BN/Prabhupada 0909 - আমাকে জোর করেই আমার গুরুদেবের নির্দেশ পালন করার মতো অবস্থায় আসতে হয়েছে



Lecture on SB 1.8.27 -- Los Angeles, April 19, 1973

প্রভুপাদঃ ভগবান কৃষ্ণ বলেছেন, যে কেউই আমার কাছে আসতে চায়, কৃষ্ণভাবনাময় হতে চায়, এবং একইসঙ্গে সে জাগতিকভাবেও সুখী হতে চায় সে খুব একটা বুদ্ধিমান নয়।" তার অর্থ হচ্ছে সে তার সময় নষ্ট করছে আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে কীভাবে কৃষ্ণভাবনাময় হওয়া যায়। সেটিই এই মানব জীবনের প্রধান কাজ। কিন্তু আমরা যদি আমাদের সময় জাগতিক উন্নতির পেছনে নষ্ট করি, এবং জপ-কীর্তন করতে ভুলে যাই, তাহলে সেটি একটি ক্ষতি, বিরাট ক্ষতি। তাই এই মনোভাব, শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, আমি বিজ্ঞ তারে বিষয় কেনে দেব। "এই মূর্খ আমার সেবা করে আমার থেকে কিছু জাগতিক সমৃদ্ধি চাইছে, আমি তাকে কেন জাগতিক সমৃদ্ধি দেব? বরং, ওর যা আছে, আমি উল্টে সেই সব নিয়ে নেব" (হাসি) হ্যাঁ। এটা হাসির কথা নয়। যখন সবকিছু নিয়ে নেয়া হয়, আমরা খুব বিষণ্ণ হই। কিন্তু সেটাই আমাদের পরীক্ষা। সেই কথা ভগবান স্বয়ং যুধিষ্ঠির মহারাজকে বলেছেনঃ যস্যাহম্‌ অনুগৃহ্নামি হরিষ্যে তদ্ধনং শনৈঃ (ভাগবত ১০/৮৮/৮)

যুধিষ্ঠির মহারাজ পরোক্ষভাবে শ্রীকৃষ্ণের কাছে জিজ্ঞাসা করেছেন যেঃ "আমরা সম্পূর্ণরূপে তোমার ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু তারপরও আমরা জাগতিকভাবে এতো দুর্দশা ভোগ করছি, আমাদের রাজ্য নিয়ে নেয়া হল, আমাদের পত্নীকে অপমান করা হল, একটা ঘরে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হল" তখন শ্রীকৃষ্ণ উত্তর দিলেন, "হ্যাঁ, সেটিই আমার প্রথম কাজ" যস্যাহম্‌ অনুগৃহ্নামি হরিষ্যে তদ্ধনং শনৈঃ "যদি আমি কাউকে বিশেষভাবে কৃপা করি, তাহলে আমি তাঁর সমস্ত উপার্জনের উৎস নিয়ে নিই" খুবই বিপদজনক। হ্যাঁ। এই বিষয়ে আমার নিজের অভিজ্ঞতাই আছে হ্যাঁ। সেটি শ্রীকৃষ্ণের বিশেষ কৃপা। আমি সেই কথা এখন আর ব্যাখ্যা করতে চাই না। কিন্তু সেটাই হচ্ছে বাস্তব। (হাসি) সেটাই বাস্তবতা। যখন আমি পঁচিশ বছরের যুবক ছিলাম, আমার গুরুমহারাজ আমাকে আদেশ করেছিলেন যে, "তুমি গিয়ে প্রচার কর" কিন্তু আমি ভাবলাম, "প্রথমে আমি একজন ধনী হব, এবং সেই টাকা আমি প্রচার কাজে লাগাবো"

সেটি একটা লম্বা কাহিনী। আমি ব্যবসায়ে খুব ধনী হওয়ার ভাল সুযোগ পেয়েছিলাম কোন এক জ্যোতিষী আমাকে বলেছিল যে, "আপনার তো বিড়লাদের মতো ধনী হবার কথা" একটা সুযোগ ছিল, ভালই সুযোগ ছিল। আমি একটা বিশাল ওষুধ কারখানার ম্যানেজার ছিলাম। আমি আমার নিজের কারখানা খুললাম, সেই ব্যবসাতে খুব সফল হলাম। কিন্তু সবকিছুই তছনছ্‌ হয়ে যায়। আমি বাধ্য হলাম আজকে আমার গুরু মহারাজের নির্দেশ পালনের এই জায়গায় আসতে।

ভক্তঃ জয়, হরিবোল...

প্রভুপাদঃ অকিঞ্চন-বিত্তায়। যখন সবকিছুই শেষ হয়ে গেল, আমি বললাম, "কৃষ্ণ এখন তুমিই একমাত্র ..." তাই কৃষ্ণ হচ্ছেন অকিঞ্চনবিত্তায়। যখন কেউ তাঁর সমস্ত জাগতিক ঐশ্বর্য হারায়... এখন আমি বুঝতে পারছি যে আমি কিছুই হারাই নি, আমি বরং পেয়েছি আমি পেয়েছি, সেটাই বাস্তব সত্য। তাই কৃষ্ণের জন্য জাগতিক সম্পদ হারানো কোন হারানো নয়, এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া। তাই বলা হয়েছে, অকিঞ্চন বিত্তায়। যখন কেউ অকিঞ্চন হয়, আর কিছুই থাকে না, সবকিছু শেষ, তখন কৃষ্ণ সেই ব্যক্তির একমাত্র সম্পদ হন। কারণ সে একজন ভক্ত। ঠিক যেমন নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেছেনঃ

হা হা প্রভু নন্দ সুতা, বৃষভানুসুতযুতা
করুণা করহ এই বার
নরোত্তমদাসে কয়, না ঠেলিহ রাঙ্গা পায়
তোমা বিনে কে আছে আমার।

স্তরটি হচ্ছে যে, "কৃষ্ণ, তুমি ছাড়া আমার আর কিছু চাইবার নেই। আমার কিছুই নেই, আমার বলতে কিছুই নেই। তাই আমাকে দয়া করে অবহেলা কোর না, কারণ তুমিই আমার একমাত্র সম্পদ।" এই অবস্থাটা খুব ভাল। আমরা যখন জাগতিক কিছুর ওপর নির্ভর করি না, কেবল কৃষ্ণের ওপর নির্ভর করি। সেটিই হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃতে সর্বোত্তম অবস্থান। তাই শ্রীকৃষ্ণকে অকিঞ্চনবিত্তায় বলা হয়েছে। "যখন কেউ জাগতিকভাবে হতাশ হয়, তখন তুমিই কেবল তাঁর আশ্রয়"। অকিঞ্চনবিত্তায়। নমঃ অকিঞ্চন-বিত্তায়, নিবৃত্তগুণবৃত্তয়ে "যখন কেউ তোমাকে তাঁর একমাত্র সম্পদ বলে গ্রহণ করে, তৎক্ষণাৎ সে এই জড় জগতের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে যায়"। অর্থাৎ তিনি তৎক্ষণাৎ পরম চিন্ময় স্থিতিতে উন্নীত হন। অকিঞ্চনবিত্তায় নিবৃত্তগুণবৃত্তয়ে, আত্মারামায় (ভাগবত ১/৮/২৭) "সেই সময়ে তিনি আপনার সান্নিধ্যেই আনন্দ লাভ করেন ঠিক যেমন আপনি শ্রীকৃষ্ণ নিজেই আত্মতৃপ্ত।"