BN/Prabhupada 0602 -পিতা হলেন পরিবাবের নেতা



Lecture on SB 1.16.21 -- Hawaii, January 17, 1974

আমি অধ্যাপক কতভ্স্কি-কে এই প্রশ্নটি করেছিলাম। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম "পার্থ্যকটি কোথায়... আপনাদের কম্যুনিস্ট দর্শন এবং আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত দর্শনের মাঝে? আপনাকে প্রধান ব্যক্তি বলে একজনকে মেনে নিতেই হবে, সে লেনিন বা স্তালিন যেই হোক, এবং আমরাও একজনকে প্রধান হিসেবে গ্রহণ করেছি, ভগবান বা শ্রীকৃষ্ণকে। সুতরাং আপনি লেনিন, স্তালিন কিংবা মলতোভ অথবা এর-ওর নির্দেশ মেনে নিচ্ছেন। আর আমরা শ্রীকৃষ্ণের দর্শন বা শিক্ষা অনুসরণ করছি। সুতরাং নীতিগতভাবে পার্থক্যটি কোথায়? কোন পার্থক্য নেই।" তো সেই অধ্যাপক এর কোন উত্তর দিতে পারে নি। কারো থেকে নির্দেশনা প্রাপ্ত হওয়া ছাড়া আপনি আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মগুলো করতে পারেন না। সেটি মেনে নিতেই হবে।

সেটি হচ্ছে প্রকৃতির নিয়ম। নিত্য নিত্যানাং চেতনঃ চেতনানাং (কঠোপনিষদ ২.২.১৩)। তাহলে আপনি কেন সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষকে স্বীকার করে নিচ্ছেন না? এসব অধীনস্থ কর্তৃপক্ষ... কাউকে না কাউকে আমাদের নেতা বলে মেনে নিতে হবে। নেতৃত্ব ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। সেটি সম্ভব নয়। এমন কোন দল কি রয়েছে, কোন বিদ্যালয় বা কোন প্রতিষ্ঠান, যে তারা কোন মুখ্য নেতা বা পরিচালক ছাড়া চলছে? সারা পৃথিবীতে এরকম একটি উদাহরণও কি আপনি আমাকে দেখাতে পারবেন? না। যেমন একজন ব্যক্তি আমাদের আশ্রয় থেকে চলে গিয়েছে, কিন্তু সে গৌরসুন্দর বা সিদ্ধস্বরূপ মহারাজকে তার নেতা বলে গ্রহণ করেছে। তাই সেই নীতিটি রয়েছে যে আপনাকে কোনও একজনকে নেতা বলে গ্রহণ করতেই হবে। কিন্তু কোন ধরণের, কি ধরণের নেতৃত্ব আমরা গ্রহণ করব তা হল বুদ্ধি। সেটি হল জ্ঞান। আমাদেরকে কারও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার জন্য তাঁর দাসত্ব বা নিয়ন্ত্রণ মেনে নিতে হবে, সুতরাং বুদ্ধির ব্যাপারটি হল "আমরা কার অধীনতা গ্রহণ করব?" সুতরাং সেখানেই আমাদের বুদ্ধির পরীক্ষা, "আমরা কোন ধরণের নেতৃত্ব স্বীকার করে নেব?"

তাই আমাদের মূলনীতি হল শ্রীকৃষ্ণকেই নেতা বলে গ্রহণ করা উচিত, কারণ শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্গীতায় বলেছেন, "মত্তঃ পরতরং নান্যৎ কিঞ্চিদস্তি ধনঞ্জয় (গীতা ৭.৭) শ্রীকৃষ্ণই সর্বোত্তম নেতা। একো বহু ... নিত্য নিত্যানাং চেতনশচেতনানাং (কঠোপনিষদ ২.২.১৩) নেতা মানে হল তাকে অবশ্যই...ঠিক যেমন পিতার ন্যায়। পিতা হলেন পরিবারের নেতা।এবং পিতা কেন পরিবারের নেতা? কারণ তিনি রোজগার করেন, তিনি তার স্ত্রী-সন্তান, দাস-দাসী, সম্পত্তি ইত্যাদি সব প্রতিপালন করেন; তাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁকে পরিবারের নেতা বলে গ্রহণ করে নেয়া হয়। ঠিক তেমনই, আপনারা রাষ্ট্রপতি নিক্সন-কে আপনাদের দেশের নেতা বলে গ্রহণ করেছেন কারণ বিপদের সময়ে তিনি আপনাদের দিকনির্দেশনা দেন, শান্তির সময়েও তিনিই আপনাদের দিকনির্দেশনা দেন। আপনাদের কিভাবে সুখী করা যায়, কিভাবে আপনাদের দুশ্চিন্তামুক্ত রাখা যায়, সেসব নিয়েই তিনি সর্বদা ব্যস্ত। এটি রাষ্ট্রপতির কর্তব্য। নয়তো, আপনারা কেন একজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেন? যে কোন মানুষই তো কোন রাষ্ট্রপতি ছাড়াই বাঁচতে পারে, কিন্তু না। সেটির প্রয়োজন রয়েছে।

ঠিক তেমনই বেদে বলা হয়েছে, নিত্য নিত্যানাং চেতনশ্চেতনানাং। দু'ধরণের জীবসত্তা রয়েছে। এক... তারা উভয়েই নিত্য। নিত্য মানে যা শাশ্বত। এবং চেতন মানে জীবসত্তা।নিত্য নিত্যানাং চেতনশ্চেতনানাং এটি ভগবানের বর্ণনা যে ভগবানও আমাদের মতো একজন চেতন সত্তা। তিনিও চেতন সত্তা। ঠিক যেমন শ্রীকৃষ্ণকে দেখুন। শ্রীকৃষ্ণের মাঝে কি পার্থক্য রয়েছে? তাঁর দুটি হাত রয়েছে; আপনারও দু'খানা হাত রয়েছে। তাঁর মাথা একটি, আপনারও একটি মাথা। আপনার... যেমন তাঁর দুটো পা রয়েছে, আপনারও দুটো পা। আপনি যেমন কিছু গাভী রাখতে পারেন এবং তাদের সঙ্গে খেলা করতে পারেন; শ্রীকৃষ্ণও তেমনি পারেন। কিন্তু সেখানে পার্থক্য রয়েছে। কি পার্থক্য? একো যো বহুনাং বিদধাতি কামান্। যে সে একজন শ্রীকৃষ্ণ। যদিও অনেক দিক থেকে তাঁর সঙ্গে আপনার সাদৃশ্য রয়েছে, কিন্তু একটি পার্থক্যও রয়েছে - তিনি আমাদের সকলকে প্রতিপালন করছেন আর আমরা সকলে তাঁর দ্বারা প্রতিপালিত হচ্ছি। তিনি হলেন নেতা। যদি তিনি খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ না করেন, তবে আপনি কোন খাদ্য পাবেন না। যদি শ্রীকৃষ্ণ আপনাকে পেট্রোল সরবরাহ না করেন, তাহলে আপনি আপনার গাড়িটি চালাতে পারবেন না। তাই একো বহুনাং যো বিদধাতি কামান্। জীবনের যা কিছু প্রয়োজনীয়তাই আমাদের রয়েছে না কেন - আমাদের অনেক কিছুর প্রয়োজন পড়ে - সেগুলো একজনের দ্বারাই সরবরাহ করা হয়, সেই একজন পরম চেতন। সেটিই হল পার্থক্য। আমরা একটি ছোট্ট পরিবারও চালাতে পারি না, আমাদের ক্ষমতা এতোটাই সীমিত। বর্তমানে, বিশেষ করে আজকালকার দিনে, একজন পুরুষ বিয়ে করতে পছন্দ করে না কারণ সে একটি পরিবার, এমনকি একজন স্ত্রী আর সন্তানদের পর্যন্ত প্রতিপালন করতে সক্ষম নয়। সে তাদের ভরণপোষণ করতে পারে না, এমন কি যদি সেটি চার-পাঁচ জনের পরিবারও হয়।