BN/Prabhupada 0036 - আমাদের জীবনের লক্ষ্য
Lecture on BG 2.1-11 -- Johannesburg, October 17, 1975
আমরা যখন এই জড়-জাগতিক ব্যাপারগুলোতে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি, কি করা যায়? করব কি করব না? এটা হচ্ছে একটা উদাহরণ সেই সময় আমাদের উচিৎ অবশ্যই একজন গুরুর শরণাগত হওয়া। সেই নির্দেশই আমরা এখানে পাচ্ছি। পৃচ্ছামি ত্বাম ধর্মসম্মূঢ়চেতাঃ যখন আমরা বিভ্রান্ত হয়ে যাই, কোনটা ধার্মিক আর কোনটা ধার্মিক নয়, তার মাঝে আমরা কোনও পার্থক্য করতে পারি না। আমাদের অবস্থানটি সঠিকভাবে ব্যবহার করি না। সেটি হলো কার্পণ্যদোষঃঅপহতস্বভাবঃ (ভগবদ্গীতা ২.৭) সেইরকম সময়ে একজন গুরুর প্রয়োজন। সেটিই হচ্ছে বৈদিক নির্দেশ। তদবিজ্ঞানর্থাম স গুরুমেবাবভিগচ্ছেৎ শ্রোত্রিয়ং ব্রহ্মনিষ্ঠং (মুণ্ডক উপনিষদ ১.২.১২) এটি করাই কর্তব্য। এটিই হচ্ছে সভ্যতা। আমরা এই জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। সেটি স্বাভাবিক। এই জড় জগত হচ্ছে একটা সমস্যার জগত। পদম্ পদম্ যৎ বিপদাম্ (ভাগবত ১০.১৪.৫৮) জড় জগত মানেই হল প্রত্যেকটি পদক্ষেপেই বিপদ। এই হচ্ছে জড় জগৎ। অতএব আমাদের একজন গুরুর নির্দেশনা গ্রহণ করা উচিত, একজন শিক্ষকের থেকে, একজন আধ্যাত্মিক গুরুর থেকে, কিভাবে অগ্রগতি করতে হয় সে সম্পর্কে, কারণ এটা... পরে এটি ব্যাখ্যা করা হবে যে, আমাদের জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে, অন্ততঃ এই মানব জন্মে, এই আর্য সভ্যতায়, জীবনের লক্ষ্য হলো আমাদের নিত্য স্বরূপগত অবস্থানটিকে বোঝা যে আমি কে আমি কে'। ' যদি আমরা এটিই না বুঝি যে আমরা কে তাহলে আমরা কুকুর-বেড়ালেরই সমান। কুকুর-বেড়াল জানে না। ওরা ভাবে ওরা ওদের শরীরটি। এটি ব্যাখ্যা করা হবে। সুতরাং জীবনের এমন একটি অবস্থায় যখন কি না আমরা বিভ্রান্ত... প্রকৃতপক্ষে আমরা প্রতিটি মুহূর্তেই বিভ্রান্ত । তাই এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় যে প্রত্যেকেই যেন একজন সঠিক গুরুর প্রতি শরণাগত হয়। এখন অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের কাছে শরণাগত হচ্ছেন, তিনি হচ্ছেন প্রথম শ্রেণীর গুরু। সর্বোচ্চ মানসম্পন্ন গুরু। গুরু মানে হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবান। উনি হলেন সবার গুরু, পরম গুরু। তাই যে কোন ব্যক্তিই যদি শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধিত্ব করেন, তিনিও গুরু হন। সেটি চতুর্থ অধ্যায়ে ব্যাখ্যা করা হবে। এবম্ পরম্পরা প্রাপ্তম্ ইমম্ রাজর্ষয়ো বিদুঃ (ভগবদ্গীতা ৪.২) সুতরাং শ্রীকৃষ্ণ আমাদের উদাহরণ দিয়ে দেখাচ্ছেন যে কোথায় আমাদের আত্মসমর্পণ করা উচিত আর কাকে আমাদের গুরুরূপে গ্রহণ করা উচিত। এখানে শ্রীকৃষ্ণ রয়েছেন। তাই আপনার উচিৎ শ্রীকৃষ্ণ বা তার প্রতিনিধিকে গুরু হিসাবে গ্রহণ। তাহলেই আপনাদের সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। অন্যথায় এটি সম্ভব নয়, কারণ তিনিই বলতে পারেন আপনার জন্য কোনটি ভাল, আর আপনার জন্য কোনটি খারাপ। তিনি জিজ্ঞাসা করছেন, যচ্ছ্রেয়ঃ স্যান্ নিশ্চিতম ব্রূহী তৎ। (ভগবদ্গীতা ২.৭)। নিশ্চিতম্। যদি আপনি এমন কোন পরামর্শ, নির্দেশনা, চান; নিশ্চিতম্, যা কি না কোন সন্দেহ ছাড়া, কোন বিভ্রম ছাড়াই, নির্ভুল, প্রতারণাহীন; সেটিকে বলা হয় নিশ্চিতম্। সেটি আপনি শ্রীকৃষ্ণ বা তার প্রতিনিধির থেকে পেতে পারেন। একজন অপূর্ণ ব্যক্তি বা প্রতারকের থেকে আপনি কখনও সঠিক তথ্য পেতে পারেন না। সেটি সঠিক নির্দেশনা নয়। আজকাল এটি একটি ফ্যাশন; সবাই গুরু হয়ে উঠছে আর সে তার নিজের মতামত দিচ্ছে, "আমার মনে হয়," "আমার মতে।" এসব গুরু নয়। গুরুর অর্থ হচ্ছে তিনি শাস্ত্র থেকে উদাহরণ প্রদান করবেন। যৎ শাস্ত্রবিধিম্ উৎসৃজ্য বর্ততে কামকারতঃ (ভগবদ্গীতা ১৬.২৩) যারা শাস্ত্র থেকে কোনো প্রমাণ দেয় না, ন সিদ্ধিম স অবাপ্নোতি, তিনি কখনই সাফল্য পেতে পারেন না, " "ন সুখম "এই জগতেও সে কখনও সুখী হতে পারে না।" ন পরাম গতিম, এবং পরবর্তী জীবনেও তার উন্নতির কথা আর কিই বা বলার আছে।" এগুলো হচ্ছে নির্দেশ।