BN/Prabhupada 0015 - আমি এই দেহ নই



Lecture on BG 9.34 -- New York, December 26, 1966

আত্মার উপস্থিতির ছয়টি লক্ষণ রয়েছে। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে বৃদ্ধি হওয়া। বৃদ্ধি। যখন আত্মা শরীর থেকে বেরিয়ে যায় তখন আর কোনো বৃদ্ধি হয় না। যদি বাচ্চা মৃত জন্ম হয় তাহলে তার কোনো বৃদ্ধি হবে না। তার পিতা-মাতা বলবে, "এ কোন কাজের নয়, ফেলে দাও।" সুতরাং একইভাবে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে প্রথম উদাহরণ দিয়েছিলেন, "এরকম ভেবো না যে এই দেহের অভ্যন্তরে যে চিন্ময়-কণ রয়েছে, যার উপস্থিতির জন্যে শরীর বাল্যবস্থা থেকে শৈশব পর্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে, শৈশব থেকে যৌবন, যৌবন থেকে বৃদ্ধাবস্থা। সুতরাং যখন শরীর অকেজো হয়ে যায়, আত্মা অদৃশ্যভাবে এই শরীরটি ত্যাগ করে।" বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় (ভগবদ্গীতা ২.২২) যেরকম আমরা পুরানো বস্ত্র ছেড়ে নতুন বস্ত্র ধারণ করি, সেই রকম আমরা আরেকটি নতুন শরীর গ্রহণ করি। আর আমরা আমাদের নিজের ইচ্ছামতো কোন শরীর পেতে পারি না। শরীর নির্বাচিত হবে তা প্রকৃতির নিয়মের ওপর নির্ভর করে। এই নির্বাচন প্রকৃতির নিয়মের ওপর নির্ভর করে। তুমি মৃত্যুর সময় তা বলতে পার না, কিন্তু চিন্তা করতে পার। তার মানে আমি বলতে চাচ্ছি, আলাদা আলাদা ব্যক্তিত্ব এবং নির্বাচন সবই রয়েছে। যং যং বাপি স্মরণ্ লোকে ত্যজত্যন্তে কলেবরম্ (গীতা.৮.৬) ঠিক মৃত্যুর মুহূর্তে তোমার মানসিকতা, যেমন যেমন তুমি ভাববে, সে অনুযায়ীই পরবর্তী জন্ম পাবে। সুতরাং বুদ্ধিমান ব্যক্তি, যে পাগল নয়, তার বোঝা উচিত যে আমি এই শরীরটি নই। প্রথমত, আমি শরীরটি নই। তখন সে বুঝবে যে তার কর্তব্য কি? ওহ, আত্মারূপে তার কর্তব্য কি? ভগবদ্গীতায় তার কর্তব্য সম্পর্কে লেখা রয়েছে। নবম অধ্যায়ের শেষ শ্লোকে রয়েছে - মন্মনা ভব (গীতা ৯.৩৪) তোমরা অন্য কিছু চিন্তা করছো। আমরা সবাই দেহধারী জীবেরা, আমরা কিছু একটা ভাবি। কিছু না কিছু না ভেবে তোমরা একমুহূর্তও থাকতে পারবে না। তা সম্ভব নয়। তাই এটিই হল কর্তব্য। শ্রীকৃষ্ণের কথা চিন্তা করো। শ্রীকৃষ্ণকে চিন্তা করো। তোমাকে কিছু না কিছু তো চিন্তা করতেই হবে। সুতরাং যদি তুমি শ্রীকৃষ্ণকে চিন্তা কর, তবে তাতে ক্ষতি কি? শ্রীকৃষ্ণের অনেক লীলা রয়েছে, কত কত সাহিত্য আরও কত কি। শ্রীকৃষ্ণ এখানে এসেছিলেন বলেই আমাদের কাছে অনেক বই আছে। তুমি যদি শ্রীকৃষ্ণকে চিন্তা করতে চাও তো আমরা তোমাদের অনেক গ্রন্থ বা সাহিত্য দিতে পারি, যা কিনা যদি তুমি ২৪ ঘন্টা অধ্যয়ন কর, তবুও সারাজীবন ধরে পড়ো, তাহলেও পুরো জীবনেও তা শেষ হবে না। সুতরাং শ্রীকৃষ্ণকে চিন্তা করার যথেষ্ট জিনিস রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের কথা, চিন্তা কর -মন্মনা ভব। 'ওহ, আমি তোমাকে চিন্তা করতে পারছি। ' ঠিক যেমন এক মানুষযে কোন মালিকের চাকরি করছে। ওহ, সে সব সময়েই স্বামীর কথা ভাবে। ওহ, আমাকে ন'টায় ওখানে থাকতে হবে নাহলে মালিক রাগ করবে। ওহ, আমাকে ন'টায় ওখানে থাকতে হবে নাহলে মালিক রাগ করবে। এরকম ভাবনা হলে চলবে না। এরপর তিনি বলেন - ভব মদ-ভক্ত। (গীতা .৯.৩৪) "তুমি শুধু প্রীতির সাথে আমাকর কথা চিন্তা কর।" যখন স্বামী, আমি বলতে চাচ্ছি, যখন সেবক তার প্রভুর কথা ভাবছে, তখন তাতে কোন ভালবাসা নেই। সে পাউন্ড-শিলিং-টাকা-পয়সার জন্য চিন্তা করেছে। "কারণ যদি আমি ঠিক ন'টায় অফিস না যাই, যদি দেরী হয়, আমি দুই ডলার হারাব।" অতএব সে এইসব ভাবছে , মনিবের কথা ভাবছে না। সে পাউন্ড-শিলিং-পয়সার কথা ভাবছে । এমন ধরণের চিন্তা-ভাবনা তোমাকে রক্ষা করবে না। এইজন্যে তিনি বলেছেন, 'ভব মদ্ভক্তঃ'। "তুমি শুধু আমার ভক্ত হও। তাহলে আমার প্রতি তোমার ভাবনাটি অনুকূল হবে।" এবং ভক্তি কি? মদ্ভক্তঃ। ভক্তিমূলক ... ভক্তি মানে সেবা। মদযাজী (গীতা ৯.৩৪)। তুমি ভগবানের কিছু একটি সেবা কর। ঠিক যেমন আমরা সবসময় এখানে সেবায় নিযুক্ত। যখনই আপনি আসবেন আমাদের কোন না কোনও সেবাতে ব্যস্ত দেখবেন। সুতরাং আমরা কোনো কাজ তৈরী করে নিচ্ছি। শুধুমাত্র শ্রীকৃষ্ণকে চিন্তা করার জন্যে।