BN/Prabhupada 0657 - এই যুগের জন্য মন্দিরই কেবল নির্জন স্থান



Lecture on BG 6.6-12 -- Los Angeles, February 15, 1969

ভক্তঃ "যোগ অনুশীলনের জন্য নির্জন স্থানে যাওয়া উচিৎ... (গীতা ৬.১১)

শ্রীল প্রভুপাদঃ এটি হচ্ছে যোগ অনুশীলনের নির্দেশনা। তোমাদের দেশে যোগ অনুশীলন করার ব্যাপারটি বেশ জনপ্রিয়। এখানে অনেক ধরণের যোগ-সোসাইটি আছে। কিন্তু এখানে ভগবান নির্দেশনা দিচ্ছেন কিভাবে যোগ অনুশীলন করতে হবে। তারপর পড়।

তমাল কৃষ্ণঃ "নির্জন স্থানে গিয়ে ভূমিতে কুশাসন-এর ওপর মৃগচর্ম বা নরম কাপড়ের দ্বারা তা আবৃত করতে হবে। উপবেশনের আসন অত্যন্ত উঁচুও হবে না আবার খুব নিচুও হবে না এবং সেটি একটি পবিত্র স্থানে স্থাপন করতে হবে। তারপর যোগী তাতে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে আসন গ্রহণ করবেন এবং তাঁর মন ও ইন্দ্রিয়সমূহকে সংযত করার দ্বারা অন্তঃকরণ নির্মল করে এবং মনকে একাগ্র করে যোগ অনুশীলন করবেন।

শ্রীল প্রভুপাদঃ প্রথম নির্দেশটি হচ্ছে যোগী কিভাবে বসবেন এবং কোথায় বসবেন। একটি জায়গা নির্বাচন করে সেখানে বসে তোমাকে যোগ অভ্যাস করতে হবে। সেটিই হচ্ছে প্রথম নির্দেশ। পড়তে থাকো।

তমাল কৃষ্ণঃ তাৎপর্যঃ এখানে পবিত্র স্তাহ্ন বলতে তীর্থস্থানকে বোঝানো হয়েছে। ভারতবর্ষে সমস্ত যোগী ও ভক্ত গৃহত্যাগ করে প্রয়াগ, মথুরা, বৃন্দাবন, হৃষীকেশ, হরিদ্বার আদি স্থানে অথবা গঙ্গা ও যমুনার তীরবর্তী কোন নির্জন স্থানে বসবাস করে যোগ অনুশীলন করেন।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ ধর, তোমাকে কোন পবিত্র স্থান খুঁজে বের করতে হবে। আজকালকার যুগে, কত জন লোক পবিত্র স্থান খুঁজে বের করতে প্রস্তুত? জীবনধারণের জন্য তাকে জনাকীর্ণ শহরে বসবাস করতে হয়। পবিত্র স্থানের প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? সুতরাং তুমি যদি পবিত্র স্থান-ই খুঁজে না পাও, তাহলে তুমি কিভাবে যোগ অনুশীলন করবে? সেটিই হচ্ছে প্রথম নির্দেশ। অতএব, এই ভক্তিযোগ এবং এই মন্দির হচ্ছে সেই পবিত্র স্থান। তোমরা এখানে থাকো। এটি হচ্ছে গুণাতীত, চিন্ময় স্থান। বৈদিক নির্দেশ অনুযায়ী শহর হচ্ছে রজোগুণের স্থান। আর বন হচ্ছে সত্ত্বগুণের স্থান। এবং এই মন্দির হচ্ছে গুণাতীত। যদি তুমি শহর বা নগরে থাকো, সেটি হবে রজোগুণের জায়গা। এবং যদি তুমি সেই রজোগুণের জায়গায় থাকতে না চাও, বনে চলে যাও তাহলে সেটি হল সত্ত্বগুণের জায়গা। কিন্তু ভগবানের মন্দির হচ্ছে রজো বা সত্ত্বগুণের ঊর্ধে। তা এই যুগের জন্য মন্দিরই হচ্ছে পবিত্র স্থান। এই যুগে তুমি বনে কোন নির্জন স্থানে যেতে পারবে না। তা অসম্ভব। আর যদি তথাকথিত সব ক্লাসে বসে তুমি যোগের অভিনয় দেখাও, আর অন্যদিকে সবধরনের আজেবাজে কার্যে লিপ্ত হও, তবে সেটি যোগাভ্যাস নয়। এখানে সেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে কিভাবে যোগ অভ্যাস করতে হবে। পড়তে থাকো।

তমাল কৃষ্ণঃ "তাই বৃহন্নারদীয় পুরাণে বলা হয়েছে যে এই কলি যুগে, সাধারণত মানুষ যখন অল্পায়ু, পরমার্থ সাধনে অলস এবং সর্বদাই নানা রকম উপদ্রবের দ্বারা উৎকণ্ঠিত তাদের ক্ষেত্রে পরমার্থ সাধনের শ্রেষ্ঠ পন্থা হচ্ছে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র সংকীর্তন করা। বিবাদ ও শঠতায় পরিপূর্ণ এই কলিযুগে মুক্তিলাভের একমাত্র উপায় হচ্ছে হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র সংকীর্তন করা। এ ছাড়া সাফল্য লাভের আর কোন উপায় নেই, নেই, নেই।

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। এটি হচ্ছে বৃহন্নারদীয় পুরাণের নির্দেশ।

হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্,
কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা।
(চৈতন্য চরিতামৃত, আদিলীলা ১৭.২১)

হরের্নাম... কেবলমাত্র ভগবানের দিব্য নাম কীর্তন কর। সেটিই হচ্ছে আত্মোপলব্ধির বা ধ্যানের একমাত্র পন্থা। এ ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই, আর কোন বিকল্প নেই, আর কোনই বিকল্প নেই। অন্য কোন পন্থা কার্যকরী হবে না। এবং এটি এতোই চমৎকার যে এমন কি একটি ছোট শিশুও তাতে অংশ নিতে পারে। এটি সার্বজনীন।