BN/Prabhupada 0702 - আমি নিত্য, চিরন্তন - কিন্তু জাগতিক সংস্পর্শে আসার কারণে আমি দুঃখভোগ করছি

Revision as of 17:36, 29 June 2021 by Vanibot (talk | contribs) (Vanibot #0023: VideoLocalizer - changed YouTube player to show hard-coded subtitles version)
(diff) ← Older revision | Latest revision (diff) | Newer revision → (diff)


Lecture on BG 6.46-47 -- Los Angeles, February 21, 1969

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ।

শীলাবতীঃ প্রভুপাদ আপনি বলেছেন যতক্ষণ কেউ যৌন জীবনে যুক্ত সে যোগী হতে পারবে না

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ।

শীলাবতীঃ কিন্তু আরেক দিন আপনি গৃহস্থজীবনের খুব প্রশংসা করছিলেন, এবং আপনি কয়েকজন মহান আচার্যদের কথা বলছিলেন যারা গৃহস্থ ছিলেন এবং আপনি বলছিলেন...

শ্রীল প্রভুপাদঃ হ্যাঁ, সেটি ভক্তিযোগের কথা। এই অধ্যায়ে যে সাধারণ যোগপন্থার কথা বলা হয়েছে সেখানে ব্যক্তিকে কঠোরভাবে ব্রহ্মচর্য পালন করতে হবে। কিন্তু ভক্তিযোগের পুরো ধারনাটিই হচ্ছে তোমাকে শ্রীকৃষ্ণের চরণে মনস্থির করতে হবে তাই যে কোন অবস্থানই হোক না কেন... গৃহস্থ জীবন মানে এই নয় যে যৌনতা উপভোগ করা একজন গৃহস্থের হয়তো পত্নী থাকতে পারে, যৌনজীবন থাকতে পারে, কিন্তু সেটি কেবল সন্তান উৎপাদনের জন্য। ব্যাস্‌ গৃহস্থ মানে বৈধ বেশ্যাবৃত্তি নয়। সেটি গৃহস্থ আশ্রম নয়। গৃহস্থরা কেবল সন্তান উৎপাদনের জন্য যৌন জীবনে যুক্ত হতে পারে, ব্যাস্‌ আর কিছু নয়। সেটিই হচ্ছে গৃহস্থ জীবন, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত। গৃহস্থ মানে যখন খুশি উপভোগের যন্ত্র পেলেই সে ব্যবহার করবে এমনটা নয়। না। গৃহস্থ মানে পতি-পত্নী একসঙ্গে কৃষ্ণভাবনাময় থাকবে, কৃষ্ণসেবায় থাকবে। কিন্তু যখন তাঁদের সন্তান দরকার, কৃষ্ণভাবনাময়ভাবে। ব্যাস্‌। সেটিও স্বেচ্ছায় জন্মনিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি, এক, দুই অথবা তিনটি। ব্যাস্‌। আর নয়। গৃহস্থ জীবন মানে কোন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই যৌন জীবন নয় কিন্তু যারা পারমার্থিক জীবনে অগ্রসর হতে চায় হয় তোমাকে ভক্তিযোগ গ্রহণ করতে হবে, নয়তো অষ্টাঙ্গ যোগ বা জ্ঞান যোগ গ্রহণ করতে হবে অনিয়ন্ত্রিত যৌন জীবন কখনই অনুমোদিত নয় যৌন জীবন মানেই তোমাকে আবার ফিরে আসতে হবে। যদি তুমি ইন্দ্রিয় তৃপ্তি করতে চাও, সেটি জাগতিক জীবন।

জড়জাগতিক জীবন মানে আমার ভাল ভাল ইন্দ্রিয় আছে এখন এইসব ইন্দ্রিয়গুলো সর্বোচ্চভাবে ভোগ করা যাক সেটিই হচ্ছে জাগতিক জীবন ঠিক কুকুর বেড়ালের মতো কুকুরের যখনই যৌন বাসনা জাগে সে চিন্তা করে না এটা আমার মা, বোন নাকি কে। সেই কথা শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছেঃ নায়ং দেহো দেহভাজাং নৃলোকে কষ্টান্‌ কামান্‌ অর্হতে বিড্‌ভুজাম্‌ (ভাগবত ৫/৫/১) বিড্‌ভুজাম্‌ মানে বিড্‌ মানে বিষ্ঠা। ভুজাম্‌ মানে যে খায়। সুতরাং বিষ্ঠাভোজীদের মতো ইন্দ্রিয় তৃপ্তি করাই মানব জীবনের উদ্দেশ্য নয়। বিষ্ঠাভোজী মানে শুকর। শুকরের মতো ইন্দ্রিয় তৃপ্তি করা মানব জীবনের উদ্দেশ্য নয় নিয়ন্ত্রণ। তাই মনুষ্য জীবনে বিবাহ ব্যবস্থা রয়েছে কেন? বিবাহ এবং বেশ্যাবৃত্তি কি? বিবাহ ব্যবস্থা মানে যৌন জীবনকে সংযত করা। বিবাহব্যবস্থা মানে এই নয় যে তুমি এখন একজন স্ত্রী পেয়েছ, আহ্‌ এখন যত পার টাকাপয়সা ছাড়াই অনিয়ন্ত্রিতভাবে যৌনজীবন ভোগ করে যাও। না। সেটি বিবাহের উদ্দেশ্য নয়। বিবাহ মানে তোমার যৌন জীবনকে সংযত করা। এখানে সেখানে যৌন জীবন খুঁজে বেরাবে? না, সেটি করতে পার না। এই হচ্ছে তোমার স্ত্রী। এবং সেটিও কেবল সন্তান উৎপাদনের জন্য। নিয়ন্ত্রণ আছে।

চারটি জিনিস রয়েছে লোকে ব্যবায়মিষ মদ্যসেবা নিত্য হি জন্তোর্ন হি তত্র চোদনা (ভাগবত ১১/৫/১১) ব্যাবায় - মৈথুন জীবন এবং মাংসাহার - আমিষ আমিষ মানে মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদি। ব্যবায় মানে মৈথুন। মৈথুন এবং মাংসাহার। আমিষাহার। মদ্যসেবা - মাদকাসক্তি। নিত্য হি জন্তুঃ প্রতিটি বদ্ধ জীবেরই এই সব প্রবণতা আছে। প্রবৃত্তি কিন্তু সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তারই নাম মনুষ্য় জীবন । যদি তুমি জাগতিক প্রবণতার স্রোতে গা ভাসিয়ে দাও, তাহলে সেটি মনুষ্য জন্ম নয় তোমাকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। সম্পূর্ণ মানব জন্মটিই হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ শেখার জন্য সেটিই মনুষ্য জীবন। সেটি হচ্ছে আদর্শ বৈদিক সভ্যতা তপো দিব্যম্‌ যেন শুদ্ধয়েৎ সত্ত্বম্‌ (ভাগবত ৫/৫/১) নিজের অস্তিত্বকে পবিত্র করতে হবে। সেই অস্তিত্বটি কি? আমি চিন্ময় নিত্য আত্মা। আমি এখন এই অবস্থাকে কলুষিত করেছি , তাই যন্ত্রণা ভোগ করছি আমাকে এখন এই অস্তিত্বকে শুদ্ধ করতে হবে। ঠিক যেমন রোগ হলে সেই অবস্থা থেকে তোমাকে মুক্ত হতে হয় যখন জ্বর হয়, তখন চিকিৎসা করতে হয়। অনিয়ন্ত্রিত ভোগ নয়। ডাক্তার বলবেন, "এটা করবে না, ওটা করবে না"। ঠিক তেমনই এই মনুষ্য জন্ম হচ্ছে ভবরোগ বা জড়দেহ থেকে মুক্ত হবার জন্য। তাই যদি তুমি নিজেকে নিয়ন্ত্রিত না কর, তাহলে চিকিৎসার লাভ কি হল? রোগটা ভাল হবে কিভাবে? পুরো পন্থাটিই হচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করার পন্থা। তপো দিব্যম্‌ চিন্ময় উপলব্ধির জন্য সমস্ত কার্যকলাপ তপস্যাপূর্ণ হতে হবে সেটিই হচ্ছে মনুষ্য জীবন।

কিন্তু সামাজিক ব্যবস্থার বিভিন্ন স্তর আছে ব্রহ্মচারী, গৃহস্থ, বানপ্রস্থ, সন্ন্যাস। সব পন্থাতেই কেবল নিয়ন্ত্রণ। কিন্তু গৃহস্থ মানে সামান্য নামে মাত্র অনুমোদন যারা সম্পূর্ণ মৈথুন জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ব্যাস্‌। গৃহস্থ মানে অনিয়ন্ত্রিত মৈথুন জীবন নয় যদি তোমার কাছে গৃহস্থ জীবন মানে এই হয়, তাহলে কিন্তু তোমার সেটি ভুল ধারণা। যদি এই ভবরোগ অবস্থা থেকে মুক্ত হতে চাও, তোমাকে অবশ্যই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ইন্দ্রিয় তৃপ্তি করে তুমি কখনই রোগমুক্ত হতে পারবে না, সেটি সম্ভব নয়। যদ্‌ ইন্দ্রিয়প্রীতায় আপৃনোতি ন সাধু মন্যে যতাত্মানোহম্‌ অসন্নপি ক্লেশদ আস দেহ (ভাগবত ৫/৫/৪) যারা অনিয়ন্ত্রিতভাবে ইন্দ্রিয় পরিতৃপ্তিতে যুক্ত , সেটি খুব ভাল কথা নয় কারণ তার পরিণামে তাকে আরেকটি জড় দেহ পেতে হবে হতে পারে মনুষ্য দেহ, পশু দেহ অথবা অন্য কিছু। কিন্তু তাকে দেহ ধারণ করতেই হবে আর যেই মাত্র তুমি এই জড় দেহ ধারণ করবে, তখনই তোমাকে ত্রিতাপ ক্লেশ ভোগ করতে হবে জন্ম, মৃত্যু, জরা ও ব্যাধি। এইগুলো হচ্ছে ত্রিতাপ ক্লেশ তাই মানুষকে এই কথাগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে বুঝতে হবে। কিন্তু ওরা এই ব্যাপারগুলো অবহেলা করছে। ফলত ওদেরকে যন্ত্রণা ভোগ করেই যেতে হচ্ছে। ওরা ভোগান্তিকেও কিছু মনে করে না। ঠিক পশুর মতো। দুঃখ ভোগ করছে। কিন্তু এসব কিছু পরোয়াই করে না। ওরা সব ভুলে যায়। তাই বাস্তবে বলতে গেলে এই ইন্দ্রিয়তৃপ্তির সভ্যতা মানে পশু সভ্যতা। কিছুটা পালিশ করা। শুধু এটুকুই।