BN/Prabhupada 0655 - ধর্মের উদ্দেশ্য হল ভগবানকে জানা এবং তাঁকে ভালোবাসতে শেখা: Difference between revisions

(Created page with "<!-- BEGIN CATEGORY LIST --> Category:1080 Bengali Pages with Videos Category:Prabhupada 0655 - in all Languages Category:BN-Quotes - 1969 Category:BN-Quotes - L...")
 
(Vanibot #0023: VideoLocalizer - changed YouTube player to show hard-coded subtitles version)
 
Line 6: Line 6:
[[Category:BN-Quotes - in USA]]
[[Category:BN-Quotes - in USA]]
[[Category:BN-Quotes - in USA, Los Angeles]]
[[Category:BN-Quotes - in USA, Los Angeles]]
[[Category:Hindi Pages - Yoga System]]
[[Category:Bengali Pages - Yoga System]]
<!-- END CATEGORY LIST -->
<!-- END CATEGORY LIST -->
<!-- BEGIN NAVIGATION BAR -- DO NOT EDIT OR REMOVE -->
<!-- BEGIN NAVIGATION BAR -- DO NOT EDIT OR REMOVE -->
{{1080 videos navigation - All Languages|Hindi|HI/Prabhupada 0654 - तुम अपने प्रयास से भगवान को नहीं देख सकते हो क्योंकि तुम्हारी इन्द्रियॉ अपूर्ण हैं|0654|HI/Prabhupada 0656 - जो लोग भक्त हैं, वे किसी से नफरत नहीं करते हैं|0656}}
{{1080 videos navigation - All Languages|Bengali|BN/Prabhupada 0654 - নষ্ট ইন্দ্রিয়ের কারণে তোমাদের চেষ্টার দ্বারা তোমরা ভগবানকে দর্শন করতে পারবে না|0654|BN/Prabhupada 0656 - ভক্তদের কারোর প্রতিই ঘৃণা থাকে না|0656}}
<!-- END NAVIGATION BAR -->
<!-- END NAVIGATION BAR -->
<!-- BEGIN ORIGINAL VANIQUOTES PAGE LINK-->
<!-- BEGIN ORIGINAL VANIQUOTES PAGE LINK-->
Line 19: Line 19:


<!-- BEGIN VIDEO LINK -->
<!-- BEGIN VIDEO LINK -->
{{youtube_right|m3KvT2HiG4k|ধর্মের উদ্দেশ্য হল ভগবানকে জানা এবং তাঁকে ভালোবাসতে শেখা <br />- Prabhupāda 0655}}
{{youtube_right|bRu7HgxRN14|ধর্মের উদ্দেশ্য হল ভগবানকে জানা এবং তাঁকে ভালোবাসতে শেখা <br />- Prabhupāda 0655}}
<!-- END VIDEO LINK -->
<!-- END VIDEO LINK -->


Line 37: Line 37:
ভক্তঃ পূর্ণরূপে কৃষ্ণভাবনাময় শুদ্ধভক্তের সঙ্গ লাভ করতে হলে অবশ্যই যথেষ্ট সৌভাগ্যবান হতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের কৃপার ফলে কৃষ্ণভাবনাময় মহাত্মা ভগবৎতত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারেন।  
ভক্তঃ পূর্ণরূপে কৃষ্ণভাবনাময় শুদ্ধভক্তের সঙ্গ লাভ করতে হলে অবশ্যই যথেষ্ট সৌভাগ্যবান হতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের কৃপার ফলে কৃষ্ণভাবনাময় মহাত্মা ভগবৎতত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারেন।  


শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। শ্রীকৃষ্ণের কৃপার দ্বারা। কোন প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতার বলে নয়। তোমাকে শ্রীকৃষ্ণের কৃপা লাভ করতে হবে, তাহলেই কেবল শ্রীকৃষ্ণকে জানতে পারা যাবে। তাহলে আমরা শ্রীকৃষ্ণকে দর্শন করা, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারা ইত্যাদি সবকিছুই করতে পারব। তিনি একজন ব্যক্তিবিশেষ। তিনি হলেন পরম পুরুষ। সেটিই হচ্ছে বৈদিক নির্দেশ। নিত্যো নিত্যানাম্ চেতনশ্চেতনানাম্ (কঠ উপনিষদ ২.২.১৩) তিনিই হলেন পরমেশ্বর বা পরম চিন্ময়। আমরাও চিন্ময়। আমরা এখন এই দেহে আবদ্ধ হয়ে আছি। আমাদের জন্ম মৃত্যু ঘটছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের জন্ম-মৃত্যু বলে কিছু নেই। আমরা নিত্য চিন্ময় আত্মা। আমার কর্ম, আমার বাসনা অনুযায়ী আমি কেবল এক দেহ থেকে অন্য দেহে, তারপর আরেকটি দেহে, তারপর অন্য একটি দেহে এইভাবে ভ্রমণ করে চলেছি । এটিই চলছে।  
শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। শ্রীকৃষ্ণের কৃপার দ্বারা। কোন প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতার বলে নয়। তোমাকে শ্রীকৃষ্ণের কৃপা লাভ করতে হবে, তাহলেই কেবল শ্রীকৃষ্ণকে জানতে পারা যাবে। তাহলে আমরা শ্রীকৃষ্ণকে দর্শন করা, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারা ইত্যাদি সবকিছুই করতে পারব। তিনি একজন ব্যক্তিবিশেষ। তিনি হলেন পরম পুরুষ। সেটিই হচ্ছে বৈদিক নির্দেশ। নিত্যো নিত্যানাম্ চেতনশ্চেতনানাম্ (কঠ উপনিষদ ২.২.১৩) তিনিই হলেন পরমেশ্বর বা পরম চিন্ময়। আমরাও চিন্ময়। আমরা এখন এই দেহে আবদ্ধ হয়ে আছি। আমাদের জন্ম মৃত্যু ঘটছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের জন্ম-মৃত্যু বলে কিছু নেই। আমরা নিত্য চিন্ময় আত্মা। আমার কর্ম, আমার বাসনা অনুযায়ী আমি কেবল এক দেহ থেকে অন্য দেহে, তারপর আরেকটি দেহে, তারপর অন্য একটি দেহে এইভাবে ভ্রমণ করে চলেছি । এটিই চলছে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের কোনও জন্ম-মৃত্যু নেই। ভগবদ্গীতায় এটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তোমরা দ্বিতীয় অধ্যায়ে এটি পড়েছঃ ন জায়তে ম্রিয়তে বা। চিন্ময় জীব কখনও জন্ম গ্রহণ করে না বা মৃত্যু বরণ করে না। একইভাবে, ভগবান নিত্য এবং তোমরা সকলেই নিত্য। যখন পরম নিত্যের সঙ্গে তুমি তোমার সম্পর্ক স্থাপন করবে... নিত্যো নিত্যানাম্ চেতনশ্চেতনানাম্ । সমস্ত চেতন বস্তুর মধ্যে তিনি হলেন পরম চেতন। সমস্ত নিত্য বস্তুর মধ্যে তিনি পরম নিত্য। সুতরাং কৃষ্ণভাবনামৃত চর্চার দ্বারা, ইন্দ্রিয়গুলোকে পরিশুদ্ধ করার দ্বারা এই জ্ঞান লাভ হবে এবং তুমি ভগবানকে দর্শন করতে সক্ষম হবে। পড়তে থাকো।  
 
প্রকৃতপক্ষে আমাদের কোনও জন্ম-মৃত্যু নেই। ভগবদ্গীতায় এটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তোমরা দ্বিতীয় অধ্যায়ে এটি পড়েছঃ ন জায়তে ম্রিয়তে বা। চিন্ময় জীব কখনও জন্ম গ্রহণ করে না বা মৃত্যু বরণ করে না। একইভাবে, ভগবান নিত্য এবং তোমরা সকলেই নিত্য। যখন পরম নিত্যের সঙ্গে তুমি তোমার সম্পর্ক স্থাপন করবে... নিত্যো নিত্যানাম্ চেতনশ্চেতনানাম্ । সমস্ত চেতন বস্তুর মধ্যে তিনি হলেন পরম চেতন। সমস্ত নিত্য বস্তুর মধ্যে তিনি পরম নিত্য। সুতরাং কৃষ্ণভাবনামৃত চর্চার দ্বারা, ইন্দ্রিয়গুলোকে পরিশুদ্ধ করার দ্বারা এই জ্ঞান লাভ হবে এবং তুমি ভগবানকে দর্শন করতে সক্ষম হবে। পড়তে থাকো।  


ভক্তঃ শ্রীকৃষ্ণের কৃপার ফলে কৃষ্ণভাবনাময় মহাত্মা ভগবৎতত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারেন। কারণ তিনি শুদ্ধভক্তির দ্বারা পরিতৃপ্ত হয়ে থাকেন। ভগবৎ তত্ত্বজ্ঞান উপলব্ধির ফলে মানুষ তাঁর জীবনের যথার্থ সার্থকতা লাভ করেন। অপ্রাকৃত জ্ঞানের প্রভাবে ভগবানের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় হয়, কিন্তু পুঁথিগত বিদ্যার ফলে আপাত পরস্পর বিরোধী উক্তির দ্বারা সহজেই মোহাচ্ছন্ন ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ভগবৎতত্ত্ববেত্ত্বা কৃষ্ণভক্তই হচ্ছেন যথার্থ আত্মসংযমী, কারণ তিনি সর্বতোভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত। তিনি সর্বদাই অপ্রাকৃত স্তরে অধিষ্ঠিত, কারণ লৌকিক জ্ঞানের সঙ্গে তাঁর কোন সম্পর্ক সম্পর্ক নেই।  
ভক্তঃ শ্রীকৃষ্ণের কৃপার ফলে কৃষ্ণভাবনাময় মহাত্মা ভগবৎতত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারেন। কারণ তিনি শুদ্ধভক্তির দ্বারা পরিতৃপ্ত হয়ে থাকেন। ভগবৎ তত্ত্বজ্ঞান উপলব্ধির ফলে মানুষ তাঁর জীবনের যথার্থ সার্থকতা লাভ করেন। অপ্রাকৃত জ্ঞানের প্রভাবে ভগবানের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় হয়, কিন্তু পুঁথিগত বিদ্যার ফলে আপাত পরস্পর বিরোধী উক্তির দ্বারা সহজেই মোহাচ্ছন্ন ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ভগবৎতত্ত্ববেত্ত্বা কৃষ্ণভক্তই হচ্ছেন যথার্থ আত্মসংযমী, কারণ তিনি সর্বতোভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত। তিনি সর্বদাই অপ্রাকৃত স্তরে অধিষ্ঠিত, কারণ লৌকিক জ্ঞানের সঙ্গে তাঁর কোন সম্পর্ক সম্পর্ক নেই।  


শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। এমন কি যদি কেউ অশিক্ষিতও হয়, অ-আ-ক-খ পর্যন্ত জানে না, সেও ভগবানকে উপলব্ধি করতে পারে, যদি সে নিজেকে ভগবানের বিনম্র প্রেমময়ী সেবায় নিযুক্ত করে। আর কেউ হয়তো জড় জ্ঞানে অনেক উচ্চশিক্ষিত বা বড় পণ্ডিত হতে পারে, কিন্তু সে ভগবানকে কখনও ভগবানকে বুঝতে পারবে না। ভগবান কোন জড় অবস্থার বশীভূত নন। তিনি পরম চেতন ব্যক্তি। ঠিক তেমনই, ভগবদ উপলব্ধির পন্থাও কোন জাগতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে না। এটি এমন নয় যে, যেহেতু তুমি দরিদ্র তাই তোমার দ্বারা ভগবানকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। অথবা যেহেতু তুমি অনেক ধনী, তাই তুমি ভগবানকে উপলব্ধি করতে পারবে। না। যেহেতু তুমি জড় দৃষ্টিকোণ থেকে অশিক্ষিত, তাই তুমি ভগবানকে উপলব্ধি করতে পারবে না। এমনটা নয়। অথবা, যেহেতু তুমি জাগতিকভাবে অনেক উচ্চশিক্ষিত তাই তুমি ভগবান উপলব্ধি করতে পারবে , তাও নয়। তিনি সমস্ত জাগতিক অবস্থার উর্ধ্বে। 'অপ্রতিহতা',  
শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। এমন কি যদি কেউ অশিক্ষিতও হয়, অ-আ-ক-খ পর্যন্ত জানে না, সেও ভগবানকে উপলব্ধি করতে পারে, যদি সে নিজেকে ভগবানের বিনম্র প্রেমময়ী সেবায় নিযুক্ত করে। আর কেউ হয়তো জড় জ্ঞানে অনেক উচ্চশিক্ষিত বা বড় পণ্ডিত হতে পারে, কিন্তু সে ভগবানকে কখনও ভগবানকে বুঝতে পারবে না। ভগবান কোন জড় অবস্থার বশীভূত নন। তিনি পরম চেতন ব্যক্তি। ঠিক তেমনই, ভগবদ উপলব্ধির পন্থাও কোন জাগতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে না। এটি এমন নয় যে, যেহেতু তুমি দরিদ্র তাই তোমার দ্বারা ভগবানকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। অথবা যেহেতু তুমি অনেক ধনী, তাই তুমি ভগবানকে উপলব্ধি করতে পারবে। না। যেহেতু তুমি জড় দৃষ্টিকোণ থেকে অশিক্ষিত, তাই তুমি ভগবানকে উপলব্ধি করতে পারবে না। এমনটা নয়। অথবা, যেহেতু তুমি জাগতিকভাবে অনেক উচ্চশিক্ষিত তাই তুমি ভগবান উপলব্ধি করতে পারবে , তাও নয়। তিনি সমস্ত জাগতিক অবস্থার উর্ধ্বে। 'অপ্রতিহতা', সঃ বৈ পুংসাম্ পরো ধর্মঃ। শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে যে, এই হচ্ছে সর্বোত্তম ধর্মনীতি।  
 
সঃ বৈ পুংসাম্ পরো ধর্মঃ। শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে যে, এই হচ্ছে সর্বোত্তম ধর্মনীতি। ভাগবত এ কথা বলছেন না যে, হিন্দু ধর্মই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম, অথবা খ্রিষ্টান ধর্ম কিংবা ইসলাম ধর্ম সর্বোত্তম, অথবা অন্য কোন ধর্ম। আমরাই এতো সব ধর্ম তৈরি করেছি। কিন্তু শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হচ্ছে, সেটিই হচ্ছে সর্বোত্তম ধর্ম... কোনটি? সঃ বৈ পুংসাম্ পরোধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে ([[Vanisource:SB 1.2.6|ভাগবত ১.২.৬]]) সেই ধর্মই শ্রেষ্ঠ যেটি তোমাকে ভগবৎ সেবা এবং ভগবৎপ্রেম  বিকাশে সাহায্য করে। ব্যাস। সেটিই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের সংজ্ঞা। আমরা এইভাবে বিশ্লেষণ করি না যে এই ধর্মটি বা ঐ ধর্মটি হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। অবশ্যই আমি তোমাদের যেমনটা বলেছিলাম যে, এই জগতে তিন ধরণের গুণ রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতা অনুসারে বিভিন্ন ধরণের ধর্মপন্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু ধর্মের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভগবানকে উপলব্ধি করা। এবং কিভাবে ভগবানকে ভালবাসতে হয় তা শেখা। সেটিই হচ্ছে যে কোনও ধর্মপন্থার উদ্দেশ্য। যদি তা ভগবানকে কিভাবে ভালবাসতে হয় সেই শিক্ষা দেয়, তবে সেটিই সর্বশ্রেষ্ঠ। অন্যথায় তা অর্থহীন। তুমি হয়তো তোমার ধর্মীয় পন্থাগুলো খুব কঠোর এবং ভালোভাবে পালন কর, কিন্তু তুমি ভগবৎপ্রেম হীন। জড় বস্তু বা পন্থার প্রতিই কেবল প্রেম বাড়ছে, সেটি কোন ধর্ম নয়। ভাগবতের কথানুযায়ী,  সঃ বৈ পুংসাম্ পরোধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে ([[Vanisource:SB 1.2.6|ভাগবত ১.২.৬]]) অপ্রতিহতা। অহৈতুকী অপ্রতিহতা। সেই ধর্ম কোন কারণে অনুশীলন হয় না, এবং কোন বাধার দ্বারা প্রতিহতও হয় না। যদি তুমি সেই ধরণের ধর্মনীতির স্তরে পৌঁছুতে পার, তবেই কেবল তুমি দেখবে যে তুমি সবদিক থেকেই পূর্ণ সন্তুষ্ট। তা না হলে কোনই সম্ভাবনা নেই।
 
সঃ বৈ পুংসাম্ পরোধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে ([[Vanisource:SB 1.2.6|ভাগবত ১.২.৬]]) অধোক্ষজে। ভগবানের আরেক নাম অধোক্ষজ। অধোক্ষজ মানে কোনও জড় প্রচেষ্টার দ্বারাই তাঁকে দেখা যায় না। অধোক্ষজ। অক্ষজ মানে গবেষণালব্ধ জ্ঞান। গবেষণালব্ধ জ্ঞানের দ্বারা তুমি কখনই ভগবানকে বুঝতে পারবে না। না। তোমাকে ভিন্ন এক পন্থায় তাঁকে জানতে হবে। তার মানে হচ্ছে বিনীতভাবে তাঁর কথা শ্রবণ ও তাঁর চিন্ময় প্রেমময়ী সেবার দ্বারা। তাহলেই তুমি ভগবনাকে বুঝতে পারবে।


তাই যে কোন ধর্মই যা তোমাকে সাহায্য করে এবং এই শিক্ষা দেয় যে, কোনও রকম কারণ ছাড়াই ভগবৎ প্রেমের বিকাশ করা... "আমি ভগবানকে ভালবাসি কারণ তিনি আমার ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য খুব ভাল ভাল জিনিস সরবরাহ করেন" সেটি ভালোবাসা নয়।  
ভাগবত এ কথা বলছেন না যে, হিন্দু ধর্মই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম, অথবা খ্রিষ্টান ধর্ম কিংবা ইসলাম ধর্ম সর্বোত্তম, অথবা অন্য কোন ধর্ম। আমরাই এতো সব ধর্ম তৈরি করেছি। কিন্তু শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হচ্ছে, সেটিই হচ্ছে সর্বোত্তম ধর্ম... কোনটি? সঃ বৈ পুংসাম্ পরোধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে ([[Vanisource:SB 1.2.6|ভাগবত ১.২.৬]]) সেই ধর্মই শ্রেষ্ঠ যেটি তোমাকে ভগবৎ সেবা এবং ভগবৎপ্রেম  বিকাশে সাহায্য করে। ব্যাস। সেটিই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের সংজ্ঞা। আমরা এইভাবে বিশ্লেষণ করি না যে এই ধর্মটি বা ঐ ধর্মটি হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। অবশ্যই আমি তোমাদের যেমনটা বলেছিলাম যে, এই জগতে তিন ধরণের গুণ রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতা অনুসারে বিভিন্ন ধরণের ধর্মপন্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু ধর্মের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভগবানকে উপলব্ধি করা। এবং কিভাবে ভগবানকে ভালবাসতে হয় তা শেখা। সেটিই হচ্ছে যে কোনও ধর্মপন্থার উদ্দেশ্য। যদি তা ভগবানকে কিভাবে ভালবাসতে হয় সেই শিক্ষা দেয়, তবে সেটিই সর্বশ্রেষ্ঠ। অন্যথায় তা অর্থহীন। তুমি হয়তো তোমার ধর্মীয় পন্থাগুলো খুব কঠোর এবং ভালোভাবে পালন কর, কিন্তু তুমি ভগবৎপ্রেম হীন। জড় বস্তু বা পন্থার প্রতিই কেবল প্রেম বাড়ছে, সেটি কোন ধর্ম নয়। ভাগবতের কথানুযায়ী,  সঃ বৈ পুংসাম্ পরোধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে ([[Vanisource:SB 1.2.6|ভাগবত ১.২.৬]]) অপ্রতিহতা। অহৈতুকী অপ্রতিহতা। সেই ধর্ম কোন কারণে অনুশীলন হয় না, এবং কোন বাধার দ্বারা প্রতিহতও হয় না। যদি তুমি সেই ধরণের ধর্মনীতির স্তরে পৌঁছুতে পার, তবেই কেবল তুমি দেখবে যে তুমি সবদিক থেকেই পূর্ণ সন্তুষ্ট। তা না হলে কোনই সম্ভাবনা নেই।


অহৈতুকী, কোন কারণ ছাড়াই... ভগবান মহান, তিনি আমার পিতা, আমার কর্তব্য তাঁকে ভালোবাসা। ব্যাস। কোন লেন-দেন নয়। "ওহ, ভগবান আমার দৈনিক রুটির জোগাড় দেন, তাই তাঁকে ভালবাসি।" না। ভগবান এমন কি কুকুর বেড়াল ইত্যাদি পশুদেরও দৈনিক আহার্য দেন কারণ তিনি সকলের পিতা। তিনি সবাইকেই খাদ্য সরবরাহ করেন। সেটি ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা মানে অহৈতুকী। "যদি ভগবান আমার রোজের আহার্য নাও দেন, তবু আমি তাঁকে ভালবাসবো।" সেটি হচ্ছে ভালোবাসা। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তেমনটিই বলেছেন, আশ্লিষ্য বা পাদরতাং পিনষ্টূ মাম্ ([[Vanisource:CC Antya 20.47|চৈতন্য চরিতামৃত ২০.৪৭]]) "তুমি আমাকে আলিঙ্গনই কর অথবা তোমার পদদ্বারা পিষ্টই কর, অথবা তুমি কোনদিনও আমাকে দর্শন না দিয়ে মর্মাহতই কর। তবুও আমি তোমাকে ভালবাসি।" সেটিই হচ্ছে শুদ্ধ ভগবৎপ্রেম। আমরা যখন সেই রকম ভগবৎপ্রেমের স্তরে উন্নীত হব তখনই কেবল আমরা পূর্ণ আনন্দ লাভ করতে পারব। ভগবান যেমন পূর্ণ আনন্দময়, তুমিও পূর্ণ আনন্দময়। সেটিই হচ্ছে জীবনের সার্থকতা।  
সঃ বৈ পুংসাম্ পরোধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে ([[Vanisource:SB 1.2.6|ভাগবত ১.২.৬]]) অধোক্ষজে। ভগবানের আরেক নাম অধোক্ষজ। অধোক্ষজ মানে কোনও জড় প্রচেষ্টার দ্বারাই তাঁকে দেখা যায় না। অধোক্ষজ। অক্ষজ মানে গবেষণালব্ধ জ্ঞান। গবেষণালব্ধ জ্ঞানের দ্বারা তুমি কখনই ভগবানকে বুঝতে পারবে না। না। তোমাকে ভিন্ন এক পন্থায় তাঁকে জানতে হবে। তার মানে হচ্ছে বিনীতভাবে তাঁর কথা শ্রবণ ও তাঁর চিন্ময় প্রেমময়ী সেবার দ্বারা। তাহলেই তুমি ভগবনাকে বুঝতে পারবে। তাই যে কোন ধর্মই যা তোমাকে সাহায্য করে এবং এই শিক্ষা দেয় যে, কোনও রকম কারণ ছাড়াই ভগবৎ প্রেমের বিকাশ করা... "আমি ভগবানকে ভালবাসি কারণ তিনি আমার ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য খুব ভাল ভাল জিনিস সরবরাহ করেন" সেটি ভালোবাসা নয়। অহৈতুকী, কোন কারণ ছাড়াই... ভগবান মহান, তিনি আমার পিতা, আমার কর্তব্য তাঁকে ভালোবাসা। ব্যাস। কোন লেন-দেন নয়। "ওহ, ভগবান আমার দৈনিক রুটির জোগাড় দেন, তাই তাঁকে ভালবাসি।" না। ভগবান এমন কি কুকুর বেড়াল ইত্যাদি পশুদেরও দৈনিক আহার্য দেন কারণ তিনি সকলের পিতা। তিনি সবাইকেই খাদ্য সরবরাহ করেন। সেটি ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা মানে অহৈতুকী। "যদি ভগবান আমার রোজের আহার্য নাও দেন, তবু আমি তাঁকে ভালবাসবো।" সেটি হচ্ছে ভালোবাসা। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তেমনটিই বলেছেন, আশ্লিষ্য বা পাদরতাং পিনষ্টূ মাম্ (চৈতন্য চরিতামৃত ২০.৪৭) "তুমি আমাকে আলিঙ্গনই কর অথবা তোমার পদদ্বারা পিষ্টই কর, অথবা তুমি কোনদিনও আমাকে দর্শন না দিয়ে মর্মাহতই কর। তবুও আমি তোমাকে ভালবাসি।" সেটিই হচ্ছে শুদ্ধ ভগবৎপ্রেম। আমরা যখন সেই রকম ভগবৎপ্রেমের স্তরে উন্নীত হব তখনই কেবল আমরা পূর্ণ আনন্দ লাভ করতে পারব। ভগবান যেমন পূর্ণ আনন্দময়, তুমিও পূর্ণ আনন্দময়। সেটিই হচ্ছে জীবনের সার্থকতা।  
<!-- END TRANSLATED TEXT -->
<!-- END TRANSLATED TEXT -->

Latest revision as of 17:21, 29 June 2021



Lecture on BG 6.6-12 -- Los Angeles, February 15, 1969

ভক্তঃ "এই ভগবদ্গীতা হচ্ছে কৃষ্ণভাবনামৃতের বিজ্ঞান। কেবল মাত্র জড় পাণ্ডিত্যের দ্বারা কেউই কৃষ্ণভাবনাময় হতে পারে না।"

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। তোমার কেবল এম.এ, পিএইচ.ডি ইত্যাদি কিছু জাগতিক ডিগ্রি আছে বলেই, তুমি ভগবদগীতা বুঝতে পারবে না। তা সম্ভব নয়। এটি হচ্ছে চিন্ময় বিজ্ঞান। এটি বোঝার জন্য ভিন্ন ধরণের ইন্দ্রিয়ের প্রয়োজন। আর সেই ইন্দ্রিয় তোমাকে তৈরি করে নিতে হবে, সেবার মাধ্যমে তোমার বর্তমান ইন্দ্রিয়গুলোকে শুদ্ধ করতে হবে। অন্যথায়, বড় বড় পণ্ডিতেরা, যেমন ডাক্তার, পি.এইচ.ডি-ধারী লোকেরাও শ্রীকৃষ্ণকে ভুল বোঝে। তারাও তাঁকে বুঝতে পারে না। এটি সম্ভব নয়। সে জন্যই শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং অবতীর্ণ হন। অজোহপি সন্নব্যায়াত্মা (গীতা ৪.৬) যদিও তিনি অজ, তবু তিনি অবতীর্ণ হন আমাদেরকে এটি জানাতে যে ভগবান কি? পড়তে থাকো।

ভক্তঃ পূর্ণরূপে কৃষ্ণভাবনাময় শুদ্ধভক্তের সঙ্গ লাভ করতে হলে অবশ্যই যথেষ্ট সৌভাগ্যবান হতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের কৃপার ফলে কৃষ্ণভাবনাময় মহাত্মা ভগবৎতত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারেন।

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। শ্রীকৃষ্ণের কৃপার দ্বারা। কোন প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতার বলে নয়। তোমাকে শ্রীকৃষ্ণের কৃপা লাভ করতে হবে, তাহলেই কেবল শ্রীকৃষ্ণকে জানতে পারা যাবে। তাহলে আমরা শ্রীকৃষ্ণকে দর্শন করা, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারা ইত্যাদি সবকিছুই করতে পারব। তিনি একজন ব্যক্তিবিশেষ। তিনি হলেন পরম পুরুষ। সেটিই হচ্ছে বৈদিক নির্দেশ। নিত্যো নিত্যানাম্ চেতনশ্চেতনানাম্ (কঠ উপনিষদ ২.২.১৩) তিনিই হলেন পরমেশ্বর বা পরম চিন্ময়। আমরাও চিন্ময়। আমরা এখন এই দেহে আবদ্ধ হয়ে আছি। আমাদের জন্ম মৃত্যু ঘটছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের জন্ম-মৃত্যু বলে কিছু নেই। আমরা নিত্য চিন্ময় আত্মা। আমার কর্ম, আমার বাসনা অনুযায়ী আমি কেবল এক দেহ থেকে অন্য দেহে, তারপর আরেকটি দেহে, তারপর অন্য একটি দেহে এইভাবে ভ্রমণ করে চলেছি । এটিই চলছে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের কোনও জন্ম-মৃত্যু নেই। ভগবদ্গীতায় এটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তোমরা দ্বিতীয় অধ্যায়ে এটি পড়েছঃ ন জায়তে ম্রিয়তে বা। চিন্ময় জীব কখনও জন্ম গ্রহণ করে না বা মৃত্যু বরণ করে না। একইভাবে, ভগবান নিত্য এবং তোমরা সকলেই নিত্য। যখন পরম নিত্যের সঙ্গে তুমি তোমার সম্পর্ক স্থাপন করবে... নিত্যো নিত্যানাম্ চেতনশ্চেতনানাম্ । সমস্ত চেতন বস্তুর মধ্যে তিনি হলেন পরম চেতন। সমস্ত নিত্য বস্তুর মধ্যে তিনি পরম নিত্য। সুতরাং কৃষ্ণভাবনামৃত চর্চার দ্বারা, ইন্দ্রিয়গুলোকে পরিশুদ্ধ করার দ্বারা এই জ্ঞান লাভ হবে এবং তুমি ভগবানকে দর্শন করতে সক্ষম হবে। পড়তে থাকো।

ভক্তঃ শ্রীকৃষ্ণের কৃপার ফলে কৃষ্ণভাবনাময় মহাত্মা ভগবৎতত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারেন। কারণ তিনি শুদ্ধভক্তির দ্বারা পরিতৃপ্ত হয়ে থাকেন। ভগবৎ তত্ত্বজ্ঞান উপলব্ধির ফলে মানুষ তাঁর জীবনের যথার্থ সার্থকতা লাভ করেন। অপ্রাকৃত জ্ঞানের প্রভাবে ভগবানের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় হয়, কিন্তু পুঁথিগত বিদ্যার ফলে আপাত পরস্পর বিরোধী উক্তির দ্বারা সহজেই মোহাচ্ছন্ন ও বিভ্রান্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ভগবৎতত্ত্ববেত্ত্বা কৃষ্ণভক্তই হচ্ছেন যথার্থ আত্মসংযমী, কারণ তিনি সর্বতোভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত। তিনি সর্বদাই অপ্রাকৃত স্তরে অধিষ্ঠিত, কারণ লৌকিক জ্ঞানের সঙ্গে তাঁর কোন সম্পর্ক সম্পর্ক নেই।

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ। এমন কি যদি কেউ অশিক্ষিতও হয়, অ-আ-ক-খ পর্যন্ত জানে না, সেও ভগবানকে উপলব্ধি করতে পারে, যদি সে নিজেকে ভগবানের বিনম্র প্রেমময়ী সেবায় নিযুক্ত করে। আর কেউ হয়তো জড় জ্ঞানে অনেক উচ্চশিক্ষিত বা বড় পণ্ডিত হতে পারে, কিন্তু সে ভগবানকে কখনও ভগবানকে বুঝতে পারবে না। ভগবান কোন জড় অবস্থার বশীভূত নন। তিনি পরম চেতন ব্যক্তি। ঠিক তেমনই, ভগবদ উপলব্ধির পন্থাও কোন জাগতিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে না। এটি এমন নয় যে, যেহেতু তুমি দরিদ্র তাই তোমার দ্বারা ভগবানকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। অথবা যেহেতু তুমি অনেক ধনী, তাই তুমি ভগবানকে উপলব্ধি করতে পারবে। না। যেহেতু তুমি জড় দৃষ্টিকোণ থেকে অশিক্ষিত, তাই তুমি ভগবানকে উপলব্ধি করতে পারবে না। এমনটা নয়। অথবা, যেহেতু তুমি জাগতিকভাবে অনেক উচ্চশিক্ষিত তাই তুমি ভগবান উপলব্ধি করতে পারবে , তাও নয়। তিনি সমস্ত জাগতিক অবস্থার উর্ধ্বে। 'অপ্রতিহতা', সঃ বৈ পুংসাম্ পরো ধর্মঃ। শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে যে, এই হচ্ছে সর্বোত্তম ধর্মনীতি।

ভাগবত এ কথা বলছেন না যে, হিন্দু ধর্মই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম, অথবা খ্রিষ্টান ধর্ম কিংবা ইসলাম ধর্ম সর্বোত্তম, অথবা অন্য কোন ধর্ম। আমরাই এতো সব ধর্ম তৈরি করেছি। কিন্তু শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হচ্ছে, সেটিই হচ্ছে সর্বোত্তম ধর্ম... কোনটি? সঃ বৈ পুংসাম্ পরোধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে (ভাগবত ১.২.৬) সেই ধর্মই শ্রেষ্ঠ যেটি তোমাকে ভগবৎ সেবা এবং ভগবৎপ্রেম বিকাশে সাহায্য করে। ব্যাস। সেটিই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের সংজ্ঞা। আমরা এইভাবে বিশ্লেষণ করি না যে এই ধর্মটি বা ঐ ধর্মটি হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ। অবশ্যই আমি তোমাদের যেমনটা বলেছিলাম যে, এই জগতে তিন ধরণের গুণ রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতা অনুসারে বিভিন্ন ধরণের ধর্মপন্থা তৈরি হয়েছে। কিন্তু ধর্মের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভগবানকে উপলব্ধি করা। এবং কিভাবে ভগবানকে ভালবাসতে হয় তা শেখা। সেটিই হচ্ছে যে কোনও ধর্মপন্থার উদ্দেশ্য। যদি তা ভগবানকে কিভাবে ভালবাসতে হয় সেই শিক্ষা দেয়, তবে সেটিই সর্বশ্রেষ্ঠ। অন্যথায় তা অর্থহীন। তুমি হয়তো তোমার ধর্মীয় পন্থাগুলো খুব কঠোর এবং ভালোভাবে পালন কর, কিন্তু তুমি ভগবৎপ্রেম হীন। জড় বস্তু বা পন্থার প্রতিই কেবল প্রেম বাড়ছে, সেটি কোন ধর্ম নয়। ভাগবতের কথানুযায়ী, সঃ বৈ পুংসাম্ পরোধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে (ভাগবত ১.২.৬) অপ্রতিহতা। অহৈতুকী অপ্রতিহতা। সেই ধর্ম কোন কারণে অনুশীলন হয় না, এবং কোন বাধার দ্বারা প্রতিহতও হয় না। যদি তুমি সেই ধরণের ধর্মনীতির স্তরে পৌঁছুতে পার, তবেই কেবল তুমি দেখবে যে তুমি সবদিক থেকেই পূর্ণ সন্তুষ্ট। তা না হলে কোনই সম্ভাবনা নেই।

সঃ বৈ পুংসাম্ পরোধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে (ভাগবত ১.২.৬) অধোক্ষজে। ভগবানের আরেক নাম অধোক্ষজ। অধোক্ষজ মানে কোনও জড় প্রচেষ্টার দ্বারাই তাঁকে দেখা যায় না। অধোক্ষজ। অক্ষজ মানে গবেষণালব্ধ জ্ঞান। গবেষণালব্ধ জ্ঞানের দ্বারা তুমি কখনই ভগবানকে বুঝতে পারবে না। না। তোমাকে ভিন্ন এক পন্থায় তাঁকে জানতে হবে। তার মানে হচ্ছে বিনীতভাবে তাঁর কথা শ্রবণ ও তাঁর চিন্ময় প্রেমময়ী সেবার দ্বারা। তাহলেই তুমি ভগবনাকে বুঝতে পারবে। তাই যে কোন ধর্মই যা তোমাকে সাহায্য করে এবং এই শিক্ষা দেয় যে, কোনও রকম কারণ ছাড়াই ভগবৎ প্রেমের বিকাশ করা... "আমি ভগবানকে ভালবাসি কারণ তিনি আমার ইন্দ্রিয় তৃপ্তির জন্য খুব ভাল ভাল জিনিস সরবরাহ করেন" সেটি ভালোবাসা নয়। অহৈতুকী, কোন কারণ ছাড়াই... ভগবান মহান, তিনি আমার পিতা, আমার কর্তব্য তাঁকে ভালোবাসা। ব্যাস। কোন লেন-দেন নয়। "ওহ, ভগবান আমার দৈনিক রুটির জোগাড় দেন, তাই তাঁকে ভালবাসি।" না। ভগবান এমন কি কুকুর বেড়াল ইত্যাদি পশুদেরও দৈনিক আহার্য দেন কারণ তিনি সকলের পিতা। তিনি সবাইকেই খাদ্য সরবরাহ করেন। সেটি ভালোবাসা নয়। ভালোবাসা মানে অহৈতুকী। "যদি ভগবান আমার রোজের আহার্য নাও দেন, তবু আমি তাঁকে ভালবাসবো।" সেটি হচ্ছে ভালোবাসা। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু তেমনটিই বলেছেন, আশ্লিষ্য বা পাদরতাং পিনষ্টূ মাম্ (চৈতন্য চরিতামৃত ২০.৪৭) "তুমি আমাকে আলিঙ্গনই কর অথবা তোমার পদদ্বারা পিষ্টই কর, অথবা তুমি কোনদিনও আমাকে দর্শন না দিয়ে মর্মাহতই কর। তবুও আমি তোমাকে ভালবাসি।" সেটিই হচ্ছে শুদ্ধ ভগবৎপ্রেম। আমরা যখন সেই রকম ভগবৎপ্রেমের স্তরে উন্নীত হব তখনই কেবল আমরা পূর্ণ আনন্দ লাভ করতে পারব। ভগবান যেমন পূর্ণ আনন্দময়, তুমিও পূর্ণ আনন্দময়। সেটিই হচ্ছে জীবনের সার্থকতা।