BN/Prabhupada 0072 - ভৃত্যের উদ্দেশ্য আত্মসমর্পণ করা
Lecture on CC Madhya-lila 20.108-109 -- New York, July 15, 1976
সুতরাং কেউই প্রভু হতে পারে না। এটি সম্ভব নয়। তোমরা চৈতন্য চরিতামৃতে এই শিক্ষাটি দেখতে পাবে, একলে ঈশ্বর কৃষ্ণ আর সব ভৃত্য (চৈ। চ আদি ৫.১৪২)। একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন প্রভু, আর সবাই দাস। এটিই আমাদের প্রকৃত অবস্থান। কিন্তু কৃত্রিমভাবে আমরা প্রভু হওয়ার চেষ্টা করছি। এটি হচ্ছে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম। আমরা এমন কিছুর জন্য চেষ্টা করছি, যেটা আমরা নই। আমরা এই শব্দটা জানি, "অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম," "যোগ্যতমের বেঁচে থাকা।" এটি হচ্ছে সংগ্রাম। আমরা প্রভু নই; কিন্তু তবুও আমরা প্রভু হওয়ার চেষ্টা করছি। মায়াবাদ দর্শনে, তারাও কঠোর তপশ্চর্যা আর কৃচ্ছতা সাধন করে থাকে। কিন্তু মনোভাবটা কি? মনোভাবটা হচ্ছে যে "আমি ভগবানের সাথে এক হয়ে যাব।" একই ভুল। একই ভুল। সে ভগবান নয়, কিন্তু সে ভগবান হওয়ার চেষ্টা করছে। যদিও সে অনেক কঠিন তপস্যা করছে, বৈরাগ্য, সন্ন্যাস, সবকিছু... অনেক সময় তারা জাগতিকভাবে উপভোগ্য সবকিছু ত্যাগ করে কঠিন তপশ্চর্যা করার জন্য বনে চলে যায়। মনোভাবটা কি? "এখন আমি ভগবানের সাথে এক হয়ে যাব।" সেই একই ভুল।
সুতরাং মায়া অত্যন্ত শক্তিশালী, এমন কি তথাকথিত আধ্যাত্মিক পথে উন্নত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও সেই একই ভুলগুলো ঘটতে পারে। না। তাই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তৎক্ষণাৎ তাঁর শিক্ষার মধ্যে মূল বিষয়টিকে ধরেছেন। যা হচ্ছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর দর্শন। যেখানে শ্রীকৃষ্ণ তাঁর অন্তিম উপদেশ দিয়েছেন, সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ... (ভগবদ্গীতা ১৮.৬৬)। তিনি হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান; আর সেই অবস্থান থেকে তিনি বলছেন। তিনি চাচ্ছেন, দাবি করছেন, "তোমরা মূর্খ, সবকিছু পরিত্যাগ করে কেবল আমার শরণাগত হও। তাহলেই তোমরা সুখী হবে।" এটি হচ্ছে ভগবদ্গীতার অন্তিম উপদেশ। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, সেই একই কৃষ্ণ কিন্তু তিনি কৃষ্ণভক্ত রূপে আচরণ করছেন; তাই তিনিও একই কথা বলছেন। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, "তোমরা আত্মসমর্পণ কর," আর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলছেন যে "প্রতিটি জীব হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের দাস।" তার মানে তাকে অবশ্যই আত্মসমর্পণ করতে হবে। দাসের কাজ হচ্ছে আত্মসমর্পণ করা, প্রভুর সাথে কোন যুক্তিতর্ক বা দাবিদাওয়া নয় যে "আমি আপনার সমান।" এগুলো হচ্ছে গোঁড়ামি, পাগলের প্রস্তাব।
- পিশাচী পাইলে যেন মতিচ্ছন্ন হয়
- মায়াগ্রস্ত জীবের সেই দশা উপজয়
একটি দাস কখনও প্রভু হতে পারে না। এটি সম্ভব নয়। কিন্তু যতদিন আমরা জীবনের এই ভুল ধারণাটি নিয়ে জিদ করবো, যে "আমি দাস নই; আমি প্রভু," ততদিন তাকে কষ্ট পেতে হবে। মায়া তাকে যন্ত্রণা দিবে। দৈবী হ্যেষা। ঠিক যেমন চরমপন্থী, ডাকাত আর চোর, তারা সরকারের আদেশকে কলা দেখায়। "আমি সরকারকে পরোয়া করি না।" কিন্তু এর মানে হল সে স্বেচ্ছায় দুর্দশাকে স্বীকার করে নিচ্ছে। তাকে সরকারের আইন মানতে হবে। যদি সে সাধারণভাবে না মানে, চরমপন্থী হয়, তাহলে তাকে জেলে ভরা হবে। আর বল প্রয়োগ করে, পিটিয়ে, শাস্তি দিয়ে তাকে স্বীকার করানো হবেঃ "হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি মানবো।"
আর এই হচ্ছে মায়া। দৈবী হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দূরত্যয়া (ভগবদ্গীতা ৭.১৪)। আমরা মায়ার শাসনের অধীন। প্রকৃতেঃ ক্রিয়মাণানি গুণৈঃ কর্মাণি সর্বশঃ (ভগবদ্গীতা ৩.২৭)। কেন? কারণ আমরা নিজেদের প্রভু বলে ঘোষণা করেছি। দাস প্রভু হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে; কাজেই শাস্তি। যেই মাত্র আমরা স্বীকার করব যে "আমি প্রভু নই; আমি দাস," তখন আর কোন কষ্ট থাকবে না। খুব সহজ দর্শন। এটি হচ্ছে মুক্তি। মুক্তি মানে শুধু সঠিক চেতনায় আস। এটি মুক্তি। মুক্তিকে শ্রীমদ্ভাগবতে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, মুক্তির্হিত্বান্যথারূপং স্বরূপেণ ব্যবস্থিতিঃ (শ্রীমদ্ভাগবত ২.১০.৬)। মুক্তি মানে সব অর্থহীন কর্ম ত্যাগ করা, অন্যথা। সে হচ্ছে দাস, কিন্তু সে ভাবছে সে হচ্ছে প্রভু। এটি হচ্ছে অন্যথা, ঠিক বিপরীত। সুতরাং যখন সে প্রভু হওয়ার এই বিপরীত ধারণাটি ত্যাগ করবে, তখন সে মুক্ত; সে তৎক্ষণাৎ মুক্ত হয়ে যাবে। মুক্তি দীর্ঘ সময় নেয় না যে তোমাকে অনেক কঠিন তপস্যা করতে হবে, জঙ্গলে যেতে হবে, হিমালয়ে যেতে হবে, সেখানে নাক বন্ধ করে ধ্যান করতে হবে, আরও কতো কিছু। এর জন্য এতো কিছুর প্রয়োজন নেই। শুধু সহজ জিনিসটা বোঝ। যে "আমি শ্রীকৃষ্ণের দাস" - সাথে সাথেই তুমি মুক্ত। এটি হচ্ছে শ্রীমদ্ভাগবতে দেয়া মুক্তির সংজ্ঞা। মুক্তির্হিত্বান্যথারূপং স্বরূপেণ ব্যবস্থিতিঃ ঠিক যেমন, এমন কি কারাগারের একজন অপরাধীও, যদি সে বিনয়ী হয়ে বলে যে "এরপর থেকে আমি আইন মান্যকারী হবো। এখন থেকে আমি সরকারের আইন বাধ্যতার সাথে মেনে চলব," তখন মাঝে মাঝে তাকে এই বিবৃতি দেওয়ার কারণে মেয়াদ পূর্তির পূর্বেই ছেড়ে দেওয়া হয়। সুতরাং আমরা তৎক্ষণাৎ জড় অস্তিত্বের এই কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে যেতে পারি যদি আমরা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর এই শিক্ষাটি গ্রহণ করি, জীবের স্বরূপ হয় নিত্য কৃষ্ণ দাস (চৈচ মধ্য ২০, ১০৮-১০৯)।