BN/Prabhupada 0871 - রাজারা প্রথম শ্রেণীর ব্রাহ্মণ, সাধুদের দ্বারা পরিচালিত হতেন



750519 - Lecture SB - Melbourne

রাজারা প্রথম শ্রেণীর ব্রাহ্মণ, সাধুদের দ্বারা পরিচালিত হতেন একজন রাজাকে রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত সকলকে সুরক্ষা দেয়া উচিৎ সে মানুষ না পশু সেটা কোন ব্যাপার নয়। এমনকি গাছপালাও অপ্রয়োজনে কাটার বা হত্যা করার কোন আইন ছিল না। না প্রকৃতপক্ষে, যদি তোমার বিচারবোধ থাকে... জাতীয় মানে একটি রাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সবাই বর্তমানে সরকার কেবল মানুষদেরই যত্ন নেয়, অন্যান্য প্রাণীদের নয়। এটা কোন জাতীয়তা? পশুরা কি করেছে যে ওদের সুরক্ষা দেয়া হবে না? এই হচ্ছে কলিযুগ। পাপের যুগ। পাপময় যুগ। তা আরও বাড়ছে। আরও বাড়ছে। কিন্তু মহারাজ পরীক্ষিতের সময় কেউ কোন অবিচার করতে পারত না। তাই শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, কামম্‌ ববর্ষ পর্জন্যঃ (ভাগবত ১/১০/৪) যেহেতু সবকিছুই তখন যথাযথ ছিল তাই প্রকৃতি সবধরনের সুযোগসুবিধা দিতেন সব প্রয়োজনীয়তা, সবকিছুই পূর্ণ ছিল। যেই মাত্র কেউ ক্ষতিকারক হয়ে যায় বা ভগবানের রাজ্যের আইনের অবাধ্য হয়ে যায়... রাজা মানে ভগবানের প্রতিনিধি হওয়া উচিৎ তাই ভারতবর্ষে রাজাকে ভগবানের প্রতিনিধি মনে করা হয় পূর্বে রাজারা এমনভাবে প্রশিক্ষিত ছিলেন যে একজন মানুষই যথেষ্ট ছিলেন সারা বিশ্বকে শাসন করার জন্য... কমপক্ষে একটা গ্রহ। সেটাই ছিল তখনকার ব্যবস্থা। রাজা এতোই ধার্মিক ছিলেন এই সমস্ত রাজাদের বিষয়ে অনেক অনেক উক্তি রয়েছে। তাঁরা কেন ধর্মপরায়ণ ছিলেন? কারণ তাঁদেরকেও পরিচালনা করা হোত। রাজারা প্রথম শ্রেণীর ব্রাহ্মণ বা সাধুদের দ্বারা পরিচালিত হতেন ব্রাহ্মণ সরকার পরিচালন ব্যবস্থায় অংশ নিতেন না কিন্তু তাঁরা ক্ষত্রিয় রাজাদের উপদেশ প্রদান করতেন যে, "আপনি প্রজাদের এইভাবে পরিচালনা করুন"। যদি রাজারা তা না করতেন, তাহলে ব্রাহ্মণদের এতো ক্ষমতা ছিল যে - এইরকম বহু উদাহরণ আছে যে যেখানে তাঁরা রাজাকে হত্যা করতেন বা সিংহাসনচ্যুত করতেন কিন্তু তাঁরা নিজেরা ক্ষমতায় আরোহণ করতেন না। সেই ক্ষত্রিয়ের ছেলেকে সুযোগ দেয়া হোত। এটিই ছিল ব্যবস্থা।

তাই পরীক্ষিত মহারাজ সাত দিনের মধ্যে মৃত্যুবরণের অভিশাপ পেয়েছিলেন সেটিও অনেক সুন্দর, মজার কাহিনী। আসলে মজার নয়, অনেক অনেক দুঃখের কাহিনী যেখানে পরীক্ষিত মহারাজ একটি ব্রাহ্মণ বালকের দ্বারা অভিশপ্ত হন যে সাতদিনের মধ্যে সর্পাঘাতে তাঁর মৃত্যু হবে। সেই ঘটনাটি কি ছিল? ঘটনাটি ছিল এই যে, মহারাজ পরীক্ষিত বনে গিয়েছিলেন মৃগয়া করতে শিকার করা কেবল ক্ষত্রিয় রাজাদের জন্য অনুমোদিত ছিল কারণ তাঁদের শাসন করতে হোত এবং পূর্বে অনেক দস্যু বা বদমাশ থাকতো, রাজার আদেশে বা রাজা নিজেই তাদের তৎক্ষণাৎ হত্যা করতেন , তাই তাঁদেরকে কীভাবে (অস্ত্র চালিয়ে) হত্যা করতে হয় তা অভ্যাস করতে হোত। আর বনে গিয়ে কোন হিংস্র পশুকে হত্যা করে সেই অভ্যাস করা হোত। খাওয়ার জন্য নয়। আজকালকার দিনে হত্যা করা হচ্ছে জিহবার লোভে খেতে। না সেটি আইন নয়। এইভাবে মহারাজ পরীক্ষিত একটি শিকারে ছিলেন এবং তিনি খুব তৃষ্ণার্ত হলেন তাই তিনি একজন মুনির আশ্রমে প্রবেশ করলেন সেই মুনি তখন ধ্যানে স্থিত ছিলেন তিনি ভেতরে গিয়ে বললেন, "আমাকে একটু পানীয় জল দিন। আমি খুবই তৃষ্ণার্ত"। তিনি ভাবলেন, "এটি আশ্রম"। তিনি ধ্যানস্থ মুনি তা শুনতে পান নি তাই রাজা কিছুটা বিরক্ত হলেন, "আমি একজন রাজা, আমি জল চাইছি আর এই লোকটি চুপ করে আছে"। তাই তিনি কিছুটা রেগে গেলেন এবং সেখানে একটা মৃত সাপ ছিল তিনি সেই সাপটি নিয়ে মুনির গলায় পেঁচিয়ে দিয়ে চলে গেলেন।

সেই মুনির একটি ছেলে ছিল দশ-বার বছরের সে খেলা করছিল। তাঁর বন্ধুরা গিয়ে তাঁকে বলল যে "রাজা এইমাত্র তোমার বাবাকে এইভাবে অপমান করেছে।" সেই বালকটি খুব রেগে গেল। "ওহ্‌ রাজা এতোই কর্কশ যে তিনি আমার বাবাকে অপমান করেছে।" সে এসে তাঁর পিতার গলায় সেই মৃত সাপটিকে ঝুলানো দেখল সে তৎক্ষণাৎ মহারাজ পরীক্ষিতকে অভিশাপ দিল যে, "আপনি সাত দিনের মধ্যে মারা যাবেন, একটি তক্ষক সাপের দংশনে"। যখন সে খুব চিৎকার করে কান্নার করছিল ... এতো আওয়াজ হচ্ছিল যে সেই মুনি, সন্তজন উঠে পড়লেন। "কি হয়েছে পুত্র, তুমি কাঁদছ কেন?" না, না, রাজা - আপনার অপমান করেছে, কিন্তু খবর এই যে আমিও অভিশাপ দিয়ে দিয়েছি।" ওহ্‌, সেই মুনি এই কথা শুনে অত্যন্ত দুঃখ পেলেন। বললেন, তুমি এতো মহান একজন রাজাকে অপমান করেছ ? ওহ্‌ তুমি সম্পূর্ণ ব্রাহ্মণ জাতির নামে কলঙ্ক লাগিয়ে দিলে তুমি কলিযুগকে আসতে দিলে। এটা কলির চক্রান্ত যাই হোক এখন রাজাকে খবর পাঠাও "আমার পুত্র মূর্খতাবশত আপনাকে অভিশাপ দিয়েছি। কিন্তু আমি কি করতে পারি? এটা ভগবানের ইচ্ছা। তাই তা হয়েছে। তাই এখন আপনি প্রস্তুত থাকুন।" দেখ, একজন ব্রাহ্মণের ছেলে, সে কত শক্তিশালী ছিল। যদি একটি দশ বছরের বালকও, এই রকম একজন মহান রাজাকে অভিশাপ দিতেন এবং তাঁকে তা পালন করতে হব। এই ছিল ক্ষত্রিয়দের, ব্রাহ্মণদের অবস্থা। এবং... বৈশ্য ও শুদ্রদের । চাতুর্বর্ণ্যং ময়া সৃষ্টং গুণকর্ম বিভাগশ (গীতা ৪/১৩) ভগবানের ইচ্ছায় মানব সামজে চারটি শ্রেণী আছে প্রথম শ্রেণী হচ্ছে ব্রাহ্মণেরা, দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকদের বলা হয় ক্ষত্রিয় এবং তৃতীয় শ্রেণীর লোকেদের বলা বৈশ্য এবং বাকি সব মানুষদের বলা হয় শুদ্র।