BN/Prabhupada 0721 - ভগবানকে তুমি কল্পনা করতে পার না, সেটি মূর্খতা
Arrival Address -- Los Angeles, February 9, 1975
কৃষ্ণভাবনামৃতকে তুমি জ্ঞান বা যোগপন্থার মাধ্যমে বা তপস্যা, কর্ম, যজ্ঞ , দান ইত্যাদির দ্বারা উপলব্ধি করতে পারবে না তা বোঝা যাবে না। ভগবান বলেছেন কেবল ভক্তির দ্বারা শ্রীকৃষ্ণকে তত্ত্বত জানতে গেলে কেবল এই পন্থার আশ্রয় নিতে হবে খুবই সরল পন্থা, মন্মনা ভব মদ্ভক্ত মদ্যাজী মাম্ নমস্কুরু (গীতা ১৮/৬৫) "সর্বদা আমার কথা চিন্তা কর, আমার ভক্ত হও, আমাকে পূজা কর এবং শ্রদ্ধাপূর্বক আমাকে নমস্কার কর" চারটি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে হরে কৃষ্ণমহামন্ত্র জপ কর। সেটি হচ্ছে কৃষ্ণচিন্তা, মন্মনা ভক্ত না হলে তুমি এইভাবে তোমার মনকে নিযুক্ত করতে পারবে না এরপর হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ কীর্তন করতে করতে তুমি আপনা থেকেই ভক্ত হয়ে যাবে এরপর রয়েছে বিগ্রহ পূজা। ভক্ত না হলে তুমি তাঁর পূজা করতে পারবে না।
নাস্তিকেরা বলে থাকে, "ওরা কিছু মূর্তি পূজা করে" না। তা ঠিক নয়। ওরা জানে না যে এই বিগ্রহে ভগবান স্বয়ং বিরাজিত তিনি তাঁর ভক্তের সেবা গ্রহন করছেন ঠিক যেভাবে উনি এখানে উপস্থিত থাকলে আমরা যেভাবে তাঁর পূজা করতাম কৃষ্ণ তোমাকে বিরাট রূপ দেখালে তুমি তাঁর পূজা করতে পারবে না বিরাট রূপে বস্ত্র পরাতে চাইলে তা কোথায় পাবে তুমি? সারা দুনিয়ার সমস্ত কাপড়ের কারখানাতেও কম পড়বে। তাই শ্রীকৃষ্ণ করুণা করে এই চার ফুট উচ্চতার শ্রীবিগ্রহে নিজেকে প্রকাশ করছেন যাতে করে তুমি তাঁকে বস্ত্র পরিধান করাতে পারো। তোমার ক্ষমতার মধ্যে যাতে তুমি তাঁর সেবা করতে পারো। সেটিই শ্রীকৃষ্ণের কৃপা। তাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে , অর্চয়ে বিষ্ণু শীলাধীঃ (পদ্যাবলী ১১৫) অর্থাৎ যদি কোন বদমাশ মূর্খ মনে করে যে এই বিষ্ণু মূর্তি হচ্ছে পাথর বা কাঠ বৈষ্ণবে জাতিবুদ্ধিঃ - কোন মহান বৈষ্ণবকে বিশেষ কোন জাতি বা সম্প্রদায়ের মনে করে তাহলে সেটি নারকীবুদ্ধি । সেরকম কখনও ভাবা উচিৎ নয় শ্রীকৃষ্ণ এখানে আছেন , এটাই বাস্তব সত্য অত্যন্ত করুণা করে, আমাকে দয়া করতে তিনি এই রূপে এসেছেন । কিন্তু তিনি শ্রীকৃষ্ণই। তিনি কোন পাথর নন যদিও তা বাইরে পাথর কিন্তু তিনি শ্রীকৃষ্ণই। কারণ কৃষ্ণ ছাড়া কিছুরই অস্তিত্ব নেই শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া কোন কিছুরই অস্তিত্ব নেই সর্বম্ খল্বিদং ব্রহ্ম (ছান্দোগ্য উপনিষদ ৩/১৪/১) শ্রীকৃষ্ণের এমনই ক্ষমতা আছে যে তিনি তথাকথিত পাথরের রূপের মাধ্যমেও তোমার সেবা গ্রহণ করতে পারেন । তিনিই শ্রীকৃষ্ণ
এও সব কথা তোমাদের বুঝতে হবে, এবং যদি তোমরা তত্ত্বত তাঁকে জানতে পার তাহলে সেই যোগ্যতাটুকুই তোমাকে এই জীবনেই মুক্ত করে দেবে
- জন্মকর্ম চ মে দিব্যম্
- এবম্ যো জানাতি তত্ত্বতঃ
- ত্যাক্তা দেহং পুনর্জন্ম
- নৈতি মামেতি সোহর্জুন
- (গীতা ৪/৯)
এইসব কথা এখানে বলা হচ্ছে তাই শ্রীকৃষ্ণকে কেবল ভক্তির দ্বারা বোঝা যায়, আর কোন উপায়েই নয় তুমি জল্পনা কল্পনা করতে পার না, "কৃষ্ণ মনে হয় এটি পছন্দ করতে পারেন" ঠিক মায়াবাদীদের মতো । ওরা কল্পনা করে। ঐসব কল্পনা আমাদের সাহায্য করতে পারবে না। তুমি ভগবানের সম্পর্কে কল্পনা করতে পার না। সেটি হচ্ছে মুর্খামি। ভগবান তোমার কল্পনার বাধ্য নন। তাহলে তিনি ভগবান হতেন না। তিনি কেন আমার কল্পনার মতোই হবেন?
তাই এসব কথা মনোযোগ সহকারে সঠিকভাবে বুঝতে হাবে। আর এইসব তখনই কেউ সঠিক ও পূর্ণভাবে বুঝতে পারে যখন তিনি শুদ্ধ ভক্ত হন। অন্য কেউ না। নাহং প্রকাশ সর্বস্য যোগমায়া সমাবৃত (গীতা ৭.২৫) "আমি সবার কাছে প্রকাশিত হই না"। তিনি কেনই বা সকলের কাছে নিজেকে প্রকাশ করবেন। যখন তিনি সন্তুষ্ট হবেন তিনি নিজেই তোমার কাছে নিজেকে প্রকাশ করবেন সেবোন্মুখে হি জিহবাদৌ স্বয়মেব স্ফুরত্যদঃ (ভক্তিরসামৃতসিন্ধু ১/২/২৩৪) তুমি কখনই সূর্যকে তোমার ইচ্ছে মতো সঙ্গে সঙ্গে উদয় হতে বলতে পার না যখন তিনি সন্তুষ্ট হবেন তিনি নিজে থেকেই সকালবেলায় উদিত হবেন ঠিক তেমনই তোমাকে এমন ভাবে শ্রীকৃষ্ণকে সন্তুষ্ট করতে হবে যে তিনি তোমার সামনে আবির্ভূত হন। তোমার সাথে কথা বলেন, আশীর্বাদ করেন।
অনেক ধন্যবাদ।
ভক্তগণঃ জয় , শ্রীল প্রভুপাদ কি জয়!