BN/Prabhupada 0210 - পুরো ভক্তি-মার্গ ভগবানের দয়ার উপর নির্ভর করে



Lecture on SB 1.15.30 -- Los Angeles, December 8, 1973

তাই যদি আপনি ভগবদ গীতা বুঝতে চান, তাহলে আমাদের সেই রকমভাবে বুঝতে হবে যেমন ওই ব্যক্তি শুনেছেন। একে পরম্পরা পদ্ধতি বলা হয়। মনে করুন আমি আমার আধ্যাত্মিক গুরুর কাছ থেকে কিছু শুনেছি, তাই আমি আপনাদের সেই একই কথাই বলছি। এই হচ্ছে পরম্পরা পদ্ধতি। আপনি কল্পনা করতে পারবেন না আমার আধ্যাত্মিক গুরু কি বলেছেন। আর যদি আপনি কিছু বই পড়েন, আপনি কিছু বুঝতে পারবেন না যতক্ষন আপনারা আমার কাছ থেকে বুঝতে না পারছেন। একে বলে পরম্পরা পদ্ধতি। আপনি পরম গুরুর কাছে পৌছাতে পারবেন না। আমি বলতে চাচ্ছি, তৎকাল আচার্যকে অবহেলা করে, পরবর্তী আচার্যের কাছে। যেমন আমাদের এই গৌ... চৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা; আমরা চৈতন্য মহাপ্রভুকে সরাসরি বুঝতে পারি না। এটা সম্ভব নয়। আমাদেরকে গোস্বামীদের মাধ্যমে বুঝতে হবে। এইজন্য আপনারা চৈতন্য চরিতামৃত খুঁজে পাবেন এবং প্রত্যেক অধ্যায়ের শেষে, লেখক বলেছেন, রূপ-রঘুনাথ-পদে... কি সেটা? কৃষ্ণ দাস।

রূপ-রঘুনাথ-পদে সদা যার আঁশ
চৈতন্য চরিতামৃত কহে কৃষ্ণদাস।

এই হচ্ছে পদ্ধতি। তিনি বলেন নি যে " আমি চৈতন্য মহাপ্রভুকে সরাসরি বুঝতে পারব। না। সেটা বোঝা নয়। সেটা বোকামি। আপনি বুঝতে পারবেন না, চৈতন্য মহাপ্রভু কে? তাইজন্য বারবার তিনি বলেছেন, রূপ-রঘুনাথ-পদে সদা যার আঁশ চৈতন্য-চরিতামৃত কহে কৃষ্ণ দাস। " আমি সেই কৃষ্ণ দাস, কবিরাজ, যিনি সর্বদা গোস্বামীদের অধীনে।" এই হচ্ছে পরম্পরা পদ্ধতি। একই ভাবে, নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেছেন, এই ছয় গোসাই যার তার মুঁই দাস, " আমি হচ্ছি সেই ব্যাক্তির দাস যিনি এই ছয় গোস্বামীদের গুরু হিসাবে গ্রহণ করেছেন। আমি অন্য কোনও ব্যক্তির দাস হতে যাচ্ছি না যিনি স্বীকার করেন নি, রাস্তা এবং সাধন... তাইজন্য আমরা বলছি অথবা আমরা আমাদের আধ্যাত্মিক গুরুর কাছে প্রার্থনা করি, রূপানুগ-বরায়তে, রূপানুগ-বরায়তে, কারন তিনি রূপ গোস্বামীকে অনুসরন করেছেন, তাইজন্য আমরা উনাকে স্বীকার করি আধ্যাত্মিক গুরুরূপে। এরকম না যে আমরা রূপ গোস্বামীর চেয়েও বড় হয়ে গেছি ... না। তাদের চরন-সেবি-ভক্ত-সনে বাস। এই হচ্ছে পরম্পরা পদ্ধতি।

এখন এখানে, একই জিনিস বারবার বলা হচ্ছেঃ অর্জুন, যিনি সরাসরি কৃষ্ণের কাছ থেকে শুনেছেন। কখনো কখনো, কিছু লোক বলেন- এটা ধূর্ততা-"অর্জুন কৃষ্ণের কাছ থেকে সরাসরি শুনেছেন, কিন্তু আমরা আমাদের উপস্থিতিতে কৃষ্ণকে খুঁজে পাই না, তাই আমরা কিভাবে তাকে গ্রহণ করব? এটা সরাসরি উপস্থিতির প্রশ্ন না, কারন আপনার পরম জ্ঞান সন্মন্ধে কোন ধারণা নেই। কৃষ্ণের শব্দ, ভগবদ-গীতা, এটা কৃষ্ণের থেকে ভিন্ন নয়, এটা কৃষ্ণ থেকে ভিন্ন নয়। যখন আপনি ভগবদ গীতা শুনছেন, আপনি সরাসরি কৃষ্ণের কাছ থেকে শুনছেন কারন কৃষ্ণ আলাদা নয়।কৃষ্ণ হচ্ছে পরম। কৃষ্ণ, কৃষ্ণের নাম, কৃষ্ণের রূপ, কৃষ্ণের গুন, কৃষ্ণের নির্দেশ, সবকিছু কৃষ্ণের, তারা সবাই কৃষ্ণ। তারা সবাই কৃষ্ণ। এটা বুঝতে হবে। তারা কৃষ্ণের থেকে আলাদা নয়। তাইজন্য কৃষ্ণের রূপ, এখানে কৃষ্ণ আছেন। তিনি মূর্তি নন। " তিনি পাথরের মূর্তি নন।" না, তিনি কৃষ্ণ স্বয়ং। তিনি আপনার সামনে হাজির হয়েছিলেন কারণ আপনি কৃষ্ণকে দেখতে পাচ্ছেন না। আপনি দেখতে পাবেন পাথর, কাঠ, সেইজন্য তিনি এই রূপে আবিভুত হয়েছেন। আপনি চিন্তা করছেন এটা পাথর এবং কাঠ, কিন্তু তিনি পাথর এবং কাঠ নয়, তিনি কৃষ্ণ। একে পরম সত্য বলা হয়। একইভাবে, কৃষ্ণের শব্দ কৃষ্ণের থেকে আলাদা নয়। যখন কৃষ্ণের শব্দ ভগবদ গীতাতে আছে, এটা কৃষ্ণ।

যেমন দক্ষিণ ভারতের ব্রাহ্মন। যখনই সে খুলল ... তিনি ছিলেন অশিক্ষিত, তিন ভগবদ গীতা পড়তে পারতো না। কিন্তু তার গুরু মহারাজ বলেছিলেন যে, " আপনাকে রোজ ভগবদ গীতার আঠারো অধ্যায় পড়তে হবে।" তাই তিনি আশ্চর্য হয়ে গেলেন যে, "আমি অশিক্ষিত, আমি পারি না ... ঠিক আছে, আমাকে নিতে হবে ..., ভগবদ-গীতা।" তাই তিনি একটি রঙ্গনাথ মন্দিরে ছিলেন। তিনি ভগবদ-গীতা গ্রহণ করেন এবং এভাবেই চলতে থাকেন। তিনি পড়তে পারতেন না। সুতরাং তার বন্ধু যারা তাকে জানত, তারা মজা করছিল, "ভাল, ব্রাহ্মণ, কিভাবে তুমি ভগবদ-গীতা পড়ছো?" তিনি উত্তর দেননি কারণ তিনি জানেন যে তার বন্ধুরা মজা করছে কারণ "আমি জানি না ... আমি নিরক্ষর।" কিন্তু যখন চৈতন্য মহাপ্রভু এসেছিলেন, তখনও তিনি বিস্মিত হয়েছিলেন, "ব্রাহ্মণ, তুমি ভগবদ-গীতা পড়ছো?" তিনি বলেন, "স্যার, আমি অশিক্ষিত। আমি পড়তে পারি না। এটা সম্ভব নয়। কিন্তু আমার গুরু মহারাজ আমাকে পড়তে আদেশ দিয়েছেন। আমি কি করতে পারি? আমি এই বই গ্রহণ করেছি।" এই হচ্ছে গুরুর শব্দ দৃঢ় অনুসারী। সে অশিক্ষিত। তিনি পড়তে পারেন না। কোন সম্ভাবনা নেই কিন্তু তাঁর গুরু মহারাজ আদেশ দিয়েছিলেন, "আপনি দৈনিক অষ্টাদশ অধ্যায় ভগবদ-গীতা পড়বেন।" আর এটা কি? একে বলা হয় ব্যাবয়াত্মিকা বুদ্ধি। আমি কিছুটা অসম্পূর্ণ হতে পারি। এটা কোন ব্যাপার না। কিন্তু যদি আমি আমার গুরু মহারাজের শব্দের অনুসরণ করার চেষ্টা করি, তবে আমি সম্পূর্ণ হয়ে যাব।

এটাই রহস্য। যস্য দেবে পরা ভক্তির যথা দেবে তথা গুরৌ (স.উ.৬.২৩) যদি এক ভগবানের সর্বশক্তিমানের ব্যক্তিত্বের উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকে এবং গুরুর উপর বিশ্বাস থাকে, যথা দেবে তথা গুরৌ, তারপর শাস্ত্র প্রকাশিত হয়। এটা শিক্ষা নয়, এটা ছাত্রবৃত্তি নয়। এটা কৃষ্ণ এবং গুরুর উপর বিশ্বাস। তাইজন্য চৈতন্য-চরিতামৃতে বলা হয়েছে গুরু-কৃষ্ণের-কৃপায় পায় ভক্তি-লতা-বীজ (চৈ.চ.মধ্য ১৯.১৫১) শিক্ষার দ্বারা নয়, ছাত্রবৃত্তির দ্বারা নয়, চৈতন্য-মহাপ্রভু বলেছেন, গুরু-কৃষ্ণের-কৃপায়, গুরুর দয়ায়, কৃষ্ণের কৃপায়। এটা দয়ার প্রশ্ন, এটা ছাত্রবৃত্তির প্রশ্ন নয় অথবা সমৃদ্ধি অথবা ধনীর প্রশ্ন নয়। না। পুরো ভক্তি মার্গ ভগবানের দয়ার ওপর নির্ভর করে। তাই আমাদেরকে দয়া ভিক্ষা করতে হবে। অথাপি তে দেবা পদাম্বুজ-দয়া-প্রাসাদে-লেসানুগৃহিতা এব হি জনতি তত্ত্বম...(শ্রী.ভা.১০.১৪.২৯) প্রসাদ-লেশ, লেশ মানে ভগ্নাংশ। যিনি পরম করুণাময়ের একটি ছোট অংশ প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি বুঝতে পারেন। অন্যরা, না চান্য একো পি চিরাং বিচিন্বাং। অন্যরা, তারা প্রজল্প করতে পারে লক্ষ বছর ধরে। এটা বোঝা সম্ভব নয়। তাই ভগবদ গীতা যথাযথ, এইজন্য আমরা উপস্থাপন করছি, কারণ আমরা ভগবত-গীতা উপস্থাপন করছি যেমন ভাবে অর্জুন বুঝেছিল। আমরা ডাঃ রাধাকৃষ্ণের কাছে যাই না, এই পণ্ডিত, সেই পণ্ডিত, এই বদমাশের কাছে যাই না, ... ... না। আমরা যাই না। সেটা আমাদের কাজ নয়। এই হচ্ছে পরম্পরা।