BN/Prabhupada 0727 - আমি শ্রীকৃষ্ণের দাসের, দাসের, দাস
Lecture on SB 7.9.28 -- Mayapur, March 6, 1976
ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মহাশয় এই গানটি গেয়েছেন, শরীর অবিদ্যাজাল, জড়েন্দ্রিয় তাহে কাল। কাল মানে সর্প, কালসর্প। এটি যে কোন মুহূর্তে তোমাকে দংশন করতে পারে এবং শেষ করে দিতে পারে। আমরা প্রতি মুহূর্তে দংশিত হচ্ছি। এটি শ্রীকৃষ্ণের করুণা যে আমরা বেঁচে আছি। অন্যথায় আমদের ইন্দ্রিয়গুলি এত বিপদজনক যে, এগুলো যে কোন মুহূর্তে আমাকে অধঃপতিত করতে পারে, কাল সর্প। অনেক জায়গায় আছে, কালসর্পপটলী প্রোৎখাত দংষ্ট্রায়তে। একজন ভক্ত বলেছে, " আমি কালসর্প পরিবেষ্টিত, সাপ; এটি চমৎকার, কিন্তু আমি এর দাঁতগুলো ভেঙ্গে দিতে পারি।" কিন্তু কালসর্প যদি ...... এটিকে কি বলে? বিষদাঁত? যদি এগুলোকে ভেঙ্গে দেয়া হয়- এগুলোকে তুলে নেয়া হয়-তবে তারা আর বিপদজনক নয়। বিপদজনক। এগুলো ততক্ষণই বিপদজনক যতক্ষণ এগুলোর বিষদাঁত থাকবে। সুতরাং প্রোৎখাত দংষ্ট্রায়তে। শ্রীপ্রবোধানন্দ সরস্বতী বলেছেন,কালসর্পপটলী প্রোৎখাত দংষ্ট্রায়তে ( চৈতন্য চন্দ্রামৃত ৫) হ্যাঁ, আমার কালসর্প রয়েছে, কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কৃপায় আমি এর বিষদাঁত গুলো ভেঙ্গে দিয়েছি, তাই এটি আর ভয়ানক নয়।" এটি কি করে সম্ভব? শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কৃপায় এটি সম্ভব। ঠিক যেমন তুমি বিষদাঁত ভেঙ্গে দিতে পার ...... অভিজ্ঞ সাপুড়ে রয়েছে। কারণ কিছু ঔষধ বানানোর জন্য এই বিষের প্রয়োজন হয়, তাই তারা এগুলোকে তুলে নেয়। তখন এটি অকেজো। কিন্তু পুনরায় তারা বৃদ্ধি পায়। সাপের শরীরটি এমন ভাবেই তৈরি যে, তুমি যদি একবার এর বিষদাঁত গুলো তুলে নাও, এগুলো আবার গজাবে। তাই এখানে বলা হয়েছে এটি কি করে সম্ভব? কামাভিকামাম্ অনু যঃ প্রপতান্ প্রসঙ্গাৎ। একবার এটি ভেঙ্গে যেতে পারে, কিন্তু তোমার যদি অসৎ সঙ্গ থাকে তবে আবার তা গজিয়ে উঠবে। কামাভিকামাম্। একটি বাসনা, একটি ভোগ বাসনা আরেকটি ভোগ বাসনার সৃষ্টি করে। এইভাবে একটির পর আরেকটি চলতেই থাকে। এটি হচ্ছে আমাদের পুনঃ পুনঃ জন্ম মৃত্যুর কারণ। ভূত্বা ভূত্বা প্রলীয়তে (শ্রীমদ্ভগবতগীতা ৮.১৯)। সুতরাং আমরা যদি ভক্তি রাজ্যে প্রবেশ করতে চাই, তাহলে আমদেরকে এটি ত্যাগ করতে হবে। অন্যাভিলাষিতাশুন্যম ( ভক্তিরসামৃতসিন্ধু ১.১.১১)। অন্যাভিলাষিতাশুন্যম।
তো "এটি কিভাবে শুন্য হতে পারে? আমি একটি চেতন জীব। এটি কিভাবে শুন্য হতে পারে? আমি সর্বদাই চিন্তা করছি, পরিকল্পনা করছি। আমার বহু বাসনা রয়েছে। তারা বলবে... যারা আত্মার অবস্থান সম্পর্কে জানেনা, তারা বলবে, যে " বাসনা ত্যাগ করা। বাসনাবিহীন।" এটি সম্ভব নয়। বাসনা শুন্য হওয়া সম্ভব নয়। কারণ আমি একটি চেতন জীব , আমার অবশ্যই বাসনা থাকবে। তাই বাসনা শুদ্ধ হতে পারে। এটিই প্রয়োজন। তুমি বাসনাকে শুন্য বানাতে পারবে না। এটি সম্ভব নয়। সর্বোপাধিবিনির্মুক্তং তৎপরত্বেন নির্মলম্ (চৈ চ মধ্য ১৯। ১৭০)। আমদের বাসনা গুলো হয় আমাদের উপাধিগত অবস্থান অনুযায়ী। " আমি হিন্দু ," " আমি মুসলিম।" " আমি কেন কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করবো?" কারণ আমি এই উপাধিতে মনোনীত, আমি এই উপাধি গ্রহন করেছি। " আমি হিন্দু," " আমি মুসলিম," " আমি খ্রিষ্টান।" যার কারণে আমরা কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করিনা। " ওহ, এই...... কৃষ্ণ হিন্দুদের ভগবান। কৃষ্ণ ভারতীয়। আমি কেন কৃষ্ণকে গ্রহণ করবো? না। " তোমাকে বাসনা মুক্ত হতে হবে " মানে তোমাকে তোমার এই ভ্রান্ত ধারনাকে বিশুদ্ধ করতে হবে। এই যে " আমি হিন্দু," " আমি মুসলিম," " আমি খ্রিষ্টান," "আমি ভারতীয়", " আমি এই।" এটিকে শুদ্ধ করতে হবে। একজনকে বুঝতে হবে যে " আমি হচ্ছি গোপীভর্তুঃ পদকমলয়োর্দাসদাসানুদাসঃ(চৈ চ মধ্য ১৩.৮০)। আমি শ্রীকৃষ্ণের দাসের দাসের দাস।" এটি হচ্ছে বিশুদ্ধিকরণ। এরপর বাসনা। তখন তুমি কৃষ্ণ সেবা ছাড়া আর কোন বাসনা করবে না। এটি হচ্ছে সিদ্ধি। যখন তুমি এই স্তরে আসবে যে তুমি কৃষ্ণ সেবা ছাড়া আর কোন বাসনা করছ না, সর্বদাই, ২৪ ঘণ্টা, তখন তুমি মুক্ত। সর্বোপাধিবিনির্মুক্তং তৎপরত্বেন নির্মলম্ (চৈ চ মধ্য ১৯। ১৭০)। তখন তুমি নির্মল হবে, কোনরকম জাগতিক আমেজ ছাড়া। শুধু এই স্তরেই, হৃষীকেণ হৃষীকেশ-সেবনং ভক্তিরুচ্যতে। তখন... আমার ইন্দ্রিয়গুলো তখনও থাকবে; এমন নয় যে আমি ইন্দ্রিয় বিহীন বোকায় পরিনত হব। না। আমার ইন্দ্রিয়গুলো থাকবে। তারা কাজ করবে। তারা শুধু কৃষ্ণ সেবার জন্য কাজ করবে। এটিই প্রয়োজন। আর এটি তখনই সম্ভব যখন তুমি শ্রীকৃষ্ণের দাসের দ্বারা প্রশিক্ষিত হবে। অন্যথায় এটি সম্ভব নয়।
অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভক্তবৃন্দঃ জয় প্রভুপাদ। (সমাপ্ত)