BN/Prabhupada 0045 - জ্ঞানের বিষয়বস্তুকে বলা হয় জ্ঞেয়



Lecture on BG 13.1-2 -- Paris, August 10, 1973

প্রকৃতিং পুরুষং চৈব
ক্ষেত্রং ক্ষেত্রজ্ঞমেব চ।
এতদ্‌ বেদিতুমিচ্ছামি
জ্ঞানং জ্ঞেয়ং চ কেশব।।
(ভ. গী. ১৩.১)

এটি মানুষের বিশেষাধিকার, যে সে প্রকৃতিকে বুঝতে পারে, এই মহাজাগতিক প্রকাশ, এবং প্রকৃতির উপভোগকারী, এবং সে এই ব্যপারে সম্পূর্ণরূপে জানতে পারে যে জ্ঞানের উদ্দেশ্য 'জ্ঞেয়ম্' কি।

তিনটি বিষয় রয়েছে আর তা হলঃ , জ্ঞেয়ং, জ্ঞাতা, এবং জ্ঞান। জ্ঞানের বিষয় সম্পর্কে যিনি অবগত তিনি জ্ঞাতা, জ্ঞানের বিষয়কে বলা হয় জ্ঞেয়ং, এবং যে প্রক্রিয়াটি দ্বারা কেউ তা বুঝতে পারে, তাকে বলা হয় জ্ঞান। যখনই আমরা জ্ঞানের কথা বলি, সেখানে অবশ্যই তিনটি বিষয় থাকবে ; জ্ঞানের বিষয়, সেই ব্যাক্তি যিনি জানতে চান এবং যেই পদ্ধতি যা অবলম্বন করে জ্ঞান অর্জন করা যায়।

তাদের মধ্যে কেউ... ঠিক যেমন জড় জাগতিক বিজ্ঞানীরা, তারা শুধুমাত্র প্রকৃতিকে জানার চেষ্টা করছে। কিন্তু তারা পুরুষকে জানে না। প্রকৃতি হল ভোগ্য এবং পুরুষ হলেন ভোক্তা। প্রকৃতপক্ষে প্রকৃত ভোক্তা হলেন কৃষ্ণ। তিনি হলেন প্রকৃত পুরুষ। এটি অর্জুন মহাশয় স্বীকার করেছেনঃ "পুরুষম্‌ শাশ্বতাম। "তুমি প্রকৃত ভোক্তা, পুরুষম্‌।” শ্রীকৃষ্ণই হলেন ভোক্তা এবং আমরা সকলে, জীব, এবং প্রকৃতি, সবকিছুই হল কৃষ্ণের ভোগ্য। সেটি শ্রীকৃষ্ণের... অন্য পুরুষ, আমরা জীবেরা , আমরা পুরুষ নই। আমরাও প্রকৃতি। আমরা হলাম শ্রীকৃষ্ণের ভোগের জন্য। কিন্তু এই জড় জগতে আমরা পুরুষ হয়ে ভোগ করার চেষ্টা করছি। অর্থাৎ, যখন প্রকৃতি অথবা জীব পুরুষ হতে চায় তখন সেটাই জড় জাগতিক অবস্থা। যদি একজন মহিলা পুরুষ হতে চায়, তখন সেটি যেমন অস্বাভাবিক, ঠিক তেমনি জড়-জগতে জীব স্বাভাবিকভাবেই ভোগ্য... যেমন আমরা অনেকবার উদাহরণ দিয়েছি , যে, একটি আঙ্গুল কিছু সুস্বাদু খাদ্য ধরতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আঙ্গুলটি তা ভোগ করতে পারে না, আঙ্গুলটি এখানে খাদ্যের ভোক্তা পাকস্থলীকে সহায়তা করতে পারে মাত্র। এটি কিছু সুস্বাদু খাদ্য নিয়ে মুখে দিতে পারে, এবং যখন সেটি প্রকৃত ভোক্তা পাকস্থলীতে যায় তখন সকল প্রকৃতিই অর্থাৎ শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই তৃপ্তিলাভ করে। তাই এখানে ভোক্তা হল পাকস্থলী, শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নয়। হিতোপনিষদে একটি গল্প রয়েছে, হিতোপদেশ, যা থেকে ঈশপের গল্পগুলো অনূদিত হয়েছে। সেখানে একটি গল্প রয়েছেঃ উদরেন্দ্রিয়ানাম্। উদর। উদর হল পেট এবং ইন্দ্রিয় হল আমাদের ইন্দ্রিয়সমূহ। সে সম্পর্কে একটি গল্প রয়েছে যার নাম 'উদরেন্দ্রিয়ানাম্' সব ইন্দ্রিয়গুলো একটি বৈঠকে একত্রিত হয়। তারা বলল যেঃ "আমরা হলাম কর্ম ইন্দ্রিয়"... (পাশ থেকে) "এটি খোলা কেন?" "আমরা কাজ করছি" পা বলল: "হ্যাঁ, আমি সারা দিন হাটি।" হাত বললঃ "হ্যাঁ আমি সারাদিন শরীর যা করতে বলে তাই করি : যেমনঃ "তুমি এখানে এসে খাবার গুলো তোলো" রান্নার জন্য বস্তুর যোগান দেই, এবং আমি নিজে রান্নাও করি। তখন চোখদুটো বলল, "আমি দেখি" তখন শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ মিলে একটি অনশন করল যে, "আমরা আর পাকস্থলীর জন্য কাজ করব না যে শুধু একাই আহার করে।" । আমরা সবাই কাজ করে যাচ্ছি আর এই ব্যাক্তি বা এই পাকস্থলী শুধু খেয়েই যাচ্ছে। তখন তারা অনশন চালালো ঠিক যেমন পুঁজিবাদী এবং শ্রমিকদের মধ্যে হয়। শ্রমিকদল কাজ-কর্ম ছেড়ে অনশন করে। শরীরের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এইভাবে অনশন পালন করল, এবং দুই, তিনদিন পর যখন তারা সাক্ষাৎ করলো, তখন তারা নিজেদের মধ্যে বলছিল যে, "আমরা দুর্বল হয়ে পড়ছি কেনো?" আমরা এখন কাজ করতে পারি না। "পা বলল, হ্যাঁ আমি দুর্বলতা অনুভব করছি।" হাতও দুর্বল বোধ করলো, এভাবে সকলেই। এর কারণটি কি? কারণ... তখন পাকস্থলী বলল: "কারণ আমি খাচ্ছি না।" তাই তোমরা যদি সবল থাকতে চাও, তাহলে আমাকে খাবার দিতে হবে। অন্যথায়...তাই আমি হলাম ভোক্তা। তোমরা ভোক্তা নও। তোমরা আমার ভোগ্য বস্তুর যোগান দিতে পার মাত্র। এটাই তোমাদের কাজ।” তখন ইন্দ্রিয়সমূহ বুঝতে পারল, "হ্যাঁ, আমরা সরাসরি ভোগ করতে পারিনা। এটি সম্ভব নয়।" ভোগ শুধুমাত্র পাকস্থলীর মাধ্যমেই হতে পারে। তুমি আঙ্গুল, তুমি একটি রসগোল্লা তুলতে পারো, তুমি তা ভোগ করতে পার না। তুমি তা মুখে সরবরাহ করতে পারো, এবং যখন তা পাকস্থলীতে পৌঁছে, তখন সাথে সাথে শক্তি উৎপন্ন হয়। শুধুমাত্র আঙ্গুলই নয়, চক্ষু, শরীরের সকল ইন্দ্রিয়ও বল প্রাপ্ত এবং তৃপ্ত হয়। একইভাবে, প্রকৃত ভোক্তা হলেন শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন:

ভোক্তারং যজ্ঞতপসাং
সর্বলোকমহেশ্বরম্‌।
সুহৃদং সর্বভূতানাং
জ্ঞাত্বা মাং শান্তি মৃচ্ছতি।।
(ভগবদ্গীতা ৫.২৯)