BN/Prabhupada 0758 - ভগবানের চরণে সর্বতোভাবে সমর্পিত ব্যক্তির সেবা কর



760516 - Lecture SB 06.01.16 - Honolulu

যদি কেউ শ্রীকৃষ্ণের জন্য তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করে, যথা কৃষ্ণার্পিতপ্রাণস্তৎপুরুষনিষেবয়া (শ্রীমদ্ভাগবত ৬.১.১৬)। তৎ-পুরুষ, তুমি... শ্রীকৃষ্ণের জন্য আমাদের জীবনকে উৎসর্গ করা অসম্ভব, যদি না আমরা শ্রীকৃষ্ণের ভক্তদের সেবা করি। তৎ-পুরুষ-নিষেবয়া। তুমি শ্রীকৃষ্ণের কাছে সরাসরি যেতে পারবে না। এটি সম্ভব নয়। তোমাকে তাঁর ভক্তের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। যার কারণে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ভক্তকে পাঠান, "যাও আর তাদেরকে উদ্ধার কর।" ঠিক যেমন ধ্রুব মহারাজ। তিনি জানতেন না কিভাবে লাভ করা যায় পরম পুরুষোত্তম ভগবানের কৃপা, কিন্তু আগ্রহের কারণে... তিনি ভগবানের দর্শন লাভ করতে চেয়েছিলেন। যেহেতু তিনি ছিলেন ক্ষত্রিয়... তাঁর মাতা বললেন যে, "একমাত্র ভগবানই তোমাকে সাহায্য করতে পারেন, হে আমার পুত্র। যদি তুমি তোমার পিতার সিংহাসনের অধিকারি হতে চাও, আরও ভালো অবস্থানে, তাহলে একমাত্র ভগবানই তোমাকে সাহায্য করতে পারেন। এটি নয়... তাই তিনি ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, "আমি অবশ্যই ভগবানের দর্শন লাভ করতে চাই।" তাই তিনি বনে গেলেন, কিন্তু তিনি জানতেন না যে কিভাবে ভগবানের কাছে যেতে হয়। মাত্র পাঁচ বছরের একটি বালক, তাঁর দৃঢ় প্রত্যয় ছিল। সুতরাং শ্রীকৃষ্ণ দেখলেন যে "এই বালকটি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।" তাই তিনি তাঁর প্রতিনিধিকে পাঠালেন, নারদঃ "যাও আর তাঁকে প্রশিক্ষণ দাও। সে খুবই আগ্রহী।"

তাই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, গুরু-কৃষ্ণ কৃপায় পায় ভক্তিলতা বীজ (চৈ।চ মধ্য ১৯.১৫১)। তুমি দ্বিগুণ কৃপার মাধ্যমে ভক্তিমূলক সেবায় প্রবেশ করতে পার। একটি কৃপা হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ; আরেকটি কৃপা হচ্ছেন শ্রীগুরুদেব। তাই এটি এখানে বলা হয়েছে, একই জিনিস, কৃষ্ণার্পিতপ্রাণস্তৎপুরুষনিষেবয়া। কেউ একজন কৃষ্ণার্পিত প্রাণঃ হতে পারেনা, শ্রীকৃষ্ণের জন্য তার জীবনকে উৎসর্গ করতে পারেনা, যদি না সে শ্রীগুরুদেবের কৃপা লাভ করতে পারে। এটিই হচ্ছে পন্থা। তুমি সরাসরি পেতে পারনা। এটি সম্ভব নয়। নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেছেন, তাঁর অনেক ভজনে আছে... ছাড়িয়া বৈষ্ণব সেবা নিস্তার পাইয়েছে কেবাঃ "বৈষ্ণব সেবা না করে কে মুক্তি লাভ করতে পেরেছে? কেউ না।"

তাঁদের চরণ সেবি ভক্তসনে বাস,
জনমে জনমে মোর এই অভিলাষ

নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেছেন যে "আমাকে গুরুবর্গের সেবা করতে হবে, সনাতন গোস্বামী, রূপ গোস্বামী, আর ভক্ত সঙ্গে বাস করতে হবে।" তাঁদের চরণ সেবি ভক্ত সনে বাস। নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেছেন, জনমে জনমে মোর এই অভিলাষ। আমাদের... আমরা... লক্ষ্য হতে হবে কিভাবে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা যায়। গুরু পরম্পরার মাধ্যমে, গুরু, এবং ভক্ত সঙ্গে বসবাস, এটিই হচ্ছে পন্থা। তাই আমরা সারা পৃথিবী জুড়ে অনেক কেন্দ্র খুলেছি। এটি হচ্ছে কৌশল, যাতে লোকেরা এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারে ভক্তসঙ্গ করার আর বৈষ্ণব সেবা করার। তাহলেই এটি সাফল্যমণ্ডিত হবে।

তাই এখানে এটি বলা হয়েছে, ভক্তিযোগ মানে, শুধু শ্রীকৃষ্ণের জন্য জীবনকে উৎসর্গ করাই নয়, সেই সাথে বৈষ্ণবদের সেবা করাও, তৎ পুরুষ। তৎ-পুরুষ মানে সেই ব্যক্তির সেবা করা, যিনি শ্রীকৃষ্ণের জন্য তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। দুটো জিনিসঃ শ্রীকৃষ্ণের জন্য জীবন উৎসর্গ করা এবং শ্রীকৃষ্ণের ভক্তের জন্য জীবন উৎসর্গ করা। তাই এই উপায়ে যদি আমরা অগ্রসর হই, তাহলে এই জড়-জাগতিক কলুষতা থেকে মুক্ত হওয়া অনেক সহজ হবে। এটি উল্লেখ করা হয়েছে। ন তথা হ্যঘবান্‌ রাজন্‌ পূয়েত তপআদিভিঃ (শ্রীমদ্ভাগবত ৬.১.১৬)। তপআদিভিঃ, এটি সাধারণ প্রক্রিয়া, কিন্তু খুবই খুবই কঠিন, বিশেষ করে এই যুগে। তাই আমরা যদি শুধু এই উপায়টাকে গ্রহণ করি যে, শ্রীকৃষ্ণের প্রতি উৎসর্গীকৃত জীবন আর বৈষ্ণবদের প্রতি উৎসর্গীকৃত জীবন, তখন আমাদের জীবন সাফল্যমণ্ডিত হবে।

অসংখ্য ধন্যবাদ।

ভক্তবৃন্দঃ জয় শ্রীল প্রভুপাদ।