BN/Prabhupada 0765 - পূর্ণরূপে সচেতন হও যে, সবকিছুই কৃষ্ণের, কোনকিছুই আমার নয়



Lecture on SB 1.13.11 -- Geneva, June 2, 1974

অকিঞ্চন। অকিঞ্চন মানে যার জাগতিক কিছু নেই। অকিঞ্চন-গোচর। কুন্তী মহারাণী শ্রীকৃষ্ণকে অভ্যর্থনা জানাবার সময় তিনি বলেছিলেন, "হে প্রিয় শ্রীকৃষ্ণ, আপনি অকিঞ্চনগোচর (ভাগবত ১.৮.২৬) আপনি কেবল সেই ব্যক্তির দ্বারাই উপলব্ধ হন যার কোন জাগতিক সম্পদ নেই। আর এখন আপনি আমাদের এতোই জাগতিক সম্পদ দিয়েছেন। আমরা কীভাবে আপনাকে বুঝতে পারব? কুন্তীদেবী আক্ষেপ করছিলেন যে, "যখন আমরা বিপদ্গ্রস্ত ছিলাম, তখন আপনি সবসময় আমাদের সাথে ছিলেন। এখন আপনি আমাদের রাজ্য এবং সবকিছুই দিয়েছেন। আর এখন আপনি আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এটা কি হল শ্রীকৃষ্ণ? এর চেয়ে ভাল আমাদের আবারও সেই আগের মতোই দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় রাখুন, কিন্তু আপনি আমাদের সঙ্গে থাকুন।" অকিঞ্চনগোচর। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন অকিঞ্চন-গোচর। যে ব্যক্তি জাগতিক জীবন উপভোগ করতে চাইবে, তার জন্য সম্পূর্ণরূপে কৃষ্ণভাবনাময় হওয়া সম্ভব নয়। এটি অত্যন্ত গোপন রহস্য।

সেই কারণে, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, 'নিষ্কিঞ্চনস্য ভগবদ্ভজনোনমুখস্য (চৈতন্য চরিতামৃত ১১.৮) ভগবদ্‌ভজন, ভক্ত হতে গেলে, কৃষ্ণভাবনাময় হতে চাইলে, তা হচ্ছে নিষ্কিঞ্চনদের জন্য - যার এই জড়জগতে কিছুই নেই। তার মানে এই নয় যে সে দারিদ্রপীড়িত থাকবে। না। তাঁকে এই কথা ভালভাবে জানতে হবে যে, "আমার বলতে কিছুই নেই, সবকিছুই শ্রীকৃষ্ণের"। আমি কেবল তাঁর দাস মাত্র। ব্যাস্‌।" এর নাম হচ্ছে অকিঞ্চন। যদি আমি মনে করি যে "শ্রীকৃষ্ণকে সামনে দেখিয়ে, আমি আমার ভোগের জন্য রাখি," তাহলে সেটি আরেক ধরণের প্রতারণা। তোমাকে পূর্ণরূপে সচেতন হতে হবে যে "সবকিছুই শ্রীকৃষ্ণের, কোনকিছুই আমার নয়।" তাহলে গিয়ে শ্রীকৃষ্ণ তোমার সুহৃদ হবেন। তখনই তিনি দায়িত্ব নেবেন যে কীভাবে তোমার পরম মঙ্গল করা যেতে পারে। তেষাম্‌ সততযুক্তানাম্‌ ভজতাম্‌ প্রীতিপূর্বকম্‌ দদামি (গীতা ১০.১০) প্রীতিপূর্বকম্। এটি অত্যন্ত দৃঢ় প্রতিজ্ঞার বিষয়। "হে কৃষ্ণ, আমি কেবল তোমাকে চাই, আর কিছু না, কিচ্ছুই না। কিছুই না।" ন ধনম্‌ ন জনম্‌ ন সুন্দরী কবিতাম্‌ বা জগদীশ কাময়ে (চৈতন্য চরিতামৃত অন্ত্য ২০.২৯)। এই হচ্ছে ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষা। এই কথা ভগবান চৈতন্যদেব বারংবার আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। নিষ্কিঞ্চনস্য ভগবদ্ভজন। ভগবদ্ভজন মানে তিনি নিজেই (চৈতন্যদেব) নিষ্কিঞ্চন হয়েছেন । তিনি ছিলেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। সবচাইতে ঐশ্বর্যশালী। ত্যক্তা সুরেপ্সিতঃ, সুদুস্ত্যজ সুরেপ্সিত রাজ্যলক্ষ্মীং (ভাগবত ১১.৫.৩৪) শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সবচেয়ে সুন্দরী স্ত্রী ছিল, লক্ষ্মীদেবী, বিষ্ণুপ্রিয়া, লক্ষ্মীপ্রিয়া। কিন্তু জগতের মঙ্গলের জন্য যদিও ইনি নিজে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ছিলেন, তিনি আমাদের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। চব্বিশ বছর বয়সে তিনি সন্ন্যাস গ্রহণ করেছেন।