BN/Prabhupada 0092 - কৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমাদের ইন্দ্রিয়গুলিকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে
Lecture on BG 2.20-25 -- Seattle, October 14, 1968
যারা এই জড় জগতে আছে, তারা সকলেই ইন্দ্রিয় তৃপ্তিতে আবদ্ধ। সেটা উচ্চতর লোক হোক কিংবা নিম্নতর লোক। যেমন পশু সমাজে সেখানে ইন্দ্রিয় প্ররোচনা আছে এবং মানুষ্য সমাজেও রয়েছে। এটা কি ধরণের মনুষ্য সমাজ? আমরা হচ্ছি সভ্য মানুষ, আমরা কি করছি? একই জিনিস করছি। খাওয়া, ঘুমানো, যৌনসঙ্গ। সেই একই কাজ যা কুকুরও করছে। তাই এই জড় জগতের যে কোন জায়গায়, এটা উচ্চতর লোকে হোক বা নিম্নতর লোকে, ইন্দ্রিয়তৃপ্তিই প্রধান। শুধুমাত্র চিন্ময় জগতে কোন ইন্দ্রিয় তৃপ্তি নেই। শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা। এখানে সবাই তাদের নিজেদের ইন্দ্রিয়তৃপ্তি সাধনের চেষ্টা করছে। এটিই হচ্ছে জড় জগতের নিয়ম । এটিই জড় জীবন। যতদিন ধরে তুমি তোমার ইন্দ্রিয়গুলোকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করবে, ততদিন সেটা জড় জীবন। আর যখনই তুমি নিজেকে শ্রীকৃষ্ণের ইন্দ্রিয়সমূহের সন্তুষ্টি বিধানে নিয়োজিত করবে, সেটাই তোমার আধ্যাত্মিক জীবন। এটি খুব সরল কথা। নিজের ইন্দ্রিয়কে সন্তুষ্ট করার পরিবর্তে ...হৃষীকেণ হৃষীকেশ-সেবনম (চৈ.চ.মধ্য ১৯.১৭০) এটিই ভক্তি।
তোমার ইন্দ্রিয় আছে, তোমার সেটাকে সন্তুষ্ট করতে হবে। ইন্দ্রিয়সমূহ, ইন্দ্রিয় দিয়ে তোমাকে সন্তুষ্ট করতে হবে। হয় তুমি নিজেই নিজেকে সন্তুষ্ট কর ... কিন্তু তুমি জান না। বদ্ধ জীবাত্মা জানে না যে, শ্রীকৃষ্ণের ইন্দ্রিয়সমূহ সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে তার নিজের ইন্দ্রিয়সমূহ আপনাআপনিই সন্তুষ্ট হয়ে যাবে। একই উদাহরণ । ঠিক যেমন শেকড়ে জল ঢালার মত... অথবা এই আঙ্গুলগুলো, এগুলো আমার শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পেটের মধ্যে খাদ্য দিলে আঙ্গুলগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সন্তুষ্ট হবে। এই রহস্যটা আমরা ভুলে যাই। আমরা ভাবি যে, আমাদের ইন্দ্রিয়সমূহকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে আমরা সুখী হতে পারব। কৃষ্ণভাবনামৃত মানে তোমার ইন্দ্রিয়সমূহকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা কর না। তুমি শ্রীকৃষ্ণের ইন্দ্রিয়সমূহ সন্তুষ্ট করার চেষ্টা কর, তাহলে তোমার ইন্দ্রিয়গুলো আপনা থেকেই সন্তুষ্টি লাভ করবে। এটিই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃতের গোপন রহস্য। বিপরীতপক্ষ, তারা ভাবছে, "কেন আমি সন্তুষ্ট করব? কেন আমি শ্রীকৃষ্ণের জন্য দিন রাত জন্য কাজ করবো? কর্মীদের জন্য কাজ করে দেখি।" যেমন ধর, তোমরা যখন শ্রীকৃষ্ণের জন্য দিন রাত কাজ করছ, তারা ভাবছে, "দেখ কি বোকা? আমরা খুব বুদ্ধিমান আমরা আমাদের নিজের ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য দিন-রাত কাজ করছি, আর তারা কেন শ্রীকৃষ্ণের জন্য কাজ করছে?"
জড়বাদী আর অধ্যাত্মবাদীদের মধ্যে এটাই পার্থক্য। অধ্যাত্মবাদীদের প্রচেষ্টা হচ্ছে দিন রাত সবসময়, কোনও বাঁধা ছাড়াই, কেবল মাত্র শ্রীকৃষ্ণের জন্য কাজ করা। এটাই আধ্যাত্মিক জীবন। আর জড়বাদী মানে হল সবসময় তাদের ব্যক্তিগত ইন্দ্রিয়গুলোকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা। জড়বাদী আর অধ্যাত্মবাদীদের মধ্যে এটাই পার্থক্য। তাই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের অর্থ হল আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোকে শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য প্রশিক্ষিত করে তুলতে হবে। এই যা। এর আগে,হাজার হাজার এবং লক্ষ লক্ষ জন্ম ধরে, আমরা কেবল আমাদের নিজেদের ইন্দ্রিয়, ব্যক্তিগত ইন্দ্রিয়গুলোকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছি। আমাদের এই জীবনটা শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টি বিধানের জন্য নিবেদিত হোক। এটিই কৃষ্ণভাবনামৃত। একটি জীবন। আমরা অনেক জন্ম ধরে, আমাদের ব্যক্তিগত ইন্দ্রিয়কে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছি। এই জীবনে, অন্তত একটি জীবনে, চল চেষ্টা করে দেখা যাক, কি হয়। আমাদের লোকসান হবে না। এমনকি আমাদের কিছু অসুবিধা হলেও আমাদের ইন্দ্রিয় সন্তুষ্ট না করলেও, তবুও আমাদের লোকসান হবে না। কেবল শ্রীকৃষ্ণের ইন্দ্রিয়সমূহের সন্তুষ্টি বিধানের চেষ্টা কর; তবে সব ঠিক হবে।