BN/Prabhupada 0697 - দয়া করা আমাকে আপনার সেবায় নিযুক্ত করুন। ব্যাস্‌ সেটিই আমাদের একমাত্র চাওয়া



Lecture on BG 6.46-47 -- Los Angeles, February 21, 1969

প্রভুপাদঃ হ্যাঁ।

ভক্তঃ আমরা যখন গাইছি ভজ শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য ... "আমরা শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্যকে ভজনা করার জন্য"। তো...

প্রভুপাদঃ ভজ। হ্যাঁ। ভজ অর্থাৎ তাঁর সেবায় যুক্ত হও। সেখানে আপনা থেকেই ভজনা আসছে। যখন তুমি সেবা করছ, তখন ভজনা আপনা থেকে এসে যাচ্ছে

ভক্তঃ (অস্পষ্ট)

প্রভুপাদঃ হুম্‌?

ভক্তঃ এখানে ভজনা করার উদ্দেশ্য কি ভগবৎ সেবা?

প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। সেটিই একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ। শ্রীকৃষ্ণের কাছে আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ...ভগবান শ্রীচৈতন্য আমাদের সেই শিক্ষা দিয়েছেন যে তুমি যা কিছুই চাইবে কখনও জাগতিক কিছু নয় শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ভগবানের কাছে এইভাবে প্রার্থনা করছেন ... ন ধনম্‌ ন জনম্‌ ন সুন্দরীম্‌ কবিতাম্‌ বা জগদীশ কাময়ে (চৈতন্য চরিতামৃত অন্ত্যলীলা ২০/২৯, শিক্ষাষ্টক ৪) "হে প্রিয় প্রভু, জগদীশ। জগত মানে বিশ্ব এবং ঈশ মানে নিয়ন্ত্রক। কৃষ্ণ বা রাম-এর পরিবর্তে বলা হচ্ছে জগতের নিয়ন্ত্রক বা জগদীশ এটি যে কোন সাধারণ মানুষেরই বোধগম্য হবে। কারণ কোন না কোন নিয়ন্ত্রক অবশ্যই আছেন। তিনি হলেন জগদীশ। সমগ্র বিশ্বের নিয়ন্ত্রণকর্তা। তিনি বলছেন, হে প্রিয় জগদীশ্বর, বা ভগবান ন ধনম্‌ ন জনম্‌ ন সুন্দরীম্‌ কবিতাম্‌ বা জগদীশ কাময়ে "আমি আপনার থেকে অনেক ধনসম্পদ চাই না, অনুগামী চাই না, অথবা সুন্দরী রমণীও বাঞ্ছা করি না"। এগুলো হচ্ছে জাগতিক চাওয়াপাওয়া। মানুষ সাধারণত এই জগতে বড় কোন নেতা হতে চায় কেউ রক্‌ফেলার বা ফোর্ড এর মতো বড়লোক হতে চাইছে, কেউ প্রেসিডেন্ট হতে চাইছে কেউ এটা হতে চাইছে, ওটা হতে চাইছে অনেক বড় নেতা হতে চায় যাতে ওদের হাজারো অনুসারী থাকে তো এইগুলো হচ্ছে জাগতিক চাওয়াপাওয়া, "আমকে ধন সম্পদ দিন, আমাকে অনুগামী দিন, আমাকে সুন্দরী স্ত্রী দিন"। ব্যাস্‌। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তা প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি বলছেন, আমি এইসব কিছুই চাই না, ন ধনম্‌। ধনম্‌ মানে ধনসম্পদ। জনম্‌ মানে অনুগামী। ন সুন্দরীম্‌ কবিতাম্‌ বা সুন্দরী স্ত্রীলোক। তাহলে তুমি কেন আমার ভজনা করছ? কেন তুমি ভক্ত হবে? তিনি বললেন, 'মম জন্মনি জন্মনীশ্বরে (চৈতন্য চরিতামৃত অন্ত্যলীলা ২০/২৯, শিক্ষাষ্টক ৪) তিনি মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছেন না কারণ যোগীরা মুক্তি চায়, তাঁদেরও বাসনা আছে জড়বাদী লোকেদের চাওয়াপাওয়া দাবী থাকে। "এটা চাই, ওটা চাই"। এই ধরণের তথাকথিত পরমার্থবাদীরাও মুক্তি চায়। সেটি একপ্রকার চাওয়াপাওয়া। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বললেন, "আমি এধরণের কিছুই চাইনা। আমি কেবল আপনার সেবায় নিযুক্ত হয়ে থাকতে চাই।" জন্মনি জন্মনি - প্রতি জন্মে জন্মে অর্থাৎ তিনি এমনকি এই কথাও বলেন না যে "আমার এই বারংবার জন্মমৃত্যু বন্ধ করুন"। এটিই হচ্ছে ভক্তিযোগের স্তর। কোন চাহিদা নেই। দাবী নেই। কেবল আপনার সেবায় নিযুক্ত করুন। (বিরতি)

আমরা যে হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করছি সেটিও সেই একই উদ্দেশ্যে। এটিও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু শিক্ষা দিয়ে গিয়েছেন। হরে মানে ভগবানের শক্তিকে সম্বোধন করা। এবং কৃষ্ণ বা রাম শব্দে ভগবানকে সম্বোধন। কেন? আমাকে কেবল আপনাদের সেবায় নিযুক্ত করুন। ব্যাস্‌। এটি একমাত্র দাবী বা চাওয়া হওয়া উচিৎ। আমাকে দয়া করে আপনাদের সেবায় নিযুক্ত করুন। কারণ আমাদের সমস্ত রোগের মূল কারণ আমরা শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে গিয়েছি। কারণ আমরা ভাবছি, "আমিই তো ভগবান, আরেকজন ভগবানের সেবা করার কি আছে? আমি নিজেই ভগবান"। এটাই আমাদের একমাত্র রোগ। শেষ আসক্তির জায়গা। প্রথমে আমি রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, রক্‌ফেলার, ফোর্ড, এটা সেটা কতকিছু হতে চেষ্টা করছি। যখন পারছি না, তখন আমি ভগবান হতে চাইছি। আরেক রাষ্ট্রপতি হতে চাইছি। ভক্তিযোগে এমন কোন দাবীই থাকে না। কেবল সেবা করার মানসিকতা। যখন সব ধরণের রাষ্ট্রপতিত্ব ব্যর্থ হয়, তখন আমি সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রপতি বা ভগবান হবার ধান্দায় লেগে যাই। দেখলে? দাবী রয়েছে, রোগ রয়েছে। ওরা এটা বুঝতে পারে না যে আমার এখনও চাওয়াপাওয়া থেকেই গেছে। আমি সবচেয়ে বড় হবার দাবী করছি। কিন্তু ভক্তিযোগ ঠিক উল্টো। কেবল সেবক হবার চেষ্টা করা। দাসে দাস। (শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত মধ্যলীলা ১৩.৮০) । ঠিক বিপরীত। কোন রাষ্ট্রপতি বা ভগবান হবার কোন দাবীদাওয়া নেই আমি কেবল সেবা করতে চাই। আর সেটিই হচ্ছে সবচেয়ে চরম পরীক্ষা। সেবা করাটাই আমাদের প্রকৃত স্বভাব। এই জড়জগতেও তুমি সেবা করছ। আমাকে যদি রাষ্ট্রপতি হতে হয়, তাহলে আমাকে লোকের কাছে গিয়ে হাজারবার বলতে হবে, "আমি আপনাদের সেবা করতে চাই" সেবা করার প্রতিজ্ঞা না করলে রাষ্ট্রপতি হবার কোন প্রশ্নই আসে না। সুতরাং এইভাবে দেখা যায় যে আমার প্রকৃত অবস্থান আমি সেবক আমি রাষ্ট্রপতি হই, কি মন্ত্রী হই, কি এটা সেটা। সেবা করতেই হবে। এটাই ওরা বুঝতে পারে না। রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় পদ, রাষ্ট্রপতি হলেও... ওহ্‌ আমাকে লোকদের সেবা করতে হবে, নয়তো ওরা আমাকে আমার গদী থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। তাই আমার আসল অবস্থান হচ্ছে আমি সেবক মাত্র। কিন্তু এখানে সেবা করা এতোই ভয়ঙ্কর ব্যাপার যে সে সেবাতে সামান্য একটু ত্রুটি হলেই সেই রাষ্ট্রপ্রধানকে সঙ্গে সঙ্গে গদিচ্যুত করবে। তোমাদের রাষ্ট্রপতি কেনেডি সাহেবকে গুলি করে মারলো কেন? কারণ কিছু লোকের কাছে সেই সেবা করাটা মনঃপুত হয় নি। সেটিই আসল কারণ। এখানে সেবা করেও তুমি খুশি করতে পারবে না। আমাদের ভারতবর্ষে গান্ধীজীকেও এভাবে মেরে ফেলা হয়েছে। তিনি সারা জীবন সেবা করে গেছেন, কিন্তু লোকেরা ঐ সময় তাঁকে আর পছন্দ করে নি। "ওহ্‌ আপনি তো এই সেবাটি করছেন না" । এই হচ্ছে অবস্থা। তাই প্রত্যেককে এই কথাটি অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা সহকারে জানতে হবে যে এই সব জড় বস্তুর সেবা আর নয়। আমাকে আমার পরম প্রভুর সেবা করা উচিৎ। সেটিই মনুষ্য জীবনের পরম সার্থকতা।