BN/Prabhupada 0317 - আমরা কৃষ্ণকে আত্মসর্মপন করছি না, এটাই রোগ
Lecture on BG 4.7 -- Bombay, March 27, 1974
ধর্ম কী তা বোঝার চেষ্টা করুন। সুতরাং ভগবান হলেন একজন। ভগবান কোথাও বলেন নি যে "এটা ধর্ম এটা ধর্ম নয়। ভগবান বলেছেন, ভগবান কৃষ্ণ ভগবদ-গীতায় বলেছেন... তিনি বলেছেন যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি (ভ.গী. ৪.৭), পরিত্রাণায় সাধূ... পরের শ্লোকে তিনি বলেছেন,
- পরিত্রাণায় সাধূনাং
- বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
- ধর্মসংস্থাপনার্থায়
- সম্ভবামি যুগে যুগে।।
- (ভ.গী ৪.৮)।
ভগবান কৃষ্ণের দুটী উদ্দেশ্য আছে। কারণ তিনি প্রথমেই বলেছেন, ভুত্যানাম ঈশ্বর। আমি সমস্ত জীবের নিয়ন্ত্রক। তাই যখন ধর্মের বৈষম্য হয় তখন আমি শাস্তি প্রদান করার জন্য আবির্ভূত হই। পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্। দুটি কথা।
এটি যেমন সরকারের দায়িত্ব সুরক্ষা প্রদান করা আইন পালন কারী নাগরীকদের এবং চরমপন্থি দের শাস্তি দেওয়া। এই দুটি দায়িত্ব ও সরকারের। আর সর্বোচ্চ সরকার হলেন কৃষ্ণ। কারণ সমস্ত বিচার কোথা থেকে আসে? সরকার আইন পালনকারী ব্যক্তিদের পুরস্কার ও সুরক্ষা প্রদান করেন। এবং চরনপন্থীদেরও সুরক্ষা দেন কিন্তু শাস্তির অধীন করে। সুতরাং ধর্মের অর্থ ভগবান ভগবদ-গীতায় ব্যখ্যা করেছেন। সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ (ভ.গী. ১৮.৬৬)।
এই হচ্ছে ধর্ম, এই হচ্ছে ধর্ম। এবং আমাদের ধর্মই হল আমাদের বিশেষত্ব। কারণ আমাদের মধ্যে কোনো একজন, কারো না কারো কাছে আত্মসর্মপণ করে থাকে। প্রত্যেকের বিশ্লেষণ করা উচিত। তাঁরা যেখানে আত্মসর্মপণ করেছেন তাঁর থেকে উন্নত আর কেউ আছেন কী। সেটা তার পরিবার, তার স্ত্রী, বা তার সরকার, তার সম্প্রদায়, তার সমাজ তার রাজনৈতিক দলের মধ্যে হতে পারে। আপনি যেখানেই যান আত্মসর্ম্পণ আপনাকে করতেই হবে। এটা আপনি এড়িয়ে যেতে পারবেন না মস্কোয় আমার সাথে অধ্যাপক কটোস্কীর কথা হয়েছিল। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম,"এখন আপনি আপনার সাম্প্রদায়িক তত্ত্বের সন্ধান পেয়েছেন। আমরা আমাদের কৃষ্ণ তত্ত্বের সন্ধান পেয়েছি। তত্ত্বের পার্থক্য কোথায়? আপনি লেনিনের কাছে আত্মসর্মপণ করেছেন, আর আমরা কৃষ্ণের কাছে আত্মসর্মপণ করেছি। তাহলে পার্থক্য টা কোথায়? প্রত্যেকেই আত্মসর্মপণ করেছি। এটা কোনো ব্যাপার নয় যে কোথায় আত্মসর্মপণ করেছি। যদি আত্মসমর্ম্পণ সঠিক হয়, তখন সব কিছু সঠিক হয়। যদি আত্মসমর্ম্পণ ভুল হয়, তখন সব কিছু ভুল হয়। এটাই হল তত্ত্ব। তাই আমাদের আত্মসর্মপণ করতেই হবে।
চৈতন্য মহাপ্রভু এটি বর্ণনা করেছেন। জীবের স্বরূপ হয় নিত্য কৃষ্ণ দাস (চৈ. চ. মধ্য ২০.১০৮-১০৯)। আমরা আত্মসর্মপন করেছি কিন্তু আমরা কৃষ্ণের নিকট আত্মসর্মপন করিনি। এটাই রোগ। এটাই রোগ। আর কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন মানে হল এই রোগের চিকিৎসা করা। যখন এই রোগের চিকিৎসা করবেন তখন কৃষ্ণ স্বয়ং আবির্ভূত হবেন। তিনি বলেছেন, যদা যদা হি ধর্মস্য (ভ গী ৪.৭)। ধর্মস্য গ্লানি, ধর্মের অধঃপতন, যখন ধর্মের অধঃপতন হয় কৃষ্ণ বলেছেন, তদাত্মানং সৃজাম্যহম্। এবং অভ্যুত্থানম অধর্মস্য। এখানে দুটি কথা। যখন তারা কৃষ্ণের কাছে আত্মসর্মপন করে না, এবং তারা বহু কৃষ্ণের সৃষ্টি করে। অনেক দুষ্কৃতকারী সেখানে আত্মসর্মপন করেছে। এটাই অধর্মস্য। ধর্ম মানে কৃষ্ণের কাছে আত্মসর্মপন করা, কিন্তু কৃষ্ণের কাছে আত্মসর্মপন করার পরিবর্তে, তারা বিড়াল, কুকুর , এটা, ওটার কাছে আত্মসর্মপন করতে চাইছে। ওটা অধর্ম।
কৃষ্ণ কখন হিন্দু ধর্ম, মুসলিম ধর্ম বা খ্রীষ্টান ধর্ম প্রতিষ্ঠা করার জন্য আবির্ভূত হন না। তিনি সনাতন ধর্ম প্রতিষ্ঠা করার জন্য আবির্ভূত হন। সনাতন ধর্মের অর্থ হল আমরা যোগ্য ব্যক্তির নিকট স্বরন এবং আত্মসর্মপন করেছি। এটাই হল সনাতন ধর্ম। আমরা আত্মসর্মপণ করছি। প্রত্যেকের বিচার করার ক্ষমতা আছে। তারা সেখানে আত্মসর্মপন করেছে। হয়তো রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি, ধর্মীয় যে কোনো জায়গায়। প্রত্যেকের বিচার করার ক্ষমতা আছে। এবং সেখানে আদর্শ নেতাও আছে।
সুতরাং আমাদের কাজ হল আত্মসর্মপন করা। এটাই হল উদ্দেশ্য। কিন্তু আমরা জানি না যে কোথায় আত্মসর্মপন করা উচিত। এটা খুব কঠিন। আর এই আত্মসর্মপন ভুল এবং ভুল জায়গায় হওয়ার ফলে জগতে অরাজকতার সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা এই আত্মসর্মপন কে ওই আত্মসর্মপনে বদলে দিয়েছি। কোনও কংগ্রেস পার্টি নয়। এখন কমিউনিস্ট পার্টি " আবার, "কোনো কমিউনিস্ট পার্টি নয়। এই পার্টি ওই পার্টি।" পার্টি বদল করে কী লাভ? কারন এই পার্টি বা অন্য পার্টি, তারা কেউই কৃষ্ণের কাছে আত্মসর্মপন করে না। সুতরাং আপনি যতক্ষন না কৃষ্ণের কাছে আত্মসর্মপন করবেন ততক্ষন আপনি কোথাও শান্তি পাবেন না। এটাই বিষয়। সাধারণত আপনি ফ্রাইং প্যান ছাড়া আগুন দিয়ে কিছু করতে পারবেন না।