BN/Prabhupada 0953 - যখন জীবাত্মা তাঁর স্বাধীনতার অপব্যবহার করে তখন সে অধঃপতিত হয়। সেইটিই জাগতিক জীবন



750623 - Conversation - Los Angeles

ডঃ মাইজঃ যেই প্রশ্নটা এখন আমাকে চিন্তিত করছে সেটা হল, তাহলে,আত্মা কেন... কারণ আমি আপনার ধারণাটা বুঝতে পারছি যে প্রকৃতপক্ষে আত্মা হচ্ছে চিন্ময় আকাশের অথবা ভগবানের অংশ। এবং যেকোনভাবে মিথ্যে অহঙ্কার এর ফলে এটি এখানে পতিত হয়েছে, অনেকটা খ্রিস্টান মতবাদ অনুসারে অহঙ্কার এর কারনে শয়তান স্বর্গ থেকে পতিত হয়। এবং এটি বিস্মিতকর যে আত্মা কেন এত মূর্খ, বোকা, উন্মাদ যে সে এমন কাজ করে।

প্রভুপাদঃ এটা তার স্বাধীনতা।

ডঃ মাইজঃ স্বাধীনতা।

প্রভুপাদঃ স্বাধীনতার সদব্যবহার করার পরিবর্তে, যখন সে এর অপব্যবহার করে তখন সে এখানে পতিত হয়।

ডঃ মাইজঃ আমি দুঃখিত, সে কি?

প্রভুপাদঃ সে অধঃপতিত হয়।

ডঃ মাইজঃসে পতিত হয়।

প্রভুপাদঃ সে তার স্বাধীনতার জন্য অধঃপতিত হয়। ঠিক যেমন আপনি স্বাধীনতা পেয়েছেন। আপনি এখানে বসে আছেন। আপনি এক্ষুনি চলে যেতে পারেন। আপনি আমার কথা শুনতে পছন্দ নাও করতে পারেন।

ডঃ মাইজঃ আমি করবো না, কি?

প্রভুপাদঃ আপনি আমার কথা শুনতে পছন্দ নাও করতে পারেন।

ডঃ মাইজঃ হ্যাঁ।

প্রভুপাদঃ সেই স্বাধীনতাটা আপনি পেয়েছেন। আমিও পেয়েছি। আমি আপনার সাথে কথা নাও বলতে পারি। সেই স্বাধীনতাটা সবসময়ই আছে। তেমনই ভগবানের অংশ হিসেবে, এটি আত্মার কর্তব্য সবসময় ভগবানের সেবায় যুক্ত থাকা।

ডঃ মাইজঃসব সময় যুক্ত থাকা...?

প্রভুপাদঃ ভগবানের সেবায়।

ডঃ মাইজঃ ভগবানের সেবা।

প্রভুপাদঃ ঠিক যেমন এই আঙুলটি হচ্ছে আমার শরীরের একটি অংশ। আমি যাই আদেশ করছি , সে তৎক্ষণাৎ তাই করছে। আমি বলি, "এটা এমনভাবে তৈরি করো", সে করবে...।এ করবে। তাহলে...।কিন্তু এটা জড় দেহ। এটা যান্ত্রিকভাবে কাজ করছে। মস্তিষ্ক যখন আঙ্গুলকে নির্দেশ দেয় তৎক্ষণাৎ আঙ্গুল মেশিনের মতো কাজ করে। এই পুরো শরীরটা যন্ত্রের মতো কিন্তু আত্মা কোন যন্ত্র অথবা যন্ত্রের অংশ নয়। এটি একটি আধ্যাত্মিক অংশ। সুতরাং তাই, আমি যখনই এই আঙ্গুলটিকে নির্দেশ দিচ্ছি ...যেহেতু এটি একটি মেশিন,তাই এটি কাজ করছে, কিন্তু যদি অন্য কেও, একজন বন্ধু অথবা ভৃত্য হয়, আমি হয়ত তাকে কিছু করতে নির্দেশ দিতে পারি, সে তা নাও করতে পারে। তাই যখন আত্মা তার স্বাধীনতার অপব্যবহার করে, তখন সে অধঃপতিত হয়। এটি জাগতিক জীবন। জাগতিক জীবনের মানে হচ্ছে আত্মার স্বধিনতার অপব্যবহার করা। ঠিক একজন পুত্রের মতো। একজন পুত্রের কর্তব্য হচ্ছে তার পিতা কে সম্মান করা। কিন্তু সে সম্মান নাও করতে পারে। সেটা তার পাগলামি। তাই যখন আত্মা স্বাধীনতার অপব্যবহার করে, তখন সে পাগল হয়ে যায়। তখন তাকে এই জড় জগতে পাঠানো হয়।

ডঃ মাইজ: এটি আমার কাছে বিভ্রান্তিকর যে কেও এত মূর্খ হতে পারে।

প্রভুপাদঃ কারণ স্বাধীনতার দ্বারা তুমিও মূর্খ হয়ে যেতে পার। নয়তো, স্বাধীনতার কোন অর্থ নেই। স্বাধীনতার অর্থ হল তোমার যা খুশি করতে পার। ভগবদগীতায় উল্লেখ করা আছে যে, যতেচ্ছাসি তথা কুরু(ভগ।গী।১৮.৬৩)। এই শ্লোকটি খুঁজে বার করো ১৮তম অধ্যায়ে। সেই স্বাধীনতার কথা সেখানে আছে। সমগ্র ভগবদ গীতার জ্ঞান অর্জুনকে দান করার পর, কৃষ্ণ তাকে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, " এখন তুমি যা চাও, তাই করতে পার।" কৃষ্ণ কখনও তাকে জোর করেন নি ভগবদ গীতার শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য। তিনি তাকে স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, " এখন তোমার যা খুশি, তা করতে পার।" এবং তিনি সম্মত হয়েছিলেনঃ " হ্যাঁ। আমার অজ্ঞানতা এখন দূরীভূত হয়েছে, তুমি যা বলেছ আমি এখন তাই করবো।" একই স্বাধীনতা। হ্যাঁ।

বহুলাসভাঃ এটা ১৮ নং অধ্যায়ে আছে।

ধর্মধ্যক্ষ: "এভাবে আমি আপনাকে সবচেয়ে ভাল করে ব্যাখ্যা করে শুনিয়েছি ..." প্রথমে সংস্কৃত পড়বো?

প্রভুপাদ: হ্যাঁ।

ধর্মধ্যক্ষ:

ইতি তে জ্ঞানমাখ্যাতং
গুহ্যাদ্‌ গুহ্যতরং ময়া।
বিমৃশ্যৈতদশেষেণ
যথেচ্ছসি তথা কুরু
(গীতা ১৮/৬৩)

"এইভাবে আমি তোমাকে গুহ্য থেকে গুহ্যতর জ্ঞান বর্ণনা করলাম। তুমি তা সম্পূর্ণরূপে বিচার করে যা ইচ্ছা হয় তাই কর।

প্রভুপাদ: এখন যদি তুমি বল, " কেন আত্মা এত মূর্খ হয়ে যায়?" তো সেটাই হচ্ছে স্বাধীনতার অপব্যবহার। বুদ্ধিমান পিতা বুদ্ধিমান ছেলে পেয়েছেন তবে মাঝে মাঝে সে মূর্খ হয়ে যায়। তার কারণটা কি? সে তার পিতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার একদম তার পিতার মতো হওয়া উচিত। কিন্তু সে তার পিতার মতো হতে পারে না। আমি দেখেছি, এলাহাবাদ এ একজন বড় উকিল, ব্যারিস্টার ছিলেন, মি ব্যানারজি। তার জ্যেষ্ঠ পুত্রও ব্যারিস্টার ছিলেন, এবং তার কনিষ্ঠ পুত্র, অসৎসঙ্গের প্রভাবে তিনি একালা-ওয়ালা হয়ে গিয়েছিলেন। একালা অর্থ...। ভারতে একটি যানবাহন আছে যা ঘোড়া দ্বারা চালিত হয়। তাই সে একালা হয়ে যেতে পছন্দ করে। তার অর্থ হল সে একটি নিম্ন শ্রেণীর স্ত্রীলোকের প্রেমে পরে যায় এবং তার সঙ্গের ফলে, সে একা হয়ে যায়। অনেক উধাহরণ রয়েছে। অজামিলের উপাখ্যান। তিনি একজন ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং তিনি অনেক নীচে নেমে গিয়েছিলেন। তাই এই স্বাধীনতার অপব্যবহার সর্বদাই ছিল।