BN/Prabhupada 0590 - শুদ্ধিকরণ মানে হচ্ছে এই কথা বুঝতে পারা যে "আমি এই দেহ নই, আমি চিন্ময় আত্মা"



Lecture on BG 2.20 -- Hyderabad, November 25, 1972

আরুহ্য কৃচ্ছেণ পরং পদং ততঃ পতন্ত্য অধঃ (শ্রীমদ্ভাগবত ১০।২।৩২)। শুধু এই আনন্দের জন্য আমরা বহু পরিকল্পনা করছি । আমাদের মেধা অনুসারে, ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের দ্বারা আমরা পরিকল্পনা তৈরি করছি। রাষ্ট্রগুলোতে, তারাও পরিকল্পনা করছে। ব্যক্তিগতভাবে, এককভাবে, বাণিজ্যিকভাবে প্রত্যেকেই পরিকল্পনা করছে। পরিকল্পনা করা মানে জটিলতায় জড়িয়ে পড়া। এবং তাকে বা তাদেরকে সেই পরিকল্পনা পূরণ করার জন্য পুনরায় জন্ম গ্রহণ করতে হবে। বাসনা, এটাকে বলে বাসনা। আমাদের এই বাসনাকে পরিশুদ্ধ করতে হবে। এটিই প্রয়োজন। যদি আমরা শুদ্ধ না হই তবে আমাদেরকে জন্ম গ্রহণ করতে হবে। জন্ম এবং মৃত্যু, পুনঃ পুনঃ জন্ম মৃত্যু। সুতরাং এই যে বাসনা, এটা কিভাবে শুদ্ধ হতে পারে? এই বাসনাকে শুদ্ধ করা যেতে পারে। সর্বোপাধি-বিনির্মুক্তং তৎ-পরত্বেন নির্মলম(চৈ।চ মধ্য ১৯.১৭০)। আমাদেরকে এই উপাধি ত্যাগ করতে হবে, "আমি ব্রাহ্মণ, আমি শূদ্র," "আমি ক্ষত্রিয়, আমি আমেরিকান, আমি ইন্ডিয়ান," "আমি এই আর ........." আরও বহু উপাধি। কারণ আমি চিন্ময় আত্মা, কিন্তু এই আবরণটা হচ্ছে আমার উপাধি। সুতরাং আমি যদি এই উপাধির দ্বারা পরিচিত হই, তাহলে আমাকে জন্ম মৃত্যুর পুনরাবৃত্তি করতে হবে। এটাকে তুমি শুদ্ধ করতে পার। এটাকে কিভাবে শুদ্ধ করা যেতে পারে? এটা ভক্তিমূলক সেবার দ্বারা শুদ্ধ হতে পারে। যখন তুমি উপলব্ধি করতে পারবে যে তুমি হচ্ছো শ্রীকৃষ্ণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যখন আমি বুঝতে পারব যে," আমি শ্রীকৃষ্ণের সাথে নিত্য সম্পর্কিত । তিনি প্রভু আর আমি তাঁর দাস।" এবং যখন আমি নিজেকে তাঁর সেবায় নিয়োজিত করবো, সেটাই হচ্ছে বাসনার বিশুদ্ধিকরণ। কৃষ্ণভাবনামৃত ছাড়া প্রত্যেকেই জড় চেতনার বিভিন্ন পর্যায় থেকে কাজ করে। "আমি আমেরিকান, তাই আমাকে অবশ্যই এই উপায়ে কাজ করতে হবে। আমি অবশ্যই রাশিয়ানদের সাথে যুদ্ধ করবো।" রাশিয়ানরা ভাবছে "আমি রাশিয়ান, আমি অবশ্যই আমেরিকানদের সাথে যুদ্ধ করবো।" অথবা চীন...... আরও বহু উপাধি। এটাকে বলে মায়া, অজ্ঞানতা।

সুতরাং আমাদেরকে শুদ্ধ হতে হবে। আর এই শুদ্ধিকরণ মানে হচ্ছে, একজনকে অবশ্যই জানতে হবে যে " আমি এই দেহ নই।" আমি চিন্ময় আত্মা। " তাহলে আত্মা হিসেবে আমি কি করছি?" এই মুহূর্তে আমি যা কিছুই করছি তা জীবনের দেহগত ধারণার উপর ভিত্তি করে। কিন্তু চিন্ময় আত্মা হিসেবে আমি কি করছি ? এই জ্ঞান থাকা দরকার। আর এই জ্ঞান আসে তখন, যখন আমরা শুদ্ধ হই।

ব্রহ্মভূতঃ প্রসন্নাত্মা
ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি
সমঃ সর্বেষু ভূতেষু
মদ্ভক্তিং লভতে পরাম্‌
(শ্রীমদ্ভগবতগীতা ১৮।৫৪)

মদ-ভক্তিম লভতে পরাম্‌। কখন? জড় উপাধি থেকে মুক্ত হওয়ার পর, ব্রহ্ম-ভূতঃ। মুক্ত হওয়ার পর , এর আগে নয়। সুতরাং ভক্তি কোন ভাবপ্রবণতা নয়। যেমনটা লোকেরা বলে থাকে...... "যারা খুব শিক্ষিত নয়, তারা বৈদিক সাহিত্য ভালোভাবে পড়তে পারে না, তাই তারা ভক্তি করে।" না। ভক্তি, প্রকৃত ভক্তি তখনই শুরু হয়, যখন কেউ সম্পূর্ণরূপে ব্রহ্মভূত হয়।

ব্রহ্মভূত প্রসন্নাত্মা
ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি
সমঃ সর্বেষু ভূতেষু
মদ্ভক্তি লভতে পরাম্‌
(শ্রীমদ্ভগবতগীতা ১৮।৫৪)।

এটা হচ্ছে ভক্তিমূলক সেবা সম্পাদনের শুদ্ধ চিন্ময় স্তর। জড় উপাধি থেকে মুক্ত হওয়ার পর। সর্বোপাধি-বিনির্মুক্তং তৎপরত্বেন নির্মলম (চৈ.চ মধ্য ১৯.১৭০)। একে বলা হয় নির্মল। এটিই মুক্তি। কারণ চিন্ময় আত্মা নিত্য। এই জড় কলুষতাকে পরিষ্কার করতে হবে। সুতরাং যখন সে শুদ্ধ হয়, তখন হৃষীকেণ হৃষীকেশ-সেবনং ভক্তিরুচ্যতে (চৈ.চ মধ্য ১৯.১৭০)। যখন আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো শুদ্ধ হয়ে উঠবে...... এটি আমেরিকান হাতও না বা ভারতীয় হাতও না। "এটি শ্রীকৃষ্ণের হাত। এই হাত শ্রীকৃষ্ণের সেবায় নিয়োজিত হওয়া উচিত, তাঁর শ্রীমন্দির ঝাড়ু দেয়ার কাজে।" যদি সে এভাবে চিন্তা করে তাহলে সে যে কোন বেদান্তিকের চেয়ে বহু বহু গুণে উন্নত। যদি সে শুধু এটা জানে যে "এই হাত শ্রীকৃষ্ণের," তাহলে সে যে কোনো বেদান্তিকের চেয়ে বহু গুণে উন্নত। এই সমস্ত বেদান্তিকেরা...... অবশ্য সমস্ত ভক্তরাই বেদান্তিক। কিন্তু কেউ কেউ ভাবে যে সে বেদান্তে তার একচেটিয়াভাবে অধিকার। বেদ মানে জ্ঞান। অন্ত মানে চূড়ান্ত। সুতরাং বেদান্ত মানে চূড়ান্ত জ্ঞান। আর চূড়ান্ত জ্ঞান হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ। বেদৈশ্চ সর্বৈরহমেব বেদ্যো (শ্রীমদ্ভগবতগীতা ১৫।১৫)। তাই তথাকথিত বেদান্তিক, যদি তিনি শ্রীকৃষ্ণকে না জানেন, তাহলে এই বেদান্তিকের অর্থ কি? এর কোন অর্থ নেই। তিনিই হচ্ছেন যথার্থ বেদান্তিক, যিনি জানেন যে "শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরমপুরুষোত্তম, তিনি আমার প্রভু। আমি তাঁর নিত্য দাস।" এটি হচ্ছে বেদান্ত জ্ঞান।

অসংখ্য ধন্যবাদ। হরে কৃষ্ণ।