BN/Prabhupada 0771 - ভক্ত একই সঙ্গে জাগতিক এবং চিন্ময় স্বাদে আকৃষ্ট হতে পারেন না



Lecture on SB 1.5.12-13 -- New Vrindaban, June 11, 1969

ব্যাসদেব বিভিন্ন ধরণের সাহিত্য সম্পর্কে বলছেন তিনি বলছেন যে, যে সাহিত্য ছন্দ অলঙ্কার, কবিতা, রূপক, ব্যাকরণ ইত্যাদি দিক থেকে যতোই সুন্দরভাবে সম্পন্ন হোক না কেন, কিন্তু যদি তাতে পরম সত্যের কোন তথ্য না থাকে, তবে তা কেবল অর্থহীন বাজে জিনিস এবং কোন সন্ত পুরুষই সেই সব সাহিত্যে আগ্রহ পাবেন না। তাঁরা সেইসব বস্তু পরিত্যাগ করেন। ঠিক যেমন হংসদের মতো, রাজহাঁস কখনও কাকেদের প্রিয় স্থানে আনন্দ পায় না। কাক এবং রাজহাঁসের মাঝে পার্থক্য আছে, এমনকি পাখিদের রাজ্যেও, পশুদের রাজ্যেও... এই পার্থক্য সর্বত্র আছে। ভিন্ন ধরণের পশুরা এবং পাখিরা নিজ নিজ দলের সঙ্গে থাকে। ঠিক তেমনই যারা সন্তপুরুষ, কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তিত্ব তাঁদের রুচি এবং কাকের মতো লোকদের রুচি ভিন্ন। কাকের আগ্রহ হচ্ছে ... চর্বিত চর্বাণাম্‌ (শ্রীমদ্ভাগবত ৭/৫/৩০) প্রহ্লাদ মহারাজ বলেছেন, "চর্বিত বস্তুকে চর্বণ করা"। যদিও তা ইতিমধ্যেই চর্বণ করা হয়েছে, এবং কেউ হয়তো সেই একই বস্তু আবার স্বাদ নিয়ে দেখতে চাইছে "দেখি একটু এর মধ্যে কি স্বাদ আছে?" এটি কেবল বৃথা পরিশ্রম মাত্র।

তাই এই জড় জগতে চর্বিত বস্তু চর্বণের প্রক্রিয়াই চলছে। ঠিক যেমন একজন লোক অনেক ভাল ব্যবসা করে অএঙ্ক টাকা জমিয়েছেন এবং অনেক ইন্দ্রিয় তৃপ্তিও করেছেন। কিন্তু তিনি সন্তুষ্ট নন। কিন্তু তবুও তিনি তার নিজের পুত্র-পৌত্রকেও সেই একই কাজে নিযুক্ত করতে চান তিনি নিজেও অভিজ্ঞতা পেয়েছেন যে "এই জীবনধারা মোটেও সুখাবহ নয়। আমি নিজেই আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারি নি, কিন্তু তবু আমি কেন আমার ছেলেদের এবং নাতিদের সেই একই কাজে, চর্বিত বস্তু চর্বণের মধ্যে নিযুক্ত করছি? কারণ যেহেতু ওদের এর চেয়ে ভাল আর কিছু নেই... ন তে বিদুঃ স্বার্থগতিম্‌ হি বিষ্ণুম্‌ দুরাশয়া যে বহিরর্থ মানিনা (শ্রীমদ্ভাগবত ৭/৫/৩১) প্রহ্লাদ মহারাজ তাঁর নাস্তিক পিতাকে উপদেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন... যখন তাঁর পিতা জিজ্ঞাসা করলেন, "আমার প্রিয় পুত্র, কোথা থেকে তুমি এইসব শিখেছ?" তিনি ছিলেন একজন খাঁটি ভক্ত, এবং তাঁর পিতা ছিলেন এক খাঁটি নাস্তিক। তিনি বললেন, "কোন শুদ্ধভক্তের কৃপাভিষিক্ত না হলে কেউই এই স্থিতিতে আসতে পারে না"।

নৈষাম্‌ মতিস্তাবদ্‌ উরুক্রমাংঘ্রিম্‌ (শ্রীমদ্ভাগবত ৭/৫/৩২) উরুক্রমাংঘ্রিম্‌, অঙ্ঘ্রি মানে পাদপদ্ম। কেউই পরমেশ্বর ভগবানের পাদপদ্মে আসক্ত হতে পারে না... কারণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মে আসক্ত হতে গেলে মুক্ত স্তরে আসতে হবে অনর্থ অপগমঃ যদর্থ (শ্রীমদ্ভাগবত ৭/৫/৩২)। অনর্থ, অনর্থ মানে অপ্রয়োজনীয়। আমরা জীবনের অনর্থক প্রয়োজন তৈরি করছি এবং নিজেদের আরও জড়িয়ে ফেলছি এই হচ্ছে জাগতিক জীবন। কিন্তু কেউ যদি কৃষ্ণভাবনাময় হন, শ্রীকৃষ্ণে আগ্রহ লাভ করেন তার ফলে তিনি জাগতিক বস্তুর প্রতি বিতৃষ্ণ হবেন, "এসবের কি প্রয়োজন আছে?" যেমন আমাদের ব্রহ্মচারীরা, ভক্তেরা মাটিতেও শুয়ে থাকতে পারেন তাঁদের ভাল ভাল বিছানা বা নরম কুশনের দরকার পড়ে না কারণ তাঁদের জীবন তাঁরা এমনভাবে গড়ে তুলেছেন যে তাঁরা ভাবেন "আমাকে তো কিছু বিশ্রাম নিতেই হবে। তাহলে এইভাবে না ঐভাবে এসব নিয়ে এতো ভাবার কি আছে?" হ্যাঁ। সেটিই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃতে উন্নতির লক্ষণ। কৃষ্ণভাবনামৃত মানে ভক্তি পরেশানুভব ভক্তিঃ পরেশানুভব বিরক্তিঃ অন্যত্র স্যাৎ (শ্রীমদ্ভাগবত ১১/২/৪২) যাদের কৃষ্ণভাবনামৃতে কোন রুচি নেই, তারা কৃত্রিমভাবে জাগতিক চাহিদা বাড়ানোর মাধ্যমে সুখী হবার চেষ্টা করে কারণ ওদের কাছে আর কিছুই নেই। কিন্তু যেই মাত্র কেউ ভগবানের প্রেমময়ী সেবায় যুক্ত হন, তিনি পরেশানুভব করেন। তিনি কিছু চিন্ময় আনন্দ পান এবং তার ফলে এইসব জাগতিক তথাকথিত সুখ তাঁর কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়।

সেটিই হচ্ছে পরীক্ষা। একজন ভক্ত কখনই একই সাথে জাগতিক এবং পারমার্থিক উভয় আনন্দের প্রতি আগ্রহশীল হতে পারেন না। না। বিরক্তি। ভগবদ্গীতাতেও বলা হয়েছে পরম্‌ দৃষ্টা নিবর্ততে (গীতা ২/৫৯) ঠিক যেমন হাসপাতালে একজন রোগীকে জোর করে কিছু বিশেষ প্রকার খাবার খেতে দেয়া হয় না। তার বাসনা আছে। ঐ ধরণের খাবার খাওয়ার বাসনা আছে। ঠিক যেমন টাইফয়েড রোগী। রোগে ভুগছে। ডাক্তার বলছেন, "তুমি কোন কঠিন খাবার খেতে পারবে না।" কেবল তরল খাবার খেতে পারবে" কিন্তু তার কঠিন খাবার খাওয়ার বাসনা আছে। "ওহ্‌ ডাক্তার বলেছে আমি এইসব খেতে পারব না, ঠিক আছে কি আর করা?" কিন্তু বাসনা ঠিকই আছে। কিন্তু ভক্তকে জোর করতে হয় না। যেমনটা ডাক্তারকে সেই রোগীকে বলে হয়, "এসব খাবে না"। ভক্ত আপনা থেকেই তা করেন। কেন? পরম্‌ দৃষ্টা নিবর্ততেঃ তিনি এর চেয়ে ভাল কিছু দেখেছেন বা স্বাদ পেয়েছেন সেই কারণে তিনি আর এইসব নিকৃষ্ট বস্তুতে রুচি পান না। সেটিই হচ্ছে ভক্তি পরেশানু... অর্থাৎ যখন আমরা সেইসব জঘন্য বস্তুতে রুচি হারাবো তখন জানবো যে আমরা কৃষ্ণভক্তিতে অগ্রসর হচ্ছি পরীক্ষা তোমার নিজের হাতেই আছে। কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হবে না। "আপনার কি মনে হয় আমি কৃষ্ণভক্তিতে এগোচ্ছি?" তুমি নিজেই বুঝতে পারবে ঠিক সেই ভাবে যেমনটা তুমি যখন খাও কেতেই কেহতেই বুঝতে পার তোমার খিদে কতোটা মিটেছে, তুমি কতোটা শক্তি পাচ্ছ কতোটা আনন্দ পাচ্ছ। কাউকে জিজ্ঞাসা করার দরকার পড়ে না। তেমনই এই কৃষ্ণ ভাবনামৃতে যে অগ্রসর হচ্ছে তার পরীক্ষা হচ্ছে যে সমস্ত জাগতিক বস্তুতে রুচি হারিয়ে ফেলবে সেটিই হচ্ছে পরীক্ষা।