BN/Prabhupada 0801 - প্র্রযুক্তি ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বা বৈশ্যের কাজ নয়
Lecture on SB 1.7.16 -- Vrndavana, September 14, 1976
এখানে একজন ব্রহ্মবন্ধু... অশ্বত্থামা একজন ব্রাহ্মণের পুত্ররূপে দ্রোণাচার্যের পুত্ররূপে জন্মেছিলেন. কিন্তু তিনি দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্রকে ঘুমন্ত অবস্থায় জঘন্যভাবে হত্যা করেছিলেন তাই ব্রাহ্মণের কি কথা, তিনি ক্ষত্রিয়ের থেকেও নীচ ছিলেন কারণ ক্ষত্রিয়ও কখনো নিদ্রিত অবস্থায় কাউকে মারে না। একজন ক্ষত্রিয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আহবান জানায়, অস্ত্র এবং যুদ্ধের এবং তারপর তাদের মধ্যে কেউ একজন মারা যায়। সেটি হচ্ছে... এখানে বলা হচ্ছে ব্রহ্মবন্ধু আততায়িনোঃ (শ্রীমদ ভাগবত ১/৭/১৬)। আততায়িন মানে আক্রমণকারী যে কেউই অন্যের স্ত্রীকে অপহরণ করলে তাকে আততায়ী বলা হয়। যে ব্যক্তি বাড়িতে আগুন লাগায়, সে আততায়ী, যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করতে আসে, সে আততায়ী এইভাবে আততায়ীর তালিকা আছে আততায়ীকে তৎক্ষণাৎ হত্যা করার বিধান আছে যদি কেউ আততায়ী হয়, তাহলে তাকে হত্যা করার মধ্যে কোন পাপ নেই যে শত্রু ঘরে আগুন দেয়, যে বিষপ্রয়োগ করে, যে হঠাৎ মারাত্মক অস্ত্র দ্বারা আক্রমণ করে, যে জোর করে অন্যের সম্পদ লুণ্ঠন করে বা জমি দখল করে, এবং যে অন্যের স্ত্রীকে অপহরণ করে তাকে আততায়ী বলা হয়। বৈদিক জ্ঞানে সবকিছুর সংজ্ঞা দেয়া আছে
এই অশ্বত্থামা ছিল আততায়ী তাই অর্জুন তাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলেন যদিও সে ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নিয়েছিল... স্বাভাবিকভাবেই একজন ব্যক্তি ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্ম নিলে, তাকে যোগ্যতা দ্বারা ব্রাহ্মণ হবে বলেই আশা করা যায় সেটাই ছিল প্রশিক্ষণ। ব্রহ্মচারী... বিশেষ করে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়ের সন্তান বৈশ্য পর্যন্ত, তাদের ব্রহ্মচারী হবার শিক্ষা দেয়া হত। শুদ্রেরা এতে আগ্রহী ছিল না দরজা সবার জন্যই উন্মুক্ত। কিন্তু ব্রাহ্মণ , ক্ষত্রিয় ইত্যাদি ছাড়া নিচু শ্রেণীর লোকেরা ব্রহ্মচারী হতে আগ্রহী ছিল না, অথবা তাদের পিতামাতারা আগ্রহী ছিলেন না। যেমন আমরা একটি ব্রহ্মচারী আশ্রম বা স্কুল খুলতে যাচ্ছি, কিন্তু আমার সন্দেহ আছে যে খুব একটা বেশি ছেলে আমরা সেখানে পাব না কারণ এই যুগে মানুষেরা শুদ্র হতেই বেশি আগ্রহী কেউই ব্রাহ্মণ হতে চায় না প্রযুক্তি - প্রযুক্তি মানে শুদ্র প্রযুক্তি - ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বা বৈশ্যদের কাজ নয়। না। যেমন কর্মকার, স্বর্ণকার, ছুতার, হস্তশিল্পী এইসব হচ্ছে প্রযুক্তি। এসব শুদ্রদের জন্য ব্রাহ্মণদের শিক্ষা দেয়া হয় কীভাবে সত্যবাদী হতে হয় কীভাবে ইন্দ্রিয়ের নিয়ন্ত্রক হতে হয় কীভাবে সরল হতে হয়, কীভাবে সহিষ্ণু হতে হয়। এইভাবে। ক্ষত্রিয় - কীভাবে শক্তিশালী হতে হয়, দৃঢ় আর সাহসী হতে হয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা যুদ্ধে আহ্বান করা হলে পালিয়ে না যাওয়ার শিক্ষা দেয়া হয় রাজ্য জয়, রাজ্য শাসন ইত্যাদি। ঈশ্বরভাবশ্চ (গীতা ১৮/৪৩)। এবং দান। এইগুলি হচ্ছে ক্ষত্রিয় গুণাবলী । ক্ষত্রিয়দের দ্বারা দান করা হয় এমনকি এই উদাহরণও আছে যে মুসলমানেরা যখন এই দেশ শাসন করতো তারাও বৃন্দাবনে ভূমি বা মন্দিরের জন্য দান করেছেন। এরকম অনেক উদাহরণ আছে আওরঙ্গজেব কিছু জমি দিয়েছেন, জাহাঙ্গীর দিয়েছেন এখনও বৃন্দাবনে একটি মন্দির আছে যেটি সম্রাট জাহাঙ্গীরের দান করা এবং যমুনার অপর পারে একটি গ্রাম আছে যার নাম জাহাঙ্গীরপুর। সেই গ্রামটি ঐসব ব্রাহ্মণদের দেয়া হয়েছিল যারা মন্দির দেখভাল করছিল তাই দান হচ্ছে ক্ষত্রিয়দের কাজ এবং যজ্ঞ করাও, দান করা, শাসন করা, যুদ্ধ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে পালানো নয়, খুব সাহসী আর শক্তিশালী - এইসব হচ্ছে ক্ষত্রিয় গুণাবলী। আর বৈশ্যদের গুণ হচ্ছে কৃষিকাজ। কৃষি গোরক্ষ্য- গোরক্ষা, কৃষিগোরক্ষ্যবাণিজ্যম্ যদি বেশি উৎপাদন হয় তাহলে বাণিজ্য, ব্যবসা। অন্যথায় ব্যবসা করার কোন প্রশ্নই আসে না। এবং শুদ্র - পরিচর্যায়াত্মকম্ (গীতা ১৮/৪৪) - পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করা। সেটি হচ্ছে কর্মকার, স্বর্ণকার বা তাঁতি। তাকে দিয়ে কাজ করানো এবং কিছু পয়সা দাও তার ভরণপোষণের জন্য। এই হচ্ছে শুদ্র তাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে, কলৌ শুদ্রসম্ভবাঃ কলিযুগে সবাই শুদ্র। দেখবে যে তারা কিছু চাকরি করতে আগ্রহী। কেউ যদি ব্রাহ্মণ পরিবারেও জন্ম নেয়, তবু সে ভাল একটা চাকুরি খুঁজছে সেটি হচ্ছে শুদ্রের মনোবৃত্তি। সেটি ব্রাহ্মণের বৃত্তি নয় ব্রাহ্মণ কারোর চাকরি করবে না। ক্ষত্রিয়ও না, এবং বৈশ্যও না। কেবল শুদ্রেরা।