BN/Prabhupada 1001 - কৃষ্ণভাবনামৃত সকলের হৃদয়েই সুপ্তাবস্থায় রয়েছে



750713 - Conversation B - Philadelphia

স্যন্ডি নিক্সনঃ আমার কিছু প্রশ্ন আছে যেগুলো... আমি একটি বইয়ে একত্রিত করতে যাচ্ছি, আধ্যাত্মিক গুরুর ওপরে যা আমেরিকানদের প্রভাবিত করেছে বা করছে। একটি ছোট প্রবন্ধেও, আমি একই জিনিসগুলো একত্রিত করতে চাই। নিউইয়র্ক টাইম ম্যাগাজিনের জন্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এমন খুব কম সংখ্যক লোকের সাথে। এছাড়াও আমি উচ্চ চেতনা অনুসন্ধানকারীদের ওপর ফিলাডেলফিয়া ম্যাগাজিনের জন্য একটি প্রবন্ধ তৈরি করছি। তাই বিশেষত আমাদের বইটির কথা মাথায় রেখে, এই প্রশ্নগুলো হ'ল কৃষ্ণভাবনামৃত কি সে সম্বন্ধে মানুষকে জানতে দেয়া। তাই মাঝে মাঝে আমি আপনাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করব এবং অধিকাংশ সময় আমি নিজেই সেগুলোর উত্তর দিতে সক্ষম হতে পারি। অথবা এটি এমন একটি প্রশ্ন হতে পারে যার উত্তর আমিও জানি। কিন্তু আমি আপনাকে তা জিজ্ঞাসা করতে যাচ্ছি যেন... এটি এমন শোনাতে পারে যেন আমি একটি মূর্খ, কিন্তু আমি এটিই করতে যাচ্ছি।

প্রথম প্রশ্নটি একটু দীর্ঘ হতে পারে... আমার পনেরটি প্রশ্ন রয়েছে। যদি আমি সবগুলোর উত্তর পাই, তাহলে কৃতার্থ অনুভব করব। প্রথমটি খুবই মৌলিকঃ কৃষ্ণভাবনামৃত কি?

প্রভুপাদঃ কৃষ্ণ মানে ভগবান, আর আমরা সকলেই শ্রীকৃষ্ণের সাথে সম্পর্কিত। ভগবান হচ্ছেন আদি পিতা। অতএব শ্রীকৃষ্ণের সাথে আমাদের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু আমরা ভুলে গিয়েছি, শ্রীকৃষ্ণ কে, তাঁর সাথে আমার কি সম্পর্ক, জীবনের লক্ষ্য কি। এই সমস্ত প্রশ্নই এখানে রয়েছে। আর কেউ যখন এইসমস্ত প্রশ্নের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠে, তাকে বলে কৃষ্ণভাবনাময়।

স্যন্ডি নিক্সনঃ কৃষ্ণভাবনামৃতের বিকাশ কিভাবে হয়েছিল?

প্রভুপাদঃ কৃষ্ণভাবনামৃত ইতিমধ্যেই সকলের হৃদয়ের অন্তস্থলে রয়েছে, কিন্তু মানুষ তার জড় জাগতিক বদ্ধ জীবনের কারণে তা ভুলে গিয়েছে। তাই হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করার এই পন্থা হচ্ছে তার সেই চেতনাকে পুনর্জাগরিত করে তোলা। এটি ইতিমধ্যেই সেখানে রয়েছে। ঠিক যেমন কিছুদিন পূর্বে এই সমস্ত আমেরিকান, ইউরোপিয়ান ছেলে মেয়েরা, তারা জানত না শ্রীকৃষ্ণ কে? কিন্তু এখন, গতকাল আপনি দেখছেন কিভাবে তারা সবাই... সম্পূর্ণ শোভাযাত্রায় তারা কিভাবে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে নৃত্য কীর্তন করছিল। তো আপনি কি মনে করেন এটা কৃত্রিম? না। কৃত্রিমভাবে কেউ কয়েক ঘণ্টা একনাগারে নৃত্য কীর্তন করতে পারে না। এটি কৃষ্ণভাবনামৃতের জাগরণ বুঝাচ্ছে। এটি সেখানে রয়েছে; উপযুক্ত পন্থার দ্বারা, এখন এটি জাগরিত হচ্ছে। এটি বর্ণনা করা হয়েছে,

নিত্য সিদ্ধ কৃষ্ণপ্রেম সাধ্য কভু নয়
শ্রবণাদি শুদ্ধ চিত্তে কর‍য়ে উদয়
(চৈতন্য চরিতামৃত মধ্য ২২.১০৭)।

কৃষ্ণভাবনামৃত সকলের হৃদয়েই সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। আর যখন সে ভক্তদের সংস্পর্শে আসে, সেটি জেগে উঠে। ঠিক একটি যুবক যুবতীর পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার মতো। এটি শিশু অবস্থাও ছিল। এই ছোট শিশুটির মধ্যেও রয়েছে। যখন সে যুবক হবে, তখন সেটি জেগে উঠবে। এটি কৃত্রিম কোন কিছু নয়। সঙ্গের মাধ্যমে এটি জেগে উঠে। শক্তি ইতোমধ্যেই সেখানে রয়েছে, ভালো সঙ্গে, শ্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে শ্রবণ করার মাধ্যমে, কেউ কৃষ্ণভাবনামৃতের পর্যায়ে উন্নীত হতে পারে।

স্যন্ডি নিক্সনঃ কৃষ্ণ ভাবনামৃত আর খ্রিষ্ট ভাবনামৃতের মধ্যে পার্থক্য কি?

প্রভুপাদঃ খ্রিষ্ট ভাবনামৃতও কৃষ্ণভাবনামৃত, কিন্তু মানুষ খ্রিষ্ট ধর্মের নিয়ম-কানুনগুলো অনুসরণ করে না। তাই তারা উন্মেষিত হয় না। খ্রিষ্টের আদেশগুলো তারা অনুসরণ না। তাই তারা চেতনার মানসম্মত পর্যায়ে আসে না।

স্যন্ডি নিক্সনঃ কৃষ্ণভাবনামৃতের অনন্যতা কী, যা এটাকে অন্যান্য ধর্মের থেকে আলাদা করেছে? এটিও কি একটি ধর্ম?

প্রভুপাদঃ প্রথমত ধর্ম মানে হচ্ছে ভগবানকে জানা এবং তাঁকে ভালোবাসা। এটিই হচ্ছে ধর্ম। আর কেউই ভগবানকে জানে না, তাই তাঁকে ভালোবাসার আর কি কথা। কেউই প্রশিক্ষিত হয় না, কিভাবে ভগবানকে জানতে হয় এবং তাঁকে ভালবাসতে হয়। তারা গির্জায় গিয়েই সন্তুষ্টঃ "হে ঈশ্বর, আমাদের প্রতিদিনের রুটি প্রদান করুন।" তাও আবার প্রত্যেকেই যায় না। তাই কম্যুনিস্টরা বলে যে "তোমাদের গির্জায় যাওয়ার দরকার নেই। রুটি আমরা দিব।" তাই গরীব, অবুঝরা যখন অন্য কোথাও রুটি পায়, তখন আর তারা গির্জায় যায় না। কিন্তু ভগবান কে, কিভাবে তাঁকে ভালোবাসা যায়, এই ব্যাপারে কেউই সচেতন নয়, কেউ আন্তরিক নয়। তাই শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে এটি ছল ধর্ম। আমি কোন ধর্মে বিশ্বাস করি, কিন্তু জানি না ভগবান কে আর কিভাবে তাঁকে ভালবাসতে হয়। তো এই ধরণের ধর্ম হচ্ছে প্রতারনার ধর্ম।

ধর্ম মানে ভগবান কে জানা এবং তাঁকে ভালোবাসা। কিন্তু সাধারনভাবে একজন মানুষ জানেই না যে ভগবান কে, তাঁকে ভালোবাসার আর কি কথা? আর এজন্যই এগুলো ছলনার ধর্ম। এগুলো ধর্ম নয়। কিন্তু খ্রিষ্ট ধর্মের কথা যতদূর বলা যায়, এখানে ভগবানকে জানার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, কিন্তু তারা এটিকে গুরুত্ব দেয় না। উদাহরণ স্বরূপ, আদেশ হচ্ছে "তোমরা হত্যা কর না।" কিন্তু খ্রিষ্টান বিশ্বেই সবচেয়ে বেশী কসাইখানা চালান হয়। সুতরাং তারা কিভাবে ভগবদ্ভাবনাময় হবে? তারা আদেশ অমান্য করছে, প্রভু যিশু কি আদেশ দিয়েছেন, তারা তা আমল দিচ্ছে না। তো খ্রিষ্ট ধর্মেই নয়। প্রতিটি ধর্মেই এটি চলছে। এটি শুধুই রাবার স্ট্যাম্পের ছাপ মাত্রঃ "আমি হিন্দু," "আমি মুসলিম", "আমি খ্রিষ্টান।" এবং তাদের কেউই জানে না ভগবান কে আর তাঁকে কিভাবে ভালবাসতে হয়।