BN/Prabhupada 0926 - কোন ব্যবসায়িক বিনিময় নয়। সেটাই চাই। কৃষ্ণ সেই রকমের ভালবাসা চান



730423 - Lecture SB 01.08.31 - Los Angeles

শ্রীকৃষ্ণকে আমাদের কিছু জাগতিক লাভের জন্য ভালবাসা উচিৎ নয় এমন নয় যে, "কৃষ্ণ, আমাদের রোজদিনের আহার দাও, তাহলে আমরা তোমাকে ভালবাসব। কৃষ্ণ, আমাকে এটা দাও, তাহলে আমি তোমাকে ভালবাসব।" এই ধরণের ব্যবসায়িক বিনিময় চলবে না। সেটাই কৃষ্ণ চান, সেই ধরণের ভালবাসা। এখানে সেই অবস্থানের কথা বলা হয়েছে, য তে দশা... যেই মাত্র কৃষ্ণ দেখলেন যে মা যশোদা একটি দড়ি নিয়ে আসছেন তাঁকে বাঁধার জন্য তৎক্ষণাৎ তিনি ভয় পেয়ে গেলেন এবং তাঁর চোখ দিয়ে জল চলে এল "ওহ্‌ মা আমাকে বাঁধতে আসছে। য তে দশাশ্রু-কলিল অঞ্জন। এবং তাঁর চোখের কাজল মুছে গেল এবং সম্ভ্রম - অনেক সম্ভ্রম সহকারে তিনি মায়ের দিকে তাকাচ্ছেন একটা আবেদনের অনুভবে - "হ্যাঁ মা, আমি তোমার কাছে অপরাধ করেছি। দয়া করে আমায় ক্ষমা কর।" এই ছিল শ্রীকৃষ্ণের মনোভাব। কুন্তীদেবী এই দৃশ্যটির মহিমা করছেন এবং তৎক্ষণাৎ শ্রীকৃষ্ণের মাথা হেঁট হয়ে গেল

এটা কৃষ্ণের আরেকটি পূর্ণতা। যদিও তিনি স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান ... ভগবদগীতায় তিনি বলেছেন, মত্ত পরতরম্‌ নান্যৎ কিঞ্চিদস্তি ধনঞ্জয় (গীতা ৭/৭) "হে প্রিয় অর্জুন, আমার থেকে শ্রেষ্ঠ আর কিছুই নেই, আমিই সমস্ত কিছুর সর্বশ্রেষ্ঠ।" মত্ত পরতরম্‌ নান্যৎ। আর কেউ নেই"। সেই পরমেশ্বর ভগবান যার ওপরে আর কেউই নেই সেই ভগবান মা যশোদার কাছে মাথা নত করছেন নিনীয়া, বক্ত্রম্‌ নিনীয়া। তিনি তা স্বীকার করছেনঃ "আমার প্রিয় মাতা, হ্যাঁ আমি অপরাধী।" নিনীয়া বক্ত্রম্‌ ভয়-ভাবনায়া, ভয়ের অনুভূতি নিয়ে, স্থিতস্য কখনও কখনও, যখন মা যশোদা দেখতেন যে তাঁর পুত্র তাঁর থেকে ভয় পাচ্ছে, তিনি খুব বিচলিত হয়ে পড়তেন। কারণ সন্তান যদি ভয় পায়... সেটি একটা মনস্তত্ত্ব একটা মানসিক বিকার হয় তাই মা যশোদা আসলে চান নি যে কৃষ্ণ তাঁর শাসন থেকে ভয় পেয়ে কষ্ট পাক্‌ সেটা মা যশোদার উদ্দেশ্য ছিল না কিন্তু একজন মা হিসেবে, তিনি যখন এতোটা বিচলিত হন যে সন্তান...

এখনও এই প্রথা ভারতে আছে, যখনই বাচ্চা খুব জ্বালাতন করে, তাকে এক জায়গায় বেঁধে রাখা হয়, সেটি খুব সাধারণ রীতি তাই মা যশোদা তা অবলম্বন করলেন। স মাম্‌ বিমোহয়ন্তি শুদ্ধভক্তদের দ্বারা সেই দৃশ্যটির মহিমা কীর্তন করা হয় যে ভগবানের মধ্যে কতোই না মহানতা আছে যে তিনি একটি সাধারণ শিশুর মতো খেলা করছেন যখন তিনি একটি শিশুর ন্যায় খেলা করেন, তিনি তা নিখুঁতভাবে করেন যখন তিনি ১৬০০০ মহিষীর স্বামী হিসেবে করেন, তখনও তিনি নিখুঁতভাবে তা করেন যখন তিনি গোপীদের প্রেমিক হিসেবে লীলা করছেন তখনও তিনি নিখুঁতভাবে করছেন যখন তিনি গোপবালকদের সখা রূপে লীলা করেন, তখন তা নিখুঁতভাবে করেন

সমস্ত গোপবালকেরা কৃষ্ণের ওপর নির্ভর করে। তাঁরা তালগাছের থেকে তালফল খেতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেখানে একটি অসুর ছিল, গর্দভাসুর। সে কাউকে ঐ বনে ঢুকতে দিত না কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের সখারা অনুরোধ করেছিলেন "কৃষ্ণ, আমরা ঐ ফল খেতে চাই, তুমি যদি একটু ব্যবস্থা করতে..." "হ্যাঁ"। তৎক্ষণাৎ কৃষ্ণ তা ব্যবস্থা করলেন কৃষ্ণ বলরাম বনে প্রবেশ করলেন, আর অসুরেরা সেখানে গাধার রূপ নিয়ে ছিল সঙ্গে সঙ্গে ওরা এসে কৃষ্ণ বলরামের গায়ে আঘাত করতে লাগল এবং বলরাম সঙ্গে সঙ্গে ওদের একজনকে ধরে গাছের আগায় ছুঁড়ে মেরেছিলেন এবং অসুরটা মারা গেল

এইভাবে কৃষ্ণের বন্ধুরা তাঁর প্রতি খুব অনুগত থাকতেন একসময় চারপাশে আগুন ছিল, তাঁরা কিছুই জানতো না "কৃষ্ণ", "হ্যাঁ"। কৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ প্রস্তুত। শ্রীকৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ সেই আগুন গিলে নিলেন। অনেক গুলো অসুর আক্রমণ করেছিল রোজদিন গোপবালকেরা বাড়ি ফিরে এসে তাঁদের মায়েদের কাছে এসব কাহিনী বলতেন "মা জানো, কৃষ্ণ কত অদ্ভুত। জানো, আজকে না এই হয়েছে"। আর মায়েরা বলতেন, "হ্যাঁ, আমাদের কৃষ্ণ সত্যিই কতো অদ্ভুত।" ওটুকুই। ব্যাস্‌ তাঁরা জানে না যে কৃষ্ণ হচ্ছেন ভগবান। শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান। কৃষ্ণ অনেক অদ্ভুত। ব্যাস্‌ আর তাঁদের ভালবাসা আরও আরও বৃদ্ধি পেত। তাঁরা যতই কৃষ্ণের অদ্ভুত লীলা দেখতেন ততই তাঁদের প্রেম বর্ধিত হত। "হয়ত কৃষ্ণ কোন দেবতা হবেন। হ্যাঁ।" এই ছিল তাঁদের কথা। যখন নন্দ মহারাজ তাঁর মিত্রদের সঙ্গে কথা বলতেন, এবং তাঁর মিত্রেরা কৃষ্ণ সম্পর্কে বলতেন, "ওহ্‌ নন্দ মহারাজ, তোমার পুত্র কি অদ্ভুত। হ্যাঁ, আমিও তাই দেখছি, মনে হয় কোন দেবতা।" ব্যাস্‌। "হয়ত।" সেটিও নিশ্চিত করে নয়। (হাসি) তাই বৃন্দাবনের অধিবাসীরা কে ভগবান, কে ভগবান নয়, সে বিষয়ে মাথা ঘামাতেন না। সেটা তাঁদের কাজ নয়। কিন্তু কৃষ্ণকে চান, এবং তাঁরা কৃষ্ণকে ভালবাসতে চান। ব্যাস্‌।