BN/Prabhupada 0633 - আমরা শ্রীকৃষ্ণের এক একটি আলোকোজ্জ্বল স্ফুলিঙ্গ মাত্র
Lecture on BG 2.28 -- London, August 30, 1973
আত্মা সম্বন্ধে অজ্ঞানতার কারণে এই পৃথিবীর অবস্থাটি এখন এমন হয়ে গিয়েছে যে, ওরা বহু ধরণের পাপকার্য তৈরি করছে আর তাতে লিপ্ত হচ্ছে । কিন্তু তারা যে কিভাবে এতে বন্ধনগ্রস্ত হচ্ছে সে সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞানই নেই। এটি হচ্ছে মায়ার প্রক্ষেপাত্মিকা শক্তি, আবরণাত্মিকা। যদিও সে এই বন্ধনে জড়িয়ে পড়ছে কিন্তু সে মনে করছে যে সে উন্নতি করছে, বৈজ্ঞানিক জ্ঞানে উন্নতি করছে। এই হচ্ছে ওদের জ্ঞান। ঐ ভদ্রলোকটি বলছিল যে সে একজন খনিজ প্রকৌশলী। তার কাজ হচ্ছে মাটির নিচে খনির ভেতরের পরিবেশটা খুব আরামদায়ক করে রাখা।
একটু ভেবে দেখুন, সে খুঁড়ে খুঁড়ে একটি ইঁদুরের গর্তের মতো মাটির নিচে যাচ্ছে আর সেই ইঁদুরের গর্তটির উন্নতি করছে। জড় শিক্ষা লাভ করার পর, বিভিন্ন ডিগ্রি লাভ করার পর তার কাজ অবস্থাটি হচ্ছে যে সে অন্ধকারে ঢুকছে, মানে মাটির নিচে ঢুকছে। আর সেখানে গিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে সে মাটির নিচে খনির ভেতরকার বায়ু পরিষ্কার করার চেষ্টা করছে। মাটির বাইরের খোলা জায়গা, মুক্ত বাতাস এসব বাধ্য হয়ে ছেড়ে দিয়ে তাকে মাটির নিচে কাজ করার মতো ঘৃণ্য কাজে থাকতে হচ্ছে। এভাবে বাধ্য হয়ে মাটির নিচে যাওয়ার জন্য সে তো ঘৃণ্য, কিন্তু সে তার বৈজ্ঞানিক উন্নতির গর্বে গর্বান্বিত। এসবই চলছে। এই হচ্ছে ওদের বৈজ্ঞানিক উন্নতি।
মনুতে অনর্থং। ব্যাসদেব বলছেন। শ্রী নারদ মুনির দ্বারা আদিষ্ট হয়ে শ্রীমদ্ভাগবত রচনার পূর্বে তিনি তার অবস্থা সম্পর্কে ভাবছিলেন। ভক্তিযোগেন মানসি, সম্যক প্রণিহিতে অমলে, অপশ্যাৎ পুরুষং পূর্ণং, মায়াং চ তদ্-অপাশ্রয়ং। (শ্রীমদ্ভাগবত ১.৭.৪) তিনি দুটো ব্যাপার দেখলেন, উপলব্ধি করলেন; মায়া এবং শ্রীকৃষ্ণ। মায়াং চ তদ্-অপাশ্রয়ং। শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হওয়া। শ্রীকৃষ্ণকে ছাড়া মায়ার কোনও অস্তিত্ব নেই। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ মায়ার দ্বারা প্রভাবিত নন। কারণ শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন অবিচল, সম্পূর্ণ আত্মমগ্ন। । কিন্তু বদ্ধজীবেরা, যয়া সম্মোহিতা জীব, বদ্ধ জীবেরা মায়ার উপস্থিতির দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। শ্রীকৃষ্ণ প্রভাবিত নন।
ঠিক যেমন সূর্য এবং সূর্যকিরণ। সূর্যকিরণের অর্থ হচ্ছে সমস্ত আলোকণাগুলোর সমন্বয়। সেটি হচ্ছে সূর্যকিরণ। এটি বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত। ছোট ছোট উজ্জ্বল স্ফুলিঙ্গ। ঠিক তেমনি আমরাও ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন উজ্জ্বল ছোট্ট ছোট্ট স্ফুলিঙ্গের ন্যায়। সূর্যের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের তুলনা করা হয়েছে। 'কৃষ্ণ সূর্য-সম মায়া হয় অন্ধকার।' যখন মেঘ থাকে, মায়া; তার দ্বারা সূর্য কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কিন্তু ছোট্ট ছোট্ট আলোর কণিকাগুলো প্রভাবিত হয়। কেবল এই কথাটি বোঝার চেষ্টা করুন। আকাশে সূর্য রয়েছে, আর তার বহু লক্ষ মাইল নিচে মেঘ থাকে। মেঘ কেবল সূর্যালোককেই ঢেকে দিচ্ছে যা কি না কতগুলো আলোর কণার সমষ্টি। সুতরাং মায়া বা মেঘ কখনও সূর্যকে ঢাকতে পারে না, কিন্তু ছোট্ট ছোট্ট আলোর কণাগুলোকে ঢাকতে পারে। সুতরাং আমরা প্রভাবিত হই। শ্রীকৃষ্ণ কখনও প্রভাবিত হন না।