BN/Prabhupada 0814 - ভগবানের কিছুই করার নেই, তিনি আত্মারাম, তাঁর কোন কিছুর আকাঙ্ক্ষাও নেই



741012 - Lecture SB 01.08.32 - Mayapur

নিতাইঃ "কেউ কেউ বলেন পুণ্যবান রাজাদের মহিমান্বিত করার জন্য অজ জন্মগ্রহণ করেছে, এবং কেউ কেউ বলেন তোমার অন্যতম প্রিয় ভক্ত যদুর আনন্দ বিধানের জন্য তুমি জন্মরহিত হওয়া সত্ত্বেও যদুবংশে জন্মগ্রহণ করেছ। মলয় পর্বতের যশ বৃদ্ধির জন্য যেমন সেখানে চন্দন বৃক্ষের জন্ম হয়, তেমনই তুমি মহারাজ যদুর বংশে জন্মগ্রহণ করেছ।"

প্রভুপাদঃ

কেচিদাহুরজং জাতং
পুণ্যশ্লোকস্য কীর্তয়ে
যদোঃ প্রিয়স্যান্ববায়ে
মলয়স্যেব চন্দনম্‌
(শ্রীমদ্ভাগবত ১.৮.১৮)।

সুতরাং শ্রীকৃষ্ণের কোন কিছু করার নেই। তিনি হচ্ছেন পরম। কেন তাঁর কোন কিছু করার থাকবে? ন তস্য কার্য্যম্‌ করণম্‌। এটি হচ্ছে বেদের সংজ্ঞাঃ "ভগবানের কোন কিছু করার নেই। তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাঁর কোন আকাঙ্ক্ষাও নেই।" ঠিক যেমন আমরা এই জমিটি কেনার কথা ভাবছি, কিংবা ঐ জমিটি। শ্রীকৃষ্ণ কেন এভাবে চিন্তা করবেন? কারণ প্রতিটি জমিই তাঁর অধিকারে। তাই তাঁর কোন কিছু কেনার নেই। সবকিছুই রয়েছে। তাহলে কেন তিনি আসেন? ঠিক একইভাবে, শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং যেমন বলেছেন। তিনি আসেন পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্‌ এর জন্য (ভগবদগীতা ৪.৮)। তিনি ভক্তদের সুরক্ষা প্রদান করতে চান, ভক্তদের মহিমান্বিত করতে চান। এটিই তাঁর উদ্দেশ্য। অন্যথায় তাঁর আর কোন কাজ নেই। তাঁর কোন কিছু করার নেই। ঠিক যেমন একজন ভক্তের শ্রীকৃষ্ণের সেবা করা ব্যতীত, তাঁকে সন্তুষ্ট করা ব্যতীত আর কিছু করার নেই, একইভাবে, শ্রীকৃষ্ণেরও কিছু করার নেই, কিন্তু তিনি তাঁর ভক্তদের মহিমান্বিত করতে চান। এটি হচ্ছে ভাবের আদান প্রদান। যে যথা মাম্‌ প্রপদ্যন্তে (BG 4.11)। তুমি যদি তোমার জীবনকে পরম পুরুষোত্তম ভগবানের মহিমা কীর্তনে উৎসর্গ কর, ভগবানও তৈরি। তাঁর কাজ হচ্ছে তোমাকে মহিমান্বিত করা। অন্যথায় তাঁর আর কোন কাজ নেই।

তাই এখানে এটি বলা হয়েছে যে, প্রিয়স্য, যদোঃ প্রিয়স্য। মহারাজ যদু শ্রীকৃষ্ণের সেবা করার মাধ্যমে তাঁর খুব প্রিয় হয়েছিলেন। প্রিয়স্য। শ্রীকৃষ্ণ যেমন ভক্তদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়, একইভাবে, ভক্তরাও শ্রীকৃষ্ণের খুবই খুবই প্রিয়। আরেকটি শ্লোক রয়েছে, স্বপাদমূলম্‌ ভজতঃ প্রিয়স্য। স্বপাদমূলম্‌ ভজতঃ প্রিয়স্যঃ "যদি কেউ শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মের সেবায় নিয়োজিত থাকে, তিনি খুবই প্রিয় হন।" স্বপাদমূলম্‌ ভজতঃ প্রিয়স্য। ভজতঃ, যিনি শুধুমাত্র সেবায় নিয়োজিত থাকেন শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্মের- তাঁর অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকে না- তিনি অত্যন্ত প্রিয় হন। আর যেই মাত্র তুমি শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় হবে, তোমার সমস্ত সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। ঠিক যেমন তুমি যদি একজন বিশাল ধনী ব্যক্তির প্রিয় পুত্র হও, তাহলে তোমার আর কিসের সমস্যা? স্বাভাবিকভাবেই তিনি তোমার যত্ন নিবেন। যেহেতু সে একজন বিরাট ধনী ব্যক্তির প্রিয় সন্তান হয়েছে, তাহলে তার আর কিসের অভাব? কোন সমস্যা নেই। একইভাবে, আমাদেরকে শ্রীকৃষ্ণের খুব প্রিয় হতে হবে। তাহলে আমাদের সমস্ত সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। এই সমস্ত বদমাশ কর্মীরা তা জানে না। তারা তাদের নিজেদের প্রচেষ্টায় সুখী হতে চায়। এদেরকে বলে কর্মী। তারা কঠোর পরিশ্রম করছে- একই জিনিস- সুখী হওয়ার জন্য, আর ভক্তরাও সুখী হওয়ার চেষ্টা করছে। প্রত্যেকেই চেষ্টা করছে। সুখমাত্যন্তিকং যত্তদ্‌ অতীন্দ্রিয়গ্রাহ্যম (ভগবদ্গীতা ৬.২১)। প্রত্যেকেই সুখী হওয়ার চেষ্টা করছে, কারণ সুখী হওয়াটা আমাদের স্বাভাবিক প্রবণতা। আনন্দময়ো ভাস্যাৎ (বেদান্ত সূত্র ১.১.১২)। প্রত্যেকেই সুখী হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কর্মী, জ্ঞানী আর যোগীরা জানে না যে কিভাবে প্রকৃত অর্থেই সুখী হওয়া যায়। তারা নিজেরা প্রচেষ্টা করছে। কর্মীরা দিন রাত কঠোর পরিশ্রম করছে, অর্থ উপার্জনের জন্য। "যে কোন ভাবেই হোক, সাদা অথবা কালো উপায়ে, সেটা কোন ব্যাপার নয়। টাকা আনো। আমার অবশ্যই একটা সুন্দর গাড়ি থাকতে হবে, সুন্দর বাড়ি, সুন্দর ব্যাংক ব্যালেন্স।" এই হচ্ছে কর্মী। আর জ্ঞানী, যখন সে কাজ করতে করতে হতাশ হয়ে যায়, যখন সে বুঝতে পারে যে "এই কঠোর পরিশ্রম আর ব্যাংক ব্যালেন্স আমাকে কোন ভাবেই সুখী করতে পারবে না, কাজেই এগুলো মিথ্যা, এই সমস্ত কাজ কর্ম। আমি কে..." ব্রহ্ম সত্যম্‌ , জগত মিথ্যা। এভাবে তারা বিতৃষ্ণ হয় আর ব্রহ্মকে গ্রহণ করে... ব্রহ্ম সত্যম্‌।