BN/Prabhupada 0336 - এইটা কিভাবে সম্ভব, তারা ভগবানের পিছনে পাগল



Lecture on SB 1.2.5 -- Aligarh, October 9, 1976

এখন আপনি এই দেশে, ধরুন ভারতবর্ষে, এবং পরবর্তী জীবনে, কারণ আপনাকে আপনার শরীর পরিবর্তন করতে হবে, পরবর্তী জীবনে আপনার ভারতবর্ষে জন্ম নাও হতে পারে। আপনি স্বর্গীয় গ্রহ বা পশু সমাজে জন্মগ্রহণ করতে পারেন। কারণ এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। কৃষ্ণ বলেছেন তথা দেহান্তর প্রাপ্তির (ভ.গী ২.১৩)। মৃত্যু মানে দেহের পরিবর্তন। কিন্তু আপনি কী দেহ ধারণ করবেন তা নির্ভর করবে ভগবানের উপর। কিন্তু আপনিও এটা ব্যবস্থা করতে পেরেন। যেমন আপনি যদি চিকিৎসার পরীক্ষায় উত্তির্ণ হন, তাহলে আপনি একজন মেডিক্যাল অফিসার হতে পারেন, মেডিক্যাল সার্ভিস বোর্ডে চাকুরি করতে পারেন, কিন্তু আবার, মেডিকেল বোর্ড দ্বারা নির্বাচিত হতে হবে। অনেক শর্ত আছে। তেমনি পরবর্তী শরীর আপনি নিজে নির্বাচন করতে পারবেন না। এটি নির্ভর করবে পরমেশ্বরের উপর। কর্মণা দৈব নেত্রেণ জন্তুর দেহপ্রপত্যেয় (শ্রী.ভা. ৩.৩১.১)। তাই আমরা পরবর্তী জীবন সম্বন্ধে জানতে পারবো না। আমরা চেষ্টা করলেও জানতে পারবো না যে পরবর্তী জন্ম কী হবে। এই শরীর ত্যাগ করার পরে আমাদের পরবর্তী শরীর গ্রহন করে নিতে হবে।

তাই আমাদের এইজন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। প্রস্তুত মানে শ্রীমদভগবদ্গী‌তায় বলা হয়েছে যান্তি দেবব্রতা দেবান (ভ.গী ৯.২৫)। যদি আপনি নিজেকে উচ্চ কোনো লোকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেন, চন্দ্রলোক, সূর্যলোক, ইন্দ্রলোক, স্বর্গলোক, ব্রহ্মলোক, জনলোক, মহালোক, তপলোক- আরো অনেক কিছু, সহস্র। যদি আপনি সেখানে যেতে চান তাহলে আপনাকে সেই ভাবে প্রস্তুত হতে হবে। যান্তি দেবব্রতা দেবান পিতৃন যান্তি পিতৃব্রতা। সুতরাং আপনি যদি পিতৃলোকে যেতে চান তাহলে আপনি যেতে পারেন। যদি আপনি তার চেয়েও উচ্চ লোক দেবলোকে যেতে চান তাহলে যেতে পারেন। এবং যদি আপনি এখানে থাকতে চান তাহলে আপনি এখানে থাকতে পারেন। এবং যদি আপনি যেতে চান লোক, গোলোক, বৃন্দাবনে, মদযাজীনোপি যান্তি মাম (ভ.গী ৯.২৫)। আপনি সেখানে যেতে পারেন। বাড়ি ফিরতে হবে, ভগবদ্ধামে ফিরতে হবে। এটা সম্ভব। কৃষ্ণ বলেছেন ত্যাক্তা দেহম্‌ পুর্নজন্ম নৈতি মামেতি (ভ.গী. ৪.৯)। যদি আপনি চান তাহলে আপনি বাড়ি ফিরে আসতে পারেন, ভগবানের কাছে ফিরে যেতে পারেন। এটা সম্ভব। সুতরাং যারা বুদ্ধিমান ব্যক্তি তারা অবশ্যিই জানে "যদি আমি দেবলোকে যাই তাহলে সেখানে যাওয়ার ফল কি হবে। যদি আমি পিতৃ লোকে যাই তার ফল কী হবে। যদি আমি এখানে ফিরে আসি তার ফল কী হবে। এবং যদি আমি আমার গৃহ, ভগবানের নিকট ফিরে যাই তার ফল কী হবে।" অন্তিম ফল এই যে যদি আপনি গৃহে, ভগবানের কাছে ফিরে যান তাহলে কী ফল হবে তা ভগবান কৃষ্ণ বলেছেন। ফল হবে ত্যাক্তা দেহম্‌ পুর্নজন্ম নৈতি (ভ.গী. ৪.৯), তাহলে আপনাকে আর এই জড় জগতে জন্মগ্রহণ করতে হবে না। তাই এটা সর্ব্বোচ্চ লাভ। পুর্নজন্ম নৈতি মামেতি।

মামুপেত্য পুনর্জন্ম
দুঃখালয়ম অশাশ্বতম
নাপ্নুবন্তি মহাত্মানঃ
সংসিদ্ধিং পরমাং গতাঃ
(ভ.গী ৮.১৫)।

এটাই উচ্চতম পূর্ণতা এবং তাই এখানে বলা হয়েছে, সবৈ পুংসাং পর ধর্ম যত ভক্তির অধোক্ষজে (শ্রী.ভা. ১.২.৬)। সুতরাং আপনি যদি নিজ গৃহ, ভগবানের কাছে ফিরে যেতে চান তাহলে যত ভক্তির অধোক্ষজে। আপনাকে ভক্তিমূলক পথ গ্রহণ করতে হবে। ভক্ত্যা মাম অভিজানাতি যাবান যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ (ভ.গী ১৮.৫৫)। কৃষ্ণ বা পরমেশ্বর ভগবান কে কর্ম, জ্ঞান, যোগের দ্বারা জানা যায় না। কোনো প্রক্রিয়াই কৃষ্ণ কে জানার জন্য উপযুক্ত নয়। তাই আপনাকে সেই প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে হবে যা কৃষ্ণ অনুমোদন করেছেন, ভক্ত্যা মাম অভিজানাতি যাবান যশ্চাস্মি তত্ত্বতঃ (ভ.গী. ১৮.৫৫)। তাই আমরা কৃষ্ণের লীলা সম্পর্কে ততক্ষণ অবগত হতে পারি না যতক্ষণ না তা শুদ্ধ ভক্ত দ্বারা অনুষ্ঠিত বা বর্ণনা করা হয়। কোনো পেশাদার মানুষ নয়। এটি অস্বীকার করা হয়েছে। চৈতন্য মহাপ্রভু কখনো যোগদান করেননি। কারণ কেবল মাত্র ভক্তি দ্বারা কৃষ্ণ কে জানা যায়। যতো ভক্তির অধোক্ষজে (শ্রী.ভা ১.২.৬)। ভক্তি ছাড়া এটা সম্ভব নয়। নিজ গৃহ, ভগবানের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য ভক্তি প্রক্রিয়া গ্রহন করতে হবে। এটাই কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন।

আমাদের আন্দোলন এই কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন মানুষ কে শিক্ষা দেয় যে কীভাবে ভক্তি মূলক সেবা করা যায় এবং কীভাবে নিজ গৃহ, ভগবানের কাছে ফিরে যাওয়া যায়। এবং এটি খুব একটা কঠিন কাজ নয় ।এটা খুব সহজ। যদি এটা সহজ না হয় তাহলে ইউরোপিয়ান, আমেরিকানরা কীভাবে এটা সত্যি সত্যি গ্রহন করছে? কারণ তারা, আমি মনে করি দশ বছর আগে, এই আন্দোলন শুরুর আগে, তারা কেউই জানত না যে কৃষ্ণ কী। তারা এখন সকলেই কৃষ্ণের ভক্ত। এখন খ্রীষ্টান পাদ্রীরা, তারাও বিস্মিত। বোস্টনের এক খ্রীষ্টান পাদ্রি, তিনি বলেছিলেন যে," এই ছেলেগুলি, এরা আমাদের ছেলে, খ্রীষ্টান এবং ইহুদি জাতি থেকে এসেছে। এই আন্দোলনে যোগদানের আগে তারা আমাদের খোঁজ নেয়ারও প্রয়োজন মনে করত না। অথবা ঈশ্বর সম্পর্কে কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে বা গির্জায় আসতে চাইত না তারা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করত। আর এখন, কিভাবে তারা ভগবানের জন্য এইভাবে পাগল হয়ে গেল?" তারা বিস্মিত। কেন? তারা কেন এইরকম হয়ে গেল? কারণ তারা এই প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে। প্রক্রিয়াটি গুরুত্বপূর্ণ। কেবল জল্পনাকল্পনা ভক্তি তাত্ত্বিক নয় এটা বাস্তব। যতো ভক্তির অধোক্ষজে। যদি আপনি ভক্তি প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে চান, তাহলে চিন্তা ভাবনা নয়। আপনাকে সত্যিই এই প্রক্রিয়ায় নিজেকে সংযুক্ত করতে হবে। যতো ভক্তির অধোক্ষজে। প্রক্রিয়াটি হলো

শ্রবনম্‌ কীর্তনম্‌ বিষ্ণু
স্মরণম্‌ পাদ সেবনম্‌
অর্চনম্‌ বন্দনম্‌ দাস্যম্‌
সখ্যম্‌ আত্ম নিবেদনম্‌
(শ্রী.ভা. ৭.৫.২৩)