BN/Prabhupada 0065 - কৃষ্ণ ভাবনায় ভাবিত হলে সবাই সুখী হবেন: Difference between revisions

(Created page with "<!-- BEGIN CATEGORY LIST --> Category:1080 Bengali Pages with Videos Category:Prabhupada 0065 - in all Languages Category:BN-Quotes - 1971 Category:BN-Quotes - A...")
 
No edit summary
 
Line 8: Line 8:
<!-- END CATEGORY LIST -->
<!-- END CATEGORY LIST -->
<!-- BEGIN NAVIGATION BAR -- DO NOT EDIT OR REMOVE -->
<!-- BEGIN NAVIGATION BAR -- DO NOT EDIT OR REMOVE -->
{{1080 videos navigation - All Languages|Hindi|HI/Prabhupada 0064 - सिद्धि का अर्थ है जीवन का सिद्ध होना|0064|HI/Prabhupada 0066 - हमें कृष्ण की इच्छाओं से सेहमत होना है|0066}}
{{1080 videos navigation - All Languages|Bengali|BN/Prabhupada 0064 - সিদ্ধি অর্থাৎ জীবনের পরিপূর্ণতা|0064|BN/Prabhupada 0066 - কৃষ্ণের ইচ্ছার সঙ্গে আমাদের একমত হওয়া উচিত|0066}}
<!-- END NAVIGATION BAR -->
<!-- END NAVIGATION BAR -->
<!-- BEGIN ORIGINAL VANIQUOTES PAGE LINK-->
<!-- BEGIN ORIGINAL VANIQUOTES PAGE LINK-->
Line 18: Line 18:


<!-- BEGIN VIDEO LINK -->
<!-- BEGIN VIDEO LINK -->
{{youtube_right|Z3NpFnDTtAM|সবাই সুখী হবে<br />- Prabhupāda 0065}}
{{youtube_right|Z3NpFnDTtAM|সকলেই সুখী হবেন<br />- Prabhupāda 0065}}
<!-- END VIDEO LINK -->
<!-- END VIDEO LINK -->


Line 30: Line 30:


<!-- BEGIN TRANSLATED TEXT -->
<!-- BEGIN TRANSLATED TEXT -->
নারী অথিতি: অন্য ব্যক্তিদের আন্দোলনে কি আছে? করা পরোক্ষভাবে কৃষ্ণকে পরিবেশন করছে, সারাদিন হরে কৃষ্ণ জপ না করে ?  
মহিলা অতিথিঃ এই আন্দোলনে কি অন্য সমস্ত লোকেদের স্থান  আছে যারা সারাদিন হরে কৃষ্ণ জপ না করে পরোক্ষভাবে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করছে?  


প্রভুপাদ: না, প্রক্রিয়া হল, ঠিক যেমন যদি আপনি বৃক্ষের শিখরে জল ঢালেন, জলকে পাতা, শাখা, শিখরে বিতরণ করা হয়, এবং তারা তাজা রয়ে। কিন্তু যদি আপনি শুধুমাত্র পাতাকে জল দেন, পাতাটিও শুকিয়ে যাবে এবং গাছটিও শুকিয়ে যাবে। যদি আপনি পেটকে আপনার খাদ্যপরিবহণ করেন, তারপর শক্তি আপনার আঙুল বিতরণ করা হবে, আপনার চুল থেকে আপনার নখ যাও এবং সর্বত্র। এবং যদি আপনি হাতকে খাদ্যে গ্রহণ করান এবং পেট না রাখেন, তাহলে এটি নিরর্থক বর্জ্য হবে।  
শ্রীল প্রভুপাদঃ না। পন্থাটি হচ্ছে যে, যদি আপনি গাছের গোঁড়ায় জল ঢালেন, তাহলে সেই জল পাতা, শাখা, উপশাখা সর্বত্র যায় এবং সবকিছুই সতেজ থাকে। কিন্তু আপনি যদি কেবল পাতায় জল ঢালেন, তবে পাতাও শুকিয়ে যাবে এবং গাছটিও শুকিয়ে যাবে। যদি আপনি উদরে খাবার দেন, তাহলে তার থেকে উৎপন্ন শক্তি আপনার আঙ্গুল, চুলের গোড়া, নখ এবং বাকি সব জায়গাতেই যাবে। আর যদি আপনি খাবারটি কেবল হাতেই দেন কিন্তু উদরে না দেন, তাহলে সেইটি কেবল বেকার অপচয় হবে। তাই এই সমস্ত মানবসেবামূলক কার্যক্রম কেবল অপচয়ই হয়েছে মাত্র যেহেতু তাতে কোন কৃষ্ণ ভাবনামৃত ছিল না। তারা বিভিন্নভাবে মানব সমাজের সেবা করার চেষ্টা করে চলেছে, কিন্তু সেইগুলো সব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে তারা হতাশ হচ্ছে কারণ সেখানে কোন কৃষ্ণ ভাবনামৃত নেই। আর যদি লোকেদের কৃষ্ণভাবনায় প্রশিক্ষিত করে তোলা যায় তাহলে সকলে আপনা থেকেই সুখী হয়ে যাবে। যে কেউ এখানে যোগদান করবে, যে কেউ এই কথা শুনবে, যে কেউ এর সঙ্গে সহযোগিতা করবে - সকলেই সুখী হবে। তাই আমাদের পন্থা হচ্ছে একটি স্বাভাবিক পন্থা। আপনি ভগবানকে ভালোবাসুন, এবং যদি আপনি প্রকৃত অর্থেই ভগবানকে ভালোবাসতে দক্ষ হন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনি সকলকেই ভালোবাসবেন। ঠিক যেমন একজন কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তি , তিনি যেহেতু কৃষ্ণকে ভালোবাসেন তাই তিনি পশুদেরও ভালোবাসেন। তিনি পাখিদের, পশুদের, সবাইকে ভালোবাসেন। কিন্তু এই তথাকথিত মানবতার ভালোবাসা মানে হচ্ছে তারা কিছু মানুষকে ভালোবাসছে আর পশুদের হত্যা করছে। তারা কেন পশুদের ভালোবাসে না? কারণ তারা ত্রুটিপূর্ণ। কিন্তু একজন কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তি কখনই পশুদের হত্যা করবেন না, এমন কি পশুদের যন্ত্রণাও দেবেন না। সেইটিই হচ্ছে সার্বজনীন ভালোবাসা। আপনি যদি কেবল আপনার নিজের ভাই বা বোনকে ভালোবাসেন, সেইটি সার্বজনীন ভালোবাসা নয়। সার্বজনীন ভালোবাসা মানে হচ্ছে আপনি সকলকেই ভালোবাসবেন। এই সার্বজনীন ভালোবাসা কৃষ্ণভাবনামৃতের মধ্য দিয়েই লাভ করা যায়, অন্য কোন মাধ্যমে নয়।


তাই এই মানবিক সেবাটি নষ্ট হয়ে গেছে কারণ এতে কোন কৃষ্ণ চেতনা নেই। তারা মানব সমাজের সেবা করার জন্য অনেক ভাবে চেষ্টা করছেন, কিন্তু তারা সর্বদা বেহুদা প্রচেষ্টায় হতাশ হচ্ছে, কারন কোন কৃষ্ণ চেতনা নেই। এবং যদি মানুষকে কৃষ্ণ সচেতন হতে প্রশিক্ষণ করা হয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবাই সুখী হবে। যে কেও যোগ দেবে, এক, যারা শুনবে, যারা সহযোগিতা করবে - সবাই খুশি হবে।
মহিলা অতিথিঃ আমি এমন কিছু ভক্তদের জানি যাদেরকে তাদের বিভিন্ন সম্পর্ক, মানে, জাগতিক পিতা-মাতা ইত্যাদি থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়েছে আর এটি তাদেরকে কিছু মাত্রায় হলেও দুঃখ দিয়েছে, কারণ তাদের পিতা মাতারা এটি বুঝতে পারে না। এখন এই পরিস্থিতিকে কিছুটা সহজ করতে আপনি কি উপদেশ করেন?  
 
তাই আমাদের প্রক্রিয়া প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। আপনি ঈশ্বরকে ভালোবাসেন এবং যদি আপনি প্রকৃতপক্ষে ঈশ্বরকে ভালোবাসেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনি সকলকে ভালোবাসেন। শুধু কৃষ্ণ সচেতন ব্যক্তির মত, কারণ তিনি ঈশ্বরকে ভালোবাসেন, তিনি পশুদেরও ভালোবাসেন। তিনি পাখি, পশুদের সবাইকে ভালবাসেন কিন্তু তথাকথিত মানবিক প্রেম মানে তারা কিছু মানুষকে ভালোবাসে, কিন্তু পশুদের হত্যা করা হচ্ছে। কেন তারা পশুদের পছন্দ করেন না? কারণ অসিদ্ধ। কিন্তু কচা সচেতন ব্যক্তি কখনও কোন পশুকে খুন করবে না বা প্রাণীকে কষ্ট দেবে না। কিন্তু এটা সার্বজনীন ভালোবাসা। আপনি যদি শুধুমাত্র আপনার ভাই বা বোনকে ভালবাসেন, যেটা সর্বজনীন প্রেম নয়। সর্বজনীন ভালবাসা মানে আপনি প্রত্যেককে ভালোবাসবেন যে সার্বজনীন ভালবাসা কৃষ্ণ চেতনা দ্বারা তৈরি করা যায় না, অন্যথায় নয়।
 
নারী অথিতি: আমি জানি যে, কয়েকজন ভক্তদেড় সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়েছে, তাই কথা বলতে, তাদের বিশ্বের উপাদান পিতামাতা সঙ্গে, এবং এটি তাদের দরিদ্রতা দেয়, কারণ তাদের বাবা-মা বুঝতে পারছেন না। এখন আপনি তাদের কি বলেন এইটিকে সহজ করতে?
 
প্রভুপাদ: হ্যাঁ, একজন বালক যিনি কৃষ্ণ চেতনায় আছে, তিনি তার পিতামাতা, পরিবার, দেশবাসী, সমাজের সর্বোত্তম সেবা প্রদান করছে। কৃষ্ণ সচেতন না হয়ে, তারা তাদের পিতামাতার কাছে কোন সেবা প্রদান করছে? বেশিরভাগই তাদেরকে আলাদা করা হয় । কিন্তু, প্রহ্লাদ মহারাজ ছিলেন একজন মহান ভক্ত এবং তার পিতা ছিলেন মহান অভক্ত, এতটাই যে তার পিতা কে নৃসিংহদেব হত্যা করেন, কিন্তু প্রহ্লাদ মহারাজ, যখন ভগবান তাকে কিছু আশীর্বচন নেওয়ার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন, তিনি বলেন, "আমি একজন ব্যবসায়ী নই, প্রভু, যে আপনাকে কিছু সেবা দিয়ে আমায় কিছু ফেরত নিতে হবে। ক্ষমা করবেন, দয়া করবেন।" নৃসিংহদেব,তিনি খুব সন্তুষ্ট ছিলেন: "এখানে একটি বিশুদ্ধ ভক্ত আছে।" কিন্তু একই বিশুদ্ধ ভক্ত প্রভুকে অনুরোধ করলেন, "আমার প্রভু, আমার বাবা নাস্তিক ছিলেন, এবং তিনি অনেক অপরাধ করেছেন, তাই আমি আপনার কাছে ভিক্ষা চাইছি যে আমার বাবার মুক্তি হয়। " এবং নৃসিংহদেব বললেন, "তোমার বাবাকে ইতিমধ্যেই মুক্ত করা হয়েছে কারণ তুমিই তার ছেলে। তার সমস্ত অপরাধের সত্ত্বেও, সে মুক্ত, কারণ তুমি তার পুত্র শুধুমাত্র তোমার বাবা নয়, কিন্তু তোমার বাবার বাবা, তার পিতা সাত প্রজন্ম পর্যন্ত, তারা সব মুক্ত হয়েছে। "
 
তাই যদি বৈষ্ণবেরা এক পরিবারে উপস্থিত হয়, তবে তারা কেবল তার বাবাকেই মুক্ত করবে না, তবে তার পিতা, বাবা, তার পিতা এভাবেই মুক্তি পাবে। কিন্তু এটাই পরিবারকে সর্বোত্তম সেবা, কৃষ্ণ সচেতন হওয়া আসলে, এটা ঘটেছে। আমার এক ছাত্র, কার্তিকেয়, তার মা সমাজকে এত পছন্দ করতেন যে সাধারণত তার মাকে যখন তিনি দেখতে চায়, মা বলতেন "বস। আমি নাচার পার্টিতে যাচ্ছি।" এটাই সম্পর্ক ছিল। এখনও, কারণ সে, এই ছেলে, কৃষ্ণ সচেতন, তিনি কৃষ্ণের সম্মন্ধে তার মায়ের কাছে বহুবার ব্যাখ্যা বলছিলেন। মৃত্যুর সময় মা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন, "তোমার কৃষ্ণ কোথায়? সে এখানে?" এবং তিনি অবিলম্বে, তিনি মারা যান। অর্থাৎ মৃত্যুর সময় তিনি কৃষ্ণকে স্মরণ করিয়েছিলেন এবং অবিলম্বে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
 
এটাই ভগবৎ গীতায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে, য়ং য়ং ব্যাপী স্মরণ লোকে ত্যাজ্য আন্তে কালেভরাম ([[Vanisource:BG 8.6|ভা গি ৮.৬ ]])। মৃত্যুর সময়ে যদি কেও কৃষ্ণকে মনে করে, তাহলে জীবন সফল হয়। তাই এই মাতা, পুত্রের জন্য, কৃষ্ণ চেতনা পুত্র, তিনি প্রকৃতপক্ষে কৃষ্ণ চেতনায় না এসে, মুক্তি পেয়েছেন। তাই এই সুবিধা।


শ্রীল প্রভুপাদঃ দেখুন, একটি ছেলে যে কৃষ্ণভাবনাময়, সে তার পিতা-মাতা, পরিবার, দেশ, সমাজ সকলের প্রতি সবচাইতে মহৎ সেবা প্রদান করছে। কৃষ্ণভাবনাময় না হয়ে তারা তাদের পিতা-মাতাকে কি-ই বা সেবা দিচ্ছে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু যেমন প্রহ্লাদ মহারাজ একজন মহান ভক্ত ছিলেন, আর তাঁর পিতা ছিলেন এক বিশাল অভক্ত, এতোটাই বিদ্বেষী ছিলেন যে ভগবান নৃসিংহদেবের হাতে তার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু যখন ভগবান প্রহ্লাদ মহারাজকে বর প্রার্থনা করতে বললেন, তিনি বললেন, "হে প্রভু, আমি কোন ব্যবসায়ী নই যে, আমি আপনার কিছু সেবা করে তার বিনিময়ে এটা ওটা চাইবো। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন।" নৃসিংহদেব তার প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছিলেনঃ "এই হচ্ছে আমার মহান শুদ্ধ ভক্ত"। কিন্তু সেই একই শুদ্ধভক্ত ভগবানের কাছে অনুরোধ করেছিলেন, "হে প্রভু, আমার পিতা ছিলেন একজন নাস্তিক এবং তিনি অজস্র অপরাধ করেছেন, তাই আমি ভিক্ষা চাই যেন আমার পিতা মুক্তিলাভ করেন।" নৃসিংহদেব বললেন, "তোমার পিতা ইতিমধ্যেই মুক্তি লাভ করেছে কেননা তুমি তার পুত্র। সমস্ত অপরাধ থাকা সত্ত্বেও, যেহেতু তুমি তার পুত্র তাই সে মুক্তি লাভ করেছে। কেবল তোমার পিতাই নয়, তার পিতা, তার পিতা, এইভাবে সাতপুরুষ তারা সকলেই উদ্ধার লাভ করেছে। তাই যদি কোন পরিবারে একজন বৈষ্ণব জন্ম নেয়, সে কেবল তার পিতাকেই উদ্ধার করে না, তার পিতা, তার পিতা, তার পিতা এইভাবে সকলকে উদ্ধার করে। সেইটিই হচ্ছে পরিবারের প্রতি সবচাইতে মহান সেবা, কৃষ্ণ ভাবনাময় হওয়া। বাস্তবে এমনটা ঘটেছেও। আমার এক শিষ্য কার্তিকেয়, ওর মা এতোটাই সমাজপ্রেমী ছিল যে সাধারণত যখনই ও ওর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইত, মা বলতো, "একটু বোস। আমি নাচের পার্টিতে যাচ্ছি।" এই ছিল ওদের সম্পর্ক। তবুও, যেহেতু ছেলেটি কৃষ্ণভাবনাময় ছিল, সে তার মায়ের সাথে অনেকবার কৃষ্ণ সম্পর্কিত কথা বলত। মৃত্যুর সময় মা তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "তোমার কৃষ্ণ কোথায়? তিনি কি এইখানে আছেন?" আর তৎক্ষণাৎ তিনি মারা গেলেন। তার মানে হচ্ছে যে তিনি মৃত্যুর সময় শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করেছেন এবং তৎক্ষণাৎ তিনি মুক্তিলাভ করেছেন। সেই কথা ভগবদগীতাতে বলা হয়েছে, যং যং বাপি স্মরণ ভাবং ত্যজতন্তে কলেবরং। ([[Vanisource:BG 8.6 (1972)|গীতা ৮.৬]]) মৃত্যুর সময় যদি কেউ শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করে, তাহলে তার জীবন সার্থক। সুতরাং এই মা-টি তার কৃষ্ণভাবনাময় পুত্রের কারণে, মুক্তি লাভ করলেন। সরাসরি কৃষ্ণভাবনামৃতে না এসেও। সুতরাং এইটি হচ্ছে সুফল। 
<!-- END TRANSLATED TEXT -->
<!-- END TRANSLATED TEXT -->

Latest revision as of 14:02, 2 June 2021



Arrival Lecture -- Gainesville, July 29, 1971

মহিলা অতিথিঃ এই আন্দোলনে কি অন্য সমস্ত লোকেদের স্থান আছে যারা সারাদিন হরে কৃষ্ণ জপ না করে পরোক্ষভাবে শ্রীকৃষ্ণের সেবা করছে?

শ্রীল প্রভুপাদঃ না। পন্থাটি হচ্ছে যে, যদি আপনি গাছের গোঁড়ায় জল ঢালেন, তাহলে সেই জল পাতা, শাখা, উপশাখা সর্বত্র যায় এবং সবকিছুই সতেজ থাকে। কিন্তু আপনি যদি কেবল পাতায় জল ঢালেন, তবে পাতাও শুকিয়ে যাবে এবং গাছটিও শুকিয়ে যাবে। যদি আপনি উদরে খাবার দেন, তাহলে তার থেকে উৎপন্ন শক্তি আপনার আঙ্গুল, চুলের গোড়া, নখ এবং বাকি সব জায়গাতেই যাবে। আর যদি আপনি খাবারটি কেবল হাতেই দেন কিন্তু উদরে না দেন, তাহলে সেইটি কেবল বেকার অপচয় হবে। তাই এই সমস্ত মানবসেবামূলক কার্যক্রম কেবল অপচয়ই হয়েছে মাত্র যেহেতু তাতে কোন কৃষ্ণ ভাবনামৃত ছিল না। তারা বিভিন্নভাবে মানব সমাজের সেবা করার চেষ্টা করে চলেছে, কিন্তু সেইগুলো সব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে তারা হতাশ হচ্ছে কারণ সেখানে কোন কৃষ্ণ ভাবনামৃত নেই। আর যদি লোকেদের কৃষ্ণভাবনায় প্রশিক্ষিত করে তোলা যায় তাহলে সকলে আপনা থেকেই সুখী হয়ে যাবে। যে কেউ এখানে যোগদান করবে, যে কেউ এই কথা শুনবে, যে কেউ এর সঙ্গে সহযোগিতা করবে - সকলেই সুখী হবে। তাই আমাদের পন্থা হচ্ছে একটি স্বাভাবিক পন্থা। আপনি ভগবানকে ভালোবাসুন, এবং যদি আপনি প্রকৃত অর্থেই ভগবানকে ভালোবাসতে দক্ষ হন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই আপনি সকলকেই ভালোবাসবেন। ঠিক যেমন একজন কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তি , তিনি যেহেতু কৃষ্ণকে ভালোবাসেন তাই তিনি পশুদেরও ভালোবাসেন। তিনি পাখিদের, পশুদের, সবাইকে ভালোবাসেন। কিন্তু এই তথাকথিত মানবতার ভালোবাসা মানে হচ্ছে তারা কিছু মানুষকে ভালোবাসছে আর পশুদের হত্যা করছে। তারা কেন পশুদের ভালোবাসে না? কারণ তারা ত্রুটিপূর্ণ। কিন্তু একজন কৃষ্ণভাবনাময় ব্যক্তি কখনই পশুদের হত্যা করবেন না, এমন কি পশুদের যন্ত্রণাও দেবেন না। সেইটিই হচ্ছে সার্বজনীন ভালোবাসা। আপনি যদি কেবল আপনার নিজের ভাই বা বোনকে ভালোবাসেন, সেইটি সার্বজনীন ভালোবাসা নয়। সার্বজনীন ভালোবাসা মানে হচ্ছে আপনি সকলকেই ভালোবাসবেন। এই সার্বজনীন ভালোবাসা কৃষ্ণভাবনামৃতের মধ্য দিয়েই লাভ করা যায়, অন্য কোন মাধ্যমে নয়।

মহিলা অতিথিঃ আমি এমন কিছু ভক্তদের জানি যাদেরকে তাদের বিভিন্ন সম্পর্ক, মানে, জাগতিক পিতা-মাতা ইত্যাদি থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয়েছে আর এটি তাদেরকে কিছু মাত্রায় হলেও দুঃখ দিয়েছে, কারণ তাদের পিতা মাতারা এটি বুঝতে পারে না। এখন এই পরিস্থিতিকে কিছুটা সহজ করতে আপনি কি উপদেশ করেন?

শ্রীল প্রভুপাদঃ দেখুন, একটি ছেলে যে কৃষ্ণভাবনাময়, সে তার পিতা-মাতা, পরিবার, দেশ, সমাজ সকলের প্রতি সবচাইতে মহৎ সেবা প্রদান করছে। কৃষ্ণভাবনাময় না হয়ে তারা তাদের পিতা-মাতাকে কি-ই বা সেবা দিচ্ছে? অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে। কিন্তু যেমন প্রহ্লাদ মহারাজ একজন মহান ভক্ত ছিলেন, আর তাঁর পিতা ছিলেন এক বিশাল অভক্ত, এতোটাই বিদ্বেষী ছিলেন যে ভগবান নৃসিংহদেবের হাতে তার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু যখন ভগবান প্রহ্লাদ মহারাজকে বর প্রার্থনা করতে বললেন, তিনি বললেন, "হে প্রভু, আমি কোন ব্যবসায়ী নই যে, আমি আপনার কিছু সেবা করে তার বিনিময়ে এটা ওটা চাইবো। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন।" নৃসিংহদেব তার প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছিলেনঃ "এই হচ্ছে আমার মহান শুদ্ধ ভক্ত"। কিন্তু সেই একই শুদ্ধভক্ত ভগবানের কাছে অনুরোধ করেছিলেন, "হে প্রভু, আমার পিতা ছিলেন একজন নাস্তিক এবং তিনি অজস্র অপরাধ করেছেন, তাই আমি ভিক্ষা চাই যেন আমার পিতা মুক্তিলাভ করেন।" নৃসিংহদেব বললেন, "তোমার পিতা ইতিমধ্যেই মুক্তি লাভ করেছে কেননা তুমি তার পুত্র। সমস্ত অপরাধ থাকা সত্ত্বেও, যেহেতু তুমি তার পুত্র তাই সে মুক্তি লাভ করেছে। কেবল তোমার পিতাই নয়, তার পিতা, তার পিতা, এইভাবে সাতপুরুষ তারা সকলেই উদ্ধার লাভ করেছে। তাই যদি কোন পরিবারে একজন বৈষ্ণব জন্ম নেয়, সে কেবল তার পিতাকেই উদ্ধার করে না, তার পিতা, তার পিতা, তার পিতা এইভাবে সকলকে উদ্ধার করে। সেইটিই হচ্ছে পরিবারের প্রতি সবচাইতে মহান সেবা, কৃষ্ণ ভাবনাময় হওয়া। বাস্তবে এমনটা ঘটেছেও। আমার এক শিষ্য কার্তিকেয়, ওর মা এতোটাই সমাজপ্রেমী ছিল যে সাধারণত যখনই ও ওর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইত, মা বলতো, "একটু বোস। আমি নাচের পার্টিতে যাচ্ছি।" এই ছিল ওদের সম্পর্ক। তবুও, যেহেতু ছেলেটি কৃষ্ণভাবনাময় ছিল, সে তার মায়ের সাথে অনেকবার কৃষ্ণ সম্পর্কিত কথা বলত। মৃত্যুর সময় মা তার ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "তোমার কৃষ্ণ কোথায়? তিনি কি এইখানে আছেন?" আর তৎক্ষণাৎ তিনি মারা গেলেন। তার মানে হচ্ছে যে তিনি মৃত্যুর সময় শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করেছেন এবং তৎক্ষণাৎ তিনি মুক্তিলাভ করেছেন। সেই কথা ভগবদগীতাতে বলা হয়েছে, যং যং বাপি স্মরণ ভাবং ত্যজতন্তে কলেবরং। (গীতা ৮.৬) মৃত্যুর সময় যদি কেউ শ্রীকৃষ্ণকে স্মরণ করে, তাহলে তার জীবন সার্থক। সুতরাং এই মা-টি তার কৃষ্ণভাবনাময় পুত্রের কারণে, মুক্তি লাভ করলেন। সরাসরি কৃষ্ণভাবনামৃতে না এসেও। সুতরাং এইটি হচ্ছে সুফল।