BN/Prabhupada 0424 - এই বৈদিক সভ্যতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার কর



Lecture on SB 1.1.1 -- New York, July 6, 1972

সমগ্র পৃথিবীতে সংস্কৃত ভাষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ। বিশেষ করে জার্মানি, তারা সংস্কৃত ভাষার প্রতি খুবই আগ্রহী। জার্মানির অনেক বিদ্বান আছেন যারা ঘন্টার পর ঘন্টা সংস্কৃত ভাষায় কথা বলতে পারেন। তারা সংস্কৃতের খুবই ঐকান্তিক ছাত্র। আমার একজন গুরুভাই, তিনি এখন সুইডেনে আছেন, তিনি বলতেন যে " যখন একজন ভারতীয় ছাত্র লন্ডন থেকে আমাদের দেশে আসতেন।" ব্রিটিশ শাসনামলে, ভারতীয়রা লন্ডনে যেত এবং সেখান থেকে ডিগ্রী নিয়ে আসত, এবং একজন সম্মানিত লোক হিসেবে পরিচিতি পেত। এটিই ছিল পদ্ধতি। তখন দেশে ফিরে আসার পর, সাধারণত তারা ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে ঘুরতে যেত। তখন জার্মানিতে ভারতীয় ছাত্রদের পরীক্ষা নেওয়া হত যে, সে কতটুকু তার নিজের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানে। সুতরাং আমর গুরুভ্রাতা, তার নাম ছিল আর্নেস্ট সুলজি, বর্তমানে তার নাম সদানন্দ স্বামী, তিনি বলেছিলেন যে, "যতদূর আমরা দেখতাম, ভারতীয় ছাত্ররা তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছুই জানে না, সাথে সাথে তাকে বাদ দেয়া হত, "এটি হলো অকেজো।"

তাই, যারা ভারতীয়, বিশেষ করে এখানে যারা উপস্থিত আছ, তোমরা যদি তোমাদের দেশের মর্যাদা বাড়াতে চাও, তাহলে তোমরা এই বৈদিক সাহিত্যের উপস্থাপনা কর। তথাকথিত প্রযুক্তিগত জ্ঞান দ্বারা তোমরা এই পশ্চিমা দেশগুলোতে তোমাদের শেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে পারবে না। এটি সম্ভব না। তারা আরও বেশি উন্নত। তারা একশ বছর এগিয়ে। তোমারা যে ধরনের যন্ত্রই উদ্ভাবন করো না কেন, সেই যন্ত্রটি একশ বছর আগেই পশ্চিমা দেশগুলোতে উদ্ভাবিত হয়ে গেছে। তাই তুমি পারবে না। কিছু করতে পারবে না। যদি তোমরা ভারতীয়রা চাও, তোমাদের দেশের গৌরব বাড়াতে, তাহলে হৃদয় দিয়ে এই বৈদিক সংস্কৃতি উপস্থাপন কর, ঠিক যেমন আমি চেষ্টা করছি। সুতরাং লোকজন এটিকে কেমন ভাবে নিচ্ছে? এই তার প্রমাণ। আমার আগেও অনেক স্বামী এই দেশে এসেছে, তারা প্রকৃত বিষয়টি তুলে ধরতে পারে নি। তাদের কিছু টাকার দরকার ছিল এবং তা পেয়ে তারা ফিরে গেছে। এইটুকুই। আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন এমন নয়। আমরা পশ্চিমা দেশগুলোকে কিছু দিতে চাই । এটিই আমাদের উদ্দেশ্য। আমরা এখানে কিছু নিতে আসি নি, আমাদেরকে তাদের কিছু দিতে হবে। এটিই আমার উদ্দেশ্য। তারা এখানে এসেছে ভিক্ষা করতে, "আমাকে কিছু চাল দাও, কিছু ডাল দাও, কিছু গম দাও, কিছু টাকা দাও," কিন্তু আমি ভারতীয় সংস্কৃতির কিছু দেওয়ার জন্য এখানে এসেছি। এটিই হলো পার্থক্য। সুতরাং তোমরা যারা ইউরোপিয়ান, আমেরিকান ছাত্র, তোমরা এই বৈদিক সংস্কৃতির পূর্ণ সুবিধা নিতে পার। এজন্যই আমি কঠোর পরিশ্রম করছি যাতে, এই দেহ ত্যাগ করার পূর্বেই, আমি তোমাদের কিছু গ্রন্থ দিতে পারি যেগুলো আমার দেহত্যাগের পরেও তোমাদের আনন্দ দিবে। তাই এর সদ্ব্যবহার কর। এর সদ্ব্যবহার কর। প্রত্যেকটি শ্লোক ভালোভাবে পড়, এগুলোর অর্থ বোঝার চেষ্টা কর, নিজেদের মধ্যে আলোচনা কর। নিত্যম্ ভাগবত-সেবয়া। এটিই আমাদের লক্ষ্য। নষ্ট প্রায়েষু অভদ্রেষু নিত্যম্ ভাগবত সেবয়া (শ্রীমদ্ভাগবতম ১।২।১৮) অভদ্র, আমাদের হৃদয়ে অনেক ময়লা আবর্জনা আছে। সুতরাং এই ময়লা আবর্জনা সহজেই কৃষ্ণভাবনামৃতের মাধ্যমে পরিষ্কার হবে। অন্য কোন উপায় নেই।

শৃন্বতাং স্বকথাঃ কৃষ্ণঃ
পুণ্যশ্রবণকীর্তনঃ।
হৃদ্যন্তঃস্থো হ্যভদ্রাণি
বিধুনোতি সুহৃৎসতাম্।।
(শ্রীমদ্ভাগবতম ১।২।১৭)
নষ্ট প্রায়েষু অভদ্রেষু
নিত্যং ভাগবত সেবয়া।
ভগবত্যুত্তমশ্লোকে
ভক্তির্ভবতি নৈষ্ঠিকী।।
(শ্রীমদ্ভাগবতম ১।২।১৮)

এটিই হলো পদ্ধতি। শৃন্বতাং স্বকথাঃ কৃষ্ণ, শ্রীকৃষ্ণ তোমার হৃদয়ে আছেন। শ্রীকৃষ্ণ তোমাদের ভেতর থেকে এবং বাইরে থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন। বাইরে থেকে, তিনি মন্দিরে বিগ্রহ রূপে তাঁকে উপস্থাপন করছেন। তাঁকে সেবা করার এই সুযোগটি তোমাদের নিতে হবে। তিনি তাঁর প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন, আধ্যাত্মিক গুরু, তোমাদের সরাসরি শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে বলার জন্য। এবং ভিতর থেকে পরমাত্মারূপে তিনি তোমাদের সাহায্য করতে প্রস্তুত আছেন। শ্রীকৃষ্ণ খুবই কৃপালু। তিনি চান... যে তোমরা যারা এই জড়জগতে দুঃখ ভোগ করছ, শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং আসেন, এবং তিনি চান, সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ (শ্রীমদ্ভগবদ্গী‌তা ১৮।৬৬) তাই ভাগবত সেবয়া, নিত্যম্ ভাগবত সেবয়া (শ্রীমদ্ভাগবতম ১।২।১৮) হৃদয় পরিষ্কার করছে, চেতোদর্পণমার্জনং (চৈ চ অন্ত ২০।১২) এটিই হলো পদ্ধতি। আমরা ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ, শ্রীকৃষ্ণ। সুতরাং আমরা শুদ্ধ । আমরা এই জড় দূষণের সংস্পর্শে এসে অপবিত্র হয়েছি। তাই আমাদের উচিত নিজেদের বিশুদ্ধ করা এবং পদ্ধতিটি হলো শ্রীকৃষ্ণ সম্পর্কে শ্রবণ করা। ব্যাস্‌।