BN/Prabhupada 0426 - জ্ঞানী ব্যক্তি মৃত বা জীবিত কারোর জন্যই শোক করেন না



Lecture on BG 2.11 -- Edinburgh, July 16, 1972

শ্রীল প্রভুপাদ: অনুবাদ।

প্রদ্যুম্ন: অনুবাদ। পরমেশ্বর শ্রীভগবান বললেন: তুমি প্রাজ্ঞের মতো কথা বলছো অথচ যার জন্য শোক করা উচিৎ নয়, সেই জন্যই শোক করছ যারা জ্ঞানী তারা জীবিত বা মৃত কারও জন্যই শোক করেন না (শ্রীমদ্ভগবদ্গী‌তা ২।১১)।

শ্রীল প্রভুপাদ: "পরমেশ্বর ভগবান বললেন: প্রাজ্ঞের মতো কথা বলছো, অথচ যে বিষয়ে শোক করা উচিৎ নয়, তার জন্য শোক করছ যারা জ্ঞানী তারা জীবিত বা মৃত কারও জন্যই শোক করেন না। এই কৃষ্ণ তত্ত্ব ,কৃষ্ণ ভাবনামৃত আন্দোলন, মানুষকে জীবের স্বরূপ অবস্থান কী, তা বুঝতে শেখায়। এখানে বলা হয়েছে যে একজন জ্ঞানী , তিনি জীবিত বা মৃতদেহের জন্য শোক করেন না। (পাশ থেকে) ওদের সামনের সারি থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত। ওদের সামনের সারি থেকে সরিয়ে দেওয়া উচিত, ওদের পেছনের দিকে যাওয়া উচিত। বর্তমান সভ্যতা দেহাত্মবুদ্ধির ধারণার উপর ভিত্তি করে আছে : "আমি এই দেহ।" "আমি ভারতীয়," "আমি আমেরিকান," "আমি হিন্দু," "আমি মুসলিম," "আমি কালো," "আমি শ্বেতাঙ্গ," ইত্যাদি। জীবনের এই দৈহিক ধারণার উপর ভিত্তি করেই পুরো সভ্যতা চলছে। যদিও শিক্ষার অগ্রগতি হয়েছে , অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কিন্তু কোথাও এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয় না বা শেখানো হয় না, যে "আমি কী।" বরং এই ধরণের শিক্ষার জন্য তারা আরও বিভ্রান্ত হচ্ছে "তুমি এই ভূমিতে জন্মগ্রহণ করেছ। নিজের দেশের জন্য তোমার ভাবা উচিত , নিজের দেশের জন্য তোমার কাজ করা উচিত।" অথবা সেই তথাকথিত জাতীয়তা শেখানো হয়। কিন্তু আসলে আসলে সে কি তা কাউকেই শেখানো হয় না।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে অৰ্জুনেরও একই অবস্থা ছিল । একটি যুদ্ধ হয়েছিল। এটি মহান ভারতের ইতিহাস, মহাভারত। সেই যুদ্ধকে মহাভারত বলা হয়। এই শ্রীমদ্ভগবদ্গীতাও মহাভারতের অংশ। মহাভারত অর্থাৎ মহান ভারত বা মহান গ্রহ। সুতরাং মহান ভারতের সেই ইতিহাসে দুই খুড়তুতো ভাইয়ের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল, পাণ্ডব এবং কৌরব । পাণ্ডবরা এবং কৌরবরা , একই পরিবারের অংশ ছিল, যা কুরু রাজবংশ নামে পরিচিত, এবং সেই সময়, ৫,০০০ বছর আগে, কুরু রাজবংশ সমগ্র বিশ্বের উপর শাসন করতো। এখন, আমরা ভারত-বর্ষ হিসাবে যা জানি তা কেবলমাত্র একটি ভগ্নাংশ। পূর্বে এই গ্রহটি ভারত-বর্ষ নামে পরিচিত ছিল। তারও আগে, হাজার হাজার বছর আগে থেকে, এই গ্রহটি ইলাবৃতবর্ষ নামে পরিচিত ছিল। একজন মহান সম্রাট ছিলেন যার নাম ছিল ভরত। তাঁর নাম অনুসারে এই গ্রহটি ভারত-বর্ষ হিসাবে পরিচিত ছিল। তবে ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে মানুষ একটি খন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ঠিক যেমন ভারতে আমরা অনুভব করেছি, ২০ বছর, বা ২৫ বছর আগে, পাকিস্তান ছিল না। তবে কোনও না কোনওভাবে পাকিস্তান নামের আরেকটি ভাগ হয় । আসলে, বহু বহু বছর আগে এই পৃথিবীতে কোনও বিভাজন ছিল না। গ্রহটি এক, এবং রাজাও ছিলেন একজন, সংস্কৃতিও ছিল এক। সংস্কৃতি ছিল বৈদিক সংস্কৃতি, এবং একটি রাজা ছিল । যেমনটি আমি আপনাকে বলেছি যে কুরু রাজবংশের রাজারা, তারা বিশ্বজুড়ে রাজত্ব করছিল। এটা ছিল রাজতন্ত্র। সুতরাং একই পরিবারের দুই খুড়তুত ভাইয়ের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল, এবং সেই যুদ্ধই হল শ্রীমদ্ভগবদ্গী‌তার আলোচ্য বিষয়। শ্রীমদ্ভগবদ্গী‌তা যুদ্ধক্ষেত্রে দেয়া হয়েছিল । যুদ্ধক্ষেত্রে, আমরা খুবই অল্প সময় পাই। এই শ্রীমদ্ভগবদ্গী‌তা কথিত হয়েছিল যখন দুই পক্ষ যুদ্ধক্ষেত্রে মিলিত হয়। এবং অর্জুন, অন্য পক্ষকে দেখার পর, দেখলেন, তারা সকলেই তার পরিবারের অংশ , সবাই পরিবারের সদস্য, কারণ এটি খুড়তুত ভাইদের মধ্যে যুদ্ধ ছিল, তাই তিনি অত্যন্ত করুণার্দ্র হয়ে পড়েন। করুণার সাথে, তিনি শ্রীকৃষ্ণকে বললেন, "আমার প্রিয় কৃষ্ণ, আমি যুদ্ধ করতে চাই না। আমার খুড়তুত ভাইরা রাজত্ব উপভোগ করুক । এই যুদ্ধে আমি তাদের হত্যা করতে পারি না। " এটাই হল শ্রীমদ্ভগবদ্গী‌তার বিষয়। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ তাকে প্রণোদিত করেছিলেন যে "তুমি একজন ক্ষত্রিয়। যুদ্ধ করা তোমার দায়িত্ব। কেন তুমি নিজের দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হচ্ছ? "