশীঃ হবে। এগুলো হচ্ছে তপস্যা, ব্রত, কঠোরতা।

মানুষ এখন তা ভুলে গেছে। তারা জানে না তপস্যা কি জিনিস। কিন্তু মানব জীবন এর জন্যই উদ্দিষ্ট। তপো দিব্যং পুত্রকা যেন সত্ত্বং শুদ্ধ্যেদ্‌যস্মাদ্‌ ব্রহ্মসৌখ্যং ত্বনন্তম্‌ (শ্রীমদ্ভাগবত ৫.৫.১)। এগুলো হচ্ছে শাস্ত্রের নির্দেশনা। মানব জীবন হচ্ছে তপস্যার জন্য। আর তপস্যা...

তাই বৈদিক জীবন ধারায় জীবনের শুরু হচ্ছে তপস্যা দিয়ে, ব্রহ্মচারী। একজন ছাত্রকে গুরুকুলে ব্রহ্মচর্য অনুশীলনের জন্য পাঠানো হতো। এটি হচ্ছে তপস্যা, কোন আরামদায়ক জীবন নয়। মাটিতে ঘুমানো, দ্বারে দ্বারে গিয়ে গুরুদেবের জন্য ভিক্ষা করা। কিন্তু তারা ক্লান্ত নয়। কারণ তারা শিশু, তাদেরকে যদি এই ধরণের তপস্যার মধ্য দিয়ে প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়, তারা এভাবেই অনুশীলন করবে। তারা সব মহিলাদের, "মা" বলে সম্বোধন করে, "মা কিছু ভিক্ষা দিন।" এরপর তারা গুরুদেবের স্থানে ফিরে আসে। সবকিছুই গুরুদেবকে দিয়ে দেয়। এই হচ্ছে ব্রহ্মচারী জীবন। এটি হচ্ছে তপস্যা। তপো দিব্যং (শ্রীমদ্ভাগবত ৫.৫.১)। এটি হচ্ছে বৈদিক সভ্যতা, এই সমস্ত শিশুদের জীবনের শুরু থেকেই তপস্যা বা ব্রহ্মচর্যে প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়। কৌমার্য। একজন ব্রহ্মচারী কোন যুবতী মহিলাকে দর্শন করে না। এমন কি গুরুদেবের পত্নী যদি যুবতী হন তাহলে তারা গুরুপত্নীর কাছেও যান না। এগুলো হচ্ছে বিধিনিষেধ। এখন এই ধরণের ব্রহ্মচারী কোথায়? কোন ব্রহ্মচারী নেই। এই হচ্ছে কলিযুগ। কোন তপস্যা নেই।