BN/Prabhupada 0760 - এই আন্দোলনে মৈথুনজীবন নিষিদ্ধ নয়, কিন্তু ভণ্ডামি নিষিদ্ধ



Lecture on SB 6.1.23 -- Honolulu, May 23, 1976

সুতরাং মনুষ্য জীবনের কি কর্তব্য তা উপলব্ধি না করে, যেহেতু সে অধঃপতিত, আমাদের পরিবার এবং সন্তানাদি প্রতিপালনের জন্য একেবারে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। না। পঁচিশ বছর পর্যন্ত। একজন ব্রহ্মচারী যৌন জীবন থেকে বিরত থাকার জন্য প্রশিক্ষিত হয়। এটি হচ্ছে ব্রহ্মচারী, কৌমার্য। কিন্তু তবুও সে যদি সক্ষম না হয়, তখন সে গৃহস্থ জীবনে প্রবেশ করার অনুমোদন প্রাপ্ত হয়। এখানে কোন প্রতারণা বা ভণ্ডামি নেই যে, আমি নিজেকে ব্রহ্মচারী বা সন্ন্যাসী হিসেবে প্রচার করি, আর গোপনে সমস্ত রকমের অসভ্যতা করি। এটি ভণ্ডামি। ভণ্ডামির জীবন কারো পারমার্থিক জীবনে উন্নতি ঘটায় না। এটি হচ্ছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কর্তৃক প্রদত্ত একটি উদাহরণ। তোমরা জান যে, তাঁর ব্যক্তিগত পার্ষদ ছিলেন ছোট হরিদাস। সে ছিল খুব সুন্দর গায়ক, তো সে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সান্নিধ্যে গান করতো। একদিন সে শিখি মাহিতির দিদির কাছ থেকে কিছু চাল ভিক্ষা করতে গিয়েছিল, সেখানে একজন যুবতী রমণী ছিল, সে কামপূর্ণ দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়েছিল। এটি অনেক সময় স্বাভাবিক। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তা বুঝতে পেরেছিলেন। শুধু আমাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য, যখন তিনি খাচ্ছিলেন, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "এই চাল কে এনেছে?" "ছোট হরিদাস।" "তাকে বলো সে যাতে আর আমার সাথে দেখা না করে।" প্রত্যেকেই অবাক হয়ে গিয়েছিলঃ "কি ঘটলো?" তখন খোঁজ নিয়ে জানা গেল যে সে একটি যুবতীর প্রতি কামপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। শুধু এজন্য... শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এতো কঠোর ছিলেন যে তিনি তাকে তাঁর পার্ষদদের মধ্য থেকে বাদ দিয়েছিলেন। তখন অন্যান্য বড় বড় ভক্তরা তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন যে, "সে কিছু ভুল করেছে, দয়া করে তাকে ক্ষমা করে দিন। সে আপনার সেবক।" তখন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বললেন, "ঠিক আছে, তাহলে তোমরা তাকে ফিরিয়ে আন। তোমরা আমাকে ত্যাগ কর। আমি এখান থেকে চলে যাই। আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি।" তারা বললেন, "না, মহাপ্রভু, আমরা এই প্রসঙ্গ আর তুলবো না।"

তো যখন ছোট হরিদাস দেখলেন যে, পুনরায় শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সভায় মিলিত তার জন্য অসম্ভব, সে হতাশ হয়েছিল। তখন সে ত্রিবেণীতে গিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সব জানতেন। তার কিছুদিন পর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, "ছোট হরিদাসের কি খবর?" কেউ একজন বলল, "মহাপ্রভু, আপনি তাকে ত্যাগ করেছিলেন। মনোদুঃখে সে আত্মহত্যা করেছে..." "ওহ্‌, ভালো।" শুধু দেখ যে কতোটা কঠোর। "ভালো হয়েছে।" তিনি কখনও কোন রকম সহানুভূতি দেখান নিঃ 'ওহ্‌, আমি তাকে ত্যাগ করেছি আর সে আত্মহত্যা করেছে? ওহ্‌।" না। তিনি বলেছিলেন, "ওহ্‌, ভালো হয়েছে। এটি ঠিক আছে।" তিনি এরকম বলেছিলেন। এটি একটি ব্যাপার।

আরেকটি ব্যাপার হচ্ছেঃশিবানন্দ সেন, তাঁর একজন মহান ভক্ত, যারা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কাছে আসছিলেন, তিনি তাঁদের সবার দেখাশুনা করতেন রথযাত্রায় অংশগ্রহনের জন্য। তো তার পত্নী আসলেন এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে প্রণাম জানালেন, তিনি দেখলেন যে তার পত্নী সন্তানসম্ভবা। তিনি তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞাসা করলেন, "শিবানন্দ, তোমার পত্নী গর্ভবতী?" "হ্যাঁ।" "ঠিক আছে, সে যখন একটি শিশুর জন্ম দিবে, তুমি তার নাম এরকম রাখবে।" এখন দেখ। একজন ব্যক্তি শুধু একজন স্ত্রীলোকের প্রতি কামপূর্ণভাবে তাকিয়েছিল; সে বহিষ্কৃত হলো। আর আরেকজন ব্যক্তি, তার গর্ভবতী পত্নী ছিল; তিনি ভাল বললেন, "ঠিক আছে।" সুতরাং যৌন জীবন এই আন্দোলনে নিষেধ করা হয়নি, কিন্তু কপটতা নিষিদ্ধ। যদি তুমি কপট হও, তাহলে কোথাও নেই... এটি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা। ছোট হরিদাস, সে নিজেকে একজন ব্রহ্মচারী হিসেবে উপস্থাপন করেছিল আর একজন যুবতী রমণীর প্রতি অন্যভাবে তাকিয়েছিল। তখন তিনি বুঝতে পারলেন, "সে একটি প্রতারক। তাকে ত্যাগ কর," আর শিবানন্দ সেন, তিনি ছিলেন গৃহস্থ। গৃহস্থদের অবশ্যই সন্তান থাকতে হবে। এখানে ভুলটা কোথায়? তিনি বললেন, "হ্যাঁ, আমার মহাপ্রসাদ তাকে দাও।" এটি হচ্ছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আন্দোলন।

তাই আমাদের অনুরোধ, প্রতারক হয়ো না। এখানে চারটি আশ্রম রয়েছেঃ ব্রহ্মচারী, গৃহস্থ, বানপ্রস্থ, সন্ন্যাস। যেটি তোমার জন্য উপযুক্ত বলে মনে কর, সেটিই গ্রহণ কর। কিন্তু সাবধান। প্রতারক হয়ো না। যদি তুমি মনে কর যে তোমার যৌন জীবন প্রয়োজন, ঠিক আছে, বিবাহ কর আর ভদ্র মানুষের মতো থাক। ভণ্ড হয়ো না। এটি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আন্দোলন। তিনি ভণ্ডামি পছন্দ করেন না। কেউ পছন্দ করে না। কিন্তু একজন ব্যক্তির জন্য, যিনি সচেতনভাবে কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনে নিযুক্ত, তার জন্য যৌন জীবন আর জাগতিক ধনসম্পদ খুব একটা ভালো নয়। এটি শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর অভিমত। পারং পরং জিগমিষঃ ভব... নিষ্কিঞ্চনস্য ভগবদ্‌ ভজন উন্মুখস্য, পারং পরং (চৈ।চ মধ্য ১১.৮)। যে জন্য শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু স্বেচ্ছায় সন্ন্যাস গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তাঁর পরিবারের সাথে খুব সুন্দরভাবে অবস্থান করছিলেন। যখন তিনি গৃহস্থ ছিলেন, তিনি দুটি বিবাহ করেছিলেন। একজন পত্নী বিয়োগ হয়েছিলেন; তিনি আবার বিবাহ করেছিলেন। তাই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আমাদেরকে প্রতারক না হওয়ার জন্য শিক্ষা দিচ্ছেন। কিন্তু যখন তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেন, তিনি ছিলেন খুব, খুবই কঠোর। কোন মহিলা তাঁর খুব কাছে আসতে পারত না। দূর থেকে। এই হচ্ছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা।