BN/Prabhupada 0654 - নষ্ট ইন্দ্রিয়ের কারণে তোমাদের চেষ্টার দ্বারা তোমরা ভগবানকে দর্শন করতে পারবে না



Lecture on BG 6.6-12 -- Los Angeles, February 15, 1969

ঠিক যেমন ভগবদগীতায় বলা হয়েছেঃ

পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং
যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি
তদহং ভক্ত্য-উপহৃতং
অশ্নামি প্রযতাত্মনঃ
(গীতা ৯.২৬)

"যদি কেউ একটু ফল, ফুল, সবজি, দুধ, ইত্যাদি প্রীতিসহকারে অর্পণ করে, আমি তা গ্রহণ করি এবং আহার করি।" তিনি আহার করছেন, কিন্তু প্রত্যক্ষভাবে তা দেখতে পারছো না, কিন্তু তিনি তা আহার করছেন। আমরা প্রতিদিনই এই অভিজ্ঞতা লাভ করছি। বিধি নিয়ম অনুযায়ী আমরা প্রতিদিনই শ্রীকৃষ্ণকে ভোগ লাগাচ্ছি, আর তোমরা দেখেছ যে কিভাবে সেই খাবারের স্বাদ সঙ্গে সঙ্গে কতটাই পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে । সেটি হচ্ছে আমাদের ব্যবহারিক দৃষ্টান্ত। কিন্তু আহার করছেন, কিন্তু যেহেতু তিনি পূর্ণ, তাই তিনি আমাদের মতো আহার করেন না। ঠিক যেমন আমি যদি তোমাকে এক থালা খাবার দেই, তুমি তা শেষ করে ফেলবে। কিন্তু ভগবান ক্ষুধার্ত না হলেও তিনি তা আহার করেন। তিনি সেটি আহার করে আবার যেমনটা ছিল তেমনই করে রাখেন। পূর্ণস্য পূর্ণমাদায় পূর্ণমেবাবশিষ্যতে (শ্রী ঈশোপনিষদ, আবাহন) ভগবান এতোটাই পরিপূর্ণ যে তোমার দেয়া সকল আহার্য বস্তু গ্রহণ করলেও তা আবার আগের মতোই রয়ে যায়। তিনি তাঁর চোখের দ্বারা খেতে পারেন। ব্রহ্মসংহিতায় বলা হয়েছে, 'অঙ্গানি যস্য সকলেন্দ্রিয় বৃত্তিমন্তি' ভগবানের দিব্য অঙ্গের সব কয়টি ইন্দ্রিয়ই অন্য সব ইন্দ্রিয়ের কাজ করতে পূর্ণরূপে সক্ষম। ঠিক যেমন তুমি তোমার চোখের দ্বারা কেবল দেখতেই পারবে, চোখ দিয়ে তুমি খেতে পারবে না। কিন্তু ভগবানের ক্ষেত্রে যদি তিনি তোমার দেয়া নিবেদনটি কেবল দর্শন করেন মাত্র, তবে সেটিও তাঁর আহার গ্রহণ করাই।

সুতরাং এই সমস্ত বিষয় এখন বোঝা সম্ভব হবে না। তাই পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে, অপ্রাকৃত ভগবৎসেবার দ্বারা যখন কেউ চিন্ময়স্তরে অধিষ্ঠিত হন, তখনই কেবল ভগবানের অপ্রাকৃত নাম, রূপ, গুণ এবং লীলা তোমার কাছে প্রকাশিত হবে। তুমি তোমার নিজ প্রচেষ্টার দ্বারা তা বুঝতে পারবে না। বরং ভগবান তোমার কাছে তা প্রকাশ করবেন। ঠিক যেমন তুমি যদি এখন সূর্য দেখতে চাও। এখন সম্পূর্ণ আন্ধকার। তুমি যদি বল, "ওহ, আমার কাছে খুব শক্তিশালী একটি টর্চলাইট আছে। এসো, আমি তোমাকে সূর্য দেখাব।" তুমি দেখাতে পারবে না। কিন্তু সকালবেলা যখন সূর্য তাঁর নিজ ইচ্ছার দ্বারা আপনা থেকেই উদয় হবেন, তখন তুমি তা দেখতে পারবে। ঠিক তেমনই তুমি এখন ভগবানকে দেখতে পারবে না, কারণ তোমার ইন্দ্রিয়গুলো সব বাজে, অশুদ্ধ। তোমার ইন্দ্রিয়গুলোকে পরিশুদ্ধ করতে হবে এবং সেই সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে যখন ভগবান তাঁকে তোমার কাছে প্রকাশিত করবেন। সেটিই হচ্ছে পন্থা। তুমি তাঁকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহবান করতে পার না যে, "হে ভগবান, হে কৃষ্ণ, দয়া করে এসো। আমি তোমাকে দেখতে চাই।" না। ভগবান তোমার আজ্ঞাবাহী চাকর নয়। সুতরাং তিনি যখন সন্তুষ্ট হবেন, তখনই কেবল তুমি তাঁকে দেখতে পারবে।

অতএব আমাদের পন্থা হচ্ছে কিভাবে ভগবাঙ্কে সন্তুষ্ট করা যায় যাতে করে তিনি আমাদের কাছে তাঁকে প্রকাশ করেন। সেটিই হচ্ছে প্রকৃত পন্থা। তুমি এমনিতে তা পারবে না... সে জন্যই ওরা আজেবাজে কাউকে ভগবান বলে ভুল করছে। যেহেতু ওরা ভগবানকে দেখতে পারে নি, তাই যে কেউ এসে তাদের বলছে, "আমি ভগবান" আর ওরা সেটিই মেনে নিচ্ছে। কিন্তু তারা জানে না ভগবান কি? কেউ হয়তো বলল, "আমি সত্যের অনুসন্ধান করছি" কিন্তু তোমাকে অবশ্যই জানতে হবে সত্য কি? তা না হলে তুমি কিভাবে সত্যের অনুসন্ধান করবে। ধর, তুমি স্বর্ণ কিনতে চাইছো। কিন্তু স্বর্ণ যে কি সে ব্যাপারে তোমার কিছুটা হলেও তাত্ত্বিক জ্ঞান অথবা অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন। নয়তো মানুষ তোমাকে ঠকিয়ে দেবে। সুতরাং এইসব লোকগুলো অনেক বদমাশদের ভগবান বলে মেনে নিচ্ছে আর প্রতারিত হচ্ছে। যেহেতু ওরা ভগবান কি তা জানে না, তাই যে কেউ এসে বলছে, "আমিই হচ্ছি ভগবান" - আর সেই বদমাশ... সে একটা বদমাশ, আর যে লোকটি বলছে যে 'আমিই ভগবান' সেও একটা বদমাশ। বদমাশের সমাজে আরেকটি বদমাশকে ভগবান বলে গ্রহণ করা হচ্ছে। ভগবান সেই রকম নন। ভগবানকে দেখতে হলে, তাঁকে জানতে হলে নিজেকে সেই যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। সেটিই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃত। সেবোন্মুখে হি জিহবাদৌ স্বয়মেব স্ফুরতদ্যঃ (ভক্তিরসামৃতসিন্ধু ১.২.২৩৪) যদি তুমি ভগবানের সেবায় তোমাকে নিযুক্ত কর, তবেই কেবল তুমি ভগবানকে দর্শন করতে পারবে। নয়তো তা সম্ভব নয়।