BN/Prabhupada 0002 - পাগলের সভ্যতা

Revision as of 02:49, 2 June 2021 by Soham (talk | contribs)
(diff) ← Older revision | Latest revision (diff) | Newer revision → (diff)


Lecture on SB 6.1.49 -- New Orleans Farm, August 1, 1975

হরিকেশ: (অনুবাদ)…”ঠিক যেমন একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি তার স্বপ্নে দেখা দেহ অনুযায়ী কার্য করে, অথবা সেই স্বপ্নের দেহকেই আত্মস্বরূপ বলে মনে করে, ঠিক একইভাবে সে তার বর্তমান দেহটিকে তার স্বরূপ বলে মনে করে, যা কিনা সে তার অতীতের ধার্মিক বা অধার্মিক জীবনের কর্মানুযায়ী লাভ করেছে, এবং সে তার অতীত কিংবা ভবিষ্যতের জীবন সম্পর্কে জানতে পারে না।

শ্রীল প্রভুপাদ:

যথাজ্ঞস্তমসা-যুক্ত
উপাস্তে ব্যক্তমেব হি
ন বেদ পূর্বমপরং
নষ্টজন্মস্মৃতিস্তথা। (ভা.৬.১.৪৯)

এই হচ্ছে আমাদের স্থিতি। এই হল আমাদের বিজ্ঞানের অগ্রগতি, যে আমরা জানি না "এই জীবনের পূর্বে আমি কি ছিলাম, আর এই জীবনের পরই বা আমি কি হব?" জীবন হল এক ধারাবাহিকতা। সেটিই হচ্ছে আধ্যাত্মিক জ্ঞান। কিন্তু এমন কি তারা এটিও জানে না যে জীবন হল ধারাবাহিকতা। তারা মনে করে “ঘটনাক্রমে, আমি এই জীবনটি পেয়েছি , এবং মৃত্যুর পর তা শেষ হয়ে যাবে। অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোন প্রশ্নই আসে না। চলো ভোগ করা যাক।” একে বলা হয় অবিদ্যা, তমসা, দায়িত্বজ্ঞানহীন জীবন।

সুতরাং অজ্ঞ। অজ্ঞ মানে যাদের কোন জ্ঞানই নেই। এবং কার কোন জ্ঞান নেই? তমসা। যে ব্যক্তি তমোগুণে রয়েছে। জড়া প্রকৃতির তিন ধরণের গুণ রয়েছে: সত্ত্ব, রজ এবং তমঃ। সত্ত্বগুণ মানে সবকিছু পরিষ্কার, প্রকাশ। ঠিক যেমন এখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন; সূর্যালোক আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। কিন্তু মেঘের উপরেও সূর্যের আলো রয়েছে, ওখানে সবকিছু পরিষ্কার। এবং মেঘের ভিতরে স্পষ্ট নয়। একইভাবে, যে ব্যাক্তি সত্ত্বগুণে রয়েছেন, তাদের কাছে সবকিছু পরিষ্কার, এবং যে সমস্ত লোকেরা তমোগুণে রয়েছে, তাদের কাছে সব কিছুই অজ্ঞানতাপূর্ণ। এবং যারা মিশ্রিত রয়েছে, না রজো গুণ, না তমো গুণ, মধ্যবর্তী স্থানে, তারা রজোগুণে রয়েছে। তিন গুণ। তমসা, সুতরাং ওরা কেবল এই বর্তমান শরীরটির প্রতিই আগ্রহী, কি হতে চলেছে ওরা তার কোন পরোয়া করে না, এবং সে আগেও বা কি ছিল সে সম্পর্কেও কোন জ্ঞান নেই। অন্য আরেকটি স্থানে এটি বর্ণনা করা হয়েছে: নূনং প্রমত্তঃ কুরুতেঃ বিকর্ম (ভা. ৫.৫.৪) প্রমত্তঃ, ঠিক যেমন পাগল লোক। সে জানে না সে কেন পাগল হয়ে গেছে। সে ভুলে গিয়েছে। এবং তার কার্যকলাপ দ্বারা, আগামীতে কি ঘটতে যাচ্ছে তাও সে জানে না। পাগল।

সুতরাং এই সভ্যতা, আধুনিক সভ্যতা, ঠিক যেমন পাগলের সভ্যতার মতো। তাদের অতীত জীবন সম্পর্কেও কোন জ্ঞান নেই, আর ভবিষ্যৎ জীবনের প্রতিও কোন আগ্রহ নেই। নূনং প্রমত্তঃ কুরুতেঃ বিকর্ম (ভা. ৫.৫.৪)। এবং অতীত জীবন সম্পর্কে কোন জ্ঞান না থাকার দরুন তারা সম্পূর্ণরূপে পাপাচারে লিপ্ত হয়। ঠিক যেমন একটা কুকুরের ন্যায়। সে জানে না যে সে কেন কুকুর দেহ পেয়েছে এবং আগামীতে সে কি পেতে চলেছে? একটি কুকুর হয়তো তার পূর্বজীবনে কোন প্রধানমন্ত্রী ছিল, কিন্তু যখন সে কুকুরের জীবন পায়, তখন সে ভুলে যায়। সেটিও মায়ার আরেকটি প্রভাব। প্রক্ষেপাত্মিকা শক্তি, আবরণাত্মিকা শক্তি। দুই ধরণের মায়াশক্তি রয়েছে। যদি কেউ অতীতের পাপময় কার্যকলাপের জন্য একটি কুকুরদেহ প্রাপ্ত হয়, এবং যদি তার এটি স্মরণ থাকে যে, "আমি প্রধানমন্ত্রী ছিলাম; এখন আমি কুকুর হয়েছি," তাহলে তার জন্যে বেঁচে থাকা অসম্ভব হয়ে যাবে। তাই মায়া তার জ্ঞানকে আবৃত করে রাখে। মৃত্যু, মৃত্যু মানে সবকিছু ভুলে যাওয়া। সেটিকে মৃত্যু বলে। প্রত্যেকটি দিন ও রাতে আমাদের এই অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে। রাতের বেলায় আমরা যখন একটি ভিন্ন পরিবেশে স্বপ্ন দেখি, একটি আলাদা জীবনে, আমরা এই শরীরটির কথা ভুলে যাই যে "আমি শুয়ে আছিl আমার শরীরটি একটি সুন্দর অট্টালিকায় শুয়ে আছে, খুব সুন্দর বিছানাপত্র।” না। মনে করুন সে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছে বা একটি পাহাড়ের ওপর রয়েছে। সুতরাং সে এটিকে এভাবেই নিচ্ছে, স্বপ্নের মধ্যে সে এভাবেই নিচ্ছে... সকলেই, আমরা সকলেই সেই শরীরের প্রতি আগ্রহী। আমরা পূর্বের শরীরটিকে ভুলে যাই। এটিই হল অজ্ঞানতা। তাই এই অজ্ঞানতা, আমরা যতখানি এই অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানের স্তরে উঠে আসব, এটিই হল জীবনের সফলতা। এবং যদি আমরা নিজেদেরকে এই অজ্ঞানতার মধ্যেই রাখি, তবে সেটি সফলতা নয়। তা হল জীবনকে নষ্ট করা। সুতরাং আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন হচ্ছে একজন ব্যক্তিকে অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানে উত্তোলন করা। এটিই বৈদিক সাহিত্যের পরিকল্পনা: একজন ব্যক্তিকে উদ্ধার করা। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্গীতায় ভক্তদের সম্বন্ধে বলেছেন, সবার জন্য বলেন নি- তেষামহং সমুদ্ধর্তা মৃত্যুসংসারসাগরাৎ (ভ.গী. ১২.৭) আরেকটি স্থানে, তেষামেবানুকম্পার্থমহমজ্ঞানজং তমঃ নাশয়াম্যাত্মভাবস্থো জ্ঞানদীপেন ভাস্বতা (ভ.গী.১০.১১) বিশেষ করে ভক্তদের জন্য... তিনি প্রত্যেকের হৃদয়ে বিরাজমান। কিন্তু যে ভক্ত তাঁকে বোঝার চেষ্টা করেন, শ্রীকৃষ্ণ তাকে সাহায্য করেন। তিনিই সাহায্য করেন। অভক্তরা, তারা এসব ব্যপারে মাথা ঘামায় না ….তারা শুধু একটি পশুর মত- খায়, ঘুমোয়, যৌন জীবনে লিপ্ত হয় এবং আত্মরক্ষা করে। তারা অন্য কোন কিছুর পরোয়া করে না, ভগবান বা ভগবানের সঙ্গে তার সম্পর্ক বুঝতে চেষ্টা করে না। তারা মনে করে ভগবান বলে কেউ নেই, এবং শ্রীকৃষ্ণও তাদের বলেন, "হ্যাঁ, কোন ভগবান নেই., তুমি ঘুমিয়ে থাকো।" সেইজন্য সৎসঙ্গ-এর প্রয়োজন। এই হল সৎসঙ্গ, সতাং প্রসঙ্গাৎ। ভক্তসঙ্গের দ্বারা আমরা ভগবান সম্পর্কে আমাদের অনুসন্ধিৎসা জাগরিত করতে পারি। অতএব এইসব কেন্দ্রগুলির প্রয়োজন রয়েছে। আমরা অকারণে এত সব কেন্দ্র স্থাপন করছি না। না l এটা মানব সমাজের কল্যানের জন্য।