BN/Prabhupada 0611 - যদি তোমরা সেবার উদ্যমটি হারিয়ে ফেল, তাহলে এইসব বিশাল মন্দিরগুলি গুদামঘর হয়ে যাবে



Lecture on SB 1.7.27 -- Vrndavana, September 24, 1976

সুতরাং অন্তত আমরা ভারতীয়রা সেভাবেই প্রশিক্ষিত হয়েছি। শুধু প্রশিক্ষণই নয়, আমরা ভক্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করেছি। যে কেউই ভারতবর্ষে জন্ম নিয়েছে, সেটি তাঁর জন্য একটি বিশেষ সুবিধা। তাঁদের পূর্ববর্তী জন্মগুলোতে তাঁরা অনেক তপস্যা করেছেন, অনেক তপস্যা। এমন কি দেবতারাও এই সুযোগ লাভের জন্য ভারতবর্ষে জন্মগ্রহণ করতে চান। সুতরাং, ভারত... ভাববেন না যে... ভারত মানে এই গ্রহ, ভারতবর্ষ অনেক সম্ভাবনা রয়েছে, তাই আমাদের এটি ভাবা উচিত নয় - যদি মনে করেন "এটি কেবল একটি পাথরের মূর্তি মাত্র", তাহলে তা বেশিদিন টিকবে না। টিকবে না... গলগ্রহ। আর বিগ্রহ থাকবে না, গলগ্রহ হয়ে যাবে। ধরুন আমি এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন আমার নির্দেশনানুযায়ী আমার শিষ্যেরা শ্রীবিগ্রহের সেবাপুজা করছে। বিগ্রহ মানে ভগবানের প্রতিকৃতি, তাঁর রূপ। কিন্তু যদি শাস্ত্র নির্দেশ অনুসরণ না করা হয়, তাহলে আমার মৃত্যুর পর এসব গলগ্রহ হয়ে যাবে, বোঝা হয়ে যাবে। এমন হবে যে "আমাদের মূর্খ গুরু এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন আর আমাদের এখন এই পূজা করতে হচ্ছে, ভোরবেলা খুব থেকে ঘুম ওঠা, যত্তোসব বিরক্তিকর"। এরকম হয়ে যাবে। একে গলগ্রহ বলে, বোঝা। "উনি আমাদের ওপর একটি বোঝা দিয়ে গেছেন"। এই হচ্ছে ঝুঁকি। তাহলে এতো বড় মন্দির ঠিক পরিচালনা হবে না, আর তোমরা দেখবে "এসব ভেঙ্গে পড়ছে" এবং "এটি অপরিষ্কার" এবং আর কোন মনোযোগ থাকবে না। সেটি হবে আমাদের... গলগ্রহ। "এই বোকা লোকটি আমাদের ঘাড়ে একটি বোঝা দিয়ে গিয়েছে।"

তাই এটি অত্যন্ত কঠিন। যদি আমরা হারিয়ে ফেলি..., যদি আমাদের এই অনুভূতিটি নষ্ট হয়ে যায় যে "ইনি হলেন শ্রীকৃষ্ণ, আমার সুযোগ রয়েছে তাঁর সেবা করার..." সাক্ষাদ্ধরিতেন সমস্ত শাস্ত্রৈঃ ... এটি নয়... শ্রীবিগ্রহ-আরাধন-নিত্য-নানা-শৃঙ্গার তন্মন্দির মার্জনাদৌ... তৎক্ষণাৎ... তাই আমরা অত্যন্ত সতর্ক, "কেন তুমি এটি করলে না? কেন ওটি করা হয় নি? কেন? ..." যেই মাত্র ভগবৎসেবার মনোভাব হারিয়ে যাবে, এই মন্দিরটি বোঝা হয়ে যাবে। এভাবেই তা ঘটবে। পরিচালনা করার জন্য এটি একটি বিশাল মন্দির হবে, একটি বিশাল বোঝা হয়ে যাবে। তাই তারা বোঝা অনুভব করছে। তাই কোথাও কখনও কিছু ভেঙ্গে গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। "ঠিক আছে, আমাদের যা টাকা-পয়সা আছে তা দিয়ে প্রথমে সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া করা যাক্।" এই হচ্ছে অবস্থা। বিগ্রহ আর গলগ্রহ। তোমাদের এটি বোঝা উচিত। যদি আমরা এটি ভুলে যাই যে "শ্রীকৃষ্ণ এখানে সশরীরে অবস্থান করছেন। আমাদের খুব ভালো করে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানো উচিত, আমরা তাঁকে খুব উন্নত মানের নৈবেদ্য, পোষাক, ভালো ভালো সব দেব..." তবেই তা হবে সেবা। আর যেই মুহূর্তে এই অনুভূতি আসবে যে, "এটি একটি পাথরের মূর্তি" - মাঝে মাঝে লোকেরা বলে "মূর্তিপুজা" - "আর আমাদের বলা হয়েছে খুব সুন্দর করে এঁর যত্ন নিতে, পোষাক পরাতে, ভোগ দিতে... যত্তোসব বিরক্তি" তাহলেই শেষ। সব শেষ। সব জায়গায় এইভাব এসে গিয়েছে। আমি নাসিক-এ দেখেছি বিশাল বিশাল মন্দির, কোনও পূজারী নেই আর কুকুরগুলো পায়খানা করছে। তারা পূজা ব্যবস্থা শেষ করে দিচ্ছে শুধু তাই-ই নয়। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতেও চার্চগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। আমি লন্ডনে অনেক বড় বড় চার্চ দেখেছি, কিন্তু সবগুলো চার্চ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যখন রবিবাসরীয় সভা হয়, তখন চার্চের তত্ত্বাবধানকারী, দু' তিনজন পুরুষ আর কিছু বৃদ্ধা ভদ্রমহিলারা আসেন। কেউই আসে না। আর আমরা সেগুলো কিনছি। আমরা বেশ কয়েকটা চার্চ কিনেছি। কারণ অগুলো এখন পরিত্যক্ত, অকেজো। লস এঞ্জেলেস-এ কিনেছি, আরও কয়েকটা স্থানেও। সম্প্রতি আমরা টরোন্টোতে কিনেছি। বিশাল বিশাল সব চার্চ, কিন্তু আমাদের কাছে বিক্রিও করবে না। একটি চার্চের পুরোহিত একবার বলেছিলেন, "দরকার হলে আমি এই চার্চে আগুন লাগিয়ে দেব, তবুও আমি ভক্তিবেদান্ত স্বামীকে দেব না।" (হাসি) এই টরোন্টোর চার্চেরও একই অবস্থা ছিল। মেলবোর্ন-এ বিক্রির শর্ত ছিল যে আমরা যেন চার্চ ভবনটি ভেঙ্গে দিই, আমরা বললাম, "কেন"? তিনি বললেন, এটিকে মন্দির বানিয়ে ব্যবহার করুন। নয়তো আমরা দেব না।" তারা প্রত্যাখ্যান করছিল। তোমরা জানো সেটি? তারা এটি পছন্দ করে না যে "এই কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ আমাদের চার্চগুলো কিনে নেবে আর সেখানে শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ স্থাপন করবে।" তারা সেটি চায় না। কিন্তু তাই ঘটছে।

শুধু পাশ্চাত্যের চার্চগুলোই নয়, এখানেও। যেই মুহূর্তে তুমি সেবার উদ্দ্যম হারিয়ে ফেলবে, এই মন্দিরও বিশাল এক গুদামঘর হয়ে পড়ে থাকবে। ব্যাস্। আর কোন মন্দির চাইবে না। সুতরাং আমাদেরকে সেবার দৃঢ় মনোভাব ও উদ্দ্যম বজায় রাখতে হবে। তাই আমরা অত্যন্ত খুঁটিয়ে দেখি - "কেন টাটকা ফুল নেই?" যদি তুমি ভাব, "এ তো পাথরের মূর্তি। এসব সতেজ ফুল আর বাসি ফুলে-ই বা কি হবে? একরকম দিলেই হল, ব্যাস্।" কিন্তু এমন কোন অনুভূতি নেই, "ইনি শ্রীকৃষ্ণ। আমাদের অবশ্যই উচিত তাঁকে সতেজ পুষ্প নিবেদন করা।" ঠিক যেমন আমি একজন জীবন্ত ব্যক্তি, তুমি যদি আমাকে কিছু সতেজ ফুল দাও আর কিছু আবর্জনা নিয়ে আসো, আর আমাকে তা দাও, আমি কি প্রীত হব? তুমি কি এমনটা ভাবো? সুতরাং এই মনোভাবটা শুরুতেই হারিয়ে যাচ্ছে, যে "আমরা কিছু ময়লা বাজে ফুল দিয়ে এই মূর্তিকে সন্তুষ্ট করব। সে তো আর প্রতিবাদ করছে না।" হ্যাঁ। তিনি প্রতিবাদ করবেন না। কিন্তু তোমার জীবনটি শেষ হয়ে যাবে। প্রতিবাদটি সেভাবে আসবে। যেই মুহূর্তে তুমি অনুভূতিটি হারিয়ে ফেলবে, 'ভাব' , বুধা ভাব-সমন্বিতাঃ (গীতা ১০.৮) কে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতে পারে? যখন সেখানে ভাব থাকে, স্থায়ী-ভাব। এইসব বিষয় ভক্তিরসামৃতসিন্ধু-তে আলোচনা করা হয়েছে, ভাব কি বস্তু। কিন্তু যদি তোমার ভাব না থাকে, তাহলে তুমি জাগতিক (অস্পষ্ট), কনিষ্ঠ অধিকারী। শুধু লোক-দেখানো। লোক-দেখানো কিছু বেশিদিন চলতে পারে না। তা খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে।