BN/Prabhupada 0039 - আধুনিক নেতা কেবল একটি পুতুলের মত
Lecture on SB 1.10.3-4 -- Tehran, March 13, 1975
যুধিষ্ঠিরের মত একজন আদর্শ রাজা, শুধুমাত্র ভূমি বা সমুদ্রের উপরেই নয়, তিনি সমগ্র পৃথিবীতে শাসন করতে পারেন । এটিই হচ্ছে আদর্শ। (পড়ছেন :) "আধুনিক ইংরেজী আইন, বা প্রথমজাত দ্বারা উত্তরাধিকার আইন, 'সেই সময়েও ছিল যখন মহারাজ যুধিষ্ঠির সসাগরা পৃথিবী শাসন করতেন। তার মানে সমগ্র পৃথিবী গ্রহ, তার মধ্যে সমুদ্রও আছে। (পড়ছেন) "সেই সময়ের হস্তিনাপুর, যা এখন দিল্লির অংশ, -এর রাজা, সসাগরা পৃথিবীর সম্রাট ছিলেন। মহারাজ যুধিষ্ঠিরের পৌত্র মহারাজ পরীক্ষিতের সময় পর্যন্ত তারা এইভাবে শাসন করতেন। তাঁর (যুধিষ্ঠির মহারাজ) ছোট ভাইরা তাঁর মন্ত্রী এবং রাজ্যের অন্যান্য প্রশাসক হিসেবে কাজ করছিলেন, এবং সম্পূর্ণভাবে ধার্মিক সেই রাজার ভাইদের মাঝে পূর্ণ সহযোগিতা ছিল। মহারাজ যুধিষ্ঠির ছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি বা একজন আদর্শ রাজা... রাজাকে হতে হবে শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি। "... পৃথিবীর রাজত্বের উপর শাসন করাকে দেবরাজ ইন্দ্রের সঙ্গে তুলনা করা হোত যিনি স্বর্গলোকের প্রতিনিধিত্বকারী রাজা। দেবতারা যেমন রাজা ইন্দ্র, চন্দ্র, সূর্য, বরুণ, বায়ু প্রমুখ ব্যক্তিরা বিভিন্ন গ্রহগুলির প্রতিনিধিত্বকারী রাজা। এবং একইভাবে মহারাজ যুধিষ্ঠিরও ছিলেন তাদেরই একজন যিনি পৃথিবী গ্রহের ওপর শাসন করেছিলেন। মহাজন যুধিষ্ঠির আধুনিক গণতন্ত্রের মতো গৎবাঁধা একজন আদর্শহীন রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না। মহারাজ যুধিষ্ঠির ভীষ্মদেব এবং অচ্যুত ভগবানের নির্দেশ অনুযায়ী চলতেন। আর তাই তার সবকিছুতে পরিপূর্ণ জ্ঞান ছিল। আধুনিক নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধানরা কেবল একটি পুতুলের মতো, কারণ তার কোন রাজকীয় ক্ষমতা নেই। এমনকি যদি তিনি মহারাজা যুধিষ্ঠিরের মত জ্ঞানবানও হন, তার সাংবিধানিক অবস্থানের কারণে তিনি নিজের ইচ্ছার বাইরে কিছুই করতে পারবেন না। তাই পৃথিবীতে এরকম বহু দেশ রয়েছে যারা পরস্পরের সঙ্গে বিবাদ করে যাচ্ছে। তাদের মতাদর্শগত পার্থক্য বা অন্যান্য স্বার্থপর উদ্দেশ্যর জন্য। কিন্তু মহারাজ যুধিষ্ঠিরের মতো কোন রাজার নিজস্ব কোন মতাদর্শ ছিল না। তাঁকে অচ্যুত ভগবান এবং তাঁর প্রতিনিধির নির্দেশ মোতাবেকই চলতে হোত। এবং প্রামাণিক প্রতিনিধি যেমন ভীষ্মদেব-এর মতো ব্যক্তিদের অধীনে। । শাস্ত্রে এটি নির্দেশিত হয়েছে যে প্রত্যেকের উচিৎ মহাজনদের এবং অচ্যুত ভগবানের পদাঙ্ক অনুসরণ করা কোনরকম ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য এবং মনগড়া মতাদর্শ ছাড়াই। সুতরাং, মহারাজ যুধিষ্ঠিরের জন্য তা সারা বিশ্ব সসাগরা পৃথিবীর শাসন করা সম্ভব ছিল, কারণ মূলনীতিগুলো ছিল ভ্রান্তিহীন অচ্যুত এবং সেগুলো ছিল সার্বজনীনভাবে প্রযোজ্য। এক বিশ্ব রাষ্ট্রের ধারণা পরিপূর্ণ করা যেতে পারে যদি আমরা অকার্যকর কর্তৃপক্ষর অনুসরণ করতে পারি। একজন ত্রুটিপূর্ণ মানুষ কখনই এমন কোন মতাদর্শ তৈরি করতে পারবেন না যা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। কেবল মাত্র একজন নিখুঁত, অভ্রান্ত ব্যক্তিই কেবল সে ধরণের কিছু সৃষ্টি করতে পারে যা প্রতিটি জায়গায় প্রযোজ্য এবং বিশ্বের সবাই তা অনুসরণ করতে পারবে। একজন ব্যক্তিসত্ত্বাই কেবল শাসন করতে পারেন, কোনও নির্বিশেষ সরকার নয়। যদি সেই ব্যক্তিটি নিখুঁত হন, তাহলে সরকার নিখুঁত হবে। যদি সেই ব্যক্তিটি মূর্খ হয়, তাহলে সরকার একটি মূর্খের স্বর্গ হয়ে যাবে। এটিই প্রকৃতির নিয়ম। ভ্রান্তিপূর্ণ রাজা বা নির্বাহী প্রধানদের অনেক কাহিনী রয়েছে। সুতরাং নির্বাহী প্রধান অবশ্যই এমন কাউকে হতে হবে যিনি মহারাজা যুধিষ্ঠিরের মত একজন প্রশিক্ষিত ব্যক্তি, এবং বিশ্বকে শাসন করার জন্য তার পূর্ণ স্বাধীন ক্ষমতা থাকতে হবে। একটি বিশ্ব রাষ্ট্র ধারণা শুধুমাত্র মহারাজ যুধিষ্ঠির মত একজন নিখুঁত রাজার শাসনের অধীনেই সঠিকভাবে আকৃতি নিতে পারে। সেই দিনগুলিতে পৃথিবী সুখী ছিল কারণ মহারাজ যুধিষ্ঠির মত রাজারা পৃথিবীতে শাসন করতো। " এই রাজাকে মহারাজা যুধিষ্ঠিরের অনুসরণ করতে দেয়া হোক এবং এভাবে তিনি একটি উদাহরণ স্থাপন করুন যে কিভাবে রাজতন্ত্র একটি নিখুঁত রাষ্ট্র বানাতে পারে। শাস্ত্রে নির্দেশ আছে, এবং যদি তিনি তা অনুসরণ করেন তবে তিনি তা করতে পারবেন। তাঁর সেই ক্ষমতা ছিল।
যেহেতু তিনি একজন আদর্শ রাজা ছিলেন, শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি ছিলেন, তাই,, কামং ববর্ষ পর্জন্যঃ (ভাগবত ১.১০.৪)। পর্জন্যঃ অর্থ বৃষ্টিপাত। তাই বৃষ্টিপাত হলো জীবনের সমস্ত প্রয়োজনীয়তা সরবরাহ হওয়ার মূল নীতি। তাই শ্রীকৃষ্ণ ভগবদ্গীতায় বলেছেন, অন্নাদ্ ভবন্তি ভূতানি পর্জন্যাদ্ অন্ন-সম্ভবঃ (ভগবদ্গীতা ৩.১৪) যদি আপনি মানুষকে সুখী করতে চান, মানুষ এবং পশু উভয়কেই, পশুরাও আছে। তারা . . . দেশের এইসব বদমাশ কার্যনির্বাহীরা, কখনও কখনও তারা মানুষের কল্যাণের জন্য কিছু দেখায়, কিন্তু পশুদের জন্য কোন উপকার করে না। কেন? এই অবিচার কেন? তারাও তো এই দেশেই জন্মগ্রহণ করেছে। তারাও প্রাণী। হতে পারে তারা পশু। তাদের কোন বুদ্ধি নেই। তাদের বুদ্ধি আছে, মানুষদের মতো এতো ভাল নয়, কিন্তু এর অর্থ কি... তাদের নির্বিচারে হত্যা করার জন্য কসাইখানা খুলতে হবে? এটা কি ন্যায়বিচার? এবং শুধুমাত্র তাই নয়, কিন্তু যে কেউই, তিনি যদি সেই দেশে আসেন, রাজাকে তাকে আশ্রয় দিতে হবে। কিসের প্রভেদ? যে কেউই আশ্রয় চাইবে "মহাশয়, আমি আপনার রাজ্যে বাস করতে চাই", তাই তাকে সব সুবিধা দেওয়া উচিত। এরকমটা কেন? "না, না, আপনি আসতে পারবেন না। আপনি আমেরিকান। আপনি ভারতীয়, আপনি এই আপনি সেই?" না। আসলে অনেক কিছুই আছে। যদি সত্যিই তারা নীতি অনুসরণ করে, বৈদিক নীতি, তাহলে আদর্শ রাজা হবেন একজন ভাল নেতা। এবং প্রকৃতিও সাহায্য করবে। তাই বলা হয়েছে যে মহারাজ যুধিষ্ঠিরের রাজত্বকালে, কামং ববর্ষ পর্জন্যঃ সর্বকামদুঘা মহী (ভাগবত ১.১০.৪) মহী, পৃথিবী। আপনি পৃথিবী থেকে আপনার সমস্ত রকম প্রয়োজনীয়তা পাবেন। এটি আকাশ থেকে পড়ে না। হ্যাঁ, এটা বৃষ্টির আকারে আকাশ থেকে পড়ে। কিন্তু তারা বিজ্ঞানটা জানে না যে, সবকিছুই বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার দ্বারা কিভাবে পৃথিবী থেকেই আসছে। নির্দিষ্ট অবস্থার অধীনে বৃষ্টি পড়ে এবং সুপ্ত প্রভাব। তাতে অনেক কিছুই উৎপন্ন হয়, মূল্যবান পাথর, মুক্তো। তারা জানে না কিভাবে এই জিনিসগুলি আসছে। তাই রাজা যদি ধার্মিক হন, তবে তাকে সাহায্য করার জন্য প্রকৃতিও সহযোগিতা করে। এবং যদি রাজা, সরকার অধার্মিক হয়, তাহলে প্রকৃতি সহযোগিতা করবে না।