BN/Prabhupada 0375 - "ভজহু রে মন" তাৎপর্য - ২



Purport to Bhajahu Re Mana -- San Francisco, March 16, 1967

তাই জীবন খুবই দোদুল্যমান এবং বিপজ্জনক অবস্থায় আছে। এ কারণে আমাদেরকে মানব জীবনের সুবিধা গ্রহণ করতে হবে এবং অবিলম্বে কৃষ্ণ চেতনায় উদ্বু‌দ্ধ হওয়া উচিত। এই মনকে প্রত্যেকের অনুরোধ করা উচিত, "আমার প্রিয় মন, এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে আমাকে টেনো না। দয়া করে আমাকে কৃষ্ণ ভাবনামৃতে থাকতে দাও। এই ভাবে কৃষ্ণ ভাবনামৃত, যা অর্জন করা যায়, তাও গোবিন্দ দাসের দ্বারা বর্ণনা করা হচ্ছে। তিনি বলছেন,

শ্রবণ কীর্তন স্মরণ বন্দন
পাদসেবন দাস্য রে,
পূজন, সখী-জন, আত্ম-নিবেদন
গোবিন্দ-দাস-অভিলাষ রে।

অভিলাষ মানে আকাঙ্খা, আশা অথবা উচ্চকাঙ্খা। তিনি নয়টি ভিন্ন উপায়ে একজন ভক্ত হওয়ার জন্য জন্য অভিলাষী। প্রথম জিনিস শ্রবণ। শ্রবণ মানে শোনা। আমাদের কর্তৃপক্ষের থেকে শুনতে হবে। এটা আধ্যাত্মিক জীবনের শুরু অথবা কৃষ্ণ ভাবনামৃত। যেমন অর্জুনের মতো। তিনি আধ্যাত্মিক বা কৃষ্ণ চেতনা লাভ করেছিল, কৃষ্ণের কাছ থেকে শ্রবণ করে। একইভাবে, কৃষ্ণ বা কৃষ্ণের প্রতিনিধির কাছ থেকে আমাদের শুনতে হবে। যে কৃষ্ণের কথা যথাযথ ভাবে বলবে - আমাদের তার কাছ থেকে কথা শুনতে হবে। যেহেতু বর্তমানে আমাদের কাছে সরাসরি শ্রবণ করার কোনো সুযোগ নেই। কৃষ্ণের কাছ থেকে সরাসরি শোনা, এই ব্যবস্থা আছে। কৃষ্ণ সকলের হৃদয়ে অবস্থিত, এবং আমরা সহজেই তার কাছ থেকে শুনতে পারি, এটা যেকোন জায়গায় এবং সব জায়গায়, কিন্তু তার প্রশিক্ষণ থাকতে হবে, কীভাবে শুনতে হবে। যে উদ্দেশ্যে আমাদের কৃষ্ণের প্রতিনিধির সাহায্য প্রয়োজন। অতএব, চৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন যে আমরা কৃষ্ণের ভক্তিমূলক সেবা করতে পারি, কৃষ্ণ ও আধ্যাত্মিক গুরুর যৌথ কৃপায়। গুরু-কৃষ্ণ-কৃপায় পায় ভক্তিলতা বীজ (চৈ.চ.মধ্য ১৯.১৫১)। আধ্যাত্মিক গুরুর কৃপা দ্বারা, গুরু এবং কৃষ্ণের কৃপা দ্বারা, একজন ভক্তি সেবায়, শ্রীকৃষ্ণর সেবা করার সুযোগ পায়। এটি চৈতন্য-চরিতামৃতেও বলা হয়েছে যে, আধ্যাত্মিক গুরু সরাসরি শ্রীকৃষ্ণের প্রকাশ। কৃষ্ণ একজন গুরু্র আকারে ভক্তের সামনে আসে, ঠিক যেমন সূর্য ঘরে প্রবেশ করে সূর্যের আলো হিসাবে। যদিও সূর্য আপনার ঘর বা আপনার শহর বা আপনার দেশে প্রবেশ করে না - তিনি লক্ষ লক্ষ মাইল দূরে তাই - তবুও, তিনি সূর্যের আলোর শক্তি দিয়ে সর্বত্র প্রবেশ করেন। একইভাবে, কৃষ্ণ সর্বত্র তাঁর বিভিন্ন ক্ষমতা দিয়ে প্রবেশ করেন। এবং কৃষ্ণ থেকে এই আলো পেতে, আমাদের শুনতে হবে। শ্রবণ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেইজন্য গোবিন্দ দাস বলেছেন, শ্রবণম্‌, শ্রবণম্‌ মানে শোনা। এবং যে ব্যক্তি ভালভাবে শোনে, তার পরের ধাপটি কীর্তনম। যেমন আমাদের ছেলেরা তারা কিছু ভালভাবে শুনেছেন, এখন তারা রাস্তা থেকে রাস্তায় যেতে, কীর্তনের জন্য খুব আগ্রহী। এটি একটি স্বাভাবিক ক্রম। এমন নয় আপনি শুনছেন কিন্তু এরপর চুপ হয়ে যাবেন না। পরবর্তী ধাপে কীর্তন হবে। হয় জপ করে, বা লিখে, বা কথা বলে বা প্রচার করে, কীর্তন হ্তে পারে। তাই শ্রবণম্‌ কীর্তনম্‌, প্রথমে শোনা এবং তারপর কীর্তন করা। আর এই শ্রবণ এবং কীর্তন করা কার জন্য? বিষ্ণুর জন্য অন্য কারো জন্য নয়। শ্রবণম্‌ কীর্তনম বিষ্ণু (শ্রী.ভা.৭.৫.২৩)। এটা শাস্ত্রে বলা হয়েছে। সাধারণ মানুষ, তারাও শ্রবণ এবং কীর্তনে নিযুক্ত রয়েছে। তারা সংবাদপত্রের কিছু রাজনীতিবিদদের কথা শুনছে, এবং তারা সারা দিন আলোচনা করছে ও কীর্তন করছে, "ওহ, এই ব্যক্তি নির্বাচনে নির্বাচিত হতে যাচ্ছে। এই ব্যাক্তি নির্বাচিত হতে যাচ্ছে।" তাই শ্রবণ এবং কীর্তন সর্বত্রই আছে। কিন্তু যদি আপনি পারমার্থিক মুক্তি চান তবে আপনাকে বিষ্ণুর বিষয়ে কীর্তন করতে হবে এবং শুনতে হবে, অন্যের সম্পর্কে নয়। শ্রবনম কীর্তনম বিষ্ণু। তাই কবি গাইছেন, শ্রবনম,কীর্তন, স্মরনং, বন্দনম,পাদ-সেবনম, দাস্য রে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া আছে: শ্রবন,কীর্তন, স্মরণ, মন্দিরে উপাসনা করা, সেবাতে নিজেকে নিয়োজিত করা। তাই তারা নয় ধরনের সমস্ত ভক্তিমূলক সেবা চায়। শেষ পর্যন্ত, পূজন সখী-জন। সখী-জন অর্থ হচ্ছে, যারা ভগবানের গোপনীয় ভক্ত, তাদেরকে খুশি করার জন্য। এবং আত্ম-নিবেদন। আত্ম মানে নিজের, এবং নিবেদন মানে আত্মসর্মপন। গোবিন্দ-দাস-অভিলাষ। কবির নাম গোবিন্দ দাস। এবং তিনি প্রকাশ করেন যে তাদের ইচ্ছা শুধুমাত্র এই। তিনি এই ভাবে মানুষ্য জীবনের সুযোগ ব্যবহার করতে চান। এটি এই গানের একটি সারসংক্ষেপ।