BN/Prabhupada 1017 - ব্রহ্মা আসল সৃষ্টিকর্তা নন। আসল সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ



720200 - Lecture SB 01.01.01 - Los Angeles

প্রক্রিয়াটি হচ্ছে, ঠিক যেমন আমরা জ্ঞান অর্জনের জন্য একজন শিক্ষক বা গুরুদেবের নিকট যাই। তো ব্রহ্মার পূর্বে কোন দৃশ্যমান জীব ছিল না, তাহলে ব্রহ্মা কিভাবে জ্ঞান লাভ করল? উত্তর হচ্ছে "তেনে ব্রহ্ম হৃদা য আদি কবয়ে" 'আদি কবয়ে'। প্রথম সৃষ্ট জীব ব্রহ্মা, তাঁর হৃদয় অভ্যন্তর থেকে জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছিলেন। এটি বোঝায় যে, শ্রীকৃষ্ণ, বাসুদেব বা পরম পুরুষোত্তম ভগবান, প্রত্যেকের হৃদয়ে অবস্থিত। তিনি ব্রহ্মার হৃদয়েও অবস্থিত। তিনি তোমার হৃদয়ে , আমার হৃদয়েও আছেন। 'হৃদা' ঠিক এই শব্দটিই ব্যবহার করা হয়েছে। হৃদা মানে হৃদয়। সুতরাং তিনি যে কাউকে হৃদয়ের ভিতর থেকে শিক্ষা দান করতে পারেন। কিন্তু কেন আমরা তাঁর বিষয়ে অবগত হতে পারি না? তত্ত্বগত ভাবে আমরা জানি, কিন্তু বাস্তবে আমাদের বদ্ধদশার কারণে আমরা বুঝতে পারি না তিনি কিভাবে আমাদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি নির্দেশনা দিচ্ছেন। এটি সত্য। ব্রহ্মা সাধারণ জীব নন, তাই তিনি পেরেছিলেন, হৃদয় অভ্যন্তর হতে পরম পুরুষোত্তম ভগবানের নির্দেশনা লাভ করতে। আমরাও পারব, যখন আমরা ঠিক ব্রহ্মার মতো যোগ্য হয়ে উঠব।

ব্রহ্মা আবির্ভূত হয়েছিলেন ভগবানের সেবা করার জন্য। ভগবানের বাসনা পূর্ণ করার জন্য। ঠিক যেমন আমরা একজন ছুতারমিস্ত্রীকে কাজে নিযুক্ত করে, তাকে বলি যে আমার জন্য আসবাবপত্র বানিয়ে দিন, আমি তাকে উপকরণ, সরঞ্জাম অথবা মজুরি দেই, আর সে আমাকে আসবাবপত্র বানিয়ে দেয়। একইভাবে, ভগবান উপকরণ সমূহ সৃষ্টি করেছেন, এমন কি নির্মাতাকেও, আর ব্রহ্মা এই জগত সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তিনি আসল সৃষ্টিকর্তা নন। প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ। তেমনিভাবে, প্রকৃত মালিক হচ্ছেন শ্রীকৃষ্ণ কারণ তিনি উপকরণ গুলো তৈরি করেছেন। প্রকৃতপক্ষে আমরা যখন বাস্তব ক্ষেত্রে কাজ করতে যাই, আমরা উপকরণ সমূহ তৈরি করতে পারি না। ধর, তুমি একটি গগনচুম্বী অট্টালিকা বানাবে, কিন্তু উপকরণ গুলো, যেমন মাটি, পাথর, কাঠ, লোহা, যেগুলো হচ্ছে বাড়ি তৈরির উপকরণ, এগুলো আমারা তৈরি করতে পারি না। এগুলো ভগবান তৈরি করেছেন। আমরা শুধু রূপান্তর করছি। আমরা মাটি নিই, মাটি থেকে ধূলা নিয়ে জলের সাথে মিশাই। জল ভগবান সৃষ্টি করেছেন। মাটি ভগবান সৃষ্টি করেছেন। তখন আমরা এটিকে একটা দলা পাকিয়ে, ইটের মতো বানিয়ে আগুনের মধ্যে দেই। আগুনও ভগবান সৃষ্টি করেছেন। এভাবে যদি আমরা গভীরে অনুসন্ধান চালাই, যেসব উপকরণ আর সরঞ্জাম আমরা ব্যবহার করছি, সে গুলো আমরা তৈরি করিনি। এগুলো ভগবানের সৃষ্ট। আমরা শুধু এগুলোকে ব্যবহার করছি। আর যেহেতু আমরা এগুলোকে শুধু নাড়াচাড়া করছি, তাই এগুলো আমাদের সম্পত্তি হয়ে যায়নি। এটি হচ্ছে বোধশক্তি।

ধর আমি একজন কর্মী, আমি অন্যের কিছু জিনিস বা উপকরণ নাড়াচাড়া করে কিছু একটা তৈরি করলাম, এর মানে এটা বোঝায় না যে, জিনিসটা যখন সম্পূর্ণরূপে তৈরি হয়ে গেল, তখন সেটা আমার সম্পত্তি। না। এটি কিভাবে হতে পারে? কাজেই দর্শন হচ্ছে, শ্রীকৃষ্ণই সবকিছুর মালিক, ভগবান। আমিও তাঁর অধিকারে। আর আমি যা করি, যা কিছু বানাই, সেগুলোও তাঁর। এই জ্ঞানটি উপলব্ধি করতে হবে যে, সব কিছুই ভগবানের অধীনে। আমিও ভগবানের অধীনে। আমার বুদ্ধিও ভগবানের। যে সকল প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে আমরা কাজ করি, সেগুলোও ভগবানের অধীনে। তাহলে এটি দাবি করার সুযোগ কোথায় যে আমি হচ্ছি মালিক? এটিকে বলে মায়া। সুতরাং এই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব সমাজের প্রকৃত চেতনাকে পুনরুজ্জীবিত করা, কারণ কুকুর, বিড়াল কিংবা পশু সমাজে এই ধরণের চেতনাকে আহ্বান করা যায় না। তারা খুব নির্বোধ আর চেতনার নিম্নতর পর্যায়ে অবস্থিত, এটি তাদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়...