BN/Prabhupada 0080 - কৃষ্ণ তার সখাদের সাথে খেলতে খুব বেশি পছন্দ করেন

Revision as of 09:17, 2 December 2021 by Soham (talk | contribs)
(diff) ← Older revision | Latest revision (diff) | Newer revision → (diff)


Lecture on CC Madhya-lila 21.13-49 -- New York, January 4, 1967

এমত অন্যত্র নাহি শুনিয়ে অদ্ভুত।
যাহার শ্রবণে চিত্ত হয় অবধূত
'কৃষ্ণবৎসৈরসংখ্যাতৈঃ' - শুকদেব-বাণী।
কৃষ্ণ-সঙ্গে কত গোপ - সংখ্যা নাহি জানি।
(চৈচ মধ্য ২১, ১৮-১৯)

গোপ। শ্রীকৃষ্ণ, তোমরা জান, তাঁর ধামে তিনি ঠিক ষোল বৎসরের একটি বালক, আর সেখানে তাঁর প্রধান লীলা হচ্ছে তাঁর রাখাল বন্ধুদের সঙ্গে গাভীদের গোচারণ ভূমিতে নিয়ে যাওয়া, আর তাঁদের সাথে খেলা করা। এটি হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের দিবাভাগের কাজ। শুকদেব গোস্বামী খুব সুন্দর একটি শ্লোক লিখেছেন, যে সমস্ত বালকেরা শ্রীকৃষ্ণের সাথে খেলা করছে, তাঁদের পূর্ব জন্মের বহু পুঞ্জীভূত পুণ্যকর্ম সঞ্চিত ছিল। কৃতপুণ্যপুঞ্জাঃ (শ্রীমদ্ভাগবত ১০.১২.১১)। সাকং বিজহ্রুঃ ইত্থং সতাং ব্রহ্মসুখানুভূত্যা। এখন শুকদেব গোস্বামী লিখছেন। এই সমস্ত বালকেরা যারা শ্রীকৃষ্ণের সাথে খেলছে, তারা কার সাথে খেলছে? তারা পরম সত্যের সাথে খেলছে, যাকে অনেক মহান মহান সাধুরা অব্যক্ত বলে বর্ণনা করে থাকেন। ইত্থং সতাং ব্রহ্ম... ব্রহ্মসুখ। ব্রহ্ম, চিন্ময় ব্রহ্ম উপলব্ধি। শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন ব্রহ্ম সুখের আধার। তাই এই সমস্ত বালকেরা শ্রীকৃষ্ণের সাথে খেলা করছে, তিনি হচ্ছেন ব্রহ্মসুখের আধার। ইত্থং সতাং ব্রহ্মসুখানুভূত্যা দাস্যং গতানাং পরদৈবতেন। এবং দাস্যং গতানাং, যারা পরম পুরুষোত্তম ভগবানকে প্রভু রূপে গ্রহণ করেছেন, মানে ভক্তরা, তাঁদের কাছে শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন পরদেবতা। নির্বিশেষবাদীদের কাছে তিনি হচ্ছেন পরমব্রহ্ম, আর সবিশেষবাদীদের কাছে তিনি হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান। আর মায়াশ্রিতানাং নরদারকেণ। মায়াশ্রিত সাধারণ মানুষদের কাছে তিনি একটি মানব শিশু। মায়াশ্রিতানাং নরদারকেণ সাকং বিজহ্রুঃ কৃতপুণ্যপুঞ্জাঃ (শ্রীমদ্ভাগবত ১০.১২.১১)। এই সমস্ত বালকেরা, যাদের জন্ম জন্মান্তরের পুঞ্জীভূত পুণ্যকর্ম রয়েছে, এখন তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের সাথে মুখোমুখি খেলা করার সুযোগ পাচ্ছে, ঠিক যেমন সাধারণ বালকেরা খেলে থাকে। একইভাবে শ্রীকৃষ্ণও তাঁর তরুণ রাখাল বন্ধুদের সাথে খেলা করতে খুব ভালোবাসেন। ব্রহ্মসংহিতায় এটি উল্লেখ করা হয়েছে। সুরভীরভিপালয়ন্তম্‌, লক্ষ্মীসহস্রশতসম্ভ্রমসেব্যমানং (ব্রহ্মসংহিতা ৫.২৯)। এই জিনিস গুলো এখানেও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

এক এক গোপ করে যে বৎস চারণ
কোটি, অর্বুদ, শঙ্খ, পদ্ম, তাহার গণন
(চৈচ মধ্য ২১.২০)।

সেখানে এতো পরিমাণ বন্ধু, গোপবালক রয়েছে যে কেউ তা গণনা করতে পারে না। কেউ না... অসংখ্য, সবকিছুই অসংখ্য। তাঁদের রয়েছে অসংখ্য গাভী, অসংখ্য গোপবালক, সবকিছুই অসংখ্য।

বেত্র, বেণু, দল, শৃঙ্গ, বস্ত্র, অলংকার।
গোপগণের যত, তার নাহি লেখা-পার
(চৈচ মধ্য ২১.২০)।

এই সমস্ত গোপবালকদের হাতে রয়েছে বেত্র বা বেত। এবং তাঁদের প্রত্যেকের একটি করে বাঁশিও রয়েছে। বেত্র, বেণু, দল। একটি করে পদ্মফুল, আর একটি করে শিঙা। শৃঙ্গর বস্ত্র, খুব সুন্দর পোশাক। আর অলংকারপূর্ণ। শ্রীকৃষ্ণ যেমন করে সুসজ্জিত, তাঁর বন্ধুরাও ঠিক একইভাবে সুসজ্জিত। তুমি যখন চিন্ময় জগতে যাবে, তুমি বুঝতে পারবে না কে কৃষ্ণ আর কে কৃষ্ণ নয়। প্রত্যেকেই শ্রীকৃষ্ণের মতো, একইভাবে বৈকুণ্ঠ জগতেও প্রত্যেকেই দেখতে বিষ্ণুর মতো। এটিকে বলে সারূপ্য মুক্তি। জীব যখন চিন্ময় জগতে প্রবেশ করে, তারাও ঠিক শ্রীকৃষ্ণ বা বিষ্ণুর মতো হয়ে যায় - কোন পার্থক্য থাকে না - কারণ সেটি পরম। এর মধ্যেও সেখানে পার্থক্য থাকে। নির্বিশেষবাদীরা বুঝতে পারে না যে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য থাকা সত্ত্বেও কি করে পার্থক্য থাকে না। যখনই তারা ব্যক্তিস্বাতন্ত্রের কথা ভাবে, ওহ্‌, তারা ভাবে এখানে একটি পার্থক্য রয়েছে। তাহলে কিসের মুক্তি? হ্যাঁ। আসলে সেখানে কোন পার্থক্য নেই। পার্থক্যটা হচ্ছে শুধু মাত্র শ্রীকৃষ্ণের ব্যক্তিত্ব্য আর অন্যদের ব্যক্তিত্ব্য, তাঁরা সচেতন যে "শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন আমাদের ভালোবাসার বিষয়।" এই যা। কেন্দ্র হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ। এইভাবে আলাদা আলাদা ছেলে, মেয়ে, শ্রীকৃষ্ণ, প্রত্যেকেই চিন্ময় আনন্দ উপভোগ করছে।